![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা ৩টি নববর্ষের সাথে পরিচিত!বাংলা,ইংরেজি
ও হিজরি।১লা বৈশাখ,বাংলা নববর্ষের ১ম দিন,১লা
জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষের আর ১লা মহররম হিজরী
নববর্ষের ১ম দিন।বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষ আমরা
বেশ ধুমধামের সাথেই পালন করি!
আজকাল বাংলা নববর্ষের ১ম দিন,১লা বৈশাখ বেশ
জানান দিয়েই আসে ।বেশ আগে থেকেই নববর্ষ
পালনের প্রস্তুতি চলতে থাকে!রমনা বটমূলে
বৈশাখি মেলা,চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের নানারকম
শিল্পকর্ম,মুখোশ মিছিল,প্রতিটি পাড়া মহল্লায়
মেলা,নানানরকম প্রতিযোগিতামূলক উৎসব,বিভিন্ন
শপিংমল,দোকানপাটে বৈশাখ উপলক্ষে নানা পণ্যের
সম্ভার,একটা সাজ সাজ রব!বাচ্চা,তরুণ-
তরুণী,প্রৌঢ়,বৃদ্ধ সকলের জন্য নতুন পোশাকও
কেনা হয় এই উপলক্ষে!পোশাকের দোকানগুলি
বৈশাখি নিত্যনতুন ফ্যাসন নিয়ে হাজির হয়!
বৈশাখের জন্য আলাদা রং ও রূপের পোশাক,গয়না!
বাচ্চা মেয়েদের জন্য ছোট্ট লাল টুকটুকে রঙের
শাড়ি,ছেলেদের লাল ফতুয়া,পাঞ্জাবি আর তরুণ
তরুণীরা তো সাদা-লাল,লাল জামদানি,তাঁত থেকে
শুরু করে ফতুয়া,পাঞ্জাবিতে নিজেদের সাজিয়ে
মেলায় আর বৈশাখি অনুষ্ঠানে ঘুরে বেড়ায়!যে
কোন আনন্দ উৎসবই খুশির,মেলাও আনন্দেরই ব্যাপার।
তবে আমাদের ছোটবেলায় বৈশাখি মেলা হতে
দেখিনি!চৈত্র সংক্রান্তির মেলা হতো,সে মেলাই
বৈশাখেও গড়াতো!বৈশাখের প্রধান উৎসব ছিলো
‘হালখাতা’!এটা মূলত ব্যবসায়ীদের বাকি বকেয়া
আদায়ের প্রক্রিয়া ও নতুন করে হিসাবের খাতা
হালনাগাদ করার উৎসব!এ উপলক্ষে সাধারণ মুদি
দোকানদার থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ীরা যার
যার সামর্থ্য ও খরচ করতেন!সবাই সুন্দর সুন্দর
দাওয়াত কার্ড ছেপে ক্রেতা,বন্ধুবান্ধব AvZ¥xq-
¯^Rb‡`i দোকান ও বাসাবাড়িতে দাওয়াত করতেন!
মিষ্টি বানানোর ধূম পড়ে যেতো ঘোষপল্লীতে!
আমরা বাবার সাথে দোকানে যেতাম,মিষ্টির
ছড়াছড়ি,যে যত পারো খাও!সবাই কিছু না কিছু
টাকা দিয়ে নতুন হিসাব খুলতো দোকানে!আমরা
আমাদের আত্মীয়-বন্ধু যারা ব্যবসায়ী,তাদের
বাড়িতেও যেতাম দাওয়াত খেতে!সব বাড়িতেই
মিষ্টির পাহাড়!তাছাড়া নববর্ষের ১ম দিন,আমরা
ঘুম থেকে উঠতাম সকালে,মুখ হাত ধুয়ে বই নিয়ে
বসতাম,কোন ঝগড়াঝাটি,খারাপ কাজ যেন না করে
ফেলি সেদিকে সতর্ক থাকতাম।বাসায় সব পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন করা হতো আগে থেকেই,ধোয়া কাপড়
চোপড়,বিছানা,বালিশ সব ঝকঝকে করে পাতা
হতো,ঘরদোরও পরিষ্কার।এইদিনে ভালো ভালো
খাবার রান্না হতো।বড় মাছ ভাজা,মাছের
কালিয়া,মাছের
মাথারমুড়িঘন্ট,পোলাও,কোর্মা,রোস্ট,রেজালা,পায়েস,মিষ্টি
সবই আয়োজন করা হতো।আমাদের ধারণা ছিলো বছরের
১ম দিনে ভালো কাজ করলে,ভালোভাবে পড়াশোনা
করলে,ভালো খাবার খেলে,সারাবছর এভাবেই কাটবে।
স্কুলে কলেজে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হতো,পাড়ায়
পাড়ায় স্টেজ করেও অনুষ্ঠান হতো।আমরা কোরাসে
গাইতাম,‘এসো,এসো হে বৈশাখ,এসো এসো…!
নাচ,গান,আবৃত্তি,নাটক সবই হতো।সারাটা দিন
কাটতো আনন্দ উৎসবের মাঝেই!তবে পান্তা,ইলিশ
কখনও কারো বাড়িতে খেতে দেখিনি!
আজকাল এই ঢাকা শহরে, জানিনা এটা বাণিজ্যিক
উদ্দেশ্যে নাকি কি কারণে পান্তা-ইলিশ খাওয়া
আমাদের সংস্কৃতি হিসেবে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে!
দামি দামি গাড়িতে চড়ে,মোটাসোটা সাহেব,বেগম
সাহেবরাও দেখি ,দোকানে বসে মাটির সানকিতে
হাপুসহুপুস করে পান্তা-ইলিশ খাচ্ছে!পান্তা
খাওয়া কখনই আমাদের সংস্কৃতি নয়!আর পান্তার
সাথে ইলিশ,কে কবে খেয়েছে?পান্তা খায় আমাদের
দেশের দরিদ্র কৃষক,যারা সূর্য ওঠার আগে মাঠ চাষ
করতে রওয়ানা হন,কারণ রোদ উঠে গেলে ক্ষেত চাষ
কষ্টকর।হয়তো এতো সকালে উঠে উনুন ধরানো,রান্না
করা কিষাণীর পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনা আথবা গরমে
পেট,শরীর ঠান্ডা করার উদ্দেশ্যেই পান্তার
প্রচলন।গ্রামে আগেও ফ্রিজ ছিলো না,এখনো
নেই,তাই ভাত যেন পঁচে না যায়,তাই পানি দিয়ে
রাখা,এটার নামই পান্তা!পান্তার সাথে এই ভোর
বেলা দরিদ্র কৃষক ইলিশ ভাজা খাবে কোথা থেকে?
দুপুর বেলা ইলিশ খাওয়াও তাদের জন্য বিলাসিতা!
আর এখন তো ইলিশ মধ্যবিত্তেরও ধরা ছোঁয়ার
বাইরে!পান্তার সাথে একটা শুকনো মরিচ পোড়া আর
পেঁয়াজ ডলে ভাত খেয়ে,পেট ঠান্ডা করে যে কৃষক
ভোরে মাঠে যায় প্রয়োজনের তাগিদে,সেটা কী
করে আমাদের সংস্কৃতি হতে পারে?আমাদের ধনী
সম্প্রদায় সারা বছর পান্তা চেনে না,আর ১লা
বৈশাখ এলেই দামি ডিনার সেটের প্লেট বাদ
দিয়ে,একবেলা মাটির সানকিতে পান্তা খায়,তাও
আবার ইলিশ ভাজা দিয়ে!এটা স্রেফ ভন্ডামি আর
দরিদ্রদের উপহাস আর বিদ্রুপের সামিল!কোন
সাধারণ দরিদ্র বাঙালি ১লা বৈশাখে ইলিশ ভাজা
আর পান্তা খায়,আমার অন্তত জানা নেই!
মেলা,আনন্দ,উৎসব ভালো,আনন্দের ,কিন্্তু
সংস্কৃতির নামে এসব প্রহসন কখনো কাম্য নয়।
বাংলা বছরের প্রথম দিন আমরা ভালো কাজ করবো,সৎ
থাকবো,পারলে অন্তত একটা দরিদ্র পরিবারের মুখে
হাসি ফোটাবো,যাতে আমরা সারা বছরই এমন ভালো
থাকতে পারি এটাই কামনা ।শুভ নববর্ষ।
©somewhere in net ltd.