নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতারিত সরকারী ব্যাংকার

অপমানিত,নিপীড়িত,মানসিকভাবে নির্যাতিত,অবহেলিত,প্রপঞ্চিত।

সাঈদ রহমান ০০৭

উচ্চশিক্ষিত

সাঈদ রহমান ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুবর.....।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ২:৪৮

অনুপ আর রবিন দুই বন্ধু । অনুপ হিন্দু আর রবিন মুসলিম । ধর্ম এদের মধ্যে কোন বাঁধা হিসেবে আসতে পারেনি। এদের বন্ধুত্বে ধর্ম কোন ছেদ ফেলতে পারেনি। পাশপাশি গ্রামে দুজনার বাড়ি । অনুপ এবং রবিন কেউ কাউকে ছাড়া একবেলা খেতনা । পালা করে তারা একে অপরের বাসায় খাওয়া দাওয়া করতো । অনুপ আর রবিনের দুই পরিবারের কাছেই ওরা আপন সন্তান । অনুপের মা-বাবা রবিনকে নিজের সন্তান ভাবতো যেমন ঠিক তেমনি রবিনের মা-বাবাও অনুপকে নিজের সন্তান মনে করতো। এভাবেই ওদের ধিরে ধিরে বড় হওয়া একই স্কুলে পড়ালেখা করা । ওদের দুজনার বয়স যখন 14বছর ঠিক তখন দেশে পূর্বপাকিস্তান-পশ্চিম পাকিস্তান ভাগাভাগি নিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলো সালটা 1971 । এদেশের অসহায় সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে লাগলো পাক হানাদার বাহিনী। হিন্দুদেরকে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করলো। অনেক হিন্দুরা দেশ ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য ভারতে চলে যেতে লাগলো। ঠিক একইভাবে যখন রবিন আর অনুপের গ্রামে এদেশীয় রাজাকাররা আগুন দিতে লাগলো হিন্দুদের বেছে বেছে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিতে লাগলো। তখন সব হিন্দুরা নিরাপত্তার জন্য ভারতে পাড়ি দিতে লাগলো আর কিছু কিছু হিন্দু দেশ এবং মাটির টানে এদেশ ছেড়ে গেলনা তারা যারা যুবক ছিলো স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়লো। ঠিক একইভাবে অনুপরে বাবা-মা জেঠারা সবাই ভারতে চলে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিলো । কিন্তু অনুপ কিছুতেই রবিনকে ছেড়ে এই দেশের মাটিকে ছেড়ে ভারত যাবেনা বলে প্রতিজ্ঞা করলো। অনুপের পরিবার তাকে কোনভাবে বোঝাতে না পেরে অনুপকে রবিনের বাবা মায়ের কাছে নিজের সন্তান বলে রেখে চলে গেলো। অনুপ তার বন্ধু রবিনকে ছাড়া বাঁচতে পারবেনা বলে অনুপও রবিনের কাছে রবিনের পরিবারের কাছে থেকে গেল। কিছুদিন পর অনুপ আর রবিন যখন দেখলো পাক বাহিনীর হত্যাচার বেড়েই চলেছে দেখতে লাগলো তখন ওরা দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলো আর সবার মতো ওরা দুজনও যুদ্ধে যাবে। যেই কথা সেই কাজ ওরা দুজন বড়ির কাউকে না জানিয়ে মাত্র 14বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলো। এলাকার কমান্ডারদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলো। মুকছেদপুরের গেরিলা যুদ্ধে আর্মিদের জিপে বোমা ছুড়ে মারতে গিয়ে আহত হয় অুনপসহ আরো কয়েকজন আর্মিদের গাড়ি দুভার্গবশত ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় পাক বাহিনী বন্ধুক তাক করে ঝাপিয়ে পড়ে আহত মুক্তি বাহিনীর ‍ওপর ঝাপিয়ে পড়ে । ওদেরকে বেওনেট দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে জিপে করে তুলে নিয়ে যায় ।নিয়ে গিয়ে টর্চার সেল এ নির্য়াতন করে আরো মুক্তি বাহিনীর সন্ধান জানতে চায় । এভাবে বেশ কিছুদিন পর টর্চার শেষে ওদেরকে ব্রাশ ফায়ার করে রুমের ভেতর । তারপর ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় অনুপসহ আরো দুই একজন ওদের সহযোদ্ধা । ওরা কোনরকম ফেলে দেওয়া লাশের স্তুপ থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে পালিয়ে চলে আসে । অনুপ ফিরে আসে ঠিকেই পদ্মা নদীর পারে রবিনদের ঘাটিতে কিন্তু বেশিদিন বেঁচে থাকতে পারলোনা । কারণ অনুপসহ আরো যারা আহত ছিলো তাদেরকে তাবুতে রেখে রবিনরা নতুন অপারেশনে বাইরে গেলে এলাকার রাজাকাররা গোপনে পাকবাহিনীকে খবর দিলে ওরা ঘেড়াও করে ফেলে এবং ব্রাশ ফায়ারে ওদের হত্যা করে ওরা হয় শহিদ । মৃত্যুর আগ মুঞুর্তেও অনুপ রবিন বরনি বলে চিৎকার করতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে মা মা বলে। রবিন যখন জানতে পারে অনুপের শহীদ হওয়ার কথা তখন থেকে রবিন নির্বাক হয়ে পড়ে আজো সে নির্বাক কোন কথা বলেনা । ওর চোখে শুধু বন্ধু হারানোর বিয়োগ ব্যথা ফুটে ওঠে । আজো 44বছর পর রবিন খুজে বেড়ায় অনুপকে । খুজে বেড়ায় তার প্রাণের প্রিয় বন্ধু অনুপকে । পাগলের বেশে পথে পথে ঘুড়ে বেড়ায় আর অনুপ অনুপ বলে চিৎকার করতে থাকে। রবিনের জীবনজুড়ে অনুপের উপস্থিতি সবসময় জাগ্রত। মাঝে মাঝে রবিন বিরবির করে বলে অনুপ তুই যদি তোর বাবা মায়ের সাথে ভারতে পালিয়ে যেতি তাহলে তোকে এভাবে জীবন দিতে হতোনা কখনো না কখনো এই স্বাধীন বাংলাদেশে তোকে আমি দেখতে পারতাম । তোকে জড়িয়ে কপালে চুম্বন দিতে পারতাম বন্ধু। অজোর ধারায় কাঁদে আর বলে অনুপ তুই কোথায়, অনুপ তুই কোথায়, অনুপ তুই কোথায় ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

উম্মে সালমা কলি বলেছেন: ভালো লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.