নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রধানতম কিছু সংখ্যক সাহাবীদের (রাঃ) সম্মানসূচক উপাধি এবং তার শানে নুযূলঃ পর্ব- ০২

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

প্রথম পর্বের লিঙ্কঃ Click This Link

হযরত যুবাইর ইবনুল আওয়াম রাঃ
হযরত যুবাইর রাঃ ইসলামের প্রথম দিককার একজন সাহাবী। তিনিও আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত। তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর সা. ফুফাতো ভাই। অন্যদিকে হযরত সিদ্দিকে আকবরের কন্যা হযরত আসমাকে বিয়ে করায় রাসূলুল্লাহ সা. ছিলেন তাঁর ভায়রা। এভাবে রাসূলুল্লাহর সা. সংগে ছিল তাঁর একাধিক আত্মীয়তার সম্পর্ক।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
খন্দকের যুদ্ধে মুসলিম নারীরা যেদিকে অবস্থান করছিলেন, সে দিকটির প্রতিরক্ষার দায়িত্বভার লাভ করেন যুবাইর রা.। এ যুদ্ধের সময় মদীনার ইয়াহুদী গোত্র বনু কুরাইজা মুসলিমদের সাথে সম্পাদিত মৈত্রী চুক্তি ভঙ্গ করে। রাসূল সা. তাদের অবস্থা জানার জন্যে কাউকে তাদের কাছে পাঠাতে চাইলেন। তিনবার তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে তাদের সংবাদ নিয়ে আসতে পার?’ প্রত্যেকবারই হযরত যুবাইর বলেন, ‘আমি’। রাসূল সা. তাঁর আগ্রহে সন্তুষ্ট হয়ে বলেন, ‘প্রত্যেক নবীরই থাকে একজন হাওয়ারী। আমার হাওয়ারী যুবাইর।’ সেদিন থেকেই তার উপাধি হয়ে যায় ‘হাওয়ারিয়্যূ রাসূলিল্লাহ’ বা আল্লাহর রাসুলের সাহায্যকারী, বন্ধু, সব কাজে বিশেষ সঙ্গী।

হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রাঃ
হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ রাঃ ছিলেন হযরত মুহাম্মদ (সা) এর একজন সাহাবী। খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাবের সময় তিনি রাশিদুন সেনাবাহিনীর একজন সেনাপতি ছিলেন। তিনি আশারায়ে মুবাশ্শারা'র একজন

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
তিনি ছিলেন তীক্ষ্ণ মেধাবী, অত্যন্ত বিনয়ী ও লাজুক প্রকৃতির। তবে যে কোন সংকট মুহূর্তে সিংহের ন্যায় চারিত্রিক দৃঢ়তা তাঁর মধ্যে ফুটে উঠত। তাঁর চারিত্রিক দীপ্তি ও তীক্ষ্ণতা ছিল তরবারীর ধারের ন্যায়। রাসূলের সা. ভাষায় তিনি ছিলেন উম্মাতে মুহাম্মাদীর ‘আমীন’- বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেনঃ ‘প্রত্যেক জাতিরই একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তি আছে। আর এ মুসলিম জাতির পরম বিশ্বাসী ব্যক্তি আবু উবাইদা।’

হযরত বিলাল ইবনে রাবাহ (রাঃ)

হযরত বিলাল (রাঃ) ছিলেন নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর একজন ঘনিষ্ঠ ও প্রসিদ্ধ কৃষ্ণাঙ্গ সাহাবী। ১ম হিজরী সনে মুহাম্মাদ (সা) আযান দেয়ার রীতি প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি বিলালকেই তার সুগভীর, সুমধুর ও সুরেলা কণ্ঠের জন্য প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে বেঁছে নেন। সুন্নি এবং শিয়াগণ উভয়ই বিলালকে ‘প্রথম মুয়াজ্জিন’ হিসেবে স্বীকার করেন।

হযরত হামযা ইবন আবদ আল-মুত্তালিব রাঃ
হযরত হামযা রাঃ ছিলেন ইসলামের শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চাচা। তিনি এবং মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন প্রায় সমবয়সী।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
হযরত হামজা রাঃ তার বীরত্বের জন্যে আল্লাহর সিংহ এবং স্বর্গের সিংহ নামে পরিচিত ছিলেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে যুদ্ধে মুসলমানদের মধ্যে তার শৌর্য-বীর্যের সমকক্ষ ছিল বিরল। তিনি ৬২৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন।

হযরত যায়িদ ইবন হারিসা (রা)
মহানবী সাঃ এর অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ও পালক পুত্র যায়েদ ইবনে হারিসা (রা.)।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
কোন এক অভিযান শেষে হযরত যায়িদ মদীনায় ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে যেভাবে গ্রহণ করেছিলেন, তার একটি বর্ণনা দিয়েছেন হযরত আয়িশা রা.। তিনি বলেন- ‘যায়িদ ইবন হারিসা মদীনায় ফিরে এলো। রাসূলুল্লাহ সা. তখন আমার ঘরে। সে দরজার কড়া নাড়লো। রাসূল সা. প্রায় খালি গায়ে উঠে দাঁড়ালেন। তখন তাঁর দেহে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত একপ্রস্থ কাপড় ছাড়া কিছু ছিল না। এ অবস্থায় কাপড় টানতে টানতে দরজার দিকে দৌড়ে গেলেন। তাঁর সাথে গলাগলি করলেন ও চুমু খেলেন। আল্লাহর কসম, এর আগে বা পরে আর কখনও রাসূলুল্লাহকে সা. এমন খালি গায়ে আমি দেখিনি।’

যায়িদের প্রতি রাসূলুল্লাহর সা. গভীর ভালোবাসার কথা মুসলিম জনতার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে লোকে তাকে ‘যায়িদ আল হুব্ব’ বলে সম্বোধন করতো এবং তাঁর উপাধি হয় ‘হিব্বু রাসূলিল্লাহ’ বা রাসূলুল্লাহর প্রীতিভাজন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা)
আবদুল্লাহ নাম, আবুল আব্বাস কুনিয়াত। পিতা আব্বাস, মাতা উম্মুল ফাদল লুবাবা। কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখার সন্তান। রাসূলুল্লাহর সা. চাচাতো ভাই এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত মায়মুনা রা. তাঁর আপন খালা।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
অগাধ জ্ঞান পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি আরব জাতি তথা উম্মাতে মুহাম্মাদীর ‘হাবর ও বাহর’ (পূণ্যবান জ্ঞানী ও সমুদ্র) উপাধি লাভ করেছিলেন। ইনি সেই আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস যাঁকে উম্মাতে মুহাম্মাদীর রাব্বানী (আল্লাহকে জেনেছে এমন জ্ঞানী) বলা হয়েছে। আল্লাহর কিতাব পবিত্র কুরআন সম্পর্কে অধিক জ্ঞানী, তার ব্যাখ্যা ও ভাব সম্পর্কে অধিক পারদর্শী এবং তার রহস্য উপলব্ধির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ ছিলেন নবী মুহাম্মদের (সা) একজন সাহাবী বা সাথী। মুহাম্মদ (সা) মক্কায় ইসলাম প্রচার শুরু করার পর প্রথম দিকের ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে তিনি একজন।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
রাসূলুল্লাহর(সাঃ) একজ খাদিম হিসেবে উৎসর্গ করেন। রাসূলুল্লা(সাঃ) ও তাকে খাদিম হিসেবে নিয়োগ করেন। সেইদিন থেকে এ সৌভাগ্যবান বালক রাখালী থেকে সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠতম মানুষের খাদিমে পরিণত হন। তিনি ছায়ার মতন নিজের মনিবকে অনুসরণ করেন। সফরে বা ইকামাতে, গৃহের অভ্যন্তরে বা বাইরে সবসময় তিনি তার সাথে থাকতেন। রাসূল(সাঃ) তাকে যখনই ইচ্ছা তার কামরায় প্রবেশ এবং কোন প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সংকোচ না করে তার সকল বিষয় অবগত হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। আরএ কারণেই তাকে "সাহিবুস সার" বা রাসূলুল্লাহর (সাঃ) সকল গোপন বিষয়ের অধিকারী বলা হয়।

হযরত আবু আবদিল্লাহ আল আরকাম রাঃ
হযরত আরকামের খান্দান জাহিলী যুগের আরবে বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতার অধিকারী ছিল। তাঁর দাদা আবু জুনদুব আসাদ ইবন আবদিল্লাহ তার যুগে মক্কার একজন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ছিলেন।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
আলোচ্য সাহাবীর বিষয় একটু ভিন্নতর। হযরত আরকাম রা. যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন রাসূলুল্লাহর সা. সহ সকল মুসলমানের অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক। মক্কার পৌত্তলিক শক্তি চাচ্ছিল, শক্তি অর্জনের পূর্বেই এ আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে। কিন্তু ইসলাম তো নিশ্চিহ্ন হওয়ার জন্য আসেনি। ইসলাম গ্রহণের পর হযরত আরকামের বাড়ীটি ইসলামের গোপন ঘাঁটিতে পরিণত হয়। ইসলামের প্রথম পর্যায়ের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলেই ঘুরেফিরে ‘দারুল আরকাম’ বা আরকামের বাড়ীর কথাটি আমাদের সামনে আসে। ইসলামের দাওয়াত ও প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এ বাড়িটির এক মহান ভূমিকা রয়েছে।

হযরত আবু হুরাইরা আদ-দাওসী (রা)
আবু হুরাইরা, এ নামটি জানে না মুসলিম জাতির মধ্যে এমন কেউ কি আছে? অগাধ জ্ঞান, সীমাহীন বিনয় ও উদারতার সাথে আবু হুরাইরার মধ্যে তাকওয়া ও আল্লাহপ্রীতির এক পরম সম্মিলন ঘটেছিল। তিনি ছিলেন হাদিস কণ্ঠস্থকারী সাহাবিদের অন্যতম শীর্ষস্থানীয়। আবু হুরাইরা রা. মুসলিম উম্মাহর জন্য হাজার হাজার হাদীস স্মৃতিতে ধারণ করে সংরক্ষণ করে গেছেন।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
‘আবু হুরাইরা’ তাঁর কুনিয়াত বা উপনাম। ছোট বেলায় একটি বিড়াল শাবকের সাথে তিনি সবসময় খেলতেন। তা দেখে সাথীরা তাঁর নাম দেন আবু হুরাইরা (বিড়াল শাবকওয়ালা)। আস্তে আস্তে এ নামেই তিন সকলের মাঝে পরিচিত হন এবং তাঁর আসল নামটি ঢাকা পড়ে যায়। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূলুল্লাহর সা. সাথে যখন তাঁর সম্পর্ক গভীর হয় তখন মাঝে মাঝে তিনি আদর করে ডাকতেন ‘আবু হিররিন’। তাই তিনি আবু হুরাইরার পরিবর্তে আবু হিররিন নামটিকেই প্রাধান্য দেন। তিনি বলতেনঃ আমার হাবীব আল্লাহর রাসূল আমাকে এ নামেই ডেকেছেন। তাছাড়া হিররুন পুং লিঙ্গ এবং হুরাইরা স্ত্রী লিঙ্গ।

হযরত উসামা ইবন যায়িদ (রা)
রাসূলুল্লাহর সা. সাথে মক্কার সমগ্র মুসলিম সমাজ শিশুটির ভূমিষ্ঠ হওয়ার সংবাদে উৎফুল্ল হয়েছিল। সেই সৌভাগ্যবান নবজাতক, যার ধরাপৃষ্ঠে আগমণ সংবাদে আল্লাহর রাসূল সা. এত উৎফুল্ল হয়েছিলেন, তিনি উসামা ইবন যায়িদ। শিশুর পিতাকে যেমন তারা উপাধি দিয়েছিল ‘হিববু রাসুলিল্লাহ’, তেমনি তারা তাকে উপাধি দিল ‘ইবনুল হিব্ব’ বা রাসূলুল্লাহর সা. প্রীতিভাজনের পুত্র। তাদের এ উপাধি দান কিন্তু যথার্থই হয়েছিল।

হযরত আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম (রা)
‘মুয়ায্‌যিনুর রাসূল’ হযরত আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম সেই মহান সাহাবী যাঁর জন্য সপ্তম আকাশের ওপর থেকে নবী করীমকে সা. তিরস্কার করা হয়েছে এবং যাঁর শানে আল্লাহর নিকট থেকে হযরত জিবরীল আ. অহী নিয়ে রাসূলুল্লাহর সা. নিকট অবতরণ করেছেন। তিনি সেই গর্বিত মহাপুরুষ যাঁর সম্পর্কে আল-কুরআনের সর্বমোট ষোলটি আয়াত নাযিল হয়েছে।

উপাধি এবং শানে নজুলঃ
আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম ও বিলাল ইবন রাবাহকে মুসলমানদের মুয়ায্‌যিন নিয়োগ করেন। তাঁরা দু’জন ছিলেন মুসলিম উম্মাতের প্রথম মুয়ায্‌যিন। ঘুরেফিরে বিলাল আযান দিতেন, আর ইবন উম্মে মাকতুম দিতেন ইকামাত। রমযান মাসে তাঁরা অন্য একটি কাজও করতেন। মদীনার মুসলমানরা তাঁদের একজনের আযান শুনে সেহরী খাওয়া শুরু করতেন এবং অন্যজনের আযান শুনে খাওয়া বন্ধ করতেন। বিলালের আযান শুনে লোকেরা সেহরীর জন্য জেগে উঠতো। এদিকে আবদুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম প্রতীক্ষায় থাকতেন সুবহে সাদিকের সুবহে সাদিক হওয়ার সাথে সাথে তিনি আযান দিতেন, আর সে আযান ‍শুনে লোকেরা খাওয়া বন্ধ করতো। এজন্য তাকে ‘মুয়ায্‌যিনুর রাসূল’ বলা হত।

বিঃ দ্রঃ - বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম উচ্চারিত হলে দরুদ পড়া মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এই লেখাতে (সাঃ) থাক বা না-থাক, পাঠকগণ এ বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।

যেকোন প্রকার ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর ভুল ধরিয়ে দিলে বাধিত থাকব।

আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

কৃতজ্ঞতায়ঃ
1. ‘আসহাবে রাসূলের জীবনকথা', লেখক হাম্মাদ আব্দুল মা'বুদ
2. পি কে হিট্টি'র ক্লাসিক গ্রন্থ 'হিস্ট্রি অব আরবস'
3. উইকিপিডিয়া

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: জেনে খুব ভাল লাগলো ।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৯

ইছামতির তী্রে বলেছেন: লেখাটি নির্বাচিত পাতায় দেয়ার জন্য মডুদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.