নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতারিত সরকারী ব্যাংকার

অপমানিত,নিপীড়িত,মানসিকভাবে নির্যাতিত,অবহেলিত,প্রপঞ্চিত।

সাঈদ রহমান ০০৭

উচ্চশিক্ষিত

সাঈদ রহমান ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধা,জীবন এবং একজন অশিমার গল্পঃ( বিদগ্ধ সময়-03)

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৩৬

একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে অশিমার জন্ম।অশিমা যখন তার মায়ের গর্ভে পৃথিবীর আলো দেখার উপস্থিতি জানান দেয়। ঠিক তখন থেকেই দারিদ্রের কষাঘাতে নিষ্পেষিত অশিমার মা দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়্। কারণ অশিমা অশিশার মায়ের চতুথ সন্তান। অনেক টান পোড়েনের সংসারে অশিমার মা আর সদস্য বাড়াতে চায়না। অশিমার মা বিষয়টি কারো সাথে শেয়ার করেনা ঠিক ।কিন্তু মনে মনে কোন চিন্তায় পৌছাতেও পারেনা অশিমাকে পৃথিবীতে আনবে কি আনবেনা?অশিমার মা দ্বিধা দন্ধে ভুগতে থাকে। কারণ অশিমার বাবার যে আয় তা দিয়ে পাঁচজনের সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে তার ভেতর নতুন মুখের যোগ নিয়ে সংশয়ের সীমা নেই অশিমার মায়ের। আর এর জন্য দায়ি একমাত্র দারিদ্র এবং দেশের ভঙ্গুর অথনীতি বলে অশিমার মা ভাবতে থাকতে । নতুন মুখ যোগ সংসারে এটা ভেবে যেমন মাঝে মাঝে অশিমার মায়ের মনে আনন্দ খেলে যায়। আবার পরক্ষণে তিনবেলা কিভাবে খাবার যোগার হবে সেটা ভেবে আৎকে ওঠে। নানা ধরণের চিন্তা ভাবনা আর সরল অংকের মধ্যে কঠিন জটিলতা মেলাতে না পেরে একজন কবিরাজের শরণাপন্ন হন। কবিরাজের কাছে যেতে যদিও অশিমার মায়ের মন ভেতরে ভেতরে হু হু করে ওঠে এটা ভেবে যে নিজের হাতে কিভাবে তার আগন্তুক সন্তানকে পৃথিবীর আলোতে না এনে ভ্রুণ নষ্ট করে মেরে ফেলবে? তবুও কঠোর সিদ্ধান্ত নেয় অশিমার মা । কাউকে না জানিয়ে সে একাই একজন কবিরাজের কাছ থেকে দাওয়াই নিয়ে আসে পেটের সন্তানকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য। কারণ সে ভাবছে নিজেদেরই তিনবেলা অন্ন যোগাতে নাস্তানাবুদ হতে হয় সেখানে আর একজনকে এনে কষ্ট দেওয়ার কোন মানে নেয়্।কঠোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অশিমার মা কবিরাজের দাওয়াই নিয়ে আসে এবং ঘরের ভেতরে চাটাই এর বেড়ার পাশে লুকিয়ে রাখে যা সুযোগ মতো খেয়ে নেবে সবার অগচোরে। কিন্তু না সেটা পেরে ওঠেনা সে। কারণ তার প্রতিবেশি একজন সেটা দেখে ফেলে এবং তা নিয়ে তাকে অনেক বকা বাধ্য করেন এবং পাশের বড়ির সন্তানহীন ভাবীকে খবর দেয় তাকে বোঝানোর জন্য। অশিমার মা এর কাছে যখন সন্তানহীন দম্পত্তি আসে তখন সে অশিমার দত্তক মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না কাটি করে আর বলে নিজেরাই যেখানে দারিদ্রের কষাঘাতে নিষ্পেষিত সেখানে নতুন মুখ এনে লাভ কি? তখন প্রতিবেশি তাকে বোঝায় এবং আগত নতুন অতিথির সমস্ত দায়-দায়িত্ব সে গ্রহণ করবে বলে তাকে সান্তনা দেয়।এভাবেই একদিন অশিমা আসে তার মায়ের কোলকে আলো করে এই প্রিয় জন্মভূমির বুকে।অশিমার জন্মদিন থেকেই তার দায়িত্ব নিয়ে নেয় তার দত্তক পিতা-মাতা।অশিমার বয়স ধিরে ধিরে যখন ছয়মাস হয় ঠিক তখন স্থায়ীভাবে অশিমা তার দত্তক পিতা-মাতার কোলে স্থান করে নেয় । অশিমার মা আর দত্তক পিতা-মাতার বাড়ির দুরত্ব পাশাপাশি হওয়ায় অশিমার মা সকালে যখন টেক্সটাইল মিলে কাজে চলে যেতো তখন অশিমাকে দুধ খাইয়ে যেতো । আবার সন্ধ্যায় ফিরে প্রাণের টুকরাকে দেখে দুধ খাইয়ে নিজের বাসায় চলে আসতো। সারারাত শুধু ভাবতো দারিদ্র কেন সন্তানকে তার মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করে? কেন একজন মা তার গভজাত সন্তানকে প্রাণ ভরে আদর করতে পারেনা? কেন একই দেশে দ্বেত নীতি ? কেউ থাকে ছাদের নিচে কেউ থাকে গাছের নিচে। কেউ খায় পেট ভরে আয়েস করে আবার কারো ভাগ্যে তিনবেলা দুমুঠো খাবারও ঠিক মতো জোটেনা।রোজ রোজ একই ভাবনা ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে ক্লান্ত মন ও শরীর নিয়ে। সকাল শুরু হলেই শুরু হবে নতুন বেঁচে থাকার সংগ্রাম। এভাবেই শুরু হতে থাকে অশিমার জীবন-যাপন। দিনে দিনে বড় হয় অশিমা। অশিমাও বেশ মা-বাবাকে ছেড়ে দত্তক পিতা-মাতার কাছে বড় হয়ে যাচ্ছে । জানছে এরাই তার আসল পিতা-মাতা। অশিমার মায়ের মনটা শুধুই কাঁদে বাবাও মেয়ের কথা ভেবে ভেবে বিমষ হয়ে পড়ে। এই সবকিছুর জন্য দায়ি একমাত্র সামাজিক দারিদ্র আর অন্ন বস্ত্র সংস্থানের অনিশ্চয়তা।একদিন অশিমা স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অবধি পৌছে গেল।অশিমা অনেক মেধাবী ছাত্রী হিসেবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই মেধার স্বাক্ষর রেখে দিলো।দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিট থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনাস,মাষ্টাস পাশ এবং সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে স্বনপদক অর্জন করলো।অশিমার মা এবং বাবা সন্তানের বিরাট সাফল্যে যেমন খুশি হন আবার তার বিপরীতে হাহাকার ভরা বুকে কেঁদে যান।অশিমা আজো জানেনা অশিমার আসল পিতা-মাতা কে । হয়তো আর কখনো জানবেনওনা। হঠাৎ একদিন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাক এলো অশিমা স্কলারশিপ পেয়েছে। বিদেশে পড়ালেখা করতে যেতে হবে। তাকে তার মেধার সবটুকু ঢেলে দিতে হবে গোঁছাতে হবে নিজেকে,নিজের পরিবার এবং মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশকে।অশিমার পরিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি ও শিক্ষকরা অশিমার জন্য দোয়া করতে লাগলো অশিমা যেন মেধার সর্বোচ্চ স্বাক্ষর রেখে দেশে ফিরে এসে এই দেশের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারে।অশিমার যেদিন ফ্লাইট সেদিন অশিমার আসল পিতা-মাতা তার দত্তক পিতা-মাতার অনুমতি সাপেক্ষে শাহজালাল আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে বুকের মানিক ধনকে বিদায় দিতে এলো। অশিমাও পাশের বাড়ির আঙ্কেল আন্টি হিসেবেই তাদেরকে চিনতো এবং তারা তাকে অনেক বেশি স্নেহ করতো বলে সেও বুকের ভেতর কোথায় যেন একটা শিতল টান অনুভব করতো।একটা মাইক্রোতে করেই তারা বিমানবন্দরে পৌছালো।বিমানের ওঠার শিডিউল মাইকে ঘোষণা করা হলো। অশিমা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বডিং পাসের জন্য চলে গেলো। দূর থেকে দাঁড়িয়ে অশিমার দত্তক মা-বাবা এবং আসল পিতা-মাতা দেখতে লাগলো আর চোখের জল মুছতে লাগলো।অশিমার মা-বাবার মনের মধ্যে বিশাল দাগ কাটতে লাগলো বুকের ধন মানিক রতন সাত-সাগর তেরো নদীর ওপারে চলে যাচ্ছে অথচ জানতে পারছেনা কে তার গভধারিনী মা আর কে তার আসল পিতা।অশিমা প্রায় বিদেশ থেকে ফোনে কথা বলে এবং স্কাইপিতে কথা হয় তার পিতা-মাতার সাথে। মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির আঙ্কেল আন্টি হিসেবে অশিমার আসল পিতা-মাতাও অশিমাদের বাসায় গিয়ে মোবাইলে কথা বলে এবং স্কাইপিতে গভজাত সন্তানটির মুখ দেখে আসে কথা বলে আসে।একদিন হঠাৎ সংবাদ আসে অশিমা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়িযোগে ফেরার পথে রোড এ্যকসিডেন্টে আহত হয় এবং হসপিটালে চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান।খবরটা শোনা মাত্র অশিমার পিতা-মাতা এবং আসল পিতা-মাতা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠি ও প্রিয় শিক্ষকরা কষ্টে ভেঙে পড়ে। অশিমার লাশ ফেরৎ আসার তারিখও নির্ধারিত হয়।সরকারী খরচে অশিমাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।অশিমাকে বহনকারী বিমান যখন বিমান বন্দরে অবতরণ করলো তখন ঘটলো আর এক হদয় বিদারক দৃশ্য।অসিমার দত্তক পিতা-মাতা এবং আসল পিতা-মাতা শোকে মূছা যেতে লাগলো।অশিমার লাশ এ্যাম্বুলেন্স যোগে প্রথমে আনা হলো প্রাণের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনে অপরাজয়ের পাদদেশে।সেখানে তার ইংরেজি ডিপাটমেন্ট এর তার সময়ের সহপাঠি,জুনিয়র এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা তাকে শেষবারের মতো দেখলো এবং শেষ বিদায় জানালো।এর পরে অশিমার লাশবহনকারী এ্যাম্বুলেন্সটি তাকে নিয়ে যাত্রা শুরু করলো গ্রামের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশ্যে।বিকাল পাঁচটায় লাশ এসে গ্রামের বাড়ি পৌছালে শোকের মাতর পড়ে যায়। অশিমার দত্তক পিতা-মাতা এবং আসল পিতা-মাতা বার বার প্রলাপ বকতে থাকে আর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।অশিমার আসল পিতা-মাতার অস্বাভাবিক শেকে মূহ্যমান হয়ে পরায় সবাই ধিরে ধিরে জানতে পারলো এরাই অশিমার আসল পিতা-মাতা আর যারা তাকে মানুষ করেছে তারা তার দত্তক পিতা-মাতা।তাই অশিমার পিতা-মাতার শেষ দাবি অনুযায়ী অশিমাকে সমাহিত করা হয় তার আসল বাড়ির উঠোনে।এখন নিয়মিত অশিমার মা সকালে ফজরের নামায পড়ে অশিমার কবরখানায় এসে কান্নাকাটি করে আর দোয়া করে আল্লাহ যেন তার কন্যাকে বেহেশত নসিব করে এবং জন্মধাত্রী মা হিসেবে তাকে যে আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করেছে সেজন্য যে আল্লাহ তাকে কখনো ক্ষমা না করে। দিন দিন অশিমার মা কন্যার শোকে অসুস্থ হয়ে পরে । তার অসুস্থতার মাত্রাও বাড়তে থাকে । খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দেয়। ডাক্তার তার কোন রোগ ধরতে পারেনা। সবাই বলে এটা তার মানসিক শক্তির ক্ষয় এবং মানসিকভাবে সে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হঠাৎ একদিন মাঝরাতে সে স্ট্রোক করে এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার জানায় সে পথিমধ্যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে।এভাবেই কন্যার শোক আর জন্ম দেওয়া কন্যাকে দারিদ্রের কাছে পরাজিত হয়ে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ায় মাতৃত্বের যে অবমাননা এবং সন্তানকে তার প্রাপ্য আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত করা তা মেনে নিতে না পারায় শোকের বহর কাটিয়ে উঠতে পারেনা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.