নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় প্রকৌশলী। অন্তর্মুখী। কবিতা ভালোবাসি ভীষণ। লিখিও

ঋতো আহমেদ

আমার হাতের দিকে বাড়ানো তোমার হাত। হাতের ভেতরে শিখা, শত্রুতার এমন রূপ! কামনা বিভীষিকা

ঋতো আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার একটি কারণ প্রয়োজন

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০১

('সাত আসমান ও জমিন' থেকে)

পর্ব: জেনোসাইড ২০১৭

আমার একটি কারণ প্রয়োজন

আমাকে একটা কারণ বলো যার জন্য আমি চুপ থাকবো
একটা কারণ- যার জন্য আমি আর কোনো কথাই বলতে যাবো না
এমন একটি কারণ- যা কী না আমার নিরবতার জন্য যথার্থ হবে
এমন কিছু বলো যেন আর একটি অক্ষরও আমি না লিখি

আমার ঝাপসা চোখে এখনও যে রক্ত-বন‍্যা দেখতে পাচ্ছি-
এখনও যে ভয়ঙ্কর ও বিভৎস হত‍্যাদৃশ্য
একের পর এক
চারিত হচ্ছে এই আশ্চর্য মনুষ‍্য সভ‍্যতার অন্তর্জালে

আমি সেগুলো কী করে ভুলি

কী করে বুঝি এটা ২০১৭
আমরা মানুষেরা নাকি সহস্র শতাব্দীর সভ‍্য

অথচ দ‍্যাখো
দু’চোখের পাতাগুলো এক করতে পারছি না
রাত্রিগুলো দুঃসহ দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং
ফিরে আসছে
মনে হচ্ছে
পৃথিবী নয়
আমি আছি জাহান্নামের কোনো এক পোড়া প্রান্তরের মধ‍্যখানে
যেখানে বাতাস ব’লে কিছু নেই
আছে লাশের গন্ধ
যেখানে ঘাস নয় ফুল‌ও নয়- জ্বলন্ত অঙ্গার/ছাই/ভষ্ম- ফুলকি
ফোয়ারার মতো ছড়িয়ে পড়ছে দিকবিদিক
তারপর‌ও
নিঃশ্বাস বন্ধ হ’য়ে এলে
আমার অস্তিত্বের ভেতর আমি আর দাঁড়াতে পারি না- কোনো ভাবেই
নিজেকে নিজস্ব আওতায় আর রাখতে পারি না
দেখি যে
অগ্নুৎপাতের মতোই আমার
পাকস্থলীর অন্তঃস্থল থেকে গুলিয়ে আসছে ঘৃণা- গলিত শাপ

দোহাই তোমাদের
আমাকে অন্তত একটা কারণ বলো
যেন এই শাপ থেকে এইসব ঘেন্না থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারি
তোমাদের মতোই লিখতে পারি প্রেমের পংক্তিমালা পার্বণের গান
তোমার চোখের দিকেই তাকিয়ে অবতীর্ণ করতে পারি
একের পর এক প্রণয়-শিখা
যার আলোয় ও স্পর্শে আলোকিত করতে পারি- প্রাঞ্জল করতে পারি
আমাদের প্রাত‍্যহিক যাপন

আমাকে একটা কারণ বলো তোমাদের

আমাকে বলো কীভাবে নির্বিচারে হত্যা-দৃশ‍্য দেখার পরও
নির্বিকার থাকা যায়
হাসতে হাসতে বিচিত্র ভঙ্গিতে সেল্ফি তোলা যায়
ফেসবুকে উচ্ছসিত স্ট্যাটাস দেয়া যায়
চুমু খাওয়া যায়
প্রেম করা যায়
আমাকে একটা উপায় বলো
নয়তো আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না
আমার মতোই প‍্যান্ট-শার্ট পড়া একটা মানুষ কীভাবে
আছড়ে মারে একটি দুধের শিশুকে
জীবন্ত মানুষকে আগুনে পোড়াতে টায়ার ঠেলে দেয়া যায় কীভাবে
কীভাবে কুপিয়ে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে একটি মেয়ের
কীভাবে পিটিয়ে পিটিয়ে শেষে গলা কেটে ফ‍্যালে এতোগুলো বাচ্চাছেলের
কীভাবে..
আমি কিছুতেই ভুলতে পারি না
আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না
কী করে সম্ভব

আমি পাশ ফিরে আমার সন্তানকে নয় দেখতে পাই ওই শিশুটিকে
আমি পাশ ফিরে আমার স্ত্রীকে দেখি না- দেখি ওই মেয়েটির খন্ডিত দেহ
আমার সঙ্গম হয় না
আমার ঝাপসা চোখে ঘুম আসে না
এইসব দুঃসহ রাত যেন শেষ হবার নয়

প্লিজ আমাকে বলো তোমরা
কী করে পারো
কীভাবে পারছো

২৮.০৯.২০১৭; উত্তরা

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:


আমার কবিতা সভ্য চুরুটের ভাবের সাথে মিল আছে! আপনি খুব ভাল লিখেছেন...


আমরা নির্বিকার হয়েই অনেক অসভ্যতা মেনে নিয়েছি..

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৫৭

ঋতো আহমেদ বলেছেন: আর্মি তো ট্রেইন্ড পিশাচ। আমি বলছি সেই সব সভ‍্য দের কথা। আপনার আমার মত পোষাক পরা মানুষ গুলোর কথা। যারা নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। মোবাইল ফোন এ ভিডিও করে ইন্টারনেট এ পোস্ট করছে। আর আমরা দেখেও না দেখার ভান করে নির্বিকার।

কিন্তু কেন?

ওরা রোহিঙ্গা বলে? মুসলিম বলে? আমি কি ভুলে যাচ্ছি ওরা রোহিঙ্গা নয় মুসলমান‌ও না, ওরা আপনার আমার মতোই মানুষ?

অনেক কবিকে/লেখককে এ বিষয়ে নির্বিকার থাকতে দেখছি এখনও। আমি খুব অবাক হচ্ছি। এরকম ভয়াবহ গণহত্যাকে কেবলমাত্র রাজনৈতিক বলে, একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর ব‍্যপার বলে, একটি রাষ্ট্রের অভ‍্যন্তরীণ বিষয় বলে কী অবলীলায় এড়িয়ে যাচ্ছি।

তাহলে আমরা কতটুকু সভ‍্য আসলে !? আমাদের মানবিক চৈতন্য বলে আদৌ কিছু আছে?

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:০১

ভ্রমরের ডানা বলেছেন: কিছু শব্দ প্রয়োজন কবিতাটি আরাকানের নির্যাতিত মানুষদের মানবতার হত্যা নিয়ে লেখেছিলাম। অনেকেই বুঝে উঠতে পারেনি। আপনি পড়ে দেখতে পারেন।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১৭

ঋতো আহমেদ বলেছেন: আপনার কবিতা খুব ভালো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.