নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘স্বচ্ছ বাংলাদেশ অভিযান”।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৭

বর্তমানে আমাদের প্রতিবেশী রাস্ট্র ভারতে “স্বচ্ছ ভারত অভিযান” পরিচালিত হচ্ছে। এটি ভারত সরকার দ্বারা প্রচলিত একটি জাতীয় প্রকল্প যার মাধ্যমে দেশের ৪০৪১টি শহরের সড়ক এবং পরিকাঠামোকে পরিষ্করণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২রা অক্টোবরে এই প্রকল্প সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এটা একটা মেগা প্রজেক্ট। এই প্রকল্পের জন্য ৬২,০০০ কোটি (US$ ১২.৩৭ বিলিয়ন) অর্থ খরচ হবে বলে মনে করা হয়েছে। এই আন্দোলনে তাদের শ্লোগান হলো, 'আগে শৌচাগার পরে মন্দির'’। অর্থাৎ উপাসনালয়ের চেয়ে শৌচাগারের গুরুত্বের দিকটা তিনি প্রথমে বিবেচনায় এনেছেন। কেননা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা উপাসনার অপরিহার্য অঙ্গ। নিশ্চয়ই এটা জনপ্রিয় উদ্যোগ বৈকি। আমরা সবাই জানি যে, ভারতে পারমানবিক বোমা থাকলেও টয়লেটের বড্ড অভাব। যারা ভারতে দীর্ঘ রেলভ্রমণ করেছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, সকালে রেললাইনের দু’ধারে হাজার হাজার নারী-পুরুষ ছেলে-বুড়ো বসে বসে প্রাতঃকর্ম সম্পন্ন করছেন। খোলামেলা অবস্থায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বসে পড়েছেন। রেলগাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো বেশ বিব্রতকর। শুধু তাই নয়। টয়লেট না থাকার জন্য সংসার ভাঙ্গার ঘটনা সেখানে অহরহ ঘটছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে নোংরা কিংবা দূষিত শহর যাই বলি না কেন তাতে ভারতের প্রধান প্রধান শহরগুলো প্রথম সাড়িতেই থাকে। যাইহোক, আমি ব্যক্তিগত ভাবে ভারতের এই আন্দোলনকে মনেপ্রাণে সাপোর্ট করার পাশাপাশি তাদের সফলতা কামনা করি।



এখন প্রশ্ন হলো, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কি ভারতের চেয়ে খুব ভাল অবস্থায় আছে? মোটেও তা নয়। বরং আমাদের দেশের অবস্থাও তথৈবচ। এটা ঠিক ভারতের মত অত ভয়াবহ অবস্থা আমাদের নয়। তবু পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে আমাদের অবস্থাও বেশ সঙ্গীণ। ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট গ্রুপের সংগঠন দ্য ইকনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (ইআইইউ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ২০১৪ সালের বিশ্বে বসবাসের সবচেয়ে অযোগ্য শহর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। গত বছরও এই মন্দ তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়। সুত্রঃ লিঙ্ক



শুধু তাই নয়। নিউইয়র্কভিত্তিক "মার্চার হিউম্যান রিসোর্স কনসাল্টিংস" নামের একটি সংস্থার স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ক এক গবেষনা সমীক্ষায় ২০০৭ সালে মুল্যায়নে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে অপরিচ্ছন্ন শহরের তালিকায় দ্বিতীয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ফোবস ম্যাগাজিনে ‘দি ওয়াল্ডর্স ডারটিয়েস্ট সিটিস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর এবং লজ্জাকরও বটে। বায়ু দূষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা সুবিধা, পয়োঃনিস্কাশন, ঘনবসতি এবং সংক্রামক রোগ-ব্যাধির প্রাদূর্ভাব কে পরিমাপক ধরে এবং নিউইয়র্ক শহরকে ইনডেস্ক- ১০০ ধরে বিশ্বের মোট ২১৫টি শহরকে নিয়ে এই সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। সংস্থাটির মুল্যায়নে ঢাকার স্কোর দাঁড়ায় ২৯.৬ পয়েন্ট। সুত্রঃ লিঙ্ক



এ সকল প্রতিবেদনকে বিশ্বাস না করে উপায় নেই। যেমনঃ ঢাকার শ্যামলীতে আমি থাকি। আমার বাসার মাত্র ৫০০ বর্গফুটের মধ্যে ৪টি উন্মুক্ত ডাস্টবিন আছে। প্রতিনিয়ত এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে করে অত্র এলাকার মানুষদের এক অসহ্য গন্ধময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিদিন। এ অবস্থা গোটা শহরের এক খন্ডচিত্র মাত্র। পথে-ঘাটে ধুলা-ময়লার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের শুহুরে পয়োঃনিস্কাশন ব্যবস্থার আসল চেহারা বেরিয়ে পড়ে। অন্যদিকে যেখানে সেখানে টয়লেট করার প্রবণতা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও প্রবল। খোলা মাঠ বা উম্নুক্ত জায়গার আশপাশ দিয়ে পথ চললেই টের পাওয়া যায়। গ্রামের শতকরা ৮০% মানুষের বাড়িতে হয়ত টয়লেট আছে। তবু ক্ষেতে-খামারে ‘ত্যাগ’ করার অভ্যাস এখনো আমাদের রয়ে গেছে। ঢাকার কথা বলা যাক। রাজধানী শহরে কমপক্ষে ১কোটি মানুষের বসবাস। তার মধ্যে আনুমানিক ৪০-৫০ লক্ষের মত মানুষ দিনের কোন না কোন সময়ে কাজের উদ্দেশ্যে বাইরে বের হয়। এখন বলুন তো, এই ঢাকা শহরে কয়টা পাবলিক টয়লেট আছে? হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র। তাহলে খুব ‘চাপ’ দিলে মানুষ কোথায় যায়? সময়ে অসময়ে ভুক্তভোগী মানুষ পথচারীকে মিনতি সহকারে জিজ্ঞেস করে, “ভাই, মসজিদটা কোন দিকে”? ঐ পথচারীও মুচকি হেসে পথ দেখিয়ে দেয়। ঢাকা মসজিদের শহর বলে রক্ষে। না হলে খবর আছিল।



সবশেষ কথা, আমাদেরও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান দরকার। আমরা তো সবকিছু নিয়েই আন্দোলন করি। এ ব্যাপারে আমরাও উদ্যোগী হতে পারি। এটা করলে একদিকে যেমন দূষণ ও রোগ-বালাই থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব অন্যদিকে পরিচ্ছন্ন পরিবেশে মনটাও প্রফুল্ল থাকবে।



সবাইকে বিজয়ের মাসের শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.