নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রিফাত রিদম

রিফাত রিদম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মের নামে সরকারী ভূমি দখলঃ অপপ্রচার করে সহানুভূতি আদায়ের প্রচেষ্টা

২৬ শে জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:২৩


ফেসবুক আর অনলাইন পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম যে, খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার ২ নং হাফছড়ি ইউনিয়নের কুকিছড়ায় বৌদ্ধ ধর্মের একটি ধর্মীয় উপাসনালয় (বৌদ্ধ বিহার) নাকি সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা ভেংগে ফেলার আদেশ দিয়েছে। খবরটি শুনে বেশ খারাপ লাগলো।
বিষয়টি যেহেতু ধর্মীয় তাই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। সেজন্যই এ ব্যাপারে একটু খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলাম। বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে যেটা জানতে পারলাম তাতে একটা বিষয় পরিস্কার হয়েছে যে ধর্মের আড়ালে ভূমি দখল করার জন্য কতিপয় উপজাতি ভূমি দস্যুরা আমাদের দেশের গর্ব সেনা জওয়ানদেরকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করছে। যে জমিটায় তারা বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করছে সেটি আসলে সরকারী খাস জমি এবং এক সময় এখানে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প ছিলো।
ঘটনা জানার জন্য ঐ এলাকার পরিচিত বন্ধুদের (বাংগালী এবং উপজাতি উভয় বন্ধু) সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেছিলাম। তাদের কাছ থেকে যেটা জানলাম তার সারমর্ম হল-
ভূমিদস্যুরা উক্ত জমি তাদের ব্যক্তি মালিকানাধীন বলে দাবি করে আসছে। তারা ২-৩ দিনের মধ্যেই ঐ এলাকার জংগল কেটে সাফ করে তড়িঘড়ি করে কোনরকমে একটা বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করতে থাকে। যেহেতু, জমিটা সরকারী খাস জমি তাই ভূমিদস্যুদের এহেন তড়িঘড়ি করে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণে স্থাণীয় জনমনে সন্দেহ দেখা দেয়। বিষয়টি তখন স্থাণীয় প্রশাসনের নজরে আসে। এ ব্যাপারে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অ.দা) বিভিষন কান্তি দাস একটি পত্রিকাকে জানান-
“কুকিছড়ায় সরকারী একটি খাস ভূমিতে অবৈধভাবে উপজাতীয়রা বৌদ্ধ বিহার নির্মান করছে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা বিহার নির্মানে স্থগিতাদেশ দিয়েছি, মূলত ঐ জমিটি সরকারী খাস জমি, তাই আপাতত বিহার নির্মানের কাজ বন্ধ রয়েছে”।
খোঁজ নিয়ে আরো জানতে পারলাম যে, নির্মিতব্য ঐ বৌদ্ধ বিহারটির প্রায় ৩০০ গজের মধ্যে আরো ২ টি বিহার আছে। তাহলে কেন বা কি কারণে উপজাতিরা আরেকটি বিহার নির্মানের নামে সরকারী ভূমি দখল করতে চাইছে এ প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। স্থানীয়দের দাবি পাহাড়ের আঞ্চলিক একটি সশস্ত্র সংগঠন সাধারণ উপজাতিদের আড়ালে থেকে সরকারী এ খাস জমিটি দখলের পায়ঁতারা করছে। তবে উপজাতি সশস্ত্র সেই সংগঠনটির ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না।
নির্মিতব্য বৌদ্ধ বিহারটির ভূমিটি মূলত সরকারী খাস জমি এ কথা স্বীকার করে স্থানীয় কার্বারী (গ্রাম/পাড়া প্রধান) এচিং মারমা জানান-
“যেখানে কুকিছড়ায় আরো দুটি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে সেখানে কতিপয় ভূমিদস্যুরা বিহারের নামে এ ভূমিটি দখলের পায়তারা করছে”।
এ বিষয়ে ২ নং হাফছড়ি ইউপি’র চেয়ারম্যান চাইথোয়াই মারমা একটি পত্রিকাকে জানান,
“কুকিছড়ায় সরকারী খাস ভূমি দখল করে স্থানীয়রা একটি বিহার নির্মান করছিলো, পরে ইউএনও স্যারসহ সেখানে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে”।
আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মের নামে ভূমি দখল করা উপজাতিদের বেশ পুরানো অপকৌশল। ইতিপূর্বে তারা বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। যার কিছু উদাহরণ তুলে ধরছিঃ
১। ১৯৯৮ সালে রাংগামাটি জেলার নাভাংগা পাড়া নামক স্থাণ হতে সেনাবাহিনীর একটি ক্যম্প প্রত্যাহার করা হয়। সাথে সাথেই সেই বছরই উপজাতি ভূমি দস্যুরা সেই জমি দখলে নেবার জন্য সেখানে “নাভাংগা পাড়া বৌদ্ধ বিহার” নামে একটি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে তোলে।
২। ১৯৯৯ সালে খাগড়াছড়ি জেলার দুদাইয়াখোলা নামক স্থাণ হতে পুলিশের একটি ক্যম্প প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে, ২০০১ সালে উপজাতি ভূমি দস্যুরা সেই জমি দখলে নেবার জন্য সেখানে “দুঃখ মুক্তি বিদর্শণ ভাবনা কেন্দ্র” নামে একটি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে তোলে।
৩। ২০০৪ সালে রাংগামাটি জেলার শিবের আগা নামক স্থাণ হতে পুলিশের একটি ক্যম্প প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে, ২০০৫ সালে উপজাতি ভূমি দস্যুরা সেই জমি দখলে নেবার জন্য সেখানে “শিবের আগা বৌদ্ধ বিহার” নামে একটি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে তোলে।
৪। ২০০৪ সালে রাংগামাটি জেলার জুরাছড়ি নামক স্থাণ হতে পুলিশের একটি ক্যম্প প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে, ২০০৫ সালে উপজাতি ভূমি দস্যুরা সেই জমি দখলে নেবার জন্য সেখানে “জুরাছড়ি বেনুবন অরণ্য কুটির” নামে একটি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে তোলে।
৫। ২০০৫ সালে রাংগামাটি জেলার শৈলছড়িমুখ নামক স্থাণ হতে পুলিশের একটি ক্যম্প প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে, ২০০৫ সালেই উপজাতি ভূমি দস্যুরা সেই জমি দখলে নেবার জন্য সেখানে “শৈলছড়ি বৌদ্ধ বিহার” নামে একটি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে তোলে।
৬। ২০০৯ সালে রাংগামাটি জেলার হামিদ টিলা নামক স্থাণ হতে সেনাবাহিনীর একটি ক্যম্প প্রত্যাহার করা হয়। পরবর্তীতে, উপজাতি ভূমি দস্যুরা সেই জমি দখলে নেবার জন্য সেখানে “জনবল বৌদ্ধ বিহার” নামে একটি ধর্মীয় উপাসনালয় গড়ে তোলে।
এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে। প্রিয় পাঠক আপনারা যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে ঘুরতে যান তাহলে দেখতে পারবেন যে, বিস্তীর্ণ জমি জুড়ে ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণ করা হয়েছে যা আসলে ভূমি দখলের অপকৌশল মাত্র।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্মের আড়ালে শুধু ভূমি দখলই হয় না। এর পাশাপাশি অস্ত্র চোরাচালান, নারী পাচার, মাদক ব্যবসাসহ নানান ধরণের অপকর্ম চলে। সে বিষয়ে আরেকদিন লিখবো।
*****ছবিঃ কুকিছড়ায় নির্মাণাধীন বৌদ্ধ বিহার

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ৯:২৬

মাহের ইসলাম বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
শুভ কামনা রইল।

০১ লা জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০০

রিফাত রিদম বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনাদের উৎসাহ আমার পথ চলার পাথেয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.