নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস বি কে

খারাপ কপাল

অনেক আগ্রহ নিয়ে অখাদ্য লিখি :(

খারাপ কপাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পার্টি

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪৫

কানের সামনে কে যেন অদ্ভুত সুন্দর করে গিটার বাজাচ্ছে, আচ্ছা স্বপ্ন না বাস্তব, চিমটি কেটে দেখা উচিৎ? স্বপ্ন কিংবা বাস্তব যাই হোক সেটা জানতে ইচ্ছে হচ্ছে না। নিবিরের আরেকটু শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। বর্তমানে সে দুটো জিনিসের প্রেমে পরে আছে, তার গার্লফ্রেন্ড সাইরা আর গিটার।
শব্দটা আসলে ফোনের রিংটোন, রাতের বেলা সে নতুন রিংটোন সেট করেছে সেটা স্মরণে ছিল না। সাইরার ফোন, ঘুম ঘুম চোখে ফোন ফোন রিসিভ করে হুম বলল।
-গুড মর্নিং
-গুড মর্নিং
-ঘুমে ডিস্টার্ব করলাম তাইনা?
-না ঘুমিয়ে তো আপনাকেই স্বপ্ন দেখছিলাম, এখন বাস্তবে কথা বলছি সেটা বেটার না?
-আপনি মিথ্যা বলেন কেন?
-ইচ্ছে হয়েছে তাই। কেন আপনি খুশি হননি?
-জানিনা। আচ্ছা আজ পার্টি মনে আছে?টাকা এরেঞ্জ করতে পেরেছেন?
-মনে ছিলনা, গতরাতে আপনার বার্থডে ওইশ পেয়ে মনে পরেছে। হ্যাঁ হয়েছে। কখন নিবেন?
-এখন দিতে পারলে ভাল হয়। আপনার কষ্ট হবে একটু মোড়ে আসতে পারবেন?আমি ওয়েইট করছি।
-কি বলেন?আপনি কেন এত কষ্ট করতে গেলেন আমি গিয়েই দিয়ে আসতাম। আচ্ছা আমি আসছি।২ মিনিট ওয়েইট!
দ্রুত বিছানা ছেড়ে ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে রওয়ানা হল নিবিড়, আসার সময় ট্রাংকের ভেতর রখা পুরাতন প্যান্টের সিক্রেট পকেট থেকে ৩৯০০ টাকা নিয়ে আসলো। এক রেষ্টুরেন্টে মুখ ধুয়ে বের হয়ে দেখলো সাইরা ফুল হাতে রাস্তার ঐপাশে দাঁড়িয়ে আছে।
-সরি ফর লেইট
-ইট্স ওকে। হ্যাপি বার্থডে
-থ্যাঙ্কস, এই যে টাকা।
-আচ্ছা, পার্টিতে আপনার ফ্র্যান্ড দের নিয়ে আইসেন, আচ্ছা?
-আচ্ছা!
রিলেশন হবার পর এইটা ফার্স্ট বার্থডে, সবার আগে গার্লফ্রেন্ড এর কাছে থেকে উইশ পাওয়া গিফট হিসেবে ফুল পাওয়া নিবিড়ের ভীষণ ভাল লাগা উচিৎ, কিন্তু তার এত ভালর মাঝেও একটু একটু খারাপ লাগছে। টাকাগুলো সে কতোটা কষ্ট করে জমিয়েছে সে জানে। অনেকদিন ধরেই শখ একটা গিটার কিনে গিটার শিখবে। ওর বাবাকে অনেক কষ্টে পড়ার কাজে লাগবে এইভাবে বুঝিয়ে ল্যাপটপ কিনে দেয়ার কথা বললেও গিটারের কথা বলার সাহস পায়নি। মা অবশ্য বলেছিল ল্যাপটপ কেনার সময় কিছু টাকা বাঁচিয়ে গিটার কিনতে, বাট কেনার সময় আব্বু সঙ্গে থাকায় সম্ভব হয়নি। পরে সে টিউশনি খুঁজতে থাকে। অনেক মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে। হঠাৎ একদিন ফোন এক মিডিয়া থেকে, ক্লাস এইটের মেয়ে টিউশনি করাবে কিনা, ২৫০০ টাকা দিবে। ও তো এক পায়ে খাড়া। অবশ্য মিডিয়ার নিয়ম প্রথম মাসের বেতনের ৭০% অগ্রিম মিডিয়াকে দিতে হবে। মাসের শুরুতে হওয়ায় সেটা দিতে পেরেছিল, পরে সারাটি মাস ধার করে চলতে হয়েছে, লাস্টের দিকে সকালের নাস্তা করার মত কিংবা টিউশনিতে যাবার ভাড়াও তার কাছে ছিলনা। প্রথম মাসের বেতন ধার শোধ করতে আর ফ্র্যান্ড দের ট্রিট দিতেই চলে গেল। টিউশনি পাওয়ার কারণে খরচ ও অজানা কারণে বেড়ে গেল। প্রতি মাসে সবকিছু করে যতটা সম্ভব জমিয়ে ৫ মাসে ৩৯০০ টাকা জমিয়েছে। হঠাৎ সাইরা আবদার করল সে নিবিড়ের জন্মদিনে পার্টি দিয়ে দুজনের বন্ধুবান্ধবদের খাওয়াবে। ও যত কষ্টই হোকনা কেন সাইরার কোন আবদার ফেলতে পারেনা, সাইরা অবশ্য কোন অযথা আবদার করেও না।

নিবিড় ফায়েজ ছাড়া আর কোন বন্ধুকে পার্টির কথা বলতে পারেনি। ওর ভীষণ লজ্জা লাগে! ও সাইরাকে ফোন দিল
- হ্যালো কোথায়, আমরা ত যে রেষ্টুরেন্টের কথা বলসেন তার সামনে দাঁড়িয়ে!
-একটু ওয়েইট আসছি
হঠাৎ পেছন থেকে নিবিড়ের কাধেঁ কোমল স্পর্শ, সাইরা হাতে গিটার নিয়ে দাঁড়িয়ে, "হ্যাপি বার্থডে"
নিবিড় তার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা!
"মানে কি?"
"আপনার না গিটার শেখার খুব শখ, এই নিন গিটার। ফায়েজ ভাইয়া ছাড়া আর কেউ আসেনি? এক্সট্রিমলি সরি ফায়েজ ভাইয়া. আমি না কোন পার্টি এরেঞ্জ করতে পারিনি, এই যে আমি কেইক বানিয়ে নিয়ে আসছি। মেসে নিয়ে খাবেন"
মাঝেমধ্যে বাস্তব স্বপ্নের চেয়েও সুন্দর হয়। নিবিড়ের এখন সেরকম মনে হচ্ছে! প্রচন্ড আনন্দ পেলে তার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। এখনো তাই হয়েছে, অনেকেই বলে পৃথিবীতে নাকি ভালবাসা বলে কোন জিনিসের অস্তিত্ব নেই, না থাকলে জীবন কেন এত অসহনীয় সুন্দর তার খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে!

সাইরা একটা কম্পিটিশনে পার্টিসিপেট করে ১০,০০০ টাকা পেয়েছিল। প্রতিবারই সে বৃত্তি বা অন্য কোন ভাবে টাকা পেলে সব আব্বুকে দিয়ে দেয়। এবার টাকা না দিয়ে আব্বুকে একটা চশমার ফ্রেম, আম্মুকে একটা শাল, আর ছোটভাই সাদিবকে একটা হেডফোন আর পেনড্রাইভ গিফট করেছে। আর বাসায় বলেছে বাকি টাকা সে নিজে খরচ করবে। সে গিটারের দোকানে গিয়ে দেখে নিবিড়ের পছন্দের গিটার কিনতে আরও ৪,৭০০ টাকা লাগবে। তাই সে নিবিড়ের কাছে পার্টির কথা বলে ওর জমানো টাকা গুলো নিয়েছে, এত কষ্টের টাকা গুলো নেয়ার সময় তার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু ওর আর কোন উপায় ছিলনা। অবশ্য গিটার গিফট করার নিবিড় আনন্দে কিছুক্ষণের জন্য অন্যদিকে ফিরে চোখের পানি লুকাতে চেয়েছিল , সাইরার কাছে সে লুকাতে পারেনি, এ অসাধারণ দৃশ্য দেখে সাইরার সব কষ্ট মুছে গেছে। আজ তার জীবনের অন্যতম আনন্দের দিন।
কিছু মানুষ মানুষকে খুশি করতে পেরে এত আনন্দ পায় কেন কে জানে!!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২১

তাশফিয়া নওরিন বলেছেন: Valo laglo
icca ta puron holo majh kanea ektu vabnara jalaton korlo

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। কিন্তু তারা একে অপরকে আপনি-তাপনি করে বলে কেন? এইটা মানানসই লাগে নাই।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪৪

খারাপ কপাল বলেছেন: এটি ওদের ধরণ ভাই। নতুন প্রেম অথবা অন্য কোন কারণে। ব্যাপারটা ইচ্ছেকৃত

৪| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুখপাঠ্য| মজা পেয়েছি পড়ে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.