নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি জন্মভুমি বাংলাদেশ ।অসহ্য মনে হয় যে কোন অন্যায়-কে।অসততার সাথে আপোষ নয় কখনই।
দাঁড়াও পথিকবর, জন্ম যদি তব
বঙ্গে; তিষ্ঠ ক্ষণকাল। এ সমাধিস্থলে
(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি
বিরাম) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত্ত
দত্ত-কুলোদ্ভব কবি শ্রী মধুসুদন।
যশোরে সাগরদাঁড়ী কপোতাক্ষ-তীরে
জন্মভূমী, জন্মদাতা দত্ত মহামতি
রাজনারায়ণ নামে, জননী জাহ্নবী।
উনিশ শতকের নব জাগরণের শ্রেষ্ঠ প্রতিভা মাইকেল মধুসূদন দত্ত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা কবিতার প্রথম আধুনিক কবি পুরুষ। নব্য বাংলার সাহিত্য পূর্ণরূপে আত্ম প্রকাশ করে তারই হাত ধরে। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী মধুসূদনের জীবন চরন ছিল ততোধিক বিস্ময়কর। ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছিলেন, ইংরেজী সাহিত্য রচনা করেছিলেন, সমাধিক খ্যাতি ও যশ অর্জনের জন্য। অনন্য প্রতিভার অধিকারী তিনি ছিলেন সরস্বতীর বরপুত্র। তার সাহিত্য বোধ ও ইতিহাস বোধের তুলনা হয় না। তিনি ১৮২৪ সালে ২৫ জানুয়ারী যশোর জেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পূর্ব পুরুষের আদি নিবাস ছিল বালি, হাওড়া, পশ্চিমবঙ্গ। বসতি ছিল গোপালপুর, তালা, সাতক্ষীরা। প্রথম পুরুষের নাম ছিল রামরাম দত্ত। দ্বিতীয় পুরুষ হিসাবে ছিলেন রাম কিশোর দত্ত। তিনি বৈবাহিক সূত্রে সাতক্ষীরার গোপালপুর থেকে আসেন যশোরের সাগরদাঁড়ি গ্রামে। তৎপুত্র মহারাজ রামনিধি দত্ত যিনি ছিলেন মাইকেল মধুসূদনের পিতামহ। মধুসূদনের পিতার ছিলেন মহামতি রাজ নারায়ন দত্ত। মাতা ছিলেন রাড়ুলী কাঠিপাড়া গ্রামের গৌরীচরণ ঘোষের কন্যা জাহ্নবী দেবী। রাজ নারায়ন দত্তের কোন কন্যা সন্তান ছিলো না। তিন পুত্র সন্তান ছিল যথাক্রমে মধুসূদন দত্ত, মহেন্দ্র নারায়ন দত্ত, প্রসন্ন কুমার দত্ত, তারা বয়সেই মারা যায়। মধুসূদন ছিলেন পিতা মাতার বড় সন্তান। পড়াশুনা করেন প্রথমে কলকাতা হিন্দু কলেজে এবং পরে ১৮৪৮ সাল থেকে পিতার অর্থ সাহায্য বন্ধ হলে ১৯৪৮ সালে কবি মাদ্রাজে গমন করেন। প্রতিষ্ঠা লাভ করেন | মাদ্রাজ যাবার পরেই তিনি ইংরেজ রমণী রেবেকা ম্যাক্টাভিসকে বিবাহ করেন | ১৮৪৯ সালে রচনা করেন ইংরেজী কাব্য The Captive Ladie। | ১৮৫১ সালে মাতার মৃত্যুর কারণে ঐ সালে পিতার সাথে শেষ সাক্ষাত করেন। ১৮৫৪ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী গ্রহন করেন। ১৮৫৬ সালে তিনি রেবেকাকে ত্যাগ করে এক ফরাসী মহিলা হেনরিয়েটার সাথে বিবাহ করে কলকাতায় ফিরে আসেন এবং তাঁর রচনার স্বর্ণকালের সূচনা হয় | ১৮৫৮ সালে রচনা করেন শর্মিষ্ঠা নাটক | ১৮৬০ সালে একেই কি বলে সভ্যতা ওবুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নামক দুটি প্রহসন লেখেন । বছরেই সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখেন তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য | ১৮৬০ সালে দীনবন্ধু মিত্র তাঁর যুগান্তকারী নাটক নীলদর্পণ রচনা করেন | রেভারেণ্ড জেমস লং তা ইংরেজীতে অনুবাদ করিয়ে প্রকাশ করেন | তার জন্য তাঁকে ১০০০ টাকা জরিমানা করা হয় | কালীপ্রসন্ন সিংহ সেই জরিমানার টাকা দিয়ে দেন | কিন্তু কবিতাটির অনুবাদক ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত, যা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৭ সালে প্রকাশিত "রায় বাহাদুর দীনবন্ধু মিত্র বাহাদুরের জীবনী" প্রবন্ধে লিখে গেছেন | এরপর ১৮৬১ তে রচনা করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি মেঘনাদবধ কাব্য | বিপুলভাবে বন্দিত এবং তীব্রভাবে নিন্দিত এই মহাকাব্য বাংলা কবিতার ইতিহাসে স্মরণীয়তম রচনা | এর পর লেখেন ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১), বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২) যা তাঁর রচনার মধ্যে অন্যতম | কলকাতায় এসে কাজ করেন পুলিস কোর্টে কেরাণী ও পরে দোভাষী হিসেবে ১৮৬২ সালে নিজ জন্মভূমিতে স্ত্রী পুত্র সহ আগমন। | সেই ১৯৬২ সালে বিলেত গমন ব্যারিষ্টারী শিক্ষা গ্রহনের জন্য গ্রেজইন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৬৩ সালে তিনি ফ্রান্সে গিয়ে ভার্সাই নগরে সপরিবারে থাকতে শুরু করেন | এই সময় তাঁর তীব্র অর্থাভাব দেখা দেয় এবং ঋণের দায়ে জেলে যাবার উপক্রম হলে, তাঁর লেখা পত্র পেয়েই দয়ার সাগর ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় দেড় হাজার টাকা পাঠিয়ে এবং পরে আরও টাকা সংগ্রহ করে পাঠিয়ে, কবিকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন | ব্যারিষ্টারী শিক্ষা সমাপ্ত ১৮৬৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর। ভার্সাইতে থাকাকালীন ইতালীয় ভাষার সনেট বাংলায় প্রবর্তনের চেষ্টা করেন, যার ফল তাঁরচতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৬) । ১৮৬৭ সাল থেকে আইন ব্যবসা শুরু। ১৮৭০ সালে সুপ্রিম কোর্টে চাকুরী গ্রহন করেন। মালভূম পঞ্চকোট রাজার উপদেষ্টা পদে চাকুরী গ্রহন করেন। ১৮৭৩ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে অনাহারে রোগশয্যা চিকিৎসাহীনতায় ভূগে একই সালের ২৯ শে জুন আলিপুর দাতব্য চিকিৎসালয় (কলিকাতায়) পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরনিদ্রায় শায়িত হন যশোর জেলার প্রথম ব্যারিষ্টার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০১
কাছের-মানুষ বলেছেন: শুভ জন্মদিন কবিকে ।