নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিন্দুর মাঝে সিন্ধু দর্শনের আশায় পথ চলি...

রিদওয়ান হাসান

শুধু একদিন ভালোবাসা, মৃত্যু যে তারপর... যদি তা-ও পাই, আমি তা-ই চাই, চাই না বাঁচতে আমি প্রেমহীন হাজার বছর।

রিদওয়ান হাসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন আফসান চৌধুরী এবং আমাদের দেশীয় রাজনীতি

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:০১

লেখাটা শুরু করতে চাই একটা ঘটনা দিয়ে। উত্তরবঙ্গের মঙ্গাকবলিত এক এলাকার মানুষ অর্থনৈতিকভাবে খুবই দুর্বল। যে কোনো সরকারি বেসরকারি অনুদান এবং সাহায্য সংস্থার ত্রাণ তাদের দোরগোড়ায় বেশি পৌঁছায়। এ কারণে ইতিমধ্যেই সে গ্রামের নামকরণও হয়ে গেছে ‍‘দুস্থগ্রাম’। অনেক কাণ্ডজ্ঞানহীন লোক এদের পরিচয় তুলে ধরে দুষ্টগ্রাম হিসেবে। পরে গণমাধ্যমে এ গ্রামের পরিচয় দুস্থ নয়, দুষ্ট বলেই খ্যাত হয়ে ওঠে। এখন দেখা যায়, আশপাশের গ্রামের দুষ্টুপ্রকৃতির ছেলেকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তুই কোন গ্রামের চেংড়া? সহাস্যবদনে উত্তর দেয়, দুষ্টুগ্রামের। পরিচিত লোক যখন তাকে বলে, কিরে তুই না গুচ্ছগ্রামের? তখন ছেলেটি আবারও হেসে উঠে বলে, বদনাম যেহেতু এক গ্রামেরই হয়েছে। ওই গ্রামেই সীমাবদ্ধ থাকুক। অন্য দুইটা গ্রামকে কেন কলঙ্কিত করব?
আমাদের দেশের রাজনীতিরও এখন একই হাল। ইসলামি যে কোনো ইস্যুতে বদনামের বোঝা ওই হেফাজতের ঘাড়েই। এসব কথার বলার কারণ, আজ একটি পত্রিকায় আফসান চৌধুরী একটা লেখা পড়লাম। শিরোনাম ছিল- প্রথম রাউন্ডে জিতেছে হেফাজত, হটেছে তাবলিগ। বাহ, শিরোনামের মধ্যেই কী নিদারুণ মিথ্যাচার!
প্রথম পর্বের ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মানুষদের যদি জিজ্ঞেস করা হত, আপনি কে? নিশ্চয় সে উত্তর দিত, শহুরে বা গ্রামীণ কোনো অঞ্চল থেকে উঠে আসা তাবলিগের একজন সাধারণ কর্মী। কিন্তু এই একই প্রশ্ন যদি আফসান চৌধুরীকে করা হত, সে ওই দুষ্টুছেলের মতোই দাঁত কেলিয়ে উত্তর দিত, ভাই আমি হেফাজতি। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ তার শিরোনামে উঠে এসেছে। কারণ, এদের আদতেই রয়েছে একচ্ছত্রভাবে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব। ইসলামের ওপর দুর্নামি করতে পারলেই এরা কথিত বুদ্ধিজীবির ট্যাগ লাগাতে পারে।
অথচ বাস্তবতা হলো, হেফাজত-তাবলিগ ভাই ভাই। ইজতেমার ময়দানে দুই ভাইকেই হাত ধরাধরি করে হাঁটতে দেখেছি। হেফাজত যেখানে মুসলমানদের ওপর ধর্মীয় আঘাতের বিপরীতে সক্রিয় আর তাবলিগ সেখানে সক্রিয় ইসলামের আদর্শ বাণী গোটাবিশ্বে পৌঁছে দিতে। এই উভয় জামাত এক বৃন্তে দুটি ফুলের মতো, যা কিনা ইসলামের শোভা বাড়াতে কিংবা সুবাস ছড়াতেই ব্যস্ত। দুটিই অরাজনৈতিক সংগঠন। অথচ আফসান চৌধুরীরা হেফাজতের গায়ে রাজনীতির চাদর পড়িয়ে তাবলিগের সামনে বাদী-বিবাদীর কাঠগড়ায় দাঁড় করে দিয়েছে।
আফসান চৌধুরীর দাবি, বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা ব্যবস্থা পরিচালনা করে হেফাজত। আর এই কওমি মাদরাসার কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ভারতের মাওলানা সাদের আগমন নিয়ে হেফাজত-তাবলিগের বিরোধ। অথচ তাবলিগের সাথে না হেফাজতের দ্বন্দ্ব আছে, না আছে কওমি ব্যবস্থার। একথা ভুললে চলবে না, কওমি মাদরাসা থেকেই উঠে আসা তাবলিগের কাজ পরিচালনা করে এমন আলেমের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত গড়বিচারে ৬৫ শতাংশ। তাহলে আফসান চৌধুরীর দাবি অনুযায়ী কি হেফাজত আত্মঘাতি আন্দোলন করছে?
বিষয়টি পানির মতোই পরিস্কার। এ প্রতিবাদ হেফাজতের নয়, এটি মুসলমানের প্রতিবাদ। একজন মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধ, তাবলিগের বিরুদ্ধে নয়। মাওলানা সাদ যদি আজকেও নিঃশর্তভাবে তার দেয়া আকাইদসংশ্লিষ্ট বিতর্কিত বক্তব্যগুলো থেকে রুজু করে, আলেম ওলামারা তার ‘ইমারত’ সাদরে মেনে নেবে। এমনকি এত কিছু হওয়ার পরও কোনো আলেম তার ‘আমিরত্ব’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি, শুধু সাময়িক প্রতিরোধ করেছেন। চলমান সংকট ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে আলেমদের এই পদক্ষেপ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। এমন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই।
এয়ারপোর্টে ঘন্টাখানেক অবরোধ করে বসলে যারা যানজটের দোহাই দিয়ে মানবিকতার বুলি আউড়াচ্ছেন, যখন রাজধানীর নাড়িসড়ক শাহবাগে দিনকে দিন অবরোধ করে আন্দোলন করে, তখন মানবিকতার বুলিগুলো কোথায় তোলা থাকে? সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশে না হয় হেফাজত আছে। ভারতেও তো মাওলানা সাদ বিতর্ক বক্ষমান, তাহলে সেখানে কার সাথে কার বিরোধ? পাকিস্তানের বায়বেন্ড ইজতেমাতে মাওলানা সাদ দু বছর ধরে বয়কট, সেখানে কার সাথে কার বিরোধ?
বাংলাদেশ সরকার মাওলানা সাদ ইস্যুতে একটি গুরুভূমিকা রেখেছে, এজন্য অভিবাদন। এ কারণে সরকারের সাথে হেফাজতের সখ্যতা এবং আওয়ামী লীগের সমর্থিত দল হিসেবে হেফাজতকে আখ্যা দেয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। আজ যদি স্বয়ং শেখ হাসিনাও ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব দেখায়, বাংলাদেশের আলেম-ওলামা তাকেও ছাড় দেবে না।

দুই
যে কোনো ইস্যুকে রাজনীতিকরণ করা হালআমলের রাজনীতিঘেষা লোকদের নিশ্চিন্তে রাতের খাবারের মতোই সহজ ব্যাপার, যার উদাহরণ ৭১ টিভিতে মাহাবুব খানের বক্তব্য। সেখানে নীরব শ্রোতা ছিলেন এই আফসান চৌধুরী। সেখান থেকে সোর্স পেয়েছে যে, মাওলানা সাদ কওমি মাদরাসা ব্যবস্থার বিরোধী। আর কথাটা যেহেতু মুফতি ফয়জুল্লাহর মুখ থেকে বেরিয়েছে, তাই সুযোগসন্ধানী আফসান চৌধুরী পেয়ে গেছে মহামূল্যবান রসদ- হেফাজতি ট্যাগ। যার ফলশ্রুতিতে তার এই প্রবন্ধের প্রসব। মুফতি ফয়জুল্লাহ তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে সাদ সাহেবের বক্তব্যটি উদ্ধৃতি করতে। মাওলানা সাদ বলেছিল, কওমি মাদরাসায় যাকাত দিলে যাকাত আদায় বিশুদ্ধ হয় না। এটি অবান্তর ও কোরআন সাংঘর্ষিক কথা, যেটি প্রকারান্তে কওমি মাদরাসা বন্ধের চক্রান্তের দিকেই নির্দেশ করে যদিও। তবে চক্রান্তের কথাটিকে হাইলাইট না করে কোরআন সাংঘর্ষিক বক্তব্য প্রদানকে মাওলানা সাদের বিপক্ষে উপস্থাপন করতে পারত মুফতি ফয়জুল্লাহ। অথচ তিনি এটি না করে সরাসরি সাদ সাহেবের কওমি মাদরাসা বন্ধের চক্রান্তের কথা বলেছিল। এ কারণে আফসানরা আজ সুযোগ পেয়ে গেছে। তার মতো অথর্বের মুখ থেকে শুনতে হচ্ছে, মাওলানা সাদ নাকি যে কোনো ধর্মীয় কার্য্য সম্পাদনে আর্থিক সাহায্য প্রদানের বিরুদ্ধে অবমাননাকর ভাষায় অনেক লেখালেখি করেছে। এটি একটি ডাহা মিথ্যাচার। তাবলিগ নিজেও একটি ধর্মীয় কাজ, আর এতেও আর্থিক সাহায্য প্রদানের চল আছে। এতেই স্পষ্ট হয়ে আসে, আফসান চৌধুরী মনগড়া ব্যাখ্যানুপাতে হেফাজতের সাথে তাবলিগের একটি ডিভাইট করছে।
মাওলানা সাদ বলেছেন, কওমি মাদরাসায় পড়িয়ে অর্থগ্রহণ বেশ্যার মজুরির সমতুল্য। অথচ এই কথা আফসান চৌধুরী কাছে গিয়ে উল্টো হয়ে গেল। তার বক্তব্য- মাওলানা সাদ নাকি ঘোষণা দিয়েছেন, কওমি মাদরাসাতে অর্থপ্রদান ‘বেশ্যাকে মজুরি’ প্রদানের শামিল। গ্রহণ আর প্রদানে বিশাল প্যাঁচগি লাগিয়েছে এই গণ্ডমুর্খ। একথার জের ধরে সে আরও বলেছে, অর্থনৈতিক খাতের গ্রামীণ মসজিদভিত্তিক মৌলভীদের প্রচলিত আয়ের উৎস বন্ধের উপক্রম হয়। তাই টিকে থাকার জন্য ভয়ঙ্করভাবে মাওলানা সাদের বিরোধিতা করা ছাড়া হেফজতের নাকি উপায়ন্তর ছিল না। অথচ কোথায় অর্থগ্রহণ আর কোথায় অর্থপ্রদান! কেউ কি তাকে বুঝিয়ে দেবেন?
এতেই ক্ষ্যান্ত যাননি আফসান চৌধুরী। তার মতে এটাই মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক ইসলামের সঙ্গে বাংলাদেশের ইসলামের তফাৎ। মধ্যপ্রাচ্যে ধর্মতাত্ত্বিকরা অর্থনৈতিকভাবে নির্ভর করে সরকারি অনুদানের ওপর। অন্যদিকে বাংলাদেশের আলেমরা কৃষিজীবী সমাজ ও তাদের সাংস্কৃতিক অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল হিসেবে দাবি করে। অথচ কিছুদিন আগেও মোদী সরকার কর্তৃক ১০০ কোটি রুপি প্রত্যাখ্যান করেছিল দেওবন্দ। আজ পর্যন্ত কওমির ইতিহাসে সরকারি অনুদান নেয়ার কোনো নজির কায়েম হয়নি উপমহাদেশে।
আফসান চৌধুরীর এই ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য থেকে এটাই পরিস্কার। তার কলমের পেছনে রয়েছে স্বার্থান্বেষী বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা। যেটা আমাদের দেশীয় রাজনীতিকে কলঙ্কিত করছে। মাওলানা সাদ ইস্যুর সুতোয় জামায়াতে ইসলামী হেফাজতকে ব্যবহার করতে না পারার ব্যর্থতা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে হেফাজতের সদ্ব্যবহার কিংবা জামায়াতের বিরুদ্ধে হেফাজতকে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগানোর কথা বলে যে উস্কানিমূলক রাজনীতির রূপ দেয়া হচ্ছে, এটি আফসান চৌধুরীর ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা ছাড়া আর কিছুই নয়, তা যে কোনো মানুষই অনুধাবন করতে পারছেন।
এই সুষ্ঠু প্রতিবাদকে আফসান চৌধুরীরা যেভাবেই কাজে লাগাক। মানুষ জানে, প্রত্যেক শরীরেই গ্রীবা থাকে, কিন্তু মস্তিস্ক থাকে না, তা এই আফসান চৌধুরীর এই প্রবন্ধ থেকে খুব করে ‍উপলব্ধি হল। কারণ, দুষ্টুপ্রকৃতির লোক সব জায়গাতেই আছে।

আফসান চৌধুরীর লেখা নিবন্ধটির লিংক : প্রথম রাউন্ডে জিতেছে হেফাজত, হটেছে তাবলিগ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের মনে রাখা দরকার সব কিছুর সাথে রাজনীতির সম্পর্ক আছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.