![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকাল নৈর্ব্যক্তিকতা (বা বস্তুনিষ্ঠতা) বলতে তেমন আর কিছু পাওয়া যায় না। মতামত দানের ক্ষেত্রে সবাই কেমন জানি একদিকে দারুণভাবে হেলে পড়ে। যেন পক্ষাবলম্বনই মতামত দানের আদর্শ মানদণ্ড! আর এমন আচরণে অভ্যস্ত ব্যক্তিবর্গের এ নিয়ে তেমন একটা মাথা ব্যাথা তো নেই-ই বরং নুন্যতম চক্ষুলজ্জাও নাই। দুঃখের ব্যাপার হলো কি জ্ঞানী আর কি পণ্ডিত সবাই যেন এমন রোগে জেনে হোক না জেনে হোক আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। যার দরুন হক কথা কিংবা সঠিক সময়ে সাহসী উচ্চারণের হার দিনকে দিন শূন্যের কোঠায় পৌঁছাতে চলেছে। এর ফলস্বরূপ মারাত্মক ক্ষতি সংগঠিত হওয়ার পূর্বে সংশোধনের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কটের কথা বলা যেতে পারে। একেবারে নাবালক যার কিনা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হবার বয়স এখনো হয়নি সেও বলে দিতে পারবে বর্তমান সমস্যার মূল হেতু কি আর এর সমাধান-ই-বা কি। কিন্তু আমাদের পণ্ডিত মহল কিংবা বিজ্ঞজন এই সহজ কিন্তু সত্য উচ্চারণটি করতে গিয়ে এমন কথা সমষ্টির অবতারণা করেন যে এর দরুন মূল কথাটি তাঁদের আর পাড়া হয়না। অনেক সময় তো এমন হয় যে তারা মূল সমস্যার ধারে কাছে দিয়েও যান না। কিন্তু সমস্যা হেতু সৃষ্টি হওয়া উপসর্গ নিয়ে নানা বুলি কপচাতে একটুও কসুর করেন না। একে বরং মূল সমস্যাই বানিয়ে দেন। ফলে মূল বিষয় আপনা হতে ধামাচাপা পড়ে যায়। আর ঠিক এই ব্যাপারটিই আশা করেন ক্ষমতার মদমত্ততায় বেসামাল কর্তাব্যক্তিবর্গ। দৃষ্টি ফেরানোর এই কৌশল প্রাচীন এবং বহুল ব্যবহৃত; কিন্তু আমজনতার ক্ষীণ স্মরণ-শক্তি কিংবা স্বল্প ও অল্প রাজনৈতিক জ্ঞানের কারণে এ ব্যাপারটি আড়ালে রয়ে যায়। আর তা না হয়ে-ই বা উপায় কি; দিনমান যাদের ব্যস্ত থাকতে হয় দুমুঠো অন্ন সংস্থান এবং মাথা গোঁজার ঠায় জোগাড়ে তাঁদের আবার রাজনীতির এইসব মসলা নিয়ে চিন্তা করার ফুসরত কোথায়।
পূর্বে চিকিৎসকরা জ্বরকে স্বতন্ত্র রোগ হিসেবে ধরে চিকিৎসাপত্র দিতেন। কিন্তু অধুনা সেই একই চিকিৎসকবর্গ জ্বরকে আর রোগ নয় বরং রোগের উপসর্গ বলে থাকেন। আর সে কারণে জ্বর হলে এখন আর চিকিৎসাপত্র নয় বরং নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দানের মাধ্যমে মূল রোগ চিহ্নিত করার প্রয়াস চালান। তো আমাদের বিজ্ঞজন কিংবা পণ্ডিতবর্গেরও একই ফর্মুলা অনুসরণ করার কথা ছিল; যা কিনা যুগের দাবিও বটে। কিন্তু অবস্থা তথৈবৈচ! তাঁরা বরং পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতিতেই তাঁদের আস্থা ধরে রেখেছেন। তাই তাঁদের কাছে এখন উট পাখির স্বভাব পরিলক্ষিত হলেও বক পাখির ধ্যানমগ্ন তন্ময়তা নেই। হায় আফসোস!
বিশিষ্ট লেখক এবং বুদ্ধিজীবী আহমদ ছফা একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, “বাংলাদেশ যদি কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-জনতার কথা না শুনে যদি এর বুদ্ধিজীবীদের কথা শুনত তবে এই দেশ কখনো স্বাধীন হতো না।“ আমি কিংবা আমরা অমন রুঢ় কথা বলতে আগ্রহী নয় বরং আমরা আমাদের বিজ্ঞজনদের কাছে একচক্ষু লেখা, বয়ান কিংবা আচরণ চাই না। আমরা চাই সঠিক দিকনির্দেশনা, বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ এবং সত্য উচ্চারণ। যাতে আমাদের মত স্বল্প এবং অল্প জ্ঞান সম্পন্ন আম-আদমি সহজেই অবস্থার পূর্ণ চিত্র অনুধাবন করে যার যার অবস্থান থেকে সংশোধন, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করতে পারে। মতলবি লেখা কিংবা বিশ্লেষণ আর নয় বরং শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, জাগ্রত হোক বিবেক।
তো আপনি উট পাখি নাকি বক পাখি?
©somewhere in net ltd.