নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আম জনতার একজন।

ইছামতির তী্রে

I have a dream.

ইছামতির তী্রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিমার সিনানঃ \'সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ\' স্থপতি।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৫১

মধ্যযুগে মুসলমানগণ শুধুমাত্র বিজ্ঞান, অংকশাস্ত্র, ধর্মশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি ক্ষেত্রেই মুন্সিয়ানা দেখাননি বরং শিল্প ও স্থাপত্যকলার উন্নয়ন সাধনেও প্রভূত ভূমিকা রেখেছিলান। বস্তুত সে সময়ে আবদ-আল-মালিক ইবন মারওয়ান, আবদ-আল রহমান ৩য়, সুলাইমান ‘দ্য মাগনিফিসিয়েন্ট’ এবং সম্রাট শাহজাহানের মত পরাক্রমশালী ও প্রভাবশালী মুসলিম শাসকগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় দুনিয়ার বুকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কিছু স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল। গ্রানাডার বিস্ময়কর আলহামরা প্রাসাদ অথবা ইস্তানবুলের অপরুপ সুন্দর সুলাইমানিয়া কমপ্লেক্স; আগ্রার অমরকীর্তি তাজমহল কিংবা লাহোরের অবিশ্বাস্য সুন্দর বাদশাহী মসজিদ; শিকাগোর যুগান্তকারী সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানে উইলস টাওয়ার) বা জেরুজালেমের বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ করা সৌন্দর্যের প্রতীক ডোম অব রক (কুব্বাত আল-সাখরা); দামেস্কের চিত্তাকর্ষক উমাইয়া মসজিদ কিংবা কায়রোর ঐতিহাসিক আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়; ইসফাহানের অভিজাত জুম্মা মসজিদ নাকি এডিরনের অসাধারণ সুন্দর সেলিমীয়া কমপ্লেক্স কোনটা রেখে কোনটা বলব। প্রায় দুনিয়াব্যাপী মধ্যযুগে মুসলিম রাজত্বকালে এরকম আরও অসংখ্য জগদ্বিখ্যাত স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল যেগুলো আজও কালের ও গৌরবের স্বাক্ষী হয়ে তাদের সভ্যতার উৎর্ষতা ও অসাধারণ সৌন্দর্যবোধের পরিচয় বহন করে আসছে। এভাবে মুসলমানগণ যেমন অনেক বিখ্যাত স্থাপনা নির্মাণ করে জগতবাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তেমনি তারা দুনিয়াবাসীকে কিছু সংখ্যক অসাধারণ প্রতিভাবান স্থাপত্যবিদ এবং নির্মাতা উপহার দিয়েছেন; এদের মধ্যে কয়েকজন হলেন, মুহাম্মদ তাহির আঘা এবং মাহমুদ আঘা ভ্রাতৃদ্বয়, যারা ইস্তানবুলের মাগনিফিসিয়েন্ট ব্লু মসজিদের নির্মাতা, ফজলুর রহমান খান, যিনি শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ারের নকশা প্রণয়ন করেন, তাজমহলের প্রধান স্থপতি আহমদ শাহ লহৌরি ইত্যাদি। কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে মুসলিমদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপত্যবিদদের অন্যতম হলেন মিমার সিনান।



জন্ম ও বেড়ে উঠাঃ
তৎকালীন মধ্য আনাতোলিয়ার কায়সেরিয়া প্রদেশে (বর্তমান তুরস্ক) ১৪৮৮/৮৯ সালে মিমার সিনান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা গ্রীক বংশোদ্ভূত (কেউ আর্মেনিয়া, কেউবা আলবেনিয়ান এবং অতি সম্প্রতি তাকে তুর্কি বংশোদ্ভূতও বলা হয়) আব্দুল মান্নান একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম এবং অটোমান সাম্রাজ্যের বেসামরিক ও প্রশাসনিক সেবায় নিয়োজিত একজন প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। কেউ কেউ বলেন তার পিতা একজন পাথুরে খোঁদাইশিল্পী ছিলেন। ফলে তিনি পিতার কাছ থেকে কারিগরি শিক্ষা লাভ করেন এবং একজন সামরিক প্রকৌশলী হয়ে ওঠেন। সিনান এমন এক পরিবারে প্রতিপালিত হয়েছিলেন যারা অটোমানদের প্রতি খুবই অনুগত ছিল। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত হবার পরে তিনিও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অটোমানদের বিশেষ বাহিনী ‘জানিসারি’তে যোগদান করেন। ‘জানিসারি’ তুর্কি শব্দ; যার অর্থ ‘নতুন সেনা’। মূল তুর্কি উচ্চারণ ‘ইয়েনি চেরি’- সেটাই ইংরেজিতে হয়ে গেছে ‘জানিসারি’। তারা ছিল রাজকীয় সৈনিক বাহিনী। এরা ছিল খুবই দুর্ধর্ষ এক যোদ্ধা বাহিনী। সাহসিকতা, বীরত্ব ও রণকৌশলে এই বাহিনী ছিলো প্রবাদতুল্য।

কর্মজীবন জীবনঃ
শারীরিকভাবে শক্তিশালী, প্রখর বুদ্ধিমত্তা এবং সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য অতি অল্প সমসয়েই তিনি অটোমান বাহিনীতে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হলেন। সূক্ষ যন্ত্রচালনা, যুদ্ধ ও সৈন্য পরিচালনায় অসাধারণ দক্ষতা, এবং অস্ত্রশস্ত্রের নিপুণ কারিগর হিসেবে তিনি সেনাবাহিনীতে নিজেকে অপরিহার্য করে তুললেন। সুলতান সেলিম প্রথম এর রাজত্বকালেই তিনি প্রায় ১৫০টির অধিক নৌযুদ্ধযান তৈরী করেছিলেন যার সাহায্যে অটোমানরা তার বহিঃশত্রুর বিপক্ষে নিজেদের শ্রেষ্ঠতর বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৫২০ সালে সুলতান সেলিম প্রথম এর উত্তরসুরী হিসেবে সুলাইমান ‘দ্য ম্যাগনিফিসিয়েন্ট’ সিংহাসনে আসীন হয়েই হাঙ্গেরী, বেলগ্রেড, রোডস আইল্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। সকল জায়গাতেই সিনান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুদ্ধের সময়ে তিনি এমন এক আর্টিলারি পদ্ধতি গড়ে তোলেন যার ফলে শত্রুরা একেবারে হতবুদ্ধি হয়ে পরাজয় বরণ করে। সামরিক কৌশলের ক্ষেত্রে তার অসাধারণ বীরত্ব, কুশলতা ও চতুরতায় মুগ্ধ হয়ে সুলতান তাকে কামান পরিচালনা বিভাগের চিফ অব স্টাফ হিসেবে পদোন্নতি দেন। যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া, ব্রীজ নির্মাণ ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তাঘাট মেরামত, যুদ্ধ সরঞ্জামাদি মেরামত ইত্যাদি কাজে তিনি অতি দক্ষ ছিলেন।

এই সামরিক সফরের সময় তিনি সমগ্র সাম্রাজ্য জুড়ে ভ্রমণ করেন, যথা, বাগদাদ, দামাস্কাস, পারস্য ও মিশর। এসব ভ্রমণ থেকে তিনি অনেক অগাধ শিক্ষালাভ করেন। তিনি স্বয়ং বলেছেনঃ



"I saw the monuments, the great ancient remains. From every ruin I learned, from every building I absorbed something."

প্রধান রাজ স্থপতি এবং নির্মাতাঃ
স্থাপত্যকলায় অসাধারণ পারঙ্গমতা এবং বহুবিধ গুণ ও যোগ্যতার বলে ১৫৩৮ সালে ৪৯ বছর বয়সে সুলতান সুলাইমানের রাজকীয় সভায় প্রধান স্থপতি এবং নির্মাতা হিসেবে হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন তিনি। একটানা পঞ্চাশ বছর তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। যদিও তার নিয়োগের সময়ে রাজসভায় ডজনখানেক নামকরা স্থাপত্যবিদ এবং নির্মাতা কাজ করছিলেন। তবু সুলতান তার নিয়োগের ব্যাপারে ছিলেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সুলতান চাইছিলেন সিনানের মাধ্যমেই রাজ্যের প্রধান প্রধান স্থাপনা নির্মিত হোক। এটি শুধু যে মিমার সিনানের জীবনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করল তাই না বরং ইসলামী স্থাপত্য ও শিল্পকলার ইতিহাসে সবচেয়ে ফলপ্রসূ এক যুগের সূচনা হলো। সুলতান সুলাইমানের আন্তরিক পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে চোখ ঝলসানো এবং অনুকরণীয় স্থাপত্য নির্মাণ করেন।

মিমার সিনানের বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনঃ
সুলতান ফাতিহ মুহাম্মদের ঐতিহাসিক কনস্ট্যান্টিনোপল বিজয়ের পর এর নামকরণ করা হয় ‘ইসলামবুল’ (ইসলামের শহর)। যদিও এখন ইস্তাম্বুল নামেই শহরটি পরিচিত। তারপরে অটোম্যানরা মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শ্বাসরুদ্ধকর কিছু স্থাপত্য নির্মাণ করে এই প্রাচীন শহরটির আকাশমন্ডলীকে নতুনভাবে সজ্জিত করার পরিকল্পনা করে। আর এর পুরোভাগে ছিলেন মিমার সিনান।

মিমার সিনানের বর্ণিল স্থাপত্য জীবনকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা, শিক্ষানবিশ কাল, যোগ্যতার স্তর এবং মাস্টারস্টেজ।

শিক্ষানবিশ কালঃ
প্রায় অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, তিনি তিনজন ভিন্ন অটোমান শাসক যথা, সুলতান সেলিম, প্রথম সুলেইমান, দ্বিতীয় সেলিমের আমলে পূর্ণ সময়ের জন্য কাজ করেন এবং এই সময়ের মধ্যে তিনি অটোমান সাম্রাজ্য জুড়ে বহু মসজিদ, প্রাসাদ, সমাধি, গ্রন্থাগার, বিদ্যালয় ও সেতু নির্মাণ করেন। মিমার সিনানের হাতেখড়ি হয় ছোটখাটো স্থাপনা, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণ করে। এই স্তরের প্রথম উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ‘হাজিয়া সোফিয়া’র পুনঃসংস্কার। ইস্তাম্বুলের প্রাচীনতম ভবনগুলির একটি হিসাবে ‘হাজিয়া সোফিয়া’ (আয়া সোফিয়া) বাইজান্টাইনদের দ্বারা উপেক্ষিত হয়েছে। মূলত সম্রাট জাস্টিনিয়ানের জন্য গ্রিক স্থপতিদের হাতে নির্মিত এই ঐতিহাসিক ভবন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেরামতের মাধমে এর প্রাক্তন মহিমা পুনরুদ্ধার করেছিল অটোমান সুলতানগণ। আর এই বিশাল কাজটি আর কেউ নন, মিমার সিনানই করেছিলেন। তিনি পুরো ভবনকে নতুন করে সাজান এবং অটোমান বিজয়ের প্রতীক হিসাবে পুরাতন ভবনের সাথে নতুন করে বেশ কিছু মিনার যোগ করেন।

তিনি ১৫৪৭ সালে সিরিয়ার আলেপ্পোতে খসরুয়েভিয(Khusruwiyah) মসজিদ নির্মাণ করেন, যা বর্তমানে সেই শহরের একটি ল্যান্ডমার্কে পরিণত হয়েছে। তিনি বাগদাদে ইমাম আবু হানিফা মসজিদ এবং কনিয়ায় জালাল আল-দীন আল-রুমী মসজিদ সংস্কার করেন। এ সমস্ত প্রকল্পগুলি সিনানকে স্থাপত্য ও প্রকৌশল ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী ভিত্তিভূমি প্রদান করে।

শেহজাদে মসজিদ কমপ্লেক্সে:




কিন্তু ইস্তাম্বুলের ‘শেহজাদে মসজিদ কমপ্লেক্সে’ই তাঁর প্রথম বড় কাজ ছিল। এই মসজিদটি সুলাতান সুলাইমানের আদেশে তার পুত্র মুহাম্মদ, যিনি ২২ বছর বয়সে গুটি বসন্তে মারা যান, তার স্মরণে নির্মিত হয়। মসজিদের সাথে একটি ধর্মীয় স্কুল, লজিং হাউজ, এবং দরিদ্রদের জন্য রান্নাঘরও নির্মাণ করেন। জানা যায়, এই স্থাপনাটি সিনানকে মোটেও সন্তুষ্ট করতে পারেননি। এটিকে তিনি এক আনাড়ী বা নবীশদের কাজ বলে গণ্য করতেন। যদিও এটি যথেস্ট আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু সিনান নিজেকে এমনভাবে তৈরী করেছিলেন যে, অল্পতে তিনি কখনোই সন্তুষ্ট থাকতে পারেননি। তিনি সর্বদা নিজেকে তো বটেই স্বয়ং সুলতানের প্রত্যশাকেও ছাড়িয়ে যেতে চাইতেন। তিনি ছিলেন একজন অনন্যসাধারণ উদ্যমী নির্মাতা, তার প্রতিটি কাজে জড়িয়ে থাকত অনেক আবেগ, ও পরিকল্পনা। যা তাকে পরবর্তীতে আরো অসাধারণ কিছু কাজ করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। হাজিয়া সোফিয়া ছিল সিনানের কাজের অন্যতম উৎস এবং প্রেরণা।

কোয়ালিফিকেশান স্তরঃ
এ সময় সিনান কাজে আরও সুদক্ষ হয়ে ওঠেন। এই স্তরে তার অন্যতম সেরা কাজ ছিল ইস্তাম্বুলের ঐতিহাসিক ‘সুলাইমানিয়া মসজিদ কমপ্লেক্স’ নির্মাণ। অপরূপ সুন্দর ও বিশ্ববিখ্যাত এই মসজিদটি নির্মাণের জন্য স্বয়ং সুলতান সুলাইমান স্থান বাছাই করেন। ইস্তাম্বুলের বায়জিদ অঞ্চলের অনিন্দ্যসুন্দর ‘বসফরাস’ প্রণালির কোলঘেঁষা একটি ছোট্ট টিলার ওপর গড়ে উঠেছে মসজিদটির অবকাঠামো। ইতিহাসগ্রন্থে রয়েছে, নির্মাণকাজ আরম্ভ করার আগে সিনান সুলতানের কাছে মসজিদের যাবতীয় নকশা-রেখাচিত্র, ভাবনা ও পরিকল্পনার চিত্ররূপ পেশ করেন। চিত্রে শিল্পী সিনান পাশার দক্ষতা, মুনশিয়ানা ও চিন্তা-পরিকল্পনার সৌকর্য দেখে সুলতান খুবই আপ্লুত হন এবং তাঁর পরিকল্পনার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে নিজের ধনভাণ্ডার থেকে নির্মাণকাজের সব খরচ অবাধে পূরণ করার আদেশ দেন। সুলতান সুলাইমান চেয়েছিলেন এই মসজিদ ইস্তাম্বুলের আকাশমন্ডলিকে সমৃদ্ধ করুক, ঠিক যেমনভাবে ‘ডোম অব দ্য রক’ (কুব্বাত আল-সাখরা) বহু শতাব্দী ধরে জেরুজালেমের আকাশকে সমৃদ্ধ করে আসছিল। ১৫৫০ খ্রিস্টাব্দে সিনান স্বয়ং সুলতানের উপস্থিতিতে এই ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সুলতান এই প্রকল্প নির্মাণকালে গভীর আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। সিনানও এই সুযোগ হাতছাড়া করতে একদম নারাজ ছিলেন। তিনি জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নির্মাণ করতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।



প্রখ্যাত অটোমান ইতিহাসবিদ মুস্তাফা আলী’র মতে, ‘সুলতান সুলাইমান শুধুমাত্র একজন বিখ্যাত শাসকই ছিলেন না, সমভাবে তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত নির্মাতা, যিনি মুসলিম বিশ্বের কিছু চিত্তাকর্ষক, শ্বাসরুদ্ধকর ও অনিন্দ্যসুন্দর স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে নিজের দীপ্ত চিহ্ন রাখতে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন’। তাই সুলতান ‘সুলাইমানিয়াহ মসজিদ কমপ্লেক্স’কে বিশ্বের সবচেয়ে নয়নমনোহর, অভিজাত ও মার্জিত ভবনগুলির মধ্যে একটি বানাতে চেয়েছিলেন। তিনি এই মহান কর্মের শুরু থেকে শেষ অবধি কাজের পরিকল্পকনা ও তত্ত্বাবধানে গভীর যত্নশীল ছিলেন। সুলতানের মত সিনানও এই অটোমান সালতানাতকে গৌরবান্বিত করা এবং ইসলামের বিজয় চিহ্ন তুলে ধরার জন্য এই স্থাপনাকে সবদিক দিয়ে নিখুঁত করার ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। যাইহোক, ১৫৫৭ সালে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়। স্বয়ং সুলতান মসজিদটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেন এবং এর ফলে ইস্তাম্বুলের আকাশমন্ডলী চিরতরের জন্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। মসজিদটির বিরাট গম্বুজ এবং দীর্ঘ মিনারগুলো ইস্তাম্বুল শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে দেখা যায়। এটি শেষ হবার পরে সিনান এতই খুশি হয়েছিলেন যে, তিনি তার এই স্থাপনাটিকে জীবনের শ্রেষ্ঠতম কর্ম হিসেবে বিবেচনা করেন। এটি অটোমানদের শক্তি, ক্ষমতা এবং গরিমার প্রতিনিধিত্ব করে এবং এটি অটোমান স্থাপত্যের আগের সকল কাজকে ছাড়িয়ে যায়।

সুলাইমানিয়া মসজিদের অবকাঠামো:


মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৬৯ ও প্রস্থ ৬৩ মিটার। মূল গম্বুজের কাছে অবস্থিত লম্বা মিনারগুলো ৭৬ মিটার উঁচু, আর ছোট মিনারগুলো ৫৬ মিটার উঁচু। প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অনায়াসে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে এতে। মসজিদের উন্মুক্ত আঙিনার চার কোণে সুউচ্চ ও সুরম্য চারটি মিনার মসজিদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে বহু গুণে। ঐতিহাসিকভাবে মসজিদে মাত্র একটি মিনার থাকত, যেখান থেকে মুয়াজ্জিনেরা আজান দিতেন। সুলায়মানিয়া মসজিদে প্রথমবারের মত চারটি মিনার ব্যবহার করা হয়। চারটি মিনার নির্দেশ করে যে প্রথম সুলাইমান ছিলেন ইস্তাম্বুলের চতুর্থ সুলতান। আর ১০টি ব্যালকনি নির্দেশ করে তিনি উসমানীয় রাজবংশের ১০ম সুলতান।

মসজিদের মেহরাবের অভ্যন্তর ইসলামী ঐতিহ্যের স্মারক ও বিভিন্ন কারুকার্যের উপাদানে পরিপুষ্ট। চোখ ধাঁধানো বৈচিত্র্য ও বহুবিধ রংতুলিতে আঁকা লতাগুল্ম এবং সবুজ শ্যামলিমার হরেক রকম দৃশ্য আর কোরআনের আয়াত অঙ্কিত ফলকগুলো চোখে পড়লে বিস্ময় জাগানিয়া অন্য রকম এক আবহ কাজ করে মুসল্লির ভাবনাজুড়ে। চিত্তাকর্ষক মেহরাবটির পাশেই রয়েছে সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি সুসংহত মিম্বর। বিভিন্ন রঙের কাচের জানালাগুলো দিয়ে যখন সূর্যের আলোকরশ্মি খেলা করে, তখন মনে হয়, মসজিদটি যেন সহস্র রঙে সাজানো হয়েছে।

মসজিদের আঙিনার চারপাশ ঘিরে রয়েছে সবুজাবৃত সজীব একটি উদ্যান। সে এক অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য! অতি জাঁকজমকপূর্ণ নকশা ও অসম্ভব সুন্দর চিত্রাঙ্কন ছাড়া সুলাইমানিয়া মসজিদের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর বিশালত্ব ও সুপরিব্যাপ্তি। মসৃণ ও ঝকঝকে টালি বসানো মেঝে দেখতে অসাধারণ। মসজিদের অন্যতম সৌন্দর্য হলো এর দেয়ালগুলো। সাতটি রং দিয়ে বার্নিশ করে বর্ণালি দৃশ্য আঁকা হয়েছে এতে। দৃশ্যগুলো সোনালি ও কালো সুতায় বেগুনি-লাল, গাঢ় নীল এবং অন্যান্য রঙের মিশেলে চিত্রায়িত। টিউলিপ ফুল, ভায়োলেট ফুল, লবঙ্গগাছ, ডেইজি ফুল, আঙুরপাতা ও আপেলগাছের ছবি ফুটে আছে ভেতরের প্রতিটি দেয়ালে।

শ্যামল নিসর্গের আবহ ও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে সুলাইমানিয়া মসজিদ সমধিক পরিচিত। তাই তুরস্কের ভ্রমণকারী মুসলিম পর্যটকদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু বিখ্যাত সুলাইমানিয়া মসজিদ।

মাস্টার স্টেজঃ
মিমার সিনান ছিলেন একজন সত্যকারের ‘পারফেকশনিস্ট’। সুলাইমানিয়া মসজিদের মত অবিস্মরণীয় একটি কাজ সমাধার পরেও তার মনের ক্ষুধা মেটেনি। তাই আরও সুন্দর, পরিপূর্ণ, মহিমাময় ও মহত্তম স্থাপত্য নির্মাণের খায়েশ তার মনে রয়েই যায়।

১৫৬৬ খৃষ্টাব্দে সুলতান প্রথম সুলাইমানের ইন্তিকালের পর তাঁর পুত্র দ্বিতীয় সেলিম মসনদে বসেন। ফলে সিনানের সামনে আরেকটি মহাসুযোগ আসে। পিতার মত সুলতান দ্বিতীয় সেলিমও চাইছিলেন আরেকটি স্মরণীয় স্থাপনা নির্মিত হোক। এ কাজের দায়িত্ব অবধারিতভাবে মিমার সিনানের উপর ন্যস্ত হয়। তবে এটি নির্মিত হবে ইস্তাম্বুল থেকে ২০০ কিমি দুরের এডিরনে। মিমার সিনানের বয়স তখন মধ্য সত্তর। এই প্রবীণ বয়সে এসেও তার কর্মস্পৃহা এতটুকু কমেনি। ১৫৬৯ সালে তিনি প্রবল উৎসাহে ‘সেলিমিয়া মসজিদ কমপ্লেক্স’ নির্মাণের কাজে হাত দেন এবং মনের মাধুরী মিশিয়ে বিরামহীনভাবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৫৭৪ সালে এর কাজ সমাপ্ত হয়। দুনিয়াবাসী অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেন আরেকটি শ্বাসরুদ্ধকর, মনোমুগ্ধকর, নয়ন মনোহর স্থাপনা, যার নাম ‘সেলিমিয়া মসজিদ কমপ্লেক্স’। এই মসজিদটি নির্মিত হবার পর, অবশেষে মিমার সিনান মানসিকভাবে প্রশান্তি লাভ করেন। তিনি স্বয়ং দাবী করেন যে, এই কাজটি দিয়ে তিনি গ্রীক স্থাপত্যবিদদের নির্মিত আয়া-সোফিয়াকেও ছাড়িয়ে যেতে পেরেছেন। তিনি তার জীবনীগ্রন্থে স্বীকার করেন যে, এটিই তার ‘মাস্টারপিস’।





সেলিমিয়া মসজিদ কমপ্লেক্সের ৮০ মিটার উঁচু মিনারগুলো ছিল সে সময়ের সবচেয়ে লম্বা। এর গম্বুজগুলো হাজিয়া সোফিয়ার গম্বুজের চেয়েও উঁচু। সেলিমিয়া মসজিদটি অটোমানদের নির্মিত সর্ববৃহৎ স্থাপনা এবং এটিকে মুসলিম বিশ্বের সবচাইতে চিত্তাকর্ষক ও দৃষ্টিনন্দন মসজিদের অন্যতম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওসমানি খিলাফতের বিখ্যাত নিদর্শন এটি। এটাকে ইসলামি স্থাপত্যে অন্যতম সেরা হিসেবে ধরা হয়। সুন্দর-পরিচ্ছন্ন ডিজাইনের জন্য আজও সমাদৃত হয়ে আছ। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে এটি।

অন্যান্য স্থাপনাসমূহঃ
সিনানের অন্যান্য স্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নমুনা হল মসজিদ আল-হারাম পুনঃসংস্কার। ১৫৭০ সালে সুলতান সেলিম দ্বিতীয় মসজিদ আল-হারাম পুনঃসংস্কারের জন্য মিমার সিনানকে দায়িত্ব দেন। তিনি মসজিদের অভ্যন্তরীণ সমতলভাগকে সুশোভিত গম্বুজ দিয়ে সজ্জিত করেন এবং ইসলামী ক্যালিগ্রাফিযুক্ত নতুন সাপোর্ট কলাম স্থাপন করেন। এগুলো বর্তমান মসজিদ এর সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য হিসাবে স্বীকৃত যা এখনো টিকে আছে।

সিনানের দাপ্তরিক কার্যতালিকা তাজকিয়াত-আল-আবনিয়া অনুযায়ী ৫০ বছরের স্থাপত্য পেশাজীবনে তিনি ৪৭৬ টি দালান (যার মাঝে ১৯৬ টি দালান এখনো বিদ্যমান) নির্মাণ করেন অথবা নির্মাণ তদারকি করেন। সম্ভবত এই সবগুলোর নকশা তিনি করেননি, নিজ দপ্তরের স্থপতিদের কৌশলের উপরও তিনি নির্ভর করতেন। সিনানের উল্লেখযোগ্য কিছু স্থাপনা নিম্নরূপঃ

সুলায়মানিয়া মসজিদ, সেলিমিয়া মসজিদ, মেহমেদ পাশা সকোলোভিক ব্রিজ, মিহরিমা সুলতান মসজিদ, মিহরিমা মসজিদ, কিলিচ আলী পাশা কমপ্লেক্স, শেহজাদে মসজিদ, হাসেকি হুররেম সুলতান গোসলখানা, হাসেকি সুলতান কমপ্লেক্স, সোকোল্লু মেহমেত পাশা মসজিদ, বানিয়া বাসি মসজিদ, চার্চ অব দ্য অ্যাসাম্পশনর ইত্যাদি।

মেহমেদ পাশা সকোলোভিক ব্রিজঃ


ওসমান শাহ মসজিদঃ


জুম্মা-জামি মসজিদ (হান মসজিদ), ক্রিমিয়াঃ


সিনানের স্থাপত্যের বৈশিষ্ট্যঃ
সিনানের স্থাপত্যের অথবা অটোমান স্থাপত্যের একটা বৈশিষ্ট্য বিশালাকৃতির ডোম। যদিও এই ডোমাকৃতির স্থাপত্যের ইতিহাস অনেক পুরনো। জেরুসালেমের ডোম অব দ্য রক বা দামাস্কাসের উমাইয়া মসজিদের গম্বুজ-এর সবই এসেছে বাইজান্টাইন চার্চের আর্কিটেকচার থেকে। এই জাতীয় ডোম আর্কিটেকচারের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল কন্সটান্টিনোপলের আয়া সোফিয়া চার্চ, যেটি পরে মসজিদে রূপান্তরিত হয়। এই আয়া সোফিয়ার বিখ্যাত ডোমই সিনানের জন্য অনুপ্রেরণা এবং বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে এসেছে। সিনান সার্থকভাবেই বাইজান্টাইন আর্কিটেকচারের সাথে ইসলামি আর্কিটেকচারের এক অসাধারণ ফিউশন করেছেন। তারই এক চমৎকার উদাহরণ সুলায়মানিয়া মসজিদ।

সিনানের অকল্পনীয় সৃজনশীলতা, অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা এবং শক্তিশালী কল্পনার মেলবন্ধনে একক ব্যক্তি হিসেবে তিনি দুনিয়ার বুকে কিছু অবিশ্বাস্য সুন্দর স্থাপনার পরিকল্পনা এবং তা নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর নির্মিত ভবনগুলি আভিজাত্য, অভ্যন্তভাগে সুপরিসর জায়গা এবং বাইরের নকশার মধ্যে অনন্যসাধারণ সরলতার কারণে সুবিখ্যাত; প্রকৃতপক্ষে, তার ভবনগুলো শিল্প ও স্থাপত্যের ইতিহাসে নতুন এবং উদ্ভাবনী পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব করে।

এই অর্থে, মিমার সিনান ছিলেন একজন অনন্য স্থপতি এবং নির্মাতা, যিনি কাজের ক্ষেত্রে সৌন্দর্য, আভিজাত্য এবং আড়ম্বড়ের ব্যপারে কোন ছাড় দেননি। এই সমস্ত উপাদানগুলি তার প্রধান প্রধান নির্মাণ কাজের মধ্যে বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে বজায় ছিল।

সিনান ও রেনেসাঁ
সিনান ছিলেন রেনেসাঁ সময়কালের মানুষ। ভেনিসের সাথে অটোমান ইস্তাম্বুলের সম্পর্ক বেশ পুরনো। এমনকি বিখ্যাত রেনেসাঁ শিল্পী লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির সাথে ইস্তাম্বুলের যোগাযোগ ছিল ঘনিষ্ট। লিওনার্দো ইস্তাম্বুলের গোল্ডন হর্নের উপর একটি প্রস্তাবিত সেতুর ডিজাইনও দিয়েছিলেন সুলতান বায়েজিদের দরবারে।

সিনানের সমসাময়িক একজন বিখ্যাত ইতালিয়ান স্থপতি ছিলেন আন্দ্রেয়া পাল্লাদিও। স্থাপত্যের ইতিহাসে আন্দ্রেয়ার সাথে তুলনীয় প্রভাবশালী কোন ব্যাক্তিত্ব নাই। তার পৃষ্ঠপোষক এবং গুণগ্রাহী মার্ক এন্তনিও বারবারো অটোমান দরবারে ভেনিসের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তার মাধ্যমে সিনান এবং আন্দ্রেয়ার নিয়মিত যোগাযোগ হত। দুই মহান স্থপতি যে নিজেদের এই যোগাযোগে নিজেদের আইডিয়া এবং ডিজাইনও বিনিময় করেছন তা ধরে নেওয়া যায়। আন্দ্রেয়ার বিখ্যাত কীর্তি ‘সান জর্জো মাগিওরে’ চার্চের স্থাপত্যে এই ছাপ দেখা যায়।
সিনানের সময়কার আরেকজন বিখ্যাত স্থপতি মাইকেলেঞ্জেলো। দুইজনই নিজেদের কাজ দ্বারা পরস্পর প্রভাবিত হয়েছেন। অনেকেই মনে করেন মাইকেলেঞ্জেলোর অসামান্য কীর্তি ‘সেইন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা’র স্থাপত্যে মিমার সিনানের প্রভাব রয়েছে। ব্যাসিলিকার ডোমের ডিজাইন নিঃসন্দেহে সিনানের সুলায়মানিয়া মসজিদ থেকে অনুপ্রাণিত।

তাজমহল ও সিনানঃ



সুলায়মানিয়া মসজিদের সাথে বিখ্যাত মুঘল স্থাপত্য তাজমহলের সাথে এর কিছু মিল খুঁজে পাবেন। তাজমহলের স্থাপত্য সত্যিকার অর্থে পার্সিয়ান স্থাপত্যের সাথে অটোমান স্থাপত্য আর ভারতীয় স্থাপত্যের এক অসাধারণ মেলবন্ধন। সম্রাট শাহজাহানের সাথে অটোমানদের সুসম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের একটা উল্লেখযোগ্য দিকই ছিল সাংস্কৃতিক বিনিময়। এই সময় কয়েকজন অটোমান আর্কিটেক্ট এসেছিলেন শাহজাহানের দরবারে। এরা ছিলেন বিখ্যাত মিমার সিনানের ছাত্র- যারা কিছুদিন পর তাজমহলের নির্মাণ শুরু করেন!

সম্মাননাঃ
মিমার সিনানের সম্মানে বুধ গ্রহের একটি গহ্বররের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯৭৬ সালে International Astronomical Union দ্বারা নামটি গৃহীত হয়।


Mimar Sinan University of Fine Arts নামে তুরুস্কের ইস্তাম্বুলের একটা রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় আছে। যেটি ১৮৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।


মিমার সিনানের জীবন ও কর্মের উল্লেখ্যযোগ্য বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তুরুস্ক সরকার বিশেষ মুদ্রা ছাপায়।

শেষ জীবনঃ
তিনি কেবল একজন কঠোর অধ্যবসায়ী নির্মাতা ও অসামান্য প্রতিভাধর স্থপতি ছিলেন না; তিনি ছিলেন একজন অনুগত মুসলিম, যিনি তার গোটা জীবনব্যাপী অটোমান খেলাফতের গৌরব বৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত ছিলেন।

অনুমান করা হয় এই ছবির বামের জন মিমার সিনান। সুলাইমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট এর সমাধিতে, ১৫৬৬।


মিমার সিনান পরিণত বয়সে নিরানব্বই বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এবং ইস্তাম্বুলে সুলায়মানিয়া মসজিদ কমপ্লেক্সের নিকটবর্তী তার নিজের হাতে তৈরী করা সমাধিস্থলে তাঁকে সমাহিত করা হয়। তার অদূরেই শুয়ে আছেন তার দুই অন্যতম পৃষ্ঠপোষক সুলতান সুলাইমান ‘দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট’ এবং তার প্রিয় সহধর্মিনী হুররেম সুলতান।

শেষ কথাঃ



মিমার সিনানের আবক্ষ মূর্তিঃ


মিমার সিনানের নির্মিত সেরা স্থাপত্যসমূহের অপার সৌন্দর্য্য ও আড়ম্বরতা এবং তার অবদানসমূহ যে গোটা মুসলিম বিশ্ব তথা বিশ্ব ইতিহাস দীর্ঘদিন ধরে গভীর কৃতজ্ঞতা সহকারে স্মরণ রাখবে এতে কোন সন্দেহ নেই। প্রকৃতপক্ষে, তাঁর কৃতিত্ব ইসলামের শিল্প ও স্থাপত্যের ইতিহাসে অদ্বিতীয়।

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

লেখার মূল অংশ নেয়া হয়েছে মুহাম্মদ মজলুম খান রচিত '‘The Muslim 100’ বই থেকে। এছাড়া উইকিপিডিয়া, অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু প্রবন্ধ, অনলাইন পত্রিকা থেকেও সাহায্য নেয়া হয়েছে। সবার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:

অজানা ইতিহাস ও সাথে পরিচ্ছন্ন নয়নজুড়ানো ছবির জন্য ধন্যবদ।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: অনেক বড় পোষ্ট। তবু পড়েছেন। এজন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৭

সালাহ উদ্দিন শুভ বলেছেন: আপনিতো ব্যাপক তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সত্যি বলতে উনার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। ধন্যবাদ একটু জানার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৭

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধন্যবাদ।

মিমার সিনান সম্পর্কে অনেক লেখা পড়েছি। অনেকদিন লেগেছে লেখাটা তৈরী করতে। সত্যি, এতবড় মাপের একজন মানুষ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ খুব অল্পই জানে। আসলে উসমানীয়দের সম্পর্কেই মানুষ কম জানে। এর কারণ আমাদের দেশের ইতিহাসবিদ কিংবা বুদ্ধিজীবিরা এ বিষয়ে বিস্তর লেখাজোখা করেনি। যার ফলে সাধারণ মানুষ তাদের জানতে পারেনি।

তবে ইদানিং তুরস্কের জনপ্রিয় সিরিয়ালগুলোর কারণে মানুষ তাদের সম্পর্কে জানছে। যদিও 'সুলতান সুলেমান' সিরিজ এবং অধুনা প্রচারিত ' 'সুলতান সুলেমান-কোসেম' এ অনেক ভুলভ্রান্তি ও অশ্লীলতা আছে। আমি বরং অন্য একটা সিরিজ 'দিরিলিস' খুব পছন্দ করি। যদিও সেখানেও ইতিহাসের বিচ্যুতি আছে।

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:২০

আবু তালেব শেখ বলেছেন: খুব মনোযোগী হয়ে পড়লাম। ভালো লাগলো জেনে মুসলিমরা ও অনেক অবদান রেখেছে । আপনি বেশ আগেই আভাস দিয়েছিলেন এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখবেন। ++্

১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কষ্ট করে পড়ার জন্য।

হুম। আগেও বলেছিলাম। তবে আমার ইচ্ছে ছিল শুরু থেকে সিরিজ আকারে লেখার কিন্তু সময়াভাবে আর হয়ে উঠল না। নতুন নকীব ভাই একটা সিরিজ শুরু করেছেন।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৫০

আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন; মিমার সিনান সম্পর্কে আগেও কিছু জানতাম। আপনার লেখা থেকে অনেক কিছুই জানা হল।

তবে আপনার শিরোনামে অাপত্তি আছে। সেখানে 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ' না লিখে 'সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ' লিখতে পারতেন যা যুক্তিযুক্ত হত ও লেখাটাকে আরো দৃঢ়তা দিত।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১১

ইছামতির তী্রে বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

শিরোনামের পরের অংশটুকু নিয়েছি একটা ইংরেজী প্রবন্ধ থেকে। যাইহোক, আপনার যুক্তি দ্বিমত নেই। বরং এটাই অধিক যুক্তিযুক্ত হয়। ওকে, বদলে দিলাম। ধন্যবাদ ভাই সুন্দর সাজেশান দেয়ার জন্য।

৫| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ২:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


এরা মুসলমান হওয়ায় সিভিল ইন্জিনিয়ারিং'এ দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, নাকি এরা সিভিল ইন্জিনিয়ারিং'এ দক্ষ মানুষ, এবং একই সময়ে এরা মুসলমান ছিলেন?

১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১২

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আপনি যেভাবে আরামবোধ করেন সেভাবেই ভাবতে পারেন।

ধন্যবাদ ভাই।

৬| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:০২

চাঁদগাজী বলেছেন:


মধ্যযুগ অবধি, মানব সমাজের প্রয়োজন মেটানোর মত সায়েন্স ও টেকনোলোজির বিকাশ ঘটেছিল মুসলিম এলাকাগুলোতে; এরপর বড় চ্যালেন্জ আসে ফরাসী বিপ্লবের পর, তখন দরকার ছিলো কলকারখানার মত টেকনোলোজী ও সায়েন্স, সেই এলাকায় প্রবেশ করার মত দক্ষতা মুসলমানেরা অর্জন করতে পারেনি

১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৯

ইছামতির তী্রে বলেছেন: আমি সব সময় বলি সভ্যতা একটা মশালের মত। একেকটা যুগে একেক জাতি এটি বহন করেছে। তেমনি মধ্যযুগ মুসলিমদের যুগ। বিরুদ্ধবাদীরা যতই প্রপাগান্ডা চালাক না কেন ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবে না। যদিও সত্যি ইতিহাস মুছে ফেলার প্রাণান্তকর চেষ্টা করা হয়েছে।

আমি প্রখ্যাত ঐতিহাসিক পি কে হিট্টির বই 'দ্য হিস্ট্রি অব আরবস' বইতে পড়েছি তিনি বলেছেন, ' ইউরোপের রেনেসাঁর জন্য সবচেয়ে বড় অবদান মুসলিমদের'।

তবে পরবর্তীতে নানা কারণে মুসলিমগণ এই ধারা অব্যহত রাখতে পারেনি।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৭| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: ভা;লো লাগলো মহান ব্যক্তি সম্পর্কে জেনে।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩০

ইছামতির তী্রে বলেছেন: পোষ্ট পড়া এবং কমেন্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।

৮| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: য়াফসোস এসব জাগা না দেখেই মরতে হবে।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮

ইছামতির তী্রে বলেছেন: তুরস্ক খুব বেশী দূরে না। ঘুরে আসতে পারেন।

৯| ১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে সারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতেই রহস্য দিয়ে ভরা।

১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:০২

ইছামতির তী্রে বলেছেন: হুম। মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করেই সব। আল্লাহর সমস্ত নবী-রাসুল এই অঞ্চলেই এসেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.