নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি টিকে থাকবো তদ্দিন, যদ্দিন আমি স্বাধীন।

স্বাধীন আকন্দ

https://

স্বাধীন আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাক্সবদল (রম্যগল্প)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৬


"স্যার, আপনের জুতা কালি করা হামার পক্কত সম্ভব নয়।"
জুতা কালি করে যে লোকটি সে আমার জুতার দিকে তাকিয়ে অনেকক্ষন নিরীক্ষণ করে বললো। উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক ভাষা। জুতার ইঞ্জিনিয়ার সে। মানে মুচি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কেন সম্ভব নয় ভাই? আপনি তো অন্যদের জুতাও কালি করলেন!"
"জুত্যা কিনবার পর কোনোদিন কালি করচিলেন? চল্টা উঠি গেছে মনে হচ্চে।" মুচিটা চটে গিয়ে বললো।

আসলেই জুতা কেনার সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ত্যানা দিয়ে মোছা ছাড়া কালি করা হয় নি কখনো।
আমি আর ত্যানা না পেঁচিয়ে অনুনয়ের সুরে বললাম, "ভাই, আপনাকে ডাবল টাকা দিবো। দয়া করে কালি করে দেন। না হলে যে টাইম পাস হচ্ছে না!"

দাঁড়িয়ে ছিলাম গাইবান্ধা স্টেশনে। উদ্দেশ্য ঢাকা যাবো। রাত নয়টা বাজে। রংপুর এক্সপ্রেসের রাইট টাইম রাত দশটা। কিন্তু বাংলাদেশের ট্রেন বলে কথা। একবার এক লোক নাকি স্টেশনে এসে শোনেনন ট্রেন রাইট টাইমের এক ঘন্টা আগেই চলে গেছে! লোকটা তো অবাক! পরে জানতে পারলেন, ট্রেনটা ছিলো গতকালের। তেইশ ঘন্টা লেট করেছে!
এই ঘটনা শোনার পর থেকে আমি সব সময় রাইট টাইমের এক ঘন্টা আগে উপস্থিত হই।

স্টেশনে এসে অবশ্য জানতে পারলাম ট্রেন আরো আধা ঘন্টা লেট। মানে রাত সাড়ে দশটা বেজে যাবে!
এতোক্ষন কী করি কী করি ভাবতে ভাবতে আমার মুভিং সুটকেসটা টেনে স্টেশনের এ মাথা থেকে ও মাথা হাঁটাহাঁটি করছিলাম।
এর মধ্যে দেখি স্টেশনের এক কোণে এই জুতার ইঞ্জিনিয়ার সাহেব বসে জুতা সেলাই করছে। তাই ভাবলাম, সময়টা কাজে লাগাই।

মুচি আমাকে জুতা না খুলেই কালি করে দিতে চাইলো। বললো, "আপনার সুটকেসের উপর পাও থোন।"
তাই করলাম। চল্লিশ মিনিট কালি দিয়ে ঘষামাজা দেখলাম ওর। কালি হওয়া শেষে দেখলাম, জুতা একদম নতুন জুতার মতো চকচক করছে! কিন্তু চকচক করলেই তো সোনা হয় না।

এর মধ্যে অন্য ঘটনা ঘটে গেছে! বদমাইশ মুচি আমার সুটকেসের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে! সুটকেসের দুই পাশে কালো কালির দাগ পড়েছে! সুটকেসটাও যে সাত বছরের পুরনো!
মুচিকে দিলাম ঝাড়ি। মুচি বললো, "স্যার আপনার সুটকেসও কালো কালি করি দেই। এখানও নয়া হয়া যাইবে।"
বুদ্ধিটা খারাপ না অবশ্য। জুতার সাথে ম্যাচিং করে সুটকেসও কালো হবে। কেনার সময় যে এটার রং কী ছিলো তাই মনে নাই।

ট্রেন আসলো সাড়ে এগারোটায়। ততক্ষনে বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে গেছি। এখন বগি পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে বাঁচি।
জুতার সাথে ম্যাচিং করা সদ্য কালি করা কালো সুটকেসটা নিয়ে কাঙ্ক্ষিত বগিতে উঠে নিজের সিটে গিয়ে বসলাম।
সুটকেসটা রাখলাম মাথার উপর বাঙ্কারে। সীটে গা এলিয়ে দিতেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

ঘুম ভাঙলো পরদিন সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে। বগি পুরাই ফাঁকা। উপরে তাকিয়ে দেখি সুটকেস যেখানে রেখেছিলাম, ওটা কিভাবে যেন একটু সরে গেছে।
টেনে নামালাম সুটকেস।
ট্রেন থেকে নেমেই বুঝলাম, রাতে জুতার ইঞ্জিনিয়ার আমার সুটকেসও নতুনের মতো বানিয়ে দিয়েছে! আনন্দ আর ধরে না!

স্টেশন থেকে বের হওয়ার জন্য হাঁটা দিলাম সুটকেস এক হাতে টানতে টানতে।

এর মধ্যে হঠাৎ দেখি এক সুন্দরী মেয়ে আমার দিকে দৌঁড়ে আসছে! "এই থামুন বলছি, থামুন!"
আমি থামলাম। ঘটনা কী? এই মেয়েকে তো আমি চিনি না। কোনো সুন্দরীকেই অবশ্য সেভাবে চিনি না। শুধু, টিভি সিনেমার পর্দায় দেখি। এই মেয়ে নিশ্চিত কোনো মডেল! সবুজ কামিজের সাথে ম্যাচিং করে সবুজ কানের দুল পড়েছে।

আমার কাছে এসে বললো, "এই তো! এটাই তো আমার সুটকেস!"
আমি হতবাক! "আপনার সুটকেস মানে?"
মেয়েটা এবার নরম সুরে বললো, "সরি। আসলে হয়েছে কি, ভুলে আপনার সুটকেসটা নিয়ে আমি নেমে পড়েছি। আর আমারটা আপনার হাতে এখন।"

সুটকেস-বদল! মানে বাক্স বদল!!

শুরুটা তো এভাবেই হয়! প্রথমে ভুল বোঝাবুঝি। তারপর প্রেম, এরপর বিয়ে! সিনেমার মতো হয়ে যাচ্ছে দেখি সবকিছু!
আমি বললাম, "আপু, আমার সুটকেসটা তাহলে কোথায়?"

এর মধ্যে দেখি এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক আমাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। সম্ভবত মেয়েটির বাবা। মেয়েটি উনার উদ্দেশ্যে বললো, "বলছিলাম না সুটকেসটা পাবো! এই দেখো এখন।"
লোকটি আমার হাত থেকে সুটকেস নিতে নিতে বললো, "থ্যাংক্স।"
আমি 'ইটস ওকে আংকেল' বলতে গেলাম। তখনি উনি বললেন, "আপনার সুটকেসসহ আমার দুই ছেলেমেয়ে স্টেশনের একটা খাবার হোটেলে অপেক্ষা করছে। চলুন, আমাদের সাথে।"

আমার আনন্দ দেখে কে! সবকিছুই তো সিনেমেটিকভাবে হয়ে যাচ্ছে! পুরা ফ্যামিলির সাথে পরিচয় হবে এখন। আহা!

তখনি মেয়েটা লোকটার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, "এই! তোমাকে না আমাদের বাচ্চাগুলোর কাছে থাকতে বললাম! তুমি আসলা ক্যান আবার?" তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "দেখেছেন ভাই, হাসবেন্ডরা সবসময় তাদের ওয়াইফদের সন্দেহ করে! যত্তসব!"

আমি পুরাই টাস্কি খেলাম! এরা স্বামী-স্ত্রী? কিছুতেই মেলাতে পারছিলাম না। এত কম বয়সি একটা মেয়েকে এই বুড়োটা বিয়ে করেছে? ক্যামনে ম্যান, ক্যামনে? মেয়েটার বয়স বাইশ তেইশের বেশি না!

আমার সিনেমারও করুণ পরিণতি হলো। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রেমকাহিনীরও সৃষ্টি হলো!
শুরুতেই সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি কত কিছু ভেবে বসেছিলাম!

আমরা তিনজন স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতেই ঝুম বৃষ্টি নামলো। এটাও বাক্স বদল প্রেম-কাহিনীর অপূর্ব রোম্যান্টিক দৃশ্য হতে পারতো!
তিনজনেই ভিজে চুপচুপে হয়ে কমলাপুর রোডের পাশে একটা খাবার হোটেলে ঢুকলাম।

হোটেলে ঢুকেই আমার সুটকেসটা দেখলাম। কিন্তু ওদিকে না গিয়ে ব্যর্থ প্রেমিকের মতো মুখ করে বেসিনের দিকে এগিয়ে গেলাম।
হাত-মুখ ধুয়ে হোটেলবয়ের কাছ থেকে টিস্যু নিয়ে মুখ মুছলাম। তারপর সুটকেস যে টেবিলের কাছে রাখা ওদিকে গেলাম। সাত আট বছরের দুটো ছেলে মেয়ে বসে আছে। এতো বড় বড় বাচ্চার মা এই রূপবতী মেয়েটি? ভদ্রলোক আমাকে বসতে বললেন।

বাইরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।
আমি টেবিলের একটা চেয়ারে বসতেই দেখি এক মহিলাও আমাদের সাথে যোগ দিলেন। উনিও ভিজে গেছেন। খুব চেনা চেনা লাগছিলো।
উনি হঠাৎ আমাকে উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন, "আমাদের সাথে খেতে আপনার কোনো সমস্যা নাই তো?"
পরিচিত কণ্ঠ! আরে, এটা তো সেই সুন্দরী মেয়েটা! কিন্তু, চেহারা হঠাৎ এমন হলো কী করে? বয়স বারো তেরো বছর বেড়ে গেছে দেখি!
তখন খেয়াল করলাম, যখন স্টেশনে দেখেছিলাম তখন ইনি মেকআপ করা ছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে মেকআপ নষ্ট হওয়ায় উনি আসল রূপে ফিরে গেছেন!
ঠিক আমার কালো সুটকেস আর কালো জুতার মতোই কাহিনী!
ঘষামাজা করলে মানুষেরও বয়স কমে যায় দেখি!
আমি একটা পরোটায় কামড় দিয়ে বিড় বিড় করে উত্তর দিলাম, "সমস্যা নাই আন্টি!"

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.