নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্থনীতিবিদ

অর্থনীতিবিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাবলিক লাইব্রেরিতে আসন বিড়ম্বনা ও কিছু কথা

১০ ই মে, ২০১৮ রাত ১:৩৪



কিছুদিন আগে অর্থনীতি নিয়ে কিছু পড়াশুনার উদ্দেশ্যে বেগম সুফিয়া কামাল গণগ্রন্থাগারে যাই। সেখানে যথাস্থানে ব্যাগ জমা রেখে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। ব্যাগ রাখার স্থানে অজস্র ব্যাগ। বুঝলাম যে গ্রন্থাগারে অনেক মানুষ এসেছে। ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম গ্রন্থাগারের ভিতরে অসংখ্য ছেলে মেয়ে। তারা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করছে। তবে একটু লক্ষ্য করতেই বুঝা গেল যে বইগুলো একটাও গ্রন্থাগারের বই নয়। সবগুলোই বিভিন্ন চাকরীর প্রস্তুতির জন্য বা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য লিখিত বই। কোনো চেয়ার ফাঁকা নেই। একটা-দুইটা যাও ফাঁকা আছে তাও সেগুলোর সামনে বই ভাজ করে রাখা বা চেয়ার একটু কাত করে টেবিলে ঠেস দিয়ে রাখা যাতে বুঝা যায় যে এগুলোতে বসার মানুষ আছে শুধু হয়তোবা কোনো কারণে বাইরে গেছে, কিন্তু এখনি এসে পড়বে।

শেষ পর্যন্ত খালি একটা চেয়ার পেলাম। কিন্তু বসতেই পাশ থেকে এক মেয়ে রিনরিনে গলায় বললো, আঙ্কেল, এটা আমার ফ্রেন্ডের চেয়ার। ও এখনি এসে পড়বে। আপনি প্লিজ অন্য চেয়ার দেখুন। উঠে পড়লাম। তার ফ্রেন্ডের চেয়ারে তো আর বসা যায় না। খালি দেখে আরেকটা চেয়ারে বসার উপক্রম করতেই সামনে থেকে একজন বললো, হ্যালো ব্রাদার, এই চেয়ারে মানুষ আছে। আরেকটা চেয়ারের কাছে যেতেই আরেকজন বললো, সরি আপনি অন্য চেয়ার দেখুন। শেষপর্যন্ত একটা চেয়ারে বসতে পারলাম। তবে মিনিট খানেক যেতে না যেতেই একটা ছেলে এসে বললো, এক্সকিউজ মি, এটা আমার চেয়ার। আপনি অন্য চেয়ারে যান। লজ্জিত আমি তাড়াতাড়ি স্যরি বলে উঠে পড়লাম। সারা গ্রন্থাগার ঘুরেও কোনো খালি চেয়ার পেলাম না। সবাই চাকরীর প্রস্তুতির জন্য পড়ছে। MP3, র‌্যাডিকেল, আজকের বিশ্ব, খায়রুলস বেসিক ম্যাথ, ওরাকল ইত্যাদি বিভিন্ন বই নিয়ে ছেলেমেয়েরা পড়ছে বা খাতায় নোট করছে, অঙ্ক করছে।

শেষপর্যন্ত শেলফের পাশে যে ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কিছু পড়লাম, কয়েকটা পেজের ছবি তুললাম। সেখানে দাড়ানো অবস্থায় দেখলাম আমার মতো চেয়ারে বসতে না পেরে ফ্লোরে বসে একটা ছেলে উবু হয়ে গ্রন্থাগারের বই পড়ছে। আর অদূরে আরেকজন লোক আমার মতোই দাড়িয়ে দাড়িয়ে শেলফ থেকে বই নামিয়ে দেখছে এবং পড়ছে। সারা গ্রন্থাগারে আমিসহ তিনজন পেলাম যারা চাকরির পড়া নয় গ্রন্থাগারের বই পড়ছে। আর বাকি কয়েকশো ছেলেমেয়ে মনোযোগ দিয়ে চাকরির জন্য পড়ছে।

চাকরি প্রত্যাশী পড়ুয়াদের চাপে সাধারণ পাঠকরা যেন কোনঠাসা। তাদের যেন কোনো স্থান নেই গণগ্রন্থাগারে। একটি রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সবার পড়াশুনার অধিকার থাকলেও চাকরিপ্রার্থী বিশেষ গোষ্ঠীর কারণে সাধারণ পাঠকরা লাইব্রেরিতে কেনো আসন পায় না। বিষয়টি অনেক দিন ধরে শুনে আসছি। নিজে এবার চাক্ষুস দেখলাম।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দু’বছর আগেও পাবলিক লাইব্রেরির এমন চিত্র ছিল না। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা বই পড়ার জন্য এখানে ভিড় জমাতো। নানা ধরনের বইয়ের মধ্যে খুঁজে নিতো তার মৌলিক জ্ঞান। অথচ এখন পাবলিক লাইব্রেরিতে ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক জ্ঞান চর্চায় একমুখী হয়েছেন তরুণরা। চাকরি প্রত্যাশী তরুণদের ভিড়ে অন্যান্য পাঠকরা সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে পাবলিক লাইব্রেরির স্বকীয়তা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তারা। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, চাকরির জন্য পড়াশোনায় যে, অন্য কোনো কিছু শেখা যায় না, এটা পুরোপুরি ঠিক না। কারণ চাকরির জন্য সাহিত্য, গণিত, ইংরেজিসহ অনেক বিষয়েই পড়তে হয়। তাই কিছুটা হলেও তো জানা বা শেখা হচ্ছে। আচ্ছা এটা তো যার যার বাসায়ও করা যায়। পাবলিক লাইব্রেরিতে এসেই যে করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। এখানে পড়াশুনার পরিবেশ আছে কিন্তু এই পরিবেশ তো সব পাঠকদের জন্য, শুধু চাকরি প্রত্যাশী তরুন-তরুনীদের জন্য নয়। দীর্ঘ বছর কর্মক্ষেত্রে বিচরণ করার সুবাদে আমি অসংখ্য মানুষকে চিনি যারা জীবনে কোনো দিন পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে এমপিথ্রি বই না পড়েও বিসিএস, ব্যাংক বা অন্য কোনো সরকারি চাকরি পেয়েছে।

তবে বিষয়টা স্পর্শকাতর। কারণ চাকরি তো সবারই দরকার। আবার আমাদের মতো পাঠকদেরও কিছু পড়াশুনা করা দরকার। তাই এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বলে আমি বরং পাবলিক লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো গণগ্রন্থাগারের উপরে আরো একতলা বা দু’তলা বানিয়ে সেখানে চাকরির পড়ুয়াদের পাঠকক্ষ বানাতে এবং নিচের দুইতলা-তিনতলা যথারীতি সাধারণ পাঠকদের জন্য রাখতে। তাতে মনে হয় দুই দিকই রক্ষা হয়।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৮ রাত ১:৪৮

পাকাচুল বলেছেন: বেকারদের জন্য সরকারের কিছু করণীয় থাকা উচিত। মাসিক বেকার ভাতা/ স্কিল বাড়ানোর কোর্স/ মোটিভেশন এর ব্যবস্থা করা উচিত সরকারীভাবে।

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: দেশে কয়েক কোটি বেকার আছে। এদের জন্য কিছু করা কঠিন ও দুঃসাধ্য। উপরন্তু সরকারেরও তেমন কোনো সদিচ্ছা নেই।

২| ১০ ই মে, ২০১৮ রাত ১:৫৬

চাঁদগাজী বলেছেন:

@পাকাচুল,

বেকারদের জন্য স্যাটেলাইট ছাড়ছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে।

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৩

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ ঠিক বলেছেন

৩| ১০ ই মে, ২০১৮ রাত ২:৩১

চাঁদগাজী বলেছেন:


স্কিল বাড়ানো দরকার; কিন্তু চাকুরীই যদি সৃষ্টি না হয়ে থাকে, স্কিল দিয়ে কি হবে।

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৫

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: আসলেও তাই। স্কিল কমবেশি সবারই আছে। কিন্তু চাকুরীই সবার জন্য নেই।

৪| ১০ ই মে, ২০১৮ রাত ২:৩৩

শহীদ আম্মার বলেছেন: @চাঁদগাজী:
"বেকারদের জন্য স্যাটেলাইট ছাড়ছে, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে।"
একদম খাঁটি কথা্।
তবে চাঁদের আলোতে স্যাটেলাইট দেখা যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তবে সামনে রমজানের চাঁদ উঠলে সবাই আকাশের দিকে তাকাবে।
পারলে আমার এখানে একটু ঢু মারিয়েন।
বসে আছি মালয়েশিয়ার নির্বাচনের খবর শুনার জন্য কিন্তু কারো কোন খবর নেই।

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: আপনি কি মালয়েশিয়া থাকেন?

৫| ১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৭:১৭

সনেট কবি বলেছেন: সুন্দর পরামর্শ।

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৫৮

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ কবি।

৬| ১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৭:২৫

শাহ আজিজ বলেছেন: চাকুরিপ্রার্থীদের লাইব্রেরি খোলা যায় ।

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:০২

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: গণগ্রন্থাগারটাকে কী পেয়েছে কে জানে? আমাদের এলাকার সরকারি পাঠাগারে কেউ চাকরির পড়া পড়তে যায় না।

৭| ১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৮:৩০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বিষয়টি এমন হলে আপত্তিকরতো বটেই।
আপনার প্রস্তবনাও ভেবে দেখার মতো!।
অনেক ব্যাচেলর আছৈ কষ্ট করে মেস লাইফে মাথঅ গুজে থাকে কিন্তু পড়ার পরিবেশ নেই
তাদেরই একটা বড় অংশ হয়তো সেখানে ভিড় করে!
কর্তুপক্ষ ভাবতে পারেন আপনার প্রস্তবনা বা বিকল্প কিছু

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:০৪

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। গণগ্রন্থাগারে গিয়ে সেদিন অনেক হতাশ হয়েছি।

৮| ১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: আমি মাঝে মাঝে যাই, বেশির ভাগ ছেলে মেয়েদের ফিসফিস করে গল্প করতে দেখি। মোবাইল টিপাটি করে। হাতে সময় আছে, বাইরে রোদে না ঘুরে এখানে সময় পার করছে।

১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:০৬

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: এদের জন্য সাধারণ পাঠকরা সেখানে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

৯| ১০ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৪১

টারজান০০০০৭ বলেছেন: শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরিতে এখন পাবলিক যাইয়া জায়গা পায়না ! উহা এখন পোলাপাইনের রিডিং রুম হইয়াছে ! লাইব্রেরির সাধারণ নিয়ম, পার্সোনাল বই ওপেন সিস্টেম লাইব্রেরিতে নেওয়া নিষিদ্ধ, ইহা প্রয়োগ করিলেই পোলাপাইন ভাগিয়া যাইবে ! জব রিলেটেড বই/গাইড বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেমিনার লাইব্রেরিতে ব্যবস্থা করিতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে হওয়ায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে জায়গা না পাইয়া এবং হলের রুমগুলো ডর্মিটরিতে পরিণত হওয়ায় পাবলিক লাইব্রেরীর এই অবস্থা ! ইহাতে অবশ্য লাইব্রেরি কতৃপক্ষের লাভ হইয়াছে। তাহারা ইউজার বেশি দেখাইতে পারিতেছে !

১১ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:১২

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: পাবলিক লাইব্রেরি এখন পুরোটাই ঐ ছেলেপিলেদের দখলে। বাহির থেকে বই আনা যাবে না শুধুমাত্র এই একটা নিয়ম কড়াকড়ি ভাবে পালন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। কিন্তু এদেশে তো কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। বরং সমস্যাকে জিইয়ে রাখা হয়।

১০| ১১ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:২৮

দিলের্‌ আড্ডা বলেছেন: গনগ্রন্থাগারের ওপর জাতি ভরসা হারায়ে ফেলবে। আর চাকরিপ্রার্থীদের জয় হোক।

১১ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: গণগ্রন্থাগার দিন দিন চাকরিপ্রার্থীদের আতুড়ঘরে পরিণত হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.