নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশায় প্রকৌশলী। অন্তর্মুখী। কবিতা ভালোবাসি ভীষণ। লিখিও

ঋতো আহমেদ

আমার হাতের দিকে বাড়ানো তোমার হাত। হাতের ভেতরে শিখা, শত্রুতার এমন রূপ! কামনা বিভীষিকা

ঋতো আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয় হার্জোর কবিতা

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৯



জয় হার্জো
Joy Harjo

জয় হার্জো। নামটা প্রথম শুনি এমদাদ রহমান এর সাথে মেসেঞ্জারে কথোপকথনে। হার্জোর কবিতা ওর ভীষণ ভালো লেগেছে বলছিল। নেটিভ আমেরিকান কবি জয় হার্জো। জন্মেছিলেন ১৯৫১ সালে। ওঁর কবিতায় আদিবাসী আমেরিকানদের প্রতারিত হ‌ওয়ার কথা, লাঞ্ছিত নিগৃহীত হওয়ার কথা আছে। আছে কি করে নিজেদের ভূমি বন্দুকের নলের মুখে দখল করে নেয় ভাস্কোদাগামা আর তার উত্তরসূরীরা। কীভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে প্রতারণার শিকার হন তাঁরা। কীভাবে হত‍্য‌া করা হয় অসংখ্য মানুষকে! কীভাবে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা হয় সামান্য বাচ্চাদেরও। এর পর‌ও আদিবাসীরা শান্তি চেয়েছিলেন। কিন্তু বরাবরই প্রতারিত হয়েছেন, —হচ্ছেন এখনও।

বাংলায় হার্জোর কবিতা কেউ অনুবাদ করেছেন কী না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেট ঘাটতে শুরু করেন এমদাদ রহমান। অবশেষে পাওয়া যায় কিছু কবিতা। কবি তাপস গায়েনের করা। অসাধারণ অনুবাদ। তারপর, হার্জোর একটি সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেন এমদাদ। সেই কথোপকথনে ওঁর সম্পর্কে, ওঁর কবিতা বা লিখালিখি এবং অন্যান্য চিন্তা-চেতনার অনেক কিছুই জানতে পারি আমরা। আগ্রহ গভীর থেকে গভীরতর হয়। তারপর একসময় মনে পড়ে—এই নাম শুনেছি বা দেখেছি কোথাও আগে।

হ‍্য‌া, দানিয়া মিখাইল। ইরাকি-আমেরিকান কবি। যার কিছু কবিতার অনুবাদ করেছিলাম কয়েক মাস আগে। ফেসবুক প্রোফাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে ওখানেই বন্ধুতালিকায় পেয়েছিলাম সেই নাম। জয় হার্জো। সাক্সোফোন হাতে হাস‍্য‌োজ্বল একটি মুখ। ৬৮ বছরের তরুণ এক কবি। সঙ্গীত শিল্পী। শিক্ষক।

আসুন কবি জয় হার্জোর কিছু কবিতা পাঠ করি আজ।



জয় হার্জোর কবিতা
বাংলা বিনির্মাণ : ঋতো আহমেদ


সকালে আমার শত্রুর জন‍্য প্রার্থনা করেছি আজ

কাকেই-বা শত্রু বলছি আমি?
শত্রু তো সে, যে ঝগড়ার উপযুক্ত।
সূর্যের দিকে মুখ ফিরিয়ে চলতে লাগলাম আমি।
ক্ষিপ্ত মন নয়, এই প্রশ্ন আমার হৃদয়ের।
যেন সে সূর্যের ছোট্ট এক চাচতো ভাই।
সব কিছুই দেখতে পায় আর জানে।
ফিসফাস‌ শুনতে পায়, এমনকি শুনতে পায় কৃপাও। তাই তো বলছি—
মনের দরজা কেবলমাত্র হৃদয়-চাবি দিয়েই খুলতে হয়।
শত্রু, যে ঢুকবে সেখানে, বন্ধু বনে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েই ঢুকতে হবে তাকে।



হয়তো জগতের শেষ এখানেই

রান্না ঘরের টেবিলে জগতের শুরু। কী সেটা মূখ্য নয়, বাঁচতে হলে খেতে হবে আমাদের।
পৃথিবীর দেয়া উপহার সব নিয়ে আসো টেবিলে, সাজাও। সৃষ্টির শুরু থেকেই চলছে এভাবে, চলবেও এভাবে।
কুকুর আর মুরগী গুলোকে তাড়িয়ে দিচ্ছি বারবার। বাচ্চারা এক কোণায় হাসছে। নীচে হামাগুড়ি দিয়ে খেলছে।
মানুষ কাকে বলে শেখাচ্ছি ওদের। কাউকে গড়ে তুলছি পুরুষ, কাউকে মহিলা।
আমরা গল্প করছি, আমাদের শত্রুদের নিয়ে আর প্রেমিকের প্রেতাত্মা নিয়ে।
আমাদের স্বপ্নেরা আমাদের বাচ্চাদের মাথায় হাত বুলাচ্ছে, কফি খাচ্ছে আর হাসি তামাশা করছে আমাদের সাথে।
এই টেবিলটা যেন বর্ষায় আশ্রয়, প্রখর রোদে মাথার উপর ছায়া।
এখানেই যুদ্ধ বিগ্রহের শুরু এবং এখানেই শেষ। ভয়-শঙ্কা থেকে বাঁচতে এ-ই এক লুকোবার জায়গা আমাদের। দারুণ বিজয় উদযাপনের উপযুক্ত স্থান‌ও এটি।
এখানেই আমাদের সন্তানদের জন্ম আর আমাদের পিতা-মাতার প্রয়াণ ও সমাধি।
এই টেবিলে আমরা গান গাই—আনন্দের গান, বেদনার সংগীত। পরিত্রাণ প্রার্থনা করি, অনুশোচনায় ভুগি। ধন্যবাদ জানাই।
এভাবেই হয়তো আমরা আনন্দ, বেদনা, খাওয়া দাওয়ায় থাকবো আর পৃথিবীর সমাপ্তি ঘটে যাবে একদিন।



মনে রেখো

মনে রেখো, আকাশের নীচে তোমার জন্ম,
জেনে নাও প্রতিটি তারার গল্প।
মনে রেখো চাঁদ, জানো সে কে।
মনে রেখো সূর্যোদয়, সময়ের
শক্ত ভিত্তি। মনে রেখো সূর্যাস্ত
আর রাতের সমর্পণ।
জন্মের কথা মনে রেখো, মায়ের সংগ্রাম
কী করে আকৃতি আর শ্বাস প্রশ্বাস দিয়েছে তোমাকে। তুমিই
জীবন-চিহ্ন তাঁর, আর তাঁর মায়ের, আর তাঁর‌ও মায়ের।
বাবাকে মনে রেখো। তিনিও তোমার জীবন।
মনে রেখো পৃথিবীর বল্কল তুমি :
লাল কালো হলদে সাদা
বাদামী রঙের এইসব পৃথিবী, পৃথিবী আমরাই।
গাছপালা বৃক্ষ-লতা পশুপাখিদের মনে রেখো
মনে রেখো ওদের‌ও সমাজ আছে, পরিবার আছে, ইতিহাস আছে। কথা বলো।
কথা শুনো তাদের। একেকটা জীবন্ত কবিতা ওরা সব।
বাতাসকে মনে রেখো। মনে রেখো তার স্বর। সে-ই জানে
এই জগতের গূঢ় কথা—জগত-উৎসার।
মনে রেখো তুমিই জনতা আর জনতা‌ই
তুমি।
মনে রেখো তুমিই জগত আর এই
জগত‌ই তুমি।
মনে রেখো চলমান সবকিছু, বর্ধিষ্ণু সব, যা হচ্ছো তুমি।
মনে রেখো এখান থেকেই উঠে আসে ভাষা।
মনে রেখো ভাষাই নৃত্য, ভাষাই জীবন।
মনে রেখো।
মনে রেখো..


পৃথিবীর উদ্দীপনায় বাঁধা দিও না

পৃথিবীর এই উদ্দীপনায় বাঁধা দিও না। গল্প নিয়ে কাজ করছে সে। পৃথিবীর সবচে প্রাচীন গল্প এটি। রুচিসম্পন্ন ও পরিবর্তনশীল। যদি সে দেখতে পায় তুমি পর্যবেক্ষণ করছো, তোমাকে কফির আমন্ত্রণ জানাবে, পাওরুটি গরম করে খেতে দেবে, আর তুমি বাধ‍্যগত হয়ে থেকে যাবে, গল্প শুনবে। সামান্য কোনো গল্প নয়। ভূমিকম্প, বজ্র-বিদ‍্য‌ুৎ, এমনকি সমস্ত প্রিয়জনের মৃত্যু, এই-সব সহ‍্য করে নিতে হবে। অন্ধ করে দেয় এমন সুন্দর। এমন এক বাধ‍্যকারী গল্প এটা, তুমি যেতেই চাইবে না; এভাবেই ফাঁদে ফেলবে তোমাকে। ওই যে, অনামিকা দেখতে পাচ্ছো ওখানে? আজ পর্যন্ত ওটাই একমাত্র কেবল পালাতে পেরেছিল।



অদৃশ্যের মাছ

জল-আছড়ে-পড়া শৈল বলছে, বালির উপচে-পড়া ঢেউ বলছে এই ভৌতিক সমুদ্রে সাঁতার কাটছে এক অদৃশ্য মাছ। অতিসত্বর হাঁটতে শিখে যাবে সে। তারপর উঠে আসবে মানুষের ডাঙায়। মৃতপ্রায় পাথরে আঁকবে স্বপ্ন। তারপর, পরে, আর‌ও পরে, সমুদ্র-পিঠ অভ‍্যস্ত হয়ে যাবে ধীরে। প্রতিবাদী স্বপ্নদর্শীদের বয়ে নিয়ে যাবে শিকারী ট্রাক। গুদামে।

ঈগলের কবিতা

আকাশের দিকে, পৃথিবীর দিকে, সূর্যের আর চন্দ্রের দিকে
প্রার্থনায় সম্পূর্ণভাবে খুলে দাও নিজেকে
পরিপূর্ণ কন্ঠস্বরে খুলে দাও তোমাকে।
দৃষ্টির বাইরে, তোমার শ্রুতির বাইরে
আরো অনেক কিছুই আছে জেনো;
তোমার জ্ঞানের বাইরে এমন অনেক কিছুই আছে
শুধুমাত্র মুহূর্তগুলোর ভেতর আর তোমার ভাষায়
ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে অনুধাবন কোরো—
শোনা যায় না এদের, কিন্তু সন্তরণ আছে।
সল্ট নদীর উপর সেই রবিবার সকালের
ঈগলের মত। বাতাসে ভেসে নীল আকাশে
চক্কর দিচ্ছে ও, মেলে ধরা পবিত্র ডানায়
পরিষ্কার করে দিচ্ছে আমাদের হৃদয়।
তোমাকে, আমাকে, আমাদেরকে এই সব দেখে শিখেছি আমরা
সবকিছুই সামাল দিতে হয়
পরম যত্নে আর ভালোবাসায়।
প্রশ্বাসের সাথে জেনে নাও তবে, সমস্ত কিছু দিয়েই
আমাদের সৃষ্টি, শ্বাস নিতে নিতে আরো জানো
জন্মেই আমরা সুখি, আর সত‍্য সুন্দর
যাপিত জীবনের পর আমাদের মৃত্যু যেন এক চক্রাকার গতি,
সেই ঈগলের মত
আমাদের ভেতরে অন্তর্গত আকাশে উড়ছে।
প্রার্থনা করি যেন শেষ হয়
সুন্দরে।
সুন্দরে।



পবিত্র অস্তিত্বের দ্বন্দ্ব নিরসন

মায়ের প্রার্থনা আমি, আর বাবার গানের সেই পবিত্র অস্তিত্ব

—নরমান পেট্রিক ব্রাউন, কবি এবং বক্তা

১. দ্বন্দ্ব নিরসনের প্রাথমিক ভিত্তি নিরূপণ :

এসো, প্রথমে উপলব্ধি করে দেখি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি আমরা এগুলো আসলে কার ভূমি।
চলো জিজ্ঞেস করি হরিণকে, কচ্ছপকে, আর সারসকে।
শুভ ইচ্ছে ও আচরণ দিয়ে এইসব ভূমির অন্তর্গত উদ্দীপনার সন্মান নিশ্চিত করি আমরা।
যেহেতু ভূমি একটি সত্তা, সবকিছুই মনে রাখে সে। আর
তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে তোমার সন্তানের কাছে, তাদের সন্তানদের কাছে, এবং তার পরের প্রজন্মের কাছেও—
চকচকে রক্তিম স্মৃতি কোনো এক রাতে সত‍্য‌ের সীমারেখায় হেঁটে আসতে বাধ‍্য করবে তোমায়, বোধোদয় হবে তোমার।
যখন চুল আচড়াচ্ছিলাম হোটেলের সিনকে, তখন শুনতে পেলাম :
প্রকৃতপক্ষে শ্রবণের মাধ্যমেই আমরা বুঝতে পারবো শব্দের এই পবিত্র জগতে কী আমাদের পরিচয়। অত‌এব,
অযথা জাহির কোরো না নিজেকে, সন্তুষ্ট হ‌ও।
অবশ্যই সত্য ও ন‍্য‌ায়ের ভাষায় কথা বলবে তুমি।



২. কার্যকর যোগাযোগ দক্ষতা ব‍্যবহার করে পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার বিকাশ ও প্রসার :

যদি তোমরা এই কাগজে সই করো তাহলে আমরা পরস্পরের ভাই হয়ে যাব। আর ঝগড়া করবো না। “যতদিন পর্যন্ত এই ঘাস জন্মাতে থাকবে, এই নদীগুলো ব‌ইতে থাকবে” আমরা তোমাদের এই জমি দিব, এইসব পানি দিব।

যেসব জমি আর পানি তারা আমাদের দিয়েছে ওগুলো ওদের না। ভুয়া ঠকবাজি কথায় পড়ে আমরা স‌ই করেছি। পানীয়ের নেশায় ভ্রান্ত হয়ে, আমরা স‌ই করেছি। অসংখ্য বন্দুকের নলের মুখে, আমরা স‌ই করেছি। আমাদের সৈকতে যুদ্ধ জাহাজের বহর দাঁড়িয়ে, আমরা স‌ই করেছি। আমরা এখনও স‌ই করে যাচ্ছি একেরপর এক। কিন্তু কোনো শান্তি পাইনি আজো এইসব স‌ই করে।

আমাদের পূর্বপুরুষের কবরখানার উপর একটি ক‍্য‌াসিনো গড়ে তোলা হয়েছে। শেষ ঘুমের গহীন থেকে দাদা/দাদী, মা/বাবা আর নাতি/নাতনির হাড়গোড় তুলে ফেলেছে আমাদের নিজস্ব দূরসম্পর্কের সেইসব ভাইয়েরা। মনুষ্যত্ব কী, তারা ভুলে গেছেন। পৃথিবীর পাতাল থেকে অবিশ্রান্ত বাতাস নির্গত হয়েছে যখন ওইসব কবরগুলো খুলে ফেলা হয়েছিল। তারপর প্রতিকার পেতে ছুটে গেছে দিকবিদিক।

যদি তোমরা শান্তির সাদা এই পতাকাটি তুলে ধরো, আমরা সন্মান দেখাবো।

সাদা পতাকাটি তোলার পর‌ও শত সহস্র পুরুষ, মহিলা আর বাচ্চাদের চোরাবালিতে ফেলে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। শান্তিকামিদের রক্তে ভেজা ওই সাদা পতাকায় পা মাড়িয়েছে আমেরিকার সৈন্যরা।

আত্মহত্যা মহামারী আকার ধারণ করেছিল আদিবাসী বাচ্চাদের মধ্যে। অবশিষ্ট আমেরিকার প্রায় তিন গুণ ছিল ওই মৃত্যু। “মনে হয় যেন যুদ্ধ চলছে”, সাউথ ডাকোটার এক শিশু ওয়েলফেয়ার এই কথাই বলেছিলেন।

যদি তোমরা বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাও আমরা ওদের এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীর সাথে খাপ খাইয়ে চলতে শিখিয়ে দেব। আমরা ওদের শিক্ষিত করে তুলবো।



কোনো উপায় ছিল না। তারা আমাদের বাচ্চাদের নিয়ে যেত। অনেক বাচ্চা পালিয়ে গিয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ে। যদি কখনো কাউকে খুঁজে পাওয়া যেত, আবার টেনে নিয়ে যেত স্কুলে এবং শাস্তি দিত। ওদের চুল কেটে ফেলা হতো, ভাষা কেড়ে নেয়া হতো, যতক্ষণ না নিজেদের কাছেই ওরা অচেনা হয়ে যায়, এমনকি আমাদের কাছেও।

যদি তোমরা এই কাগজে সই করো তাহলে আমরা পরস্পরের ভাই হয়ে যাব। আর ঝগড়া করবো না। “যতদিন পর্যন্ত এই ঘাস জন্মাতে থাকবে, এই নদীগুলো ব‌ইতে থাকবে” আমরা তোমাদের এই জমি দিব, এইসব পানি দিব।

বাইবেলের উপর হাত রাখো, এই তলোয়ার, এই কলম, এই তেলের ডিব্বা, আর এই বন্দুকের উপর হাত রাখলেই তুমি ভরসা অর্জন করবে আমাদের, সন্মান অর্জন করবে। আমরা এক সুরে কথা বলতে পারবো।

আমরা বলি, সরিয়ে রাখো তোমার কাগজ, তোমার জোরজবরদস্তির যন্ত্রপাতি, তোমার মিথ্যে আশ্বাস, তোমার উদ্ধত আচরণ আর বসো আমাদের সাথে এই আগুনের পাশে। আমরা একসাথে খাবার ভাগ করে নিবো, গান গাইবো আর গল্প করবো। এই নক্ষত্রের নিচে আমরা জড়ো হয়ে নাচবো, ঘুমাবো আর পরদিন সূর্যের সাথে জেগে উঠবো।

আজ ভোরে পটোম‍্য‌াকের উপর দিয়ে সূর্য উঠেছে, হোয়াইট হাউসের চারদিকে, সমস্ত শহর জুড়ে সূর্য উঠেছে।
টকটকে লাল রক্তের মতো উজ্জ্বল, আগুনের মতো সত‍্য‌ি।
হোয়াইট হাউস, অথবা চোগো হ‍্যৎকা, মানে শান্তিরক্ষাকারীর বাড়ি, ন‍্য‌ায়বিচারকের বাড়ি।
শান্তির জন্য বহুবার এসেছিলাম আমরা এই নদীটি পেরিয়ে সেই সাদা নেতার সাথে দেখা করতে।
সেই তখন থেকে যখন এরা প্রথম আমাদের এলাকায় আসে আর তাদের শাসিত জায়গা বানিয়ে ফ‍্য‌ালে একে।
এইসব সড়ক আসলে আমাদেরই পথ, এঁকেবেঁকে বৃক্ষের আড়ালে মিশে যাওয়া প্রাচীন পায়ে চলা পথ।



৩. গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করো :

আমরা দুপক্ষই বানিজ্য ভাষা ইংরেজি তে কথা বলছি। এই ভাষায় অন্য অনেক ভাষার সাথে যোগাযোগ করতে পারছি। এইসব ভাষায় আমরা অনেক কবিকে পেয়েছি :

অর্টিজ, সিল্কো, মোমাদে, অ‍্য‌ালেক্সী, দিয়াজ, বার্ড, উডি, কেইন, বিৎসুই, লং সোলজার, হোয়াইট, এর্ড্রিচ, তাপাহোঁসো, হাউই, লুইস, ব্রিংস প্লেনটি, অকপিক, হিল, উড, মারাকল, সিসনেরোস, ট্রাস্ক, হোগান, দান, ওয়েচ, গোড়া…

ভঙ্গিতে দ‍্য ১৯৫৭ চেভি হচ্ছে অপরাজেয়। আমার ব্রোকেন-ডাউন ওয়ান-আইড ফোর্ড‌ও সে রকম। দাদা/দাদী, কাকা/ফুফু, ছেলেমেয়ে/ছোট বাচ্চা আর আমার সমস্ত ছেলে বন্ধুদের সহ সবার মন জয় করেছে।

ব্লুজ আর জ‍্য‌াজ ছাড়া কিছুই হয়ে উঠতো না—তাই আফ্রিকানদের জানাই ধন্যবাদ, আর ধন্যবাদ জানাই ইউরোপীয়ানদের এখানে আসার জন্য। বিশেষভাবে অ‍্য‌াডোলফি স‍্য‌াক্স কে তার স‍্য‌াক্সোফোনের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। ভুলার উপায় নেই আসলে মভসকক এর দল‌ই এর কেন্দ্র। কীভাবে দুলে দুলে নাচতে হয় আমরা জানি। পায়ের তালে তালে আমরা পৃথিবীর হৃদস্পন্দন ধরে রাখি।

নাচের কয়েকটি মুদ্রা শিখতে পারো যেমন বাস্টল, অথবা জিঙ্গল ড্রেস, কিংবা টার্টল স্ট্র‍্য‌াপ। উপনিবেশিক কিছু পড়ে নিতে পারো, যেমন ধরো রঙবাজরা গলায় যে রকম সোনার ভারী চেন পড়ে।



৪. আত্মরক্ষামূলকতা কমাও এবং ভেঙে ফ‍্য‌ালো এর শিকল :

আলোর সত্ত্বাকে আমি শুনতে পাই, ওরা আমার প্রতিটি কোষে ঢুকে আছে। তাঁরা বলেছেন, প্রতিটি কোষ আলোক-ঈশ্বরের ঘর। আমাদের স্টোম্প নাচের সেই উদ্দীপনাকে শুনতে পাই আমি। তারা নাচছিল যেন তারা এখানেই, আর তারপর আরেকটি ধাপ, তারপর আরও, যতক্ষণ না পুরো পৃথিবী এমনকি অন্তরীক্ষ‌ও নাচছিলো।

তারা বলল, আমরা নাচছি এখানে। অন‍্য আর কিছুই নেই।

“তুমি” বলতে কিছু নেই, “আমি” বলতে কিছু নেই।

শুধু আছি “আমরা”; আর আছে “আমাদের”।

এভাবেই আমরা ছিলাম আমরাই সঙ্গীত আমরাই সুর।

লকস্টেপে এগুতে হবে সঙ্গীতের এমন কোনো নিয়ম নেই কিংবা রাজনৈতিক সীমারেখায় এর উদ্দীপনা কে থামানো যায় না—

—এমনকি কবিতা, অথবা শিল্প, অথবা অন‍্য কোনো কিছু যার মূল‍্য‌ায়ন আছে, গুরুত্ব বহন করে পৃথিবীতে, এবং পৃথিবীর পরেও।

আসলে একে অপরকে জানার বিষয়।

দারুণ উপলব্ধিতে ব্লুজের শেষে, সমাপ্তির পর, একসাথে ফ্ল্যাটেড ফিফ্থ-এর এক প্রান্তে আমরা দাঁড়িয়ে যাবো সব।



৫. মতদ্বৈততায় নেতিবাচক আচরণ ত‍্য‌াগ কর :

সিপ্রেস গাছ থেকে একটি চিতা ঝাঁপিয়ে পড়বে মানে ঝাঁপিয়ে পড়বেই।

চিতা হচ্ছে সেই কবিতা যার চোখ প্রচন্ড সবুজ আর যার হৃদয় হচ্ছে বাতাস চতুর্দিক থেকে এসে হুমড়ি খায়।

অন্ধকারে প্রখর তার শ্রবণ শক্তি : কয়েক শতাব্দীর অব‍্যক্ত বেদনা শুনতে পায় সে, শুনতে পায় আসন্ন তান্ডব একদিন তার পৃথিবী তছনছ করে দিয়েছিল, শুনতে পায় কয়েক মাইল দূরের কোনো ব্লুবার্ডকেও।

আসন্ন শিকারের মৃত‍্য‌ুকেও শুনতে পায় সে :

ও সূর্যোদয়, তোমাকে ভালোবাসবো সবসময়।
আমি সেই সবুজ জ্বলেজ্বলে চোখের বিড়াল।
আছি ওইখানে, ভোরের তারায় সিপ্রেস গাছে।


৬. এবং, যা শিখেছো তা ব‍্যবহার করে তোমাদের দ্বন্দ্বের নিরসন করো আর মনোযোগী হ‌ও অন‍্যদের প্রতি :

অন্ধ জগতের শেষ দরজায় এসে দাঁড়িয়েছি এখন, ওপাশেই
স্বদেশ। ভেঙে এসছি দ্বন্দ্বের ভার, সেইসব সর্পিল পথের—
পথ ঘুরে শান্তির পৃথিবীতে আজ।
ধন্যবাদ জানাই, প্রতিটি বিষয়েই ধন্যবাদ
কেননা, এর ভেতর দিয়ে জেনেছি আমরা
আপন অস্তিত্বকে—
ক্ষমা চেয়েছি।
একে অপরের পাশে নামিয়ে রেখেছি হৃদয়ের ভার।

ছবি : ইন্টারনেট।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৭

সাগর শরীফ বলেছেন: সুন্দর

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২১

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

২| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২০

সনেট কবি বলেছেন: বেশ

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৩

ঋতো আহমেদ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ফরিদ ভাই। আশা করি সুস্থ আছেন।

৩| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৬

রাকু হাসান বলেছেন:

অসাধারণ :) । অনেক সময় নিয়ে লিখেছেন । কবি ব্যাপারে কোনো তথ্য জানা ছিল না । বেশ কিছু জানলাম । কৃতজ্ঞতা । মনে রেখে কবিতাটা পড়লাম ,ভালো লেগেছে । +

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০১

ঋতো আহমেদ বলেছেন: নেটিভ আমেরিকানদের সাহিত্যকর্মের সাথে আমাদের পরিচয় খুব একটা নেই। সাম্রাজ্যবাদের কড়াল গ্রাসে ঢাকা পড়ে আছে সব। অথচ কী অসাধারণ কাজ ওদের ! ওয়েস্টার্ন গল্প উপন্যাস বা মুভিতে আমরা নেটিভ আমেরিকানদের সম্পর্কে যা জেনেছি এতোদিন বাস্তবে অনেকটাই তার উল্টো। বিশ্বসাহিত্যের এই জায়গাটাতে আলো ফেলার প্রয়োজন রয়ে গেছে।

৪| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩০

মেহেদী হাসান হাসিব বলেছেন: খুব ভাল লিখেনতো উনি। উনাকে প্রথম জানলাম।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

ঋতো আহমেদ বলেছেন: হার্জোর কবিতা পাঠ ও মন্তব্যে ভালোলাগা জানবেন হাসিব। শুভ কামনা

৫| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৮

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: অনেক ভালো লিখেছেন আপনি।
কবিতাগুলো প্রাণকে সতেজ করে তুলল পুরো।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:১১

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ ফারিহা প্রভা। আশা করি ভালো লেগেছে। মন্তব্যে ভালোলাগা জানালাম। শুভ কামনা

৬| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:১৪

বাকপ্রবাস বলেছেন: কিছুটা পড়লাম, বাকীটাও পড়ে নেব, মাথাটা জ্যাম হয়ে আছে, প্রথমটার আটতম লাইনে শব্দটা চাবি হবে টাইপো হয়ে চবি হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৬

ঋতো আহমেদ বলেছেন: হা, বেশ কিছু টাইপো রয়ে গেছে। একে একে ঠিক করে নিচ্ছি। ধন্যবাদ আপনাকে। সবগুলো পড়ার আমন্ত্রণ রইল।

৭| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:২২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



গুণী এ কবিকে চিনতাম না; আপনার মাধ্যমে জানলাম। অনেক সময় নিয়ে যত্ন করে লিখেছেন এজন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল থাকবেন ভাই।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৪

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ কাওসার ভাই। এতো রাতে রাত জেগে এই অধমের অনুবাদ সময় নিয়ে পড়েছেন জেনে অবাক ও খুশী হয়েছি। গত দু' সপ্তাহে একটু একটু করে করেছি এগুলো। আরও কিছু prose এর কাজ আছে চলমান। ভালো থাকবেন।

৮| ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।
চমৎকার কবিতা।
ধন্যবাদ আপনাকে।

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও ব্রো.. শুভ সকাল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.