নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।
বাংলা সাহিত্যের অবশ্যপাঠ্য কিছু বই (প্রথম পর্ব) বইয়ের নাম : ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন'
লেখক : শওকত আলী
‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ ইতিহাসে ঠাঁই না পাওয়া এক ইতিহাসের গল্প। ইতিহাস আমার পাঠ্য ছিল না বড় ক্লাসে, তবু যতটুকু জানি ইতিহাস প্রাকৃতজনের জীবনকে কোথাও সোনার অক্ষরে দূরে থাক, তামার হরফে লেখারও প্রয়োজন মনে করেনি। তো ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ প্রথম দফায় যে কারণে আমাকে টেনেছে তা হলো এ গল্প ইতিহাসেরই কিন্তু সেই আজন্মকাল ইতিহাসের ঠাঁইবিহীন মানুষগুলোর। এ গল্পের প্রধান চরিত্রগুলো সেইসব অন্ত্যজ হিন্দু মানুষেরা যাদের হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখের মিলিত জীবনটুকু বরাবর চাপা পড়ে গেছে ‘বাংলায় কোন্ মনীষী প্রথম ইসলাম নিয়ে আসেন?’ কিংবা ‘সেন বংশের কীর্তি তুলে ধরো’-র মতো খুব সচেতন প্রশ্ন-প্রয়াসের ফাঁকতালে। লক্ষণ সেনের শাসনামলে ব্রাত্যজনেরা কী অপরাধে দলে দলে রাজার কাছে গর্দান দিয়েছে কিংবা এই অঞ্চলে তুর্কি শাসকের প্রথম ইসলাম কায়েম করার সময় কত শত ব্রাত্যজনের মাথা গড়াগড়ি খেয়েছে আর কেনই বা বাংলার অন্ত্যজ মানুষরা ইসলাম আসার পর দলে দলে সে ধর্ম গ্রহণ করেছে, তার জবাব ইতিহাস লিখেছে কিনা আমার জানা নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে, শওকত আলীর এই উপন্যাস সেই অন্ত্যজ মানুষদের এক প্রতিনিধিত্বশীল অংশকেই আমাদের চোখের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে একদম দিনের আলোর মতো স্পষ্ট করে।
বইটি সম্পর্কে শওকত আলী বলেছেন, "উপন্যাসটি লেখার চিন্তাটা এ কারণেই এসেছিল যে দক্ষিণ এশিয়ার এই প্রান্তে মুসলমানের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার কারণ কী? এটা ছিল আমার একটা প্রশ্ন। মুসলমান যারা দিগ্বিজয় করতে এসেছে তারা তো ওইদিক দিয়ে এসেছে। তারপর মোগল-পাঠানরাও ওইদিক দিয়ে এসেছে। এটা কিন্তু অবাস্তব কৌতূহলের কিছু নয়। একসময় মুসলমানরা এখানে আধিপত্য করছে, তারা শাসন করেছে ৪০০ বছর। তারা ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও ওইসব অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা বাড়েনি। এখানে মুসলমানের সংখ্যা বেশি। এ সম্পর্কে আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছি, বইপত্র পড়েছি। একসময় শেখ শুভদয়া নামে একটি সংস্কৃত বই হাতে আসে। কেউ বলেছে সেন রাজত্বের পরপরই ওটা লেখা হয়েছিল। শেখের শুভ উদয়- এই অর্থে। শেখ মানে মুসলমান। ওই বইয়ের মধ্যে কিছু কিছু গল্পের মতো পেয়েছি। যেমন একটা দৃশ্য ওখানে পেয়েছি যে অশ্ব বিক্রেতারা নৌকায় চড়ে অশ্ব বিক্রি করতে এসেছে। অশ্ব বিক্রি হয়ে গেছে। সন্ধ্যা সমাগত। তখন ছয়-সাতজনের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ যিনি, তিনি উন্মুক্ত প্রান্তরে দাঁড়িয়ে পশ্চিম দিকে মানে সূর্য অস্তের দিকে তাকিয়ে কানে হাত দিয়ে উচ্চৈঃস্বরে কাকে যেন ডাকছেন। তারপর এক জায়গায় গোল হয়ে বসে প্রভু-ভৃত্য সবাই আহার গ্রহণ করছেন এক পাত্র থেকে। আহার শেষে একজন সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্র পাঠ করছেন, তারপর উবু হয়ে থাকছেন, অবশেষে প্রণাম করছেন, তিনি যা যা করছেন পেছনের সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। সামনে যিনি ছিলেন তিনি কিন্তু প্রভু নন; ভৃত্য। তবু সবাই তাঁকে অনুসরণ করছে। আমি এই দৃশ্যটা আমার প্রদোষে প্রাকৃতজন'র মধ্যে ইচ্ছে করেই দিয়েছি। এ ঘটনাগুলো পড়ে আমার মনে হয়েছিল এ উপাদানগুলো নিয়ে একটা উপন্যাস লিখলে কেমন হয়। এ রকম একটা দৃশ্য যদি দেখে সাধারণ মানুষ, যে মন্দিরের ছায়ায় অচ্ছুত নিম্নবর্গের সাধারণ মানুষের পা যেন না পড়ে সে জন্য সকালে মন্দিরের পশ্চিম পাশের এবং বিকালে মন্দিরের পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে নিম্নবর্গীয় মানুষের চলাচল বন্ধ, তাহলে তাদের মনে প্রতিক্রিয়া কী হবে? এ রকম একটা অবস্থা সেখানে ছিল। এরপর যখন যবনরা এল, তারা একসঙ্গে বসে, একসঙ্গে ওঠে, একসঙ্গে খায়, প্রভুর উপাসনা করে। আমার নিজের মনের থেকে ধারণা হলো এ অঞ্চলে নিম্নবর্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ছিল এবং এখানে সবাই যবন ধর্ম গ্রহণ করেছিল। এর কিন্তু কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ আমি দিতে পারব না। এটা আমার অনুমান। এই ভিত্তিতে আমি উপন্যাসে এই উপাদানগুলো ব্যবহার করেছি।"
বইয়ের দুটি পর্ব- প্রদোষে প্রাকৃতজন আর দুষ্কালের দিবানিশি। দু পর্ব জুড়েই রয়েছে শ্যামাঙ্গ, লীলাবতী, মায়াবতী, বসন্তদাস, মিত্রানন্দের মতো অসংখ্য সাধারণ সহজ-সরল মানুষ। এই মানুষেরা সকলেই বড় বেশি সাধারণ কিন্তু তাদের প্রতিদিনের জীবন, স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, উত্তর খুঁজে চলা একেকটা প্রশ্ন আমাদের চোখে তাদের অসাধারণ করে তোলে। ইতিহাস ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় বীরদের প্রতিটি তলোয়ারের ঝকঝকানি আলোর বিপরীতে নীল কষ্টে বুঁদ হয়ে যাওয়া অনেক অনেক মানুষের বুকের গহীনটাও পুঁড়ে যাওয়ার অনুচ্চারিত কষ্টগাঁথা আছে, এ সত্যটা একদম নগ্নভাবে প্রকাশিত হয় এই উপন্যাসের পাতায় পাতায়। যে শিল্পী তার শিল্পের মাঝে বেঁচে থাকবার স্বপ্ন দেখেছিল, যে স্ত্রী ভেবেছিল তার স্বামীর সঙ্গেই সুখে জীবনটা কাটিয়ে দেবে, যে সন্ন্যাসী নিজের জীবনটা অন্যদের কল্যাণের মধ্যেই নিবেদনের জন্য অন্যদের মাথা নত না করার ব্রত শেখাচ্ছিল, সেই তাদের স্বপ্ন, ভালোবাসা আর নিদারুণ বাস্তবের মধ্যে ফারাকটা এসে পড়ে বারবার এই উপন্যাসে। ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’ এক অদ্ভুত সময়ের উপাখ্যান, যে সময় কোনো যোদ্ধার জন্য প্রদোষকাল হলে তার প্রতিপক্ষের জন্য ছিল উষালগ্ন।
এই বইটি ভালো লাগার দ্বিতীয় কারণ এর চমৎকার ভাষা। তৎসমবহুল প্রমিত বাংলার ব্যবহার আমি এর আগে পড়িনি কোথাও। কেবল শব্দ হিসেবে যে শব্দগুলোকে জানতাম, সেইগুলোই পাশাপাশি বসে এত চমৎকার বাক্য হয়ে গেছে তাও আবার কিনা চলিত ভাষায়, এই বিষয়টি অসাধারণ লেগেছে।
লেখক শওকত আলীর এই একটিইমাত্র বই পড়েছি, আর তাতে আমি নাদানস্য নাদান পাঠক মুগ্ধ। পড়তে গিয়ে এবং পড়ার পরও মনে হয়েছে, সচেতন এবং বোদ্ধা পাঠকদের জন্যও এই বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা কম হবার নয় কোনোকালেই। যতদূর আমি জানি, উপন্যাসটি লিখতে লেখকের প্রায় ১৫ বছর লেগেছে। বইটি বিভিন্ন ভাষার অনেক আধুনিক ক্লাসিক উপন্যাসের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। আবহমান বাঙালি সমাজের এক বিশেষ মুহূর্তের সামাজিক পরিবর্তনের ধারণাগুলো যথেষ্ট বিশ্বস্ততার সঙ্গে ধারণ করা হয়েছে। শওকত আলীর প্রদোষে প্রাকৃতজন যে কোনো তাত্ত্বিক বিচারে দেড়শ বছর ধরে বাংলা ভাষায় রচিত সেরা উপন্যাসগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হওয়ার দাবি রাখে।
পিডিএফ ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন : প্রদোষে প্রাকৃতজন
২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০০
মরুচারী বেদুঈন বলেছেন: পড়ে দেখব!
৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা ---
০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:১১
রিদওয়ান হাসান বলেছেন: আপনাকেও নিরন্তর শুভেচ্ছা অগ্রজ
৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২০
নিয়াজ সুমন বলেছেন: চিালিয়ে যান, সাথে আছি.. শুভেচ্ছা নতুন বছরের।
৫| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:২৩
সৈয়দ ইসলাম বলেছেন: সময়ে সুযোগে পড়ে দেখবো।
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা সময়ে সুযোগে পড়ে দেখবো।
ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৪
রিদওয়ান হাসান বলেছেন: আপনার প্রতিও শুভেচ্ছা রইলো। একটু দেরি হয়ে গেলো। তবুও শুভকামনার বোধয় ধরাবাধা নিয়ম নেই। ভালো থাকবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭
নতুন নকিব বলেছেন:
অভিনন্দন। পড়ে দেখার ইচ্ছে থাকল।