নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, সুপন্ডিত অধ্যাপক পি. কে. হিট্টির দৃষ্টিতে মহানবী সাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী-শেষ পর্ব)।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩১

প্রথম পর্বের লিঙ্ক এখানে

[বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নাম উচ্চারিত হলে দরুদ শরীফ পড়া সকল মুসলমানদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। ]

মদীনাবাসীদের এই আধিপত্যের যুগে ইসলামের আরবীয়করণ ও জাতীয়করণ ঘটেছিল। এই নতুন ধর্মবেত্তা ইহুদিদের ধর্ম খ্রিস্টধর্মের অবসান ঘটিয়েছিলন। কর্মবিরতির জন্য নির্দিষ্ট দিনের (সাব্বাথ) স্থান গ্রহণ করল শুক্রবার। ভেরী ও ঘন্টাধ্বনির বদলে আযান শুরু করার আদেশ দেয়া হল, রমযানকে উপবাসের মাস হিসেবে নির্দিষ্ট করা হল, কিবলাহ-র অভিমুখ জেরুজালেমের পরিবর্তে মক্কার দিকে করা হল। কা’বায় তীর্থযাত্রা স্বীকৃতি পেল এবং ইসলাম-পূর্ব যুগের অন্ধভক্তি থেকে উদ্ভূত কালো পাথরকে চুম্বন প্রথাটিও অনুমোদন পেল।

মুহাম্মদ ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁর একদল অনুগামীকে নিয়ে মক্কা থেকে ৯ মাইল দূরে হুদাইবিয়ায় এসে পৌছলেন এবং সেখানে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করলেন, যাতে মক্কার অধিবাসী ও মুসলমানদের সমান অধিকার দেওয়া হল। এই চুক্তির ফলে তাঁর অনুগামী ও কোরায়েশদের মধ্যে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। কোরায়েশ উপজাতির অন্যান্য সদস্যরা যেমন খালিদ-ইবনে-ওয়ালিদ এবং আমর-ইবনে-আল-আস প্রমুখ এই সময়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। খালিদ ও আমর ইসলামের সামরিক অভিযানে শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হন, দু’বছর পর, ৬৩০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারী মাসের শেষ নাগাদ (অষ্টম হিজরী) মক্কা বিজয় সম্পূর্ণ হয়। তারপর হযরত মুহাম্মদ প্রবেশ করলেন মক্কার পবিত্র কা’বাগৃহে। বলা হয় যে, কা’বাগৃহে তখন ৩৬০টি দেবমূর্তি ছিল। মুহাম্মদ নিজের হাতে অনেকগুলি মূর্তিকে গুড়িয়ে দিলেন। আর তিনি পাঠ করছিলেনঃ ‘সত্য এসেছে, মিথা বিদূরিত হয়েছে’।

যাইহোক, বিজিতদের সঙ্গে বিশেষ মহত্বপূর্ণ ব্যবহার করা হয়েছিল। বিজয়ী মুসলিম বাহিনী মক্কা প্রবেশের সময় যেরুপ মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন প্রাচীন ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত দেখা যায় না।

সম্ভবত এই সময় নাগাদ কা’বার আশপাশের এলাকাকে হযরত মুহাম্মদ ‘হারাম’ (নিষিদ্ধ, পবিত্র) ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে কোরআনের ৯:২৮ অংশে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ হয়েছে। এই দৃস্টিভঙ্গি অনুযায়ী পরবর্তীকালে ব্যাখ্যা করা হয় যে, সেখানে অমুসলিমদের পক্ষে প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই হুকুম এখনও বলবত আছে।

নবম হিজরীতে হযরত মুহাম্মদ গাসসান সীমান্তবর্তী অঞ্চল তাবুকে একদল সেনা মোতায়েন করেন এবং কোন যুদ্ধবিগ্রহ ছাড়াই আল-আকাবাহ-র খ্রিস্টান প্রধান, মাকনার মুরুদ্যানবাসী ইহুদি জাতি, এবং দক্ষিণে আযরুহ ও আল-জারবা-র সঙ্গে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। আর স্থানীয় ইহুদি-খ্রিস্টানরা কর প্রদানের (জিজিয়া) মাধ্যমে এই নতুন ইসলাম সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস লাভ করে। এরুপ কার্যাবলির ফলাফলের মধ্যে স্থাপিত হয়েছিল অতীতের সুদূরপ্রসারী উদাহরণ।

হিজরী সনের এই নবম বর্ষকেই (৬৩০-৩১ খ্রিঃ) বলা হয় ‘দূতের বছর’। এই সময়কালে হযরত মুহাম্মদের কাছে চুক্তির প্রস্তাব নিয়ে কাছাকাছি ও দূরবর্তী এলাকার দূতগণ এসেছিলেন। সুবিধার কথা চিন্তা না করে উপজাতিগুলি মৈত্রীচুক্তিতে শামিল হতে শুরু করেছিল, যদিও তারা দৃঢ়বশ্বাসী ছিল না। পক্ষান্তরে, ইসলাম তার অনুসারীদের কাছ থেকে ইমান বা ধর্মবিশ্বাসের পূর্ণ মৌখিক স্বীকৃতি এবং যাকাত আদায় করে নিজেকে পরিতৃপ্ত করেছিল। এই বিশালসংখ্যক বেদুইন জনগোষ্টী এই নতুন মতবাদকে আবাহন করেছিল। আর এটা ওমরের একটি উক্তিতে অনুমান করা হয়েছে, “বেদুইনরা হল ইসলামের উপাদান’।

একে একে গোটা আরব অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিধিরা আসতে লাগল। যে আরব এর আগে কখনও একজন মানুষের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করেনি, সে এবার মুহাম্মদের নেতৃত্ব পরিচালিত হবার এবং তাঁর পরিকল্পনায় অঙ্গীভূত হবার প্রবণতা প্রকাশ করল। মহান ধর্মবিশ্বাস ও উন্নত নৈতিকতা সেখানকার বর্বরতার স্থান দখল করল।

দশম মুসলিম বর্ষে মুহাম্মদের নেতৃত্ব বাষিক তীর্থযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে তাঁর নতুন ধর্মীয় রাজধানী মক্কাতে প্রবেশ করল। এটাই ছিল তাঁর শেষ সফর এবং তাই একে ‘বিদায়ী তীর্থযাত্রা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। মদীনায় তাঁর ফিরে আসার তিনি মাস পরে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন প্রবল মাথার যন্ত্রণায় প্রাণ হারান।

মুহাম্মদের জীবনে মদীনার এই অধ্যায়টিতে কোরআনে দীর্ঘ ও অধিক বাকবহুল সূরা অবতীর্ণ হয়। রো্যা, যাকাত ও প্রার্থনার ধর্মীয় রীতিনীতি ছাড়াও বিবাহ, বিবাহ-বিছেদ, ক্রীতদাস, যুদ্ধবন্দি ও শত্রুদের প্রতি আচরণ সম্পর্কে সামাজিক ও রাজনৈতিক নির্দেশ এই পর্বের সূরা হতে পাওয়া যায়। যিনি নিজে একসময় অনাথ ছিলেন, তিনি ক্রীতদাস, অনাথ, দুর্বল ও অত্যাচারিত মানুষজনের সম্পর্কে আইন তৈরি করেন তাঁর মধ্যে বিশেষভাবে পরোপকারের ইচ্ছার প্রকাশ পায়।

তিনি তাঁর জীবনের অখ্যাত অধ্যায়ের মতো গৌরবময় অধ্যায়েও একটি মাটির বাড়িতে অতি সাদাসিদা জীবনযাপন করতেন। এখনকার আরব ও সিরিয়ার পুরানো ধাচের বাড়ির মতো তাঁর বাড়িতেও ছিল কয়েকটি ঘর এবং তার সামনেই ছিল উঠোন, আর এই উঠোন দিয়ে প্রতিটি ঘরেই যাওয়া যেত। প্রায়ই তাঁকে নিজের কাপড় সেলাই করতে দেখা যেত এবং সর্বদা সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর দ্বার ছিল অবারিত। যা কিছু তার সঞ্চয় ছিল, তাকে তিনি রাস্ট্রের সম্পত্তি বলে গণ্য করতেন। করুণাজড়িত ও রাজনৈতিক কারণে সব মিলিয়ে তার ১২ জন স্ত্রী ছিল। মুহাম্মদের স্ত্রী খাদিজার গর্ভে বেশ কয়েকটি সন্তান জন্মেছিল। তাঁর দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্ববহ অথবা মামুলি ধরণের আচরণগুলিও এক এটি অনুশাসনের সৃষ্টি করেছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ সেগুলি আজও সচেতনতার সঙ্গে অনুকরণ করে আসছে। মানবজাতির আর কোন অংশই তাঁর মতো আর কাউকে পরিপুর্ণ মানুষরুপে গ্রহণ করে তাঁর আচার-আচরণগুলিকে এত সূক্ষভাবে অনুকরণ করেনি।

মদীনার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই পরে বৃহত্তম ইসলামি রাস্ট্রের উদ্ভব হয়। ধর্মের ভিত্তিতে মোহাজির ও আনসারদের এই নতুন সম্প্রদায়টি উম্মাতরুপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরবের ইতিহাসে এই হিসেবে রক্তের সম্পর্কের পরিবর্তে ধর্মের ভিত্তিতে একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলার চেস্টা হয়। রাস্ট্রের নিরংকুশ ক্ষমতার ব্যক্তিকরণ ঘটে আল্লাহর মধ্যদিয়ে। জীবতাবস্থায় মুহাম্মদই ছিলেন পৃথিবীর বুকে তার আইনসঙ্গত প্রতিনিধি এবং সর্বোচ্চ শাসক। সুতরাং আধ্যাত্বিক ক্ষমতা ছাড়াও এক রাস্ট্রপ্রধানের মতো মুহাম্মদ রাজকীয় কর্তৃত্বও ভোগ করতেন। উপজাতীয় ও পুরানো আনুগত্য নির্বিশেষে এই সম্প্রদায়ের সকলেই অন্তত নীতিগতভাবে ভ্রাতৃত্ববোধের সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন।

“বিদায়ী হজ্ব”- এ মুহাম্মদ যে মহান উপদেশাবলি বিতরণ করেন তার মধ্যেই কথাগুলি ব্যক্ত হয়েছেঃ
উপস্থিত জনমণ্ডলী! তোমরা আমার কথাগুলি শোন এবং অন্তর দিয়ে সেগুলি গ্রহণ করো! মনে রেখ, প্রত্যেক মুসলিমই অপর মুসলিমের ভাই এবং তোমরা সকলেই এই ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধনে আবদ্ধ। সতুরাং তোমার ভাই যতক্ষণ না কোন সম্পত্তি স্বেচ্ছায় তোমাকে দিচ্ছে, ততক্ষণ ভোগদখল করা তোমাদের কারোর পক্ষেই আইনসঙ্গত নয়”।

এইভাবে এক খোচায় আরবীয় সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি মানে উপজাতীয় আত্বীয়তা ধর্মবিশ্বাসের নতুন বন্ধন দ্বারা পরিবর্তিত হল। অর্থ্যাৎ আরবের সমস্ত ইসলাম ধর্মবিশ্বাসীদের জন্য একধরনের যুদ্ধবিরতির আদেশ বলবত হল। এই নতুন ধর্মসম্প্রদায়ের কোন যাজকবর্গ, যাজকতন্ত্র, প্রধান বিশপের এলাকা কিছুই রইল না। মসজিদই ছিল এই সম্প্রদায়ের সমাবেশস্থল, সামরিক ব্যায়ামের ক্ষেত্র ও সকল মানুষের আরাধনার স্থান। প্রার্থনার পরিচালক মানে ইমাম ছিলেন ধর্মবিশ্বাসীদের সামরিক বাহিনীর প্রধান এবং এই ধর্মবিশ্বাসীদের প্রত্যেকেই গোটা বিশ্বের আক্রমণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একে অপরকে সাহায্য করার নির্দেশ পেয়েছিল। যে সমস্ত আরবীয়রা বর্বর ছিল, তারা সকলেই ছিল সমাজের সীমানার বাইরে। তারা প্রায় দস্যু বলে গণ্য হত। ইসলাম অতীতের জীবনাচরণকে বাতিল করে দিল। মহিলা ছাড়া আর যে দুটি জিনিস আরবীয়দের কাছে খুব প্রিয় ছিল সেই মদ ও জুয়াকে একটি সূরায় নিষিদ্ধ করা হলো। আরবীয়দের কাছে সমান আকষর্ণীয় সঙ্গীতের প্রতিও বিরাগ দেখানো হল। যে সমস্ত দেশত্যাগী মুসলিম আবিসিনিয়ায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের মুখপাত্র জাফর-ইবনে-আবু-তালিবের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে পুরানো ও নতুন সমাজব্যবস্থার পার্থক্য স্পস্টভাবে ফুটে উঠে।

মদীনা থেকে ইসলামী ধর্মভিত্তিক রাস্ট্র গোটা আরবে ছড়িয়ে পড়ে এবং পরে তা পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার বিরাট অংশকে গ্রাস করে। মদীনার ইসলাম ধর্ম সম্প্রদায় ছিল পরবর্তীকালের গোটা ইসলামি সম্প্রদায়ের একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ মাত্র।

তাঁর সংক্ষিপ্ত নশ্বর জীবনে মুহাম্মদ সম্ভাবনাহীন উপাদান থেকে এমন এক জাতির উদ্ভব ঘটান, যারা আগে কখনও ঐক্যবদ্ধ ছিল না। আর তাদের মাধ্যমে এমন এক দেশের সৃষ্টি করেন, যা আগে শুধু একটি ভৌগলিক সীমানাকেই বোঝাত কিন্তু তার জাতীয় চরিত্র বলতে কিছু ছিল না। বিরাট অঞ্চল জুড়ে খ্রিস্টানধর্ম ও ইহুদি ধর্মের অবসান ঘটিয়ে তিনি একটি নতুন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন এবং মানবজাতির একটি বিশাল অংশ এখনো সেই ধর্ম অনুসরণ করে। মুহাম্মদ এমন একটি সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেন, তখনকার সভ্য দুনিয়ার সুন্দরতম প্রদেশগুলি শিগগীরই সে সাম্রাজ্যের সুদূর যে প্রসারিত সীমানার অন্তভুক্ত হয়। স্কুলের শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও মুহাম্মদ এমন একটি বইয়ের বিশ্বাসযোগ্য উপলক্ষ্য হয়েছেন, যে বইটিকে গোটা মানবজাতির এক-অষ্টমাংশ সমস্ত বিজ্ঞান, জ্ঞান ও ধর্মতত্বের মূত প্রকাশ বলে আজও গণ্য করেন। সেই বই হলো ঐশীগ্রন্থ কোরআন।

অসংখ্য নবীদের সর্বশেষ নবী, মুহাম্মদকে তাদের ‘সীল’ (৩৩:৪০) ও সেই অর্থে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে গণ্য করা হয়। কোরআনভিত্তিক ধর্মতত্ত্বে মুহাম্মদকে একজন মানুষ হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে, যার একমাত্র ঐশী ক্ষমতা হল কোরআনের ই’জাজ বা সৃষ্টি। তবে হাদিস, লোককথা ও বহুল প্রচিলত বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি দিব্যশক্তির অধিকারী ছিলেন। তাঁর ধর্ম নিঃসন্দেহে একটি বাস্তব ধর্ম এবং এর মধ্য দিয়ে স্রস্টার বাস্তব জ্ঞান ও সুচিন্তিত মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। এই ধর্মের মধ্যে এমন কোন আদর্শের কথা বলা হয়নি যা মানুষের ধরাছোয়ার বাইরে, তেমনি এই ধর্মের মধ্যে জটিলতার পরিমাণ খুবই অল্প। এ ছাড়া এ ধর্মে কোন অতিপ্রাকৃত সংস্কার, যাজকতন্ত্র, যাজক সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি, বিশপের পদে উন্নয়ন ও ভগবদ-বাক্য প্রচারের উত্তরাধিকারলাভ কিছু নেই।

কালিমা, নামায, রো্যা, হজ্ব, যাকাত, জিহাদ ইত্যাদি ধর্মীয় কর্তব্যগুলিই (ইবাদাত) হল ইসলাম ধর্মের মূল উপাদান। কোরআনের নির্দেশাবলির দ্বারা শুধু এগুলিই প্রবর্তিত হয়নি। ন্যায় কাজের (ইহসান) চরিত্র নির্ধারণের ক্ষেত্রেও সেই একই ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রয়েছে। মুসলিম দুনিয়ায় ব্যক্তিগত ও সামাজিক নৈতিকতা উভয়ই ধর্মীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা নির্ধারিত। মুহাম্মদের মাধ্যমে প্রকাশিত আল্লাহর ইচ্ছাই মূলত কোনটা হালাল, কোনটা হারাম তা নির্ধারণ করে। আরব দেশে ধর্মের ঐতিহাসিক বিবর্তনের ক্ষেত্রে ইসলাম ধর্মই প্রথম ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও ব্যক্তির নৈতিকতার (সূরা ৫৩:৩৯-৪২; ৩১:৩২) দাবি করেছিল। নৈতিক আচরণের ক্ষেত্রে এই ধর্ম রক্তের সম্পর্কের ভিত্তিতে উপজাতীয় আত্বীয়তার পরিবর্তে ধর্মভিত্তিক নৈতিকতার মৈত্রীবন্ধন গড়ে তুলেছিল। মানবিক গুণাবলির মধ্যে ইসলাম ধর্ম পরোপকারের মানসিকতার ওপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব আরোপ করে এবং যাকাত এর মধ্যে দিয়ে এই মানসিকতার প্রকাশ ঘটে থাকে। ইসলামই অন্ধকার আরব তথা অন্ধ মানবজাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছিল, সভ্যতার দিকে ধাবিত করেছিল।

একদা মদিনাকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র একটি মুসলিম রাস্ট্র প্রবল এক টেউ হয়ে আছড়ে পড়ে বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। ইসলামের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর ১০০ বছর পরে তাঁর অনুগামীরা তখন এমন এক সুবিশাল সাম্রাজ্যের প্রভূত্ব করছেন যা রোমের সুবর্ণযুগের চেয়েও বহরে বৃহত্তম ছিল। দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম ও মধ্য-এশিয়ার কয়েক হাজার (আসলে লক্ষ লক্ষ হবে) মসজিদ থেকে দিনে ৫বার করে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সঙ্গে আরব-সন্তান মুহাম্মদের নাম উচ্চারিত হয়। ***শেষ***

মুহাম্মাদ ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় নেতা। তাঁর এই বিশেষত্বের অন্যতম কারণ হচ্ছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উভয় জগতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন। তিনি ধর্মীয় জীবনে যেমন সফল তেমনই রাজনৈতিক জীবনেও। সমগ্র আরব বিশ্বের জাগরণের পথিকৃৎ হিসেবে তিনি অগ্রগণ্য; বিবাদমান আরব জনতাকে একীভূতকরণ তাঁর জীবনের অন্যতম সফলতা। [উইকিপিডিয়া]

মানব-ইতিহাস ও বিশ্বকে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর আবির্ভাবের আগের ও পরের ইতিহাস কোনোভাবেই আর এক থাকেনি। তিনি ছিলেন মুসলমানদের রাসুল; কিন্তু অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকেও তিনি ভালোবাসতেন সমানভাবে। সকল রকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর জীবনাচরণ ছিল অনন্য উদাহরণ। তাঁর সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ ছিল সর্বমানবিক। আজকের পৃথিবীতে যে হিংসা-হানাহানি চলছে, তা থেকে পরিত্রাণে এই মহান ব্যক্তিত্বের দেখানো শান্তি ও সমঝোতার কোনো বিকল্প নেই। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও করুণার অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের শ্রেষ্ঠতম বন্ধু। [প্রথম আলো সম্পাদকীয়; ২৫-১২-২০১৫]

শেষ কথাঃ
স্মরণ রাখতে হবে যে, ইতিপূর্বে জনাব পি কে হিট্টি সাহেবের বরাত দিয়ে এবং অন্যান্য সুত্র থেকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনের যে সংক্ষিপ্তরুপ আলোচিত তা মূলত তাঁর অসাধারণ ও অতুলনীয় জীবনীর অতি সামান্য রেখাচিত্র মাত্র। প্রকৃতপক্ষে তাঁর জীবনী এত ব্যাপক ও বিস্তৃত ও মহান ছিল যে, তা আলোচনা করে শেষ করা সম্ভব নয় এবং তাঁর চারিত্রিক বৈশিস্টের ব্যাপকতা ও গভীরতা নিরুপণ করাও সম্ভব নয়।

মানবেতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিরুপণ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। পূর্ণতার শ্রেষ্ঠতম আদর্শ এ মহান মানুষের পরিচয় এই যে, তিনি মানবতার সর্বোচ্চ চুড়ায় সমাসীন ছিলেন। তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের পবিত্র আলোক আভায় এমনভাবে আলোকিত ছিলেন যে, কোরআন করিমকেই তাঁর চরিত্রের পরিচয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর চারিত্রিক বৈশিস্ট ছিল পবিত্র কুরআনেরই বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন।

দরুদঃ
আসুন, আমরা মোস্তফা চরণের অনুরক্ত ভক্ত ও সেবক-সেবিকাগণ- পবিত্র দরুদ শরীফ পাঠ করতে করতে এই প্রসঙ্গের উপসংহার করিঃ
‘হে আল্লাহ তায়ালা, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর তুমি শান্তি ও বরকত নাযিল করো, যেমন শান্তি ও বরকত নাযিল করেছিলে হযরত ইবারাহীম (আ.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের ওপর। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী’।

আসুন, আমরাও এই সুরে সুর মিলিয়ে বলিঃ “আমিন!” - 'মোস্তফা চরিত; লেখকঃ মোহাম্মদ আকরম খাঁ।

কৃতজ্ঞতায়ঃ এই লেখাটি নেয়া হয়েছে জনাব প্রফেসর পি কে হিট্টির 'দ্য হিস্ট্রি অব আরবস' অবলম্বনে খন্দকার মাশহুদ-উল-হাছান অনূদিত 'আরবের ইতিহাস' গ্রন্থ থেকে। বইয়ের মূল লেখক এবং অনুবাদক উভয়ের প্রতি রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা।

উৎসর্গঃ
সদ্যপ্রয়াত আমার প্রাণপ্রিয় ‘মা’ কে এবং যারা প্রিয় রাসুল সাঃ কে ভালবাসেন তাদের প্রতি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০২

আজমান আন্দালিব বলেছেন: প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, সুপন্ডিত অধ্যাপক পি. কে. হিট্টির দৃষ্টিতে মহানবী সাঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনী-(২য় পর্ব)...১ম পর্ব ও পড়েছি। ভালো লাগছে আপনার প্রচেষ্টা। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় ...

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ দুই পর্বই পড়ার জন্য। মহানবী সাঃ এর মহাজীবনী এত স্বল্প পরিসরে রচনা অসম্ভব। কিন্তু হিট্টি সাহেব নিপুণ শৈল্পিকতায় তা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। আমার কাছে দারুণ লেগেছে। এখানে এমন কিছু 'কোট' আছে যা আমার পাথেয় হিসেবে থাকবে।

ও হ্যা, এটাই শেষ পর্ব। ঠিক করে দিয়েছি। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.