নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

বারো মাসে চব্বিশ পার্বণ

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৫০

বছর কয়েক আগেও সিংহভাগ মানুষ সাধারণতঃ দুই ঈদে এবং বড়সড় ব্যক্তিগত বা পারিবারিক উপলক্ষ্য ব্যতিত কেনাকাটা তেমন একটা করত না। কিন্তু ‘দিন বদলাইয়া গেছে’। এখন মানুষ বিশেষতঃ মেয়েরা কেনাকাটার জন্য আরো বহু উপলক্ষ্য আবিস্কার করে ফেলেছে। দোষটা আসলে মেয়েদের না দিয়ে বেনিয়া/ব্যবসায়ীদের দিলেই বিষয়টা বেশী গ্রহণযোগ্য হবে। প্রয়োজনীয়-অপ্রোজনীয়, ছোট-বড় যে কোন উপলক্ষ্যেই ব্যবসায়ীদের সহজ নিশানায় পরিণত হচ্ছেন আমাদের মাতা-ভগিণী-কন্যাগণ। বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীরা বেশ চিত্তাকর্ষক নানা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সবাইকে আকৃষ্ট করতে সদা সচেস্ট থাকে। আর এতেই পতঙ্গ যেমন নিজেকে আগুনে সঁপে দেয় তেমনি আমরাও বাছ-বিচার না করেই কেনাকাটার জন্য ঝাপিয়ে পড়ি। এখন অনলাইন শপিং সুবিধা এসে কেনাকাটি বহুগুণে বেড়ে গেছে।

মানুষ ইদানিং কখন, কি উপলক্ষ্যে বাজার-সদাই করে থাকেন তার কিছুটা ফিরিস্তি দেয়া যাক।

জানুয়ারীঃ- এটা মূলত খরচের মাস। নতুন বছর, নতুন প্লান, এবং টাকা খরচ। এই মাসটাতে দাওয়াত যেমন বেশি থাকে আবার উপহার কেনার ঝক্কিও বেশি থাকে। নতুন বছর উপলক্ষ্যে পুরো মাসজুড়েই কিন্তু নানান ডিসকাউন্টের অফার থাকে। তাই বছরের বড় বড় কেনাকাটাগুলো অনেকেই এই মাসেই করে থাকেন। এছাড়া ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ উপলক্ষ্যে অনেকেই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। আর এসব করতে কেনাকাটা আবশ্যক। আবার আমরা অনেকেই ভাবি, নতুন বছরে কিছু কেনাকাটা না করলে বছরটা ‘শুভ’ হবে ক্যামনে? এছাড়া এই সময়ে শীতের কেনাকাটা আছে।



ফেব্রুয়ারীঃ- মাসটি আকার-আয়তনে সবচেয়ে ছোট। তবে কেনাকাটার জন্য বহুত বড় একটি মাস। বহু উপলক্ষ্য। ভাষার মাস, বিশ্ব ভালবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন! প্রতিটা উপলক্ষ্য মনের মত করে পালন করতে কেনাকাটির বিকল্প নেই। ভাষার প্রতি সম্মান জানাতে সাদাকালো পোষাক, বিশ্ব ভালবাসা দিবসে মানুষ কত কিছুই না করে থাকেন। আর পহেলা ফাল্গুন? কি আর বলব ভায়া। পুরোটা মাসজুড়েই চলে কেনাকাটা।


মার্চঃ-স্বাধীনতার মাস বলে কথা! অবশ্যই আমার লাল-সবুজের পোষাক চাই। সরকারী-বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানেই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন থাকে। দিবসের প্রতিপাদ্যের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষ নতুন পোষাক-আসাক কিনে থাকেন।


এপ্রিলঃ- ওরে বাবা! শুভ বাংলা নববর্ষ। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে বেচা-কেনার ধুম পড়ে সারা দেশের বিশেষতঃ রাজধানীর বিপণীবিতানগুলোতে। বৈশাখের আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে বিপণি বিতানগুলো নতুন নতুন পোশাক দিয়ে সাজানো থাকে। আমাদের দেশে এখন ‘পহেলা বৈশাখ ঈদ কিংবা পূজোর মতোই একটি বড় উপলক্ষ্য। বৈশাখী হরেকরকম অফারের ঠ্যালায় সবার জেরোবার অবস্থা। ২০১৫ সাল থেকে সরকার নববর্ষ ভাতা চালু করে এটাকে স্থায়ীভাবে পালন করার সকল বিধিব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলেছে। 'একে তো নাচুনে বুড়ি তার উপর ঢোলের বাড়ি’ অবস্থা। তাছাড়া বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠর তীব্র খরতাপ থেকে বাচতে স্পেশাল কিছু কাপর-চোপড় দরকার।


মেঃ- শ্রমিকের তাজা রক্তে পাওয়া ১লা মে। একটা প্রতিবাদীমার্কা শাড়ি কেনা অতীব জরুরী।


জুনঃ- সব মাসেই কিছু না কিছু কেনা হলো। জুন মাসের কি কোন সম্মান নেই? তাছাড়া আষাঢ়, শ্রাবণ মাসের জন্যও কিছু বিশেষ পোষাক-আসাক দরকার।


জুলাইঃ- ঈদের মাস! বিরতিহীন কেনাকাটা! আগাম বাজেট দেয়া যাবে না। চাঁদ রাত অবধি তা চলতেই থাকবে।
আগস্টঃ- শোকের মাস। একটা ভাব-গাম্ভীর্যপূর্ণ কালো রংয়ের পোশাক চাই-চাই। জন্মাষ্টমীও এই মাসে। এছাড়া আশ্বিন, গা করে শিন শিন, মানে আবারো শীতের আগমনী ঘোষণা।


সেপ্টেম্বরঃ- আবার ঈদ!!! এবার তোর কুরবানি কে ঠেকাবে রে কালিয়া!!


অক্টোবরঃ- এই মাসে এমনি এমনিই কিনি। এছাড়া এই সময়ে নবান্ন উৎসব পালিত হয়। নবান্ন মানে নতুন অন্ন। নতুন ফসল ঘরে তোলা উপলক্ষে কৃষকরা এই উৎসব পালন করে থাকে। এই নতুন ধানের চাল দিয়ে রান্না উপলক্ষে নবান্ন উৎসব হয়ে থাকে। তবে শহুরে মানুষজন অনেকেই ভিন্ন আঙ্গিকে এই নবান্ন উতসব পালন করে থাকে। এরজন্য বিশেষ কেনাকাটা দরকার।


নভেম্বরঃ- আমেরিকানরা এই মাসে স্বজনদের নিয়ে Thanksgiving এর ছুটি উপভোগ করছেন। পারিবারিকভাবে একত্রে ভোজন এবং বিশেষ ছাড়ে কেনাকাটা এই উৎসবের একটা বৈশিষ্ট। বাঙ্গালী এখন বিশ্ব নাগরিক। সে সব দেশের জাতীয় দিবস অতি উতসাহের সাথে পালন করার চেস্টা করে।



ডিসেম্বরঃ- কেনাকাটার জন্য আর একটি ব্যস্ত মাস। বিজয় দিবস, ক্রিসমাস ডে, 31st Day আরও কত কি? ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রেতাদের জন্য দুর্দান্ত সব অফার নিয়ে হাজির হয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। আমরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ি। তুলনামূলকভাবে কম হলেও এখন আমরা ক্রিসমাস মাস ডে’তেও কেনাকাটি করে থাকি। আর 31st Day-র কথা কি আর বলব। এছাড়া একটা বছরের শেষ বিধায় মানুষ বিভিন্ন প্লান-প্রোগ্রাম করে থাকে। এই সময়টা ঘুরে-বাড়নোর মৌসুম। এজন্য কেনাকাটা আবশ্যক।


উপরোক্ত অসংখ্য উপলক্ষ্য ছাড়াও আমাদের সবারই ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা সামাজিক জীবনে নানা উপলক্ষ্য আছে। যেমন, বিয়ে-শাদি, জন্মদিন, দাওয়াত খাওয়া বা খাওয়ানো বা এই রকম যে কোন উপলক্ষ্য সামনে এলেই আমরা কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এর বাইরেও অনেকেই আছেন যাদের কেনাকাটার জন্য কোন উপলক্ষ্যের প্রয়োজন পরে না। যখন যা পছন্দ হয় ঝটপট তা কিনে ফেলেন। এজন্যই দেখা যায় যে, ইদানিং বিপণীবিতানগুলোতে সারা বছর ভীড় লেগেই থাকে। মানুষ দেদারছে টাকা-পয়সা ব্যয় করে পছন্দসই কাপড়-চোপড় কিনছে।



বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। ছোট-বড় যে কোন উপলক্ষ্য এলেই আমরা আনন্দে মেতে উঠি। এজন্যই একটা প্রবাদই আমরা প্রায়ই শুনে থাকি ‘বারো মাসে তের পার্বণ’। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত এটা পরিবর্তিত হয়ে এখন ‘বারো মাসে চব্বিশ পার্বণ’-এ পরিণত হয়ে গেছে।

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪১

তাসলিমা আক্তার বলেছেন: হা হা হা, ভালো এ্যানালাইসিস।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ঠ্যাকায় পড়ে এ্যানালাইসিস-এ মনোযোগ দিতে হয়েছে। :(

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ, কেনাকাটার অনেকগুলো উপলক্ষই তুলে ধরেছেন। তবে আমার মনে হয় বাঙালীর বারমাসে তের বা চব্বিশ নয়, এদের পার্বনের কোন শেষ নেই। তাই কেনাকাটারও কোন শেষ নেই।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আসলেই পার্বণের কোন শেষ নেই। যে কোন ছুতা-নাতায় এখন সবাই কেনাকাটা করে।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: ধন্যবাদ, কেনাকাটার অনেকগুলো উপলক্ষই তুলে ধরেছেন। তবে আমার মনে হয় বাঙালীর বারমাসে তের বা চব্বিশ নয়, এদের পার্বনের কোন শেষ নেই। তাই কেনাকাটারও কোন শেষ নেই।

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬

ইছামতির তী্রে বলেছেন: দুইবার এসেছে। আবারো ধন্যবাদ।

৪| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১১

পুলহ বলেছেন: ইন্টারেস্টিং এনালাইসিস। ভালো লাগলো...
আমার মনে হয়- এখন পোশাক ছাড়াও খাওয়া দাওয়ার পেছনেও অনেক খরচ হয়। চোখের সামনে উদাহরণ- বৈশাখের ইলিশ.. হা হা
কয়েকদিন পর না জানি পিঠা পুলির বিষয়গুলাও একেবারে আগাগোড়া কর্পোরেট আবরণে মুড়িয়ে উপস্থাপন করা হয় (এখনি কিছুটা শুরু হয়া গেছে সম্ভবতঃ)
পোস্টে প্লাস

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ঐ যে বাংলাদেশ উৎসবের দেশ। ছোট-বড় যে কোন উপলক্ষ্য এলেই আমরা আনন্দে মেতে উঠি। তবে আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ভুল-ভাল ভাবে তা করে থাকি।

আপনার আশঙ্কার সাথে একমত। এখন সব বাণিজ্যে মোড়া একেকটা প্যাকেজ।
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪৩

কালনী নদী বলেছেন: ভালই একটু পুরুষবাদী কাজ করেছেন, ধন্যবাদ। কেউত নারীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন :P

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪৫

ইছামতির তী্রে বলেছেন: পুরুষবাদী কাজ বলা বোধহয় উচিত হবে না। সত্যটাই বলতে চেয়েছি।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কেউ কেউ অনেকেই বলেছেন।
আমিও অভিজ্ঞতা থেকেই লিখেছি। :P

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.