নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি টিকে থাকবো তদ্দিন, যদ্দিন আমি স্বাধীন।

স্বাধীন আকন্দ

https://

স্বাধীন আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দানব (একটি রম্য বিজ্ঞান-কল্পকাহিনী)

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৩১

আমরা যখন ধূসর পাহাড়ের ঠিক পূর্বপাশে এসে পৌঁছলাম, তখন পশ্চিমাকাশে সূর্য প্রায় ডুবো ডুবো। সাব-কমান্ডার মিলায়াম পাশে এসে দাঁড়ালো এবং জানালো যে এই পাহাড়টি বড় অদ্ভূত। উত্তর দক্ষিণে এটি আট কিলোমিটার দীর্ঘ।আমাদের বিজ্ঞানীরা খুব কম তথ্যই উদ্ঘাটন করেছে এটি সম্পর্কে। আর এই পাহাড়ের আড়ালেই লুকিয়ে আছে সেই ভয়ংকর দানবটা। যার জন্য আজ মানব জাতির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।

সূর্যের লালচে আধো আলোয় আমরা কিছুক্ষণ তন্ময় হয়ে রইলাম। ধূসর পাহাড়টির পশ্চিমে লালাভ আকাশ। তাতে অস্তমান সূর্যের ভ্রম আমাদের বিভ্রান্তির মাঝে ডুবিয়ে রাখলো।

ইরায়ার স্পর্শে আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম। ইরায়া আমার স্ত্রী। আমাদের দলের অন্যতম ভূ-তত্ত্ব বিদ।

ওর দিকে তাকিয়ে দেখি চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময় ! ধূসর পাহাড়ের আধো আলো বিভ্রম যতটা না আমাকে বিস্মিত করলো তার থেকে শতগুণ বিস্মিত করে তুললো ইরায়ার মুখাবয়ব। ইরায়া মুখ তুলে বললো, ‘এ অসম্ভব! হতেই পারে না এমনটা!’ আমি জানতে চাইলম, ‘কী বুঝাতে চাইছো তুমি, ইরায়া?’

‘পাহাড়ের এমন পরিবেশে কোন প্রাণী বেঁচে থাকার কথা নয়। এটি পৃথিবীর সর্বশেষ সুপ্ত আগ্নেয়গিরি।

‘এতে অসুবিধা কিসে?’

‘পৃথিবীর কোন প্রাণীর পক্ষে এরকম উত্তপ্ত পরিবেশে বেঁচে থাকা একেবারেই অসম্ভব!’

‘তার মানে এই প্রাণিটা পৃথিবীর নয়?’

‘আমি জানি না।’

ইরায়া চোখ নামিয়ে নিল। ক্রমে ক্রমে ওর নিচু মুখটিতে প্রচ্ছন্ন ভয় যেন এসে ভর করলো।।

‘দানবটা আমাদের ধ্বংস করে ফেলবে। আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো !’

আমি ইরায়ার একটি হাত আলতোভাবে চেপে ধরে বললাম, ‘আমাদের কোন ক্ষতিই করতে পারে না ঐ দানবটা। আমরাই ওকে ধ্বংস করে ফেলবো।’

ইরায়া আমার দৃঢ়তায় একটু ভরসা পেয়েই হয়তো স্বাভাবিক হল। কিন্তু, এক মুহূর্ত পর আবার ভীত কণ্ঠে বলে উঠলো,

‘দানবটা যদি আমাদের থেকে শক্তিশালী হয় ! যদি…’

আমি ইরায়াকে থামিয়ে দিলাম। ওকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু তবুও বলতে লাগলাম, ‘তুমি ভালো করেই জানো আমাদের শক্তিমাত্রা সম্পর্কে। আমাদের পৃথিবীর গর্ভে যে যৎসামান্য খনিজ পদার্থ ছিল তা উঠানো হয়েছে এবং তা ব্যবহারের উপযোগী করার প্রচেষ্টা চলছে। আমাদের সভ্যতার প্রকৃত ইতিহাস সাড়ে চার হাজার বছরের হলেও, আমরা জানি আমাদের সভ্যতা এখন চারশো বছরের। পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় গোটা পৃথিবীর সভ্যতার সমস্ত নিদর্শন, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সমস্ত প্রাকৃতিক শক্তি ধ্বংস হয়ে গেছে। এরপরে মাত্র চারশো বছর পূর্বে মানবজাতির নতুন করে যাত্রা শুরু হয়েছে।

আমাদের পূর্ব পুরুষরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে সৌরজগত ছাড়িয়ে বিভিন্ন গ্যালাক্সি ভ্রমণ করলেও আমরা এখন পর্যন্ত আকাশে উড়তে পারিনি। পৃথিবীর গর্ভের সমস্ত সম্পদ নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমরা ছ’লক্ষ মানুষ এখন শুধু সামগ্রিক শক্তির উপর নির্ভর করে বেঁচে আছি।

আমাদের পূর্বপুরুষদের ভুলের কারণে বারবার পৃথিবী ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। মানবজাতির অস্তিত্ব প্রায় শেষই হয়েছিল সর্বশেষ বিশ্বযুদ্ধে। অধিকাংশ প্রজাতির প্রাণী ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু, আমরা আর সে ধরনের ভুল করতে চাই না। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবো।

আমার দীর্ঘ বক্তৃতা কতটুকু শুনলো জানি না, ইরায়া আমার কাঁধে হেলান দিয়ে অস্তমান সূর্যের দিকে তাকিয়ে শুধু এটুকু বললো, ‘ আমি সব জানি পুনো, আমি সব জানি।’

আমি দানব নিধন টিমের অন্যতম প্রধান কমান্ডার। সাব-কমান্ডার মিলায়াম, ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানী ইয়ারাসহ আমরা বারো জন প্রায় আড়াইশত সশস্ত্র সৈন্যের নেতৃত্ব দিচ্ছি। আমাদের আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রতে সজ্জিত এই সৈন্যবলয় যথাযথ সংকেত পাওয়ার সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়বে ধূসর পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা অচেনা দানবটির উপর। পৃথিবীর স্বার্থে, মানব জাতির অস্বিত্ব রার্থে দানবের সাথে কোন প্রকার সমঝোতার যাবার নির্দেশ নেই।

‘দানবটিকে যদি আমরা ধ্বংস করতে না পারি……

ইরায়া আরো কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু পারলো না। ধূসর পাহাড় হতে অস্পষ্ট গর্জন ভেসে এলো। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে দীপ্তমান উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। সাব-কমান্ডার মিলায়ামের উচ্চ কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘এক্স-টুয়েন্টি টু ফোর্সেস, কিউ-এন-নাইন প্রস্তুত…, জনাব কিনরানিন সাউথ ফোর্স…, মিলায়ামের গম্ভীর কণ্ঠস্বর উল্লসিত করে তুললো প্রায় আড়াইশত সৈন্যকে।

মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্র পরিণত হল পৃথিবীর আধো আলো অন্ধকার এই ভূ-অঞ্চল।

আমার হাতের পিকে ফোর স্টেনগান সচকিত হল। এর মধ্যে ইরায়া এসে পাশে দাঁড়ালো। আমি শেষবারের মতো ওকে আলিঙ্গন করে সামনে পা বাড়ানোর জন্য উদ্যত হলাম। তখন ও বললো, ‘আমিও তোমার পাশে থাকবো, পুনো।’

‘এ হয় না, ইরায়া। তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভূ-তত্ত্ববিদদের একজন। এটা তোমার কাজ নয়। একজন সামরিক কমান্ডার হিসেবে তোমার নিরাপত্তা দেয়া আমার কর্তব্য।’ ইরায়া আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে থেকে কেঁদে ফেললো, যা একজন বড় মাপের বিজ্ঞানীর চোখে কখনও শোভা পায় না।

আমি ইরায়ার হাতটি ছেড়ে দিয়ে সামনে পা বাড়ালাম। সাথে সাথে আড়াইশত সৈন্যের চিৎকার ধ্বনি শোনা গেল। ঠিক সেই মুহূর্তে বিকট গর্জন করতে করতে একটি প্রাণী পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো। আমরা দূর থেকে সেই অচেনা আজব দানবটিকে প্রথমবারের মতো অবলোকন করলাম। দানবটির মাথার দুপাশে দুটো বাঁকা তীক্ষ্ণ চাকুর মতো কিছু একটা বেরিয়েছে।

দানবটি আমাদেরকে দেখেই বোধ হয় ছুটে আসছিলো এদিকে। আমরা লক্ষ করলাম, দানবের কোন হাত নেই, তবে চারটি পা। যাতে ভর করে দ্বি-গুণ গতিতে লাফাতে লাফাতে ছুটে আসতে লাগলো। আমাদের সৈন্যদের মধ্যে কেউ কেউ ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম ইরায়া আমার নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে। কিন্তু, আমার ফিরবার কোন উপায় নেই। গোটা পৃথিবীর ছ’লক্ষ মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে প্রস্তুত। আমি বাঁচতে পারবো কিনা জানি না, কিন্তু, মৃত্যুপর্যন্ত লড়ে যাবো দানবের সাথে।

দানবটি বিকট-দর্শন কুশ্রী শরীরটা নিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে আসতে লাগলো আমাদের দিকে। যে কোন সময় ঝাঁপিয়ে পড়বে সে। আমি পূর্ব নির্ধারিত সংকেত দিলাম সৈন্যদের উদ্দেশ্যে। তারা শুনতে পারলো কিনা বুঝতে পারলাম না, কিন্তু বেশিরভাগ সৈন্য ভয়ে পিছু হটতে শুরু করলো।

শেষ পর্যন্ত একাই দাঁড়াতে হলো দানবটির সামনে। দানবটা ঠিক যখন আমার কয়েক হাত দূরে এসে পৌঁছালো তখন আমি আমার হাতের স্টেনগানটি তাঁক করে ধরলাম ওর দিকে।



যখন আমি জ্ঞান ফিরে পেলাম, তখন দেখলাম ইরায়া আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি মুর্দার মতো মৃত কণ্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কি দানবটিকে ধ্বংস করতে পেরেছি?’

‘হা, পুনো তুমি পেরেছো। তুমি গোটা মানবজাতিকে রক্ষা করেছো।’ ইরায়া কম্পিত স্বরে জবাব দিল। দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করতে পেরে আমি নিশ্চিত মনে চোখ বুজলাম। বুকের ওপর থেকে বিশাল পাথর নেমে গেছে ভেবে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।

ঠিক এমন সময় সাব-কমান্ডার মিলায়ামের ভারী কণ্ঠ স্বর শোনা গেল। সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো, ‘দানবের পরিচয় পাওয়া গেছে, পুরাতন নথিপত্র ঘেটে জানা গেছে, এটি কোন ক্ষতিকর দানব নয়। এটি পৃথিবীর একটি প্রাচীন প্রাণী। প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে পৃথিবীতে এর বিচরণ ছিলো। আমাদের পূর্বপুরুষেরা এদের সহজেই পোষ মানিয়ে নিজেদের কাজে লাগাতো। এর প্রাচীন নাম গরু। এটি পুরুষ জাতের হওয়ায় একে ডাকা হত ষাঁড় বলে। পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধের সময় অন্যান্য প্রজাতির প্রাণীর সাথে এই প্রাণীটিও ধ্বংস ও বিলুপ্ত হয়ে যায়।এর আগে আন্তঃগ্রহাণিক সংঘর্ষের সময় কয়েকটি প্রজাতির প্রাণীর মতো এই প্রাণীটি পৃথিবী থেকে ছিটকে সৌরজগতের বাইরে চলে যায়। এবং সৌরজগতের বাইরের কোন এক গ্রহে এদের বংশবিস্তার হয়। কিছুদিন আগে কোন এক অজ্ঞাত কারণে এই প্রাণিটি পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে….

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪৪

শান্তির দেবদূত বলেছেন: হা হা হা, মজা পাইলাম, শেষমেষ শিং ওয়ালা দানবের এই পরিচয়!! বেশ বেশ।
চালিয়ে যান, আপনার লেখা সাবলীল, লেখার মাধ্যমে পরিবেশ চমৎকার করে ফুটিয়ে তুলার সহজাত প্রতিভা আছে। শুভেচ্ছা রইল।

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:০৮

স্বাধীন আকন্দ বলেছেন: দেবদূত ভাই, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ যে পুরোটা পড়েছেন। আপনার উৎসাহজ্ঞাপক মন্তব্য আমার মনে থাকবে পরবর্তী লেখাগুলোর ক্ষেত্রে।

২| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৫

অস্পিসাস প্রেইস বলেছেন: +

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

স্বাধীন আকন্দ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.