নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

{♥ যদি কখনো নিজেকে একা ভাবো, তাহলে ঐ দূর আকাশের অসীম সীমান্তের দিকে তাকিয়ে থাকো! কখনো নিরাশ হয়ে যেও না! হয়তো বা একটা বাজপাখিও তোমার দিকে উড়ে আসতে পারে! ♥}

সাহসী সন্তান

আমাকে তোর ভালোবাসার দরকার নেই। শুধু পাশে থেকে একটু সাহস যোগাস, দেখবি তখন ভালোবাসাটা এমনিতেই চলে আসবে!!

সাহসী সন্তান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়াল সেই রাত্রীঃ- ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর; \'সিডর\' নামক এক হিংস্র দানবের নিষ্ঠুর ছোবলের বাস্তব অভিজ্ঞতার গল্প!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৪


২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর! সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা। প্রায় দেড়মাসের মত একটানা পরীক্ষা চলবে! শত ব্যস্ততা আর পড়াশুনার মাঝেও বাড়িতে চলে এসেছি পরিবারের কাছ থেকে দোয়া নেওয়ার জন্য! অনেকদিন পর বাড়িতে আসার কারণে বাবা-মা, ভাই-বোন সহ সবাই অনেক খুশি। আম্মা খুশিতে আটখানা হয়ে বললেন- 'অনেকদিন পর বাড়িতে আসলি, আবার কবে আসতে পারবি তার তো ঠিক নেই! সুতরাং আর দু'একটা দিন থেকে যা!'

বাবাও মা'র কথার সাথে সম্মতি জানালেন! যদিও তখন থাকার মত কোন পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল না, তবুও বাবা-মায়ের কথা ফেলতে পারলাম না। তাছাড়া আসার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ন বইও সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলাম, সুতরাং পড়া-শুনার খুব একটা যে সমস্যা হবে তেমন না! তবে সব থেকে বড় সমস্যা ছিল কলেজ কর্তৃপক্ষকে সামলানো! কলেজের নিয়ম কানুন খুবই কড়া! আধুনিক বাংলায় যেটাকে বলা যায়- 'হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না!'

বাবা বললেন- 'কলেজের ব্যাপারটা আমি বুঝবো! তোর যদি থাকলে কোন সমস্যা না হয়, তাহলে তোর মায়ের কথা শুনে আরো কয়েকটা দিন থেকে যা! তাছাড়া আসমানের অবস্থাটাও খুব বেশি ভাল বলে মনে হচ্ছে না! কখন কি হয় না হয় কিচ্ছু বলা যাচ্ছে না! রেডিওতে কিছুক্ষন আগে ৫ নং সতর্ক সংকেত চলতে চলতে হঠাৎ করে ৭ নং মহা-বিপদ সংকেত চলে এসেছে! যদি মরি তাহলে পরিবারের সবাই যেন একসাথেই মরতে পারি আপাতত আল্লাহর কাছে কেবল এই প্রার্থনা কর!'

বুঝতে পারছিলাম, মনে মনে বাবা ভীষণ ভয় পেয়ে গেছেন! সুতরাং বাড়ির বড় ছেলে হিসাবে এই মূহুর্ত্বে তার পাশে থেকে তাকে সাহস যোগানোটা আমার একান্ত কর্তব্য! আম্মাও দেখলাম অসম্ভব রকমের মুষড়ে পড়েছেন! কথায় আছে না, ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়! আমার বাবা-মায়ের অবস্থাও হয়ে গেছে অনেকটা সেইরকম!

মায়ের কাছে গল্প শুনেছিলাম- ১৯৮৮ সালের প্রবল বন্যার কথা। তখন আম্মার বিয়ের বয়স মাত্র দুইবছর! ১৯৮৬ সালের জুন মাসে বাবা-মায়ের বিয়ে হয়! বিয়ের সময় আম্মা নাকি পিচ্চি একটা মেয়ে ছিলেন। শশুর বাড়িতে এসেও তিনি বউ পুতুল খেলা ছাড়তে পারেননি এই রকম বয়স। আম্মার কাছে সেই বন্যার রাত্রের একটা গল্প শুনে খুবই মজা পেতাম। আম্মা বলতেন- 'সেই রাত্রের ঝড়ে আমাদের ঘরের চাল উড়ে গেলে বাবা নাকি কাঁধে করে আম্মাকে আমার বড় চাচার ঘরে দিয়ে এসেছিলেন।'

৮৮ সালের সেই ঝড়ের কবলে পড়ে আমাদের বড় বড় প্রায় চারটা গরু মারা যায়। এবং ক্ষেতের ফসল সহ আনুসঙ্গিক ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ছিল মাত্রা ছাড়ানো। প্রায় পনের দিনের মত আমাদের পরিবারের সদস্যরা পানি বন্দি হয়ে অসহায় ভাবে জীবন যাপন করতে থাকে। খুদের চালের ভাত জাউ ( জাউটা আসলে কি (?) আমি সেটা সঠিক জানি না) রান্না করে নাকি তারা নিজেদের ক্ষুধা নিবারন করতেন। তাছাড়া শুধু আমাদের পরিবারের সদস্যরাই না, গ্রামের সব গুলো মানুষের মধ্যেই তখন ঐ একই পরিবেশ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

সে যাহোক, তো সেদিন আসরের নামাজের পরে গ্রামে মাইকিং করে ঘোষণা করা হল; সবাইকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে! এমনকি প্রতিটা মসজিদ থেকেও বিপদ সংকেত গুলো বারবার করে ঘোষণা করা হচ্ছিল! আকাশের অবস্থা তখন মেঘাচ্ছন্ন! দমকা বাতাস বয়ে চলেছে, যেটা ঘন্টায় প্রায় ১১০ থেকে ১২০ কিঃ মিটার বেগে উড়ে যাচ্ছে আমাদের গ্রামের উপর দিয়ে। রাত্রে আমরা সবাই একসাথে বসে যৎ-সামান্য কিছু খাওয়া-দাওয়া করলাম! আমাদের বাড়ির অবস্থাটা মোটা-মুটি ভাল ছিল। বিল্ডিং, তবে ঘরের চাল ছিল টিন সেডের (যেটাকে গ্রাম্য ভাষায় এজবেস্টার বলা হয়)। সেজন্য আমরা কেউ আর কোন সাইক্লোন সেন্টার বা ভাল কোন অবস্থানে গেলাম না! যদিও প্রথম দিকে আম্মা কিছুটা খুঁতখুঁত করছিলেন, তবে বাবার চোখ রাঙানিতে সেটা আর বেশিক্ষণ ধোপে টিকলো না। তখন সেটা চাপা গজগজানির মত আমাদের কানের কাছে এসে আছড়ে পড়তে লাগলো! 'এখন কিছু বলছি না, তবে আমার ছেলে মেয়ের কিছু হলে বুড়োটার মজা তখন দেখাবো' গজগজানির ধারা অনেকটাই এই টাইপের। তাছাড়া সত্যি কথা বলতে আম্মা বাদে অতিরিক্ত লোক সমাগমও আমাদের পরিবারের কারোরই ততটা ভাল লাগতো না!

দুপুরের পর বাবা-মা আর আমি তিনজনে মিলে আমাদের ঘরের চারিপাশে মজবুত খোঁটা পুঁতে তার সাথে এবং চালের সাথে শক্ত করে দঁড়ি বাঁধলাম, যেটা আমাদের গ্রাম্য ভাষায় ঘরের কান্সন দেওয়া বলে! যাতে প্রবল ঝড়ের কবলে পড়লেও ঘরের চাল যেন উড়ে যেতে না পারে। সুতরাং খুব একটা যে ভয় ছিল তাও না! রাত্রের খাবার খাওয়ার সময় আমার ছোট ভাই-বোন দু'টোর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ভয়ে তাদের দু'জনেরই মুখ শুকনো খটখটে হয়ে গেছে! তাদের মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝলাম, আমার পিচ্চি হাসি-খুশি ভাই-বোন দু'টো কি পরিণামে ভয় পেয়ে গেছে! রাত্রে তারা কিছুই খেল না। কেবল মুখ ভার করে দু'জন আমাদের পাশে বসে আমাদের খাওয়া-দাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। সম্ভাবত ওরা ভাবছিল, এই বিপদের দিনে আমাদের মুখে ভাতের গ্রাস উঠছে কিভাবে (?) এই ধরনের কিছু।

তখন ছোট ভাইটার মুখে কেবল মাত্র আধো-আধো বোল ফুঁটতে শুরু করেছে। তবে ভয়ংকর ভয় পেলে স্বাভাবিক ভাবেই বাচ্চারা তোতলাতে শুরু করে। কারণ তারা মানসিক ভাবে এতটাই দূর্বল এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যে, তাদের মুখের থেকে ভিতরটা বেশি তোলপাড় করতে থাকে। যার কারণে স্বাভাবিক কথাটাও তারা স্বাভাবিক ভাবে বলতে পারে না, বরং জড়িয়ে পেঁচিয়ে সেটাকে আরো ভয়াবহ করে তোলে। সুতরাং ঐ অবস্থাতেই ছোটভাইটা তোতলাতে তোতলাতে বারবার করে বলছে- 'ভাইয়া, আমরা যদি সবাই মরে যাই তাহলে তারপর আমরা কোথায় যাব? আমরা কি সত্যিই মরে যাব ভাইয়া?'

কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছিলাম না! আসলে আমার নিজেরই তো ভয়ে আত্মারাম খাঁচা ছাড়ার দশা! তবে বুঝতে পারছিলাম ওদের সাথে এখন আমার স্বাভাবিক ধরনের আচরন করা উচিত। কেননা আমি নিজেই যদি ওদেরকে ভয়ের কথা বলি, তাহলে তো ওরা আরো বেশি ভয় পেয়ে যাবে। হয়তো, তখন তাদের স্বাভাবিক জীবন ধারাটাও বদলে গিয়ে সেটা অ-স্বাভাবিক কোন ব্যাপারে গিয়ে ঠেকবে। কোন রকমে ছোট ভাইটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে চুপ করিয়ে রাখলাম। কিন্তু একটা চুপ করলে আর একটা শুরু করে। এমনিতে ছোট বোনটার মুখে সারাক্ষণ কথার খই ফোঁটে। তবে আজ সে কেমন যেন অ-স্বাভাবিক ভাবে চুপচাপ হয়ে আছে। দেখলে মনে হচ্ছে যেন, আজকের পর থেকে জীবনে আর সে কখনো কথাই বলবে না। কিংবা সে হয়তো একদম সব কথা ভুলে গেছে। এই মূহুর্ত্বে ধমক-ধামক দিয়ে চুপ করানোর মত পরিবেশও এখন আর নেই। সুতরাং কোন রকমে তাদের মত করেই আমাকে বুঝিয়ে যেতে হচ্ছে। তারপর রাতের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা সবাই এক জায়গায় গোল হয়ে বসে পড়লাম। আম্মা ছোট ভাই-বোন দু'টোকে শুয়ে পড়তে বললেন! কিন্তু তারা শোবে না! আতংকে যেন তারা ঘুমাতেও ভুলে গেছে।

বাবার প্রচুর পান খাওয়ার অভ্যাস ছিল। তিনি পান খেতে খেতে ঝড়ের সময় আমাদের কর্ম পদ্ধতী গুলো ব্যাখ্যা করতে লাগলেন! আমরা সবাই উৎসুক ভাবে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তার বলা কথা গুলো গিলতে লাগলাম। তবে সেগুলো হজম করতে পারছি বলে মনে হল না। ঠিক হল, ঝড়ের সময় যদি আমাদের ঘরের চাল উড়ে যায়, তাহলে বাবা ছোট বোনকে আর মা ছোট ভাইকে কোলে করে নেবেন! আর আমি থাকবো বাবা-মায়ের ঠিক মাঝ খানে! খুব শক্ত করে তাদের আঁচল ধরে রাখবো, যাতে ঝড়ের ঝাপটায় আমি কোন মতেই ছুটে যেতে না পারি! এভাবে অনেকক্ষন ধরে কথা বলতে বলতে দেখলাম, ছোট ভাই-বোন দু'টো পরম নিশ্চিন্তে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে।

রাত তখন কত হবে? ঐ সাড়ে এগারটা কি বারটা! এতক্ষন পরিবেশ কিছুটা নিস্তব্ধ মেরে ছিল। বুঝতে পারছিলাম, এটা প্রবল ঝড়ের অশনি সংকেত। জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, চারিদিকে কেমন যেন জমাট বাঁধা অন্ধকার বিরাজ করছে। যে অন্ধকারে নিজের হাতের তালু পর্যন্ত দেখা যায় না। এতক্ষণ গুমোট ভাব ধরে থাকার কারণে আতংক ভাব কিছুটা হলেও কেটে গিয়েছিল। ঠিক এমন সময় হঠাৎ করে শুরু হয়ে গেল প্রকৃতির তান্ডব! এক একবার দমকা হাওয়া এসে আছড়ে পড়তে লাগলো আমাদের ঘরের বাইরের দেওয়ালের উপর। যেন একপাল দৈত্য একসাথে মিলে আমাদের ঘরের দেওয়ালে এসে প্রচন্ড ভাবে ধাক্কা দিচ্ছে। যার আঘাতে মাঝে-মাঝেই ঘরটা আমচকা দুলে-দুলে উঠছে। মনে হচ্ছিল যেন, ঘরটা না ভাঙা পর্যন্ত তারা ঠিক শান্তি পাচ্ছে না।

ঝড়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাইরে তখন প্রচন্ড শব্দ করে মূহুমূহু বজ্রপাত হচ্ছে, আর সেই সাথে সাথে চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানি! ছোট থাকতে বইতে 'সূর্য বড় না বাতাস বড়' নামক একটা গল্প পড়েছিলাম। মনে হচ্ছে আজকের গল্পটা হবে 'ঝড় বড় না বজ্রপাত বড়' টাইপের! এরা দু'জনেই যেন আজ নিজেদের শক্তিমত্তার পরিচয় দেওয়ার জন্য এই পৃথিবীকে নিয়ে একটা উন্মত্ত খেলায় মগ্ন হয়ে উঠেছে! প্রবহামান বাতাসের বেগ তখন ঘন্টায় দুই'শ কিঃ মিটারের উপরে অবস্থান করছে। ঘরের মধ্যে আমরা তিনজন মানুষ জবুথবু হয়ে বসে আছি। কিছুক্ষন পরপর আম্মা দেখলাম মুখের উপরে কাপড় চাপা দিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে উঠছেন! বুঝতে পারলাম তিনি কাঁদছেন! এর মধ্যেই মাঝে- মাঝে বাবা জানলায় মুখ বাড়িয়ে চিৎকার করে পাশের বাসার চাচা-চাচিদের খবরও নিচ্ছিলেন!

সবাই আতংক গ্রস্ত! ঝড় শুরু হওয়ার ঠিক আধা ঘন্টার মাথায় ঝনঝন করে খুব জোরে একটা শব্দ হল। বুঝলাম আমাদের গোয়াল ঘরের চাল উড়ে গিয়ে ক্ষেতের উপরে আছড়ে পড়েছে। তখন ভয়ে আমার পিলে চমকে যাওয়ার মত অবস্থা! আমাদের গোয়াল ঘর থেকে ক্ষেতের দূরত্ব প্রায় দুই'শ থেকে তিন'শ গজ। এতদূর অবধি একটা ঘরের চাল উড়িয়ে নিয়ে যাওয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। আসলে ভয়টা হল, সেই দুপুরের সময় আমাদের বড় ঘরের মত করে গোয়াল ঘরের চালেও কান্সন এঁটে ছিলাম। অথচ ঝড় শুরু হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই যখন সেটা টিকলো না, তখন বসত ঘরের চাল আর কতক্ষন টিকবে (?) এটা নিয়েই মনে ঘোর সন্দেহ দেখা দিল! আমরা তিনজনে তখন উচ্চশব্দে দোয়া কালাম পড়তে লাগলাম!

কিছুক্ষন পরপর গোয়াল ঘর থেকে আমাদের গরু দুইটার ভীত সন্ত্রস্থ অসহায় হাম্বা ডাকের শব্দ আমাদেরকে আরো বেশি বিচলিত করে তুলছিল! বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন, তিনি গরু গুলোকে এনে বসত ঘরে তুলবেন! নিরীহ প্রাণী হলেও তাদেরও তো আমাদের মত জীবন আছে! সারারাত যদি তারা এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে তাহলে তারা আর বাঁচবে না। বাবা ভীষণ সাহসী একজন মানুষ ছিলেন! অথচ তার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনে আম্মা কান্না থামিয়ে বাবার পায়ে উপরে গিয়ে পড়লেন! তাদের এই অবস্থা দেখে এবার আমার কান্নার পালা। আমি চিৎকার দিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম। আমার কান্নার শব্দ শুনে ছোট ভাই-বোন দু'টো হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে কোন কিছু না বুঝেই আমার সাথে মরা কান্না জুড়ে দিল! সম্ভাবত এতক্ষণ তারা ঘুমের মধ্যে কোন দুঃস্বপ্ন দেখছিল , আর নয়তো আমার হঠাৎ এমন কান্না দেখে হয়তো ভাবছিল বিপদ চরমে পৌঁছে গেছে।

আসলে অবস্থাটা তখন আউট অব কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছে। বাবা-মা আমাদেরকে যতই বুঝাতে চাচ্ছেন, আমাদের আর বুঝ আসছে না। এমন সময় বাইরের দরজার উপর হঠাৎ খটখট আওয়াজ শোনা গেল। আর সেই সাথে সাথে দরজা খোলার জন্য সেজ কাকুর তীব্রো আর্ত্মচিৎকার। বাইরে দমকা হাওয়ার ঝাপ্টা তখন ঘন্টায় ২১০ থেকে ২২০ কিঃ মিটার বেগে বয়ে চলেছে। বাবা দরজা খুলতেই কাকু ঘরে প্রবেশ করলেন। আর সাথে সাথে একরাশ দমকা জোরালো হাওয়া আমাদের রুমের মধ্যে ঢুকে রুমটা আন্দোলিত করে দিল। কাকুর পরনে লুঙ্গী! তবে সেটা মালকোঁচা মারা! কোমরে শক্ত করে গামছার প্যাঁচ দেওয়া। ঢুকেই জানতে চাইলেন, হঠাৎ এমন কান্দা-কাটার কারণ কি?

বাবা কাকুর কাছে স্ব-বিস্তার বর্ননা করলেন! তারপর দু'জনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন গরু দু'টোকে খুলে কাকুর গোয়ালে নিয়ে যাবেন! কাকুর গোয়াল ঘরটা এখনো পর্যন্ত বেশ ভাল আছে। তাছাড়া তখন এটা করা ছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না! সাথে সাথে আমরা ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম। বাবা ছাড়া ঘরের মধ্যে আমরা কিভাবে থাকবো? বিশেষ করে আম্মা তো একদম মুষড়ে পরলেন! তিনি বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও বাবা শুনলেন না। গরু দু'টোকে না বাঁচাতে পারলে তিনি নিজেকে চরম অপরাধী মনে করবেন। তাছাড়া সাথে যখন কাকু আছে, তখন আর কিসের ভয়? বাবার কথা শুনে মনে হচ্ছিল যেন, সাথে কাকু থাকলে তিনি এই মূহুর্ত্বে ভয়াল রাতকেও উপেক্ষা করে লঙ্কা জয় করে আসতে পারবেন। আসলে অনেক সময় এমনটা হয়। প্রচন্ড বিপদের সময় যদি সাথে কোন সাহসী মানুষ পাওয়া যায়, তাহলে নিজের সাহসটাও তখন অনেকাংশে বেড়ে যায়। আমাদেরকে ভালভাবে বুঝিয়ে কাকুকে সাথে নিয়ে বাবা সেই ঝড়ের মধ্যেই বাইরে বেরিয়ে পড়লেন। মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে করতে আমি উঠে জানলার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাদের কর্মকান্ড দেখতে লাগলাম।

বাবারও পরনে লুঙ্গী, সেটা মালকোঁচা দেওয়া! বাবার পা ঠকঠক করে কাঁপছে। কাকুও দেখলাম বাবার মতই ঠকঠক করে কাঁপছেন। দু'জনে কথা বলছেন বেশ অ-স্বাভাবিক কাঁপা কাঁপা স্বরে। তারা প্রথমে গরু দু'টোর দঁড়ি খুললেন। দঁড়ি খোলা টের পেয়ে গরু দু'টো ভীষণ ছোটা-ছুটি করতে লাগলো! তারপর তারা কোন রকমে গরুর দঁড়ি শক্ত করে ধরে কাকুদের গোয়াল ঘরের দিকে চলে গেলেন! হঠাৎ পাশের বাসা থেকে আমার চাচাত ভাই রাজু'র কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। সে আজান দিচ্ছে! আম্মা আমাকেও বললেন আজান দিতে। আমার পরনে তখন একটা থ্রি কোয়ার্টার! ঐ অবস্থাতেই অজু-গোছল ছাড়া দাঁড়িয়ে গেলাম আজান দিতে। আজান দেওয়াও শেষ, এমন সময় বাইরে আবারও হুড়মুড় করে শব্দ হল। আমি জানলার পর্দা ফাঁক করে দেখলাম, আমাদের মাটির তৈরি রান্না ঘরের দেওয়ালটা ধ্বসে পড়েছে।

বাবা বাইরে, অথচ তাকে দেখা যাচ্ছে না। সম্ভাবত এখনো তাদের গরু বাঁধা শেষ হয়নি। গরু দু'টোও আতংক গ্রস্থ হয়ে এমন ভাবে ছোটা-ছুটি করছিল যে, তাদেরকে ধরে রাখাটাই তখন দ্বায়। আম্মা হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠলেন। ঐ অবস্থাতেই তিনি বাইরে যেতে চাইলেন। বাবা বাইরে, তার ভয় লাগছিল; না জানি মানুষটার আবার বড় ধরনের কোন বিপদ ঘটে গেল কিনা। আমি কোন রকমে আম্মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে তার সেই পাগলামী থেকে নিবৃত করে রাখলাম। বাবার জন্য আমার নিজেরই ভীষণ কান্না পাচ্ছিল, কিন্তু কেন জানি না সেদিন আমি একদম অন্যরকম একটা মানুষ হয়ে গিয়েছিলাম। মাত্র পনের-ষোল বছর বয়সের একটা বালক, অথচ আমার কার্যকলাপ দেখে মনেই হচ্ছিল না; আমার বয়স মাত্র পনের বছর। মনে হচ্ছিল যেন, আমি ষাট-সত্তর বছর বয়সের একজন মুরুব্বি ব্যক্তি; যিনি কথা বলার সময়ও বিচার বিবেচনা করে কথা বলবেন।

এর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই বাবা ফিরে আসলেন। তার কোমরে গামছা দেখতে পেলাম না। জিজ্ঞাসা করতে বললেন- 'গামছা খুলে চোখ-মুখের পানি মুছতে গিয়ে হাত থেকে উড়ে গামছা চলে গেছে।' বুঝতে পারলাম বাইরের অবস্থাটা কি পরিমাণে ভয়াবহ! এভাবে রাত প্রায় দুইটা পর্যন্ত চলল। তারপর শুরু হল প্রলয় কান্ড! সারা গ্রামের মধ্যে তখন খালি মটমট করে শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছিল যেন ভয়ংকর দর্শন কোন দৈত্য তার তীব্রো আক্রশ মিটাচ্ছে আমাদের এই ছোট্ট গ্রামটার উপর! মাঝে-মাঝে তীব্রো ঝড় আর মূহুমূহু বজ্রপাতের শব্দকে ছাপিয়ে অসহায় মানুষের মূমুর্ষ আর্ত্মনাদ এবং গৃহপালিত জীব-জন্তুরের করুণ আর্ত্মচিৎকারও ভেসে আসছিল আমাদের কানে। কিন্তু ঐ মূহুর্ত্বে বাইরে বেরিয়ে দেখার মত কোন পরিবেশ ছিল না তখন। এই অবস্থায় বাইরে যেতে হলে স্বাক্ষাত মৃত্যুকে সাথে করে নিয়েই বের হতে হবে।

আমাদের চালের উপরেও কিছু গাছের ডাল-পালা ছিল। বুদ্ধিকরে বাবা সেগুলো আগেই কেটে রেখেছিলেন! সেজন্য আমাদের চালের উপরে ডাল-পালার ঝাপটা তুলনামূলক কিছুটা কম ছিল। চোখে একদমই ঘুম নেই! শুধু আমার না! আমার পিচ্চি ভাই-বোন দু'টোরও দেখলাম একই অবস্থা! তারা মায়ের আঁচলের নিচে বসে চোখ পিটপিট করে বাইরে তাকাচ্ছে। ঠিক পাখির বাসায় সদ্য জন্ম নেওয়া ছানা গুলো যেমন মায়ের বুকের ভিতর থেকে চোখ পিটপিট করে বাইরের দৃশ্য দেখতে চায়, তেমন।

আমার ভীষণ হাসি পেল। কিন্তু ঐ মূহুর্ত্বে তখন হাসার মত পরিবেশ ছিল না! অন্য সময় হলে হয়তো দাঁত কেলিয়ে হেসে ফেলতাম! তবে তখন হাসির থেকে সেই দৃশ্যটাই ছিল সব থেকে ভয়ের, সব থেকে আতংকের! বাইরে ঝড়ের গতি তখন কত ছিল জানার উপায় নেই। কাকু আসলে দরজা খোলার সময় যে ঝড়ের একটা ঝাপ্টা এসেছিল, সেটাতেই রেডিও উল্টে পড়ে গিয়ে সেটা একদম অকেজো হয়ে গেছে। বাবা কিছুক্ষন ধরে ঝাকা-ঝাকি করেও যখন সেটা আর বাজাতে পারলেন না, তখন রাগ করে মাটিতে আছাড় দিয়ে তার অবস্থা আরো খারাপ করে ফেলেছেন! এখন সেটা চালু করলে ভিতর থেকে কেবল কূঞঊঈ....... জাতীয় এক ধরনের শব্দ বের হচ্ছে। তার মানে সম্ভাবত সেও ঝড়ের ভয়ে বাঁজতে নারাজ!

ভাঙা রেডিও নিয়ে বাবাকে এমন ঝাঁকা-ঝাঁকি করতে দেখে ছোট বোনটা সেই ভয়ের মধ্যেই হঠাৎ খিলখিল করে হেসে উঠলো। বাবা কটমট করে তাকালেন তার দিকে! বাবার চোখের দিকে তাকিয়ে সে আবারও চুপসে গেল। তবে বাবার তাকানোর ভঙ্গীটা ভয় পাওয়ানোর জন্য হলেও, আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছিল; সেই দৃশ্যটার মধ্যে শাষনের থেকে বেশি ছিল করুণ মিনতির চিহ্ন। অর্থাৎ বাবার চোখের ভাষাটা যদি পড়া যেত, তাহলে তার সারমর্মটা হয়তো অনেকটাই এরকম কিছু আসতো- "মা'রে, বিপদের সময় এমন ভাবে হাসতে নেই! হাসলে তাতে বিপদ আরো বাড়ে!"

রাত তখন তিনটা বাজে। ঘুমে আমার দু'চোখ জড়িয়ে আসতে লাগলো। কিন্তু প্রচন্ড আতঙ্কের মধ্যে ঘুমাতেও পারছিলাম না। খালি মনে হচ্ছিল, একবার ঘুমিয়ে পড়লে সেই ঘুম যদি আর না ভাঙে? পৃথিবীতে এমন অসংখ্য রেকর্ড আছে! রাত্রে সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন, অথচ সকালে তাকে আর জীবিত উঠানো সম্ভব হয়নি। উঠাতে হয়েছে তার লাশ! এমনকি আমার এক আত্মীয়ও ঠিক একই ভাবে মারা গিয়েছিলেন। রাত্রে তিনি সবার সাথে গল্প-গুজব, খাওয়া-দাওয়া করার পরে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে বিছানায় গেলেন ঘুমাতে! অথচ সকালে এত ডাকা-ডাকির পরেও তার আর ঘুম ভাঙে না। পরে ঘরের দরজা ভেঙে দেখা গেল, তিনি বিছানায় মরে পড়ে আছেন। ডাক্তার এসে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে বললেন- 'হার্ট স্ট্রোক করে মারা গেছেন। মৃত্যুর সময় আনুমানিক রাত দুইটা থেকে তিনটা!'

বাতাসের বেগ তখন কিছুটা কমে এসেছে। চোখ পিটপিট করতে করতে ছোট ভাই-বোন দু'টো যে আবার কখন মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে, সেটা খেয়ালই করিনি। এখন তাদের চেহারাটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। একদম মায়াময় মন কাড়া চেহারা। শুনেছি ঘুমানোর পরে সব মানুষের চেহারার মধ্যেই নাকি একধরনের মায়া মায়া ভাব বিরাজ করে। আজ তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেলাম! মা লম্বা করে আঁচল বিছিয়ে তাদের দু'জনেরই পা ঢেকে দিয়েছেন। তারপর তাদের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বিড়বিড় করছেন। সম্ভাবত তিনি দোয়া দরুদ পড়ছিলেন। আমিও তাদের মত করে মায়ের উঁরুর উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লাম। আম্মা আমার মাথার উপরে হাত বুলাতে বুলাতে বললেন, 'ঘুমিয়ে পড়! যা হওয়ার হবে! মনে হয় ঝড় এবার একটু কমতে শুরু করেছে।' আমি কিছু বললাম না, চোখ বুজে শুয়ে রইলাম! আসলে বলবোটাই বা কি? কিছুই তো বলার নেই!

সকালে ঘুম ভাংলো মায়ের ডাকে! তখন সকাল প্রায় নয়টা সাড়ে নয়টা বাজে! বাইরে এসে দেখলাম আকাশ একদম পরিষ্কার! ঝলমলে রোদ উঠেছে। দেখে মনে হচ্ছে যেন গতকালকের রাতটা ছিল একটা দুঃস্বপ্ন! দুঃস্বপ্ন কেটে গিয়ে মানুষের ঘুম ভাংলে যে রকম অবস্থা হয়, এখন আমার অবস্থাও ঠিক সেরকম! গতকাল রাত্রে যে এই গ্রামের উপর দিয়ে একটা প্রলয় কান্ড ঘটে গেছে, আশেপাশের দৃশ্যটা না থাকলে হয়তো সেটা বিশ্বাসই করতে পারতাম না! চারিদিকটা একদম ফকফকা! মনে হচ্ছিল আমাদের সাঁজানো গ্রামটা যেন হঠাৎ কোন এক পিচাশ দৈত্যের আক্রশে পড়ে খন্ড-বিখন্ড হয়ে গেছে। চারিদিকে গাছ, গাছের ডাল-পালা ভেঙে পড়ে আছে। মৃত জীব-জন্তুরের দেহ অসহায় ভাবে পড়ে আছে বাড়ির আঙিনায়, পথে ঘাটে। দেখে চোখে পানি চলে আসার মত অবস্থা!

আজ সিডরের নয় বছর হতে চলল। অথচ এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আজও সেই রাতের স্মৃতি আমাকে তাড়া করে নিয়ে বেড়ায়! আজও ঘুমের ঘরে সেই রাতের স্মৃতিকে মনে করে গভীর রাতে দুঃস্বপ্নের মধ্যে মা বলে ডুকরে কেঁদে উঠি! কোল বালিশ জাপটে ধরে সেই প্রচন্ড ভয়কে তাড়ানোর চেষ্টা করি। চোখ বন্ধ করলেই শুনতে পাই, সেই রাত্রের তীব্রো ঝড়ের শো শো শব্দ আর গগন বিদারী কান ফাঁটানো বজ্রপাতের পিলে চমকানো আওয়াজ। ভুলতে পারবো কিনা জানি না, হয়তো পারবো না! আসলে ভুলতে পারার মত কোন স্মৃতি যে সেদিন ছিল না! শুধু আমি কেন, আমার মত হাজারও যুবক হয়তো সেই রাতের স্মৃতিকে চাইলেও আর ভুলতে পারবে না! যে স্মৃতি একবার হৃদয়ের দৃশ্যপটে গাঁথা হয়ে যায়, আসলেই কি তাকে আর চাইলেও ভুলে থাকা যায়.......?

অফটপিকঃ- আলোচ্য ঘটনাটি আমার ডায়েরির পাতা থেকে নিয়ে পাঠকের জন্য সু-পাঠ্য করার লক্ষে কিছুটা পরিমার্জিত করে বাকিটা হুবহু এখানে উঠিয়ে দেওয়া হল!

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!

মন্তব্য ৪২ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৪২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

এ এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতাবাদ! এবার বুঝলাম কেন আপনার নিক সাহসী সন্তান!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৬

সাহসী সন্তান বলেছেন: সে তো অবশ্যই! তবে এই ধরনের ঘটনা গুলো আসলে যতটা না অভিজ্ঞতার, তার থেকে বেশি ভীতিকর! সারাক্ষন জীবন মুঠোর মধ্যে করে নিয়ে চলতে হয়, এই বুঝি মরলাম; এই বুঝি মরলাম মত অবস্থা!

মন্তব্যটা দেখে প্রথমে হাসব না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না! অনেকদিন পর আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগলো!

ভাল থাকবেন ব্রাদার এবং শুভ কামনা জানবেন!

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম!!!

অসাধারন বর্ণনায় আতংককে যথাযথ তুলে ধরতে পেরেছেন। বলিই বোধকরি মাঝখানে আবেগে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছিল!

ঢাকায় থাকলেও খুব টেনশনে ছিলাম উপকূলবাসীর চিন্তায়। সারা রাত রেডিও অন ছিল! আর মনে মনে দোয়া।

আসলেই এমন অভিজ্ঞতা শত চাইলেও ভোলার নয়! ভোলা যায় না।

আমাদের উদ্ভট সংস্কৃততি জীবনের এই বাস্তবতাগুলো বারবারই উপেক্ষিত হয়!!!!! অবাক লাগে!!

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৫

সাহসী সন্তান বলেছেন: আমি তখন ছুটিতে বাড়ি ছিলাম। সেইদিনই আমার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বাবা-মা নিষেধ করায় আর যেতে পারিনি! তবে সে রাতের যে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছিলাম, আজও চোখ বন্ধ করলে যেন সেটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে! :(

পোস্টে আবেগ রেখেছিলাম পাঠক যাতে পড়তে পড়তে বোরিং ফিল না করে সেজন্য! তবে আপনার মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে, কিছুটা হলেও আমি সেটা পেরেছি!

চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভৃগু ভাই! শুভ কামনা জানবেন!

৩| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪

করুণাধারা বলেছেন: ভয়ংকর রাতের বর্ণনা সুন্দর। একটানে পড়ে গেলাম।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৮

সাহসী সন্তান বলেছেন: ধন্যবাদ করুণাধারা! শুভ কামনা রইলো!

৪| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

আহমেদ জী এস বলেছেন: সাহসী সন্তান ,



বর্ণনার চমৎকারীত্বে একটি রাতের ভয়াল অভিজ্ঞতা যথার্থই ফুটিয়ে তুলেছেন ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৮

সাহসী সন্তান বলেছেন: পোস্টটা পড়ে সুন্দর একটা কম্পিলিমেন্ট জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জীএস ভাই! শুভ কামনা রইলো!

৫| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৩

পৌষ বলেছেন: আপনারা ছিলেন স্পটে। আমি আমি ছিলাম ডিউটিতে অর্থাৎ আবহাওয়া অফিসে। সেদিন আমরা অফিস থেকেই বুঝতে পারছিলাম কি ঘটতে যাচ্ছে সেখানে। আসলে ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা। ধন্যবাদ আপনাকে সেদিনের ঘটনা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৮

সাহসী সন্তান বলেছেন: আসলেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা! বাস্তব জীবনে ভাল/মন্দ মিলিয়ে নানা রকমের অভিজ্ঞতার সম্মূখিন হয়েছি, তবে সেদিনকার স্মৃতিটাই ছিল একটু অন্যরকম! সম্ভাবত সেই ঝড়টাই ছিল আমার জীবনের প্রথম দেখা কোন প্রলয়ংকারি ঘূর্ণিঝড়, তাই হয়তো আজও তার স্মৃতিকে ভুলতে পারিনি!

আমি স্পটে থাকলেও আপনাদের শঙ্কাটাও যে কি পরিমানে ছিল সেটা খুব ভাল ভাবেই বুঝতে পারছি! আসলে চাক্ষুস বিপদের মুখোমুখি দাঁড়ালে যতটা না মনে সাহস পাওয়া যায়, তার থেকে বেশি ভয় পেতে হয় কন্ট্রোলিং রুমের দ্বায়ীত্বে থাকলে। সব সময় মনে ভয় থাকে, এই বুঝি কোন দুঃসংবাদ শুনবো; কিংবা বড় ধরনের কোন বিপদের খবর এসে মনটাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে তুলবে!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ পৌষ! শুভ কামনা জানবেন!

৬| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৭

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: যেন ডুব দিলাম সাস। খুব খারাপ একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে নিলেন পাঠকদের। আপনার ছোটছোট ভাইবোন দুটো কেমন আছে?


আপনি আমার থেকে মাত্র ১ বছর সিনিয়র। মাত্র ১ বছর।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০২

সাহসী সন্তান বলেছেন: রাজপুত্র মিসটেক কইরালচি! আপনি আমার থেকে মাত্র ১ বছর সিনিয়র। মাত্র ১ বছর। - আপনার এই কথাটুকুর মধ্যেই ত্যাবড়ে-প্যাঁচ খাইছে! মানে আমি ভাবছিলাম আপনি বুঝি আমার সিনিয়র, অথচ দেখা যাইতেছে ঘটনার তার উল্টো! ;)

সে যাহোক, সিনিয়র যখন হইলাম, তখন কথা-বার্তাও ভাজ কইরা কইবেন! সিনিয়রগো লগে কিন্তু আমল দিয়া কথা কইতে হয় বুঝছেন? একবছরের সিনিয়র হই আর একদিনের সিনিয়র হই, সিনিয়র তো সিনিয়রই! সুতরাং এখন থেকে সামনা-সামনি দেখা হইলে সালাম-কালাম দিবেন, বড় ভাইগো কিছু লাগবো-টাগবো কিনা শুনবেন, ঠিকাচে? :P

৭| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৯

প্রামানিক বলেছেন: গত কাল মন্তব্য করার চেষ্টা করেছিলাম পারি নাই।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯

সাহসী সন্তান বলেছেন: ব্যাপার না, আজ তো করলেন! আপনাদের মত মেধাবী ব্লগারদের সামান্য মন্তব্যও আমাকে দারুণ ভাবে উৎসাহিত করে! ধন্যবাদ কষ্ট করে মন্তব্য করার জন্য!

শুভ কামনা প্রামানিক ভাই!

৮| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ঘটনাটি শরুটা কিছু টিভিতে দেখতে পারছিলাম লাইভ, তারপর শুধু দোয়া করে গেলাম । সারা রাত জাগা ছিলাম কি ঘটেছে জানার জন্য কেননা তিনঘন্টা পিছানো দেশে থাকি এখানে যখন সকাল ৭ তখন আমাদের বাংলাদেশে ১০ টিভি অনকরতেই দেখি ভয়াল সেই দূ:ঘটনাতে কবলিত মানুষের আহাজারি, তার বেশ কিছু বছর পরে আপনার স্বচোখে অবলোকিত ঘনটার বর্ননায় আবার ও মনে করিয়ে দিল । আল্লাহ বিপদ গ্রস্থসবার সহায় থাকুক। আপনি ও ভাল থাকবেন।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৬

সাহসী সন্তান বলেছেন: চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ সুজন ভাই! আসলে আমার জীবনের প্রথম দেখা কোন প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ছিল সেটাই! সত্যি কথা বলতে, সেই রাতের প্রত্যেকটা দৃশ্যই এতবেশি হৃদয় বিদারক ছিল যে; চাইলেও এখনো মন থেকে সেগুলো দূর করতে পারি না। :(

শুধু ঝড়ের সময়ের দৃশ্য না! ঝড় শুরু হওয়ার আগে মানুষের চেহারার মধ্যে যে একটা ভীতিকর পরিবেশের ছাপ বিরাজ করে, সেই দৃশ্যটা দেখলেই সব থেকে বেশি খারাপ লাগে!

আমি ভাল আছি, দোয়া রইলো যেন আপনিও ভাল থাকেন! সেই সাথে শুভ কামনা!

৯| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৪:১৫

কালীদাস বলেছেন: একটা ঝড় ছিল ঐ সিডর। আপনার বাড়ি কোথায়? উপকূলীয় অঞ্চলেই মনে হচ্ছে লেখা পড়ে....

আমি তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, ফোর্থ ইয়ার মাত্র শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ছিল সেদিন মনে আছে এখনও। দুপুর থেকে টিপটিপ বৃষ্টির শুরু বিকালের পর থেকে মাঝে মাঝে দমকা হাওয়া সহ থেমে থেমে জোরে হচ্ছিল। ডিবেটিং সোসাইটির সেশনে অনলবর্ষী বকরবকর করে শাহবাগের মোড়ে রিকশা খুঁজতে খুঁজতে বাসার দিকে হাঁটা দিয়েছিলাম রাত ৮টার দিকে। যথারীতি সেদিনও ছাতা ছিল না, ভিজে ভিজেই ফিরছিলাম। পিঠে বাতাসের জোর ধাক্কাগুলোতে টের পাচ্ছিলাম যে এটা কোন সাধারণ ঝড় না। পরেরদিন সকালে পেপার খুলে বুঝলাম কতবড় বিপদ গেছে উপকূলে :(

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৫২

সাহসী সন্তান বলেছেন: হুম, আমার দেশের বাড়ি সর্বদক্ষিনের উপকূলীয় অঞ্চলেই! একদম সুন্দরবনের পাশে! আপনি তো আমার অনেক সিনিয়র! আমি তখন সবে মাত্র এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম! বাবার কর্মস্থল ছিল যশোর, সপ্তম শ্রেনী থেকে সেখানেই লেখাপড়া করতাম! তবে ছুটিতে সেদিন গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলাম!

আসলে ঝড় শুরু হওয়ার দিন দুপুর থেকেই পরিবেশটা সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে থাকে! আমার খুব ভালমত মনে আছে, দুপুর একটার দিকে সংকেত চলছিল ৫ নং, ঠিক তার কিছুক্ষনের মধ্যেই সংকেত ৬ কে ডিনাই করে একলাফে ৭ নং মহাবিপদ সংকেতে চলে আসে।

তখনই বুঝতে পারছিলাম, নিশ্চই খুব ভয়াবহ ধরনের কোন দূর্ঘটনা কিছু ঘটতে চলেছে! আর তার পরে কি ঘটেছিল না ঘটেছিল সবই তো টিভি বা সংবাদ পত্রের বদৌলতে নিশ্চই জানেন!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ কালীদাস ভাই! শুভ কামনা জানবেন!

১০| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪

ক্লে ডল বলেছেন: আপনার প্রাণবন্ত বর্ণনায় সে রাত্রির ভয়ংকর তান্ডব দারুনভাবে দৃশ্যমান।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬

সাহসী সন্তান বলেছেন: ধন্যবাদ ক্লে ডল! শুভ কামনা জানবেন!

১১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯

নীলপরি বলেছেন: সত্যিই ভয়াল রাত ! আপনার রূদ্ধশ্বাস বর্ণনা রূদ্ধশ্বাসে পড়লাম । আমার সবথেকে টাচিং লাগলো গরুদের অন্য গোয়ালে প্রতিস্থাপনের জায়গাটা । অসম্ভব মানবিক । যেটার বর্তমানে কিছুটা অভাব দেখা দিয়েছে ।

আর এই লেখা পড়ার সময় টাইপো নিয়ে ভাবার সময় কারো থাকবে বলে মনে হয় না ! তাই বিশেষ দ্রষ্টব্যটা না দিলেও বোধহয় চলত । :)
পোষ্টে ++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
শুভকামনা ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪

সাহসী সন্তান বলেছেন: এখন কি আর কেউ মানবিক বা অ-মানবিক বিষয় গুলো নিয়ে ভাবে নীলপরি? এখন তো সবাই নিজেদের আখের গোছানোর তালেই ব্যস্ত! যেখানে মানুষই মানুষকে নিয়ে ভাবে না, সেখানে অবলা গৃহপালিত জীব-জন্তুর গুলো তো ফোর সাবজেক্ট! :(

আর বিশেষ দ্রষ্টব্যের ব্যাপারটা হলো অনেকটা সিগারেটের প্যাকেটের গায়ে লেখা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের মত! যে খাবে তার জন্যেও সতর্কতা, যে না খাবে তার জন্যেও সতর্কতা! এমনিতেও বাংলা লিখতে গেলে আমার প্রচুর পরিমাণে ভুল হয়! অনেকে আছে ভুলটা না ধরিয়ে দিয়ে উল্টা-পাল্টা কথা বলে! ঐ লেখাটা কেবল মাত্র তাদের জন্যই প্রযোজ্য!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! শুভ কামনা জানবেন!

১২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫

প্রামানিক বলেছেন: মন্তব্য করার চেষ্টা করি কিন্তু ব্লগ স্লো হওয়ার জন্য অনেক সময় সম্ভব হয় না।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০

সাহসী সন্তান বলেছেন: সেটা জানি ভাই! আমি নিজেও এটার উপরে খুবই বিরক্ত! খুব ইচ্ছা করে অবসর সময়টা আপনাদের সাথে ব্লগে কাটাইতে! কিন্তু ব্লগ যেভাবে কচ্ছপের গতিতে এগুচ্ছে, তাতে চাইলেও এখানে আসতে বা থাকতে ইচ্ছা করে না! :(

জানি না ব্লগের এই রোগটা কবে সারবে, কিংবা আদৌ সারবে কিনা! তবে আমাদের যখন অপেক্ষা করার পালা তখন অপেক্ষা করে দেখি, কবে নাগাদ আমরা এই দূর্যোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি!

১৩| ১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



আগামীতে এ ধরণের কিছু ঘটলে, মানুষকে রক্ষার কি কি ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে সিডর এলাকায়?

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২১

সাহসী সন্তান বলেছেন: জানা মতে সেই ধরনের কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি উক্ত এলাকায়! আরো বরং সিডরের সময় বিদেশী যে ত্রাণ সামগ্রী গুলো এসেছিল, সেগুলো প্রভাবশালীরা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছিল! আমার মনে হয়, এখনো পর্যন্ত উক্ত এলাকার নেতা-খেতাদের বাড়িতে সার্চ করলে ত্রাণের উদ্দেশ্যে দেওয়া অসংখ্য তেরপলের হদিশ পাওয়া যাবে সেখানে!

শুনেছিলাম সিডর কবোলিত এলাকায় বিদেশী যে ত্রাণ সামগ্রী গুলো এসেছিল, সেগুলো যদি গোটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হতো, তাহলে প্রত্যেকেই কয়েক লক্ষ টাকা করে পেত! অথচ উক্ত অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষেরই পূর্বের ন্যায় এখনো পর্যন্ত নুণ আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা!

যাহোক, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! শুভ কামনা!

১৪| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৮

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
মন্তব্যখানা প্রসব করিতে পারিলাম না। উপযুক্ত জায়গা লাগিবেক। তদবধি প্রসব যন্ত্রণাই সই।

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২২

সাহসী সন্তান বলেছেন: ভাইজান, ডেলিভারি পেইনটা কিন্তু খুবই সাংঘাতিক একটা পেইন! ঐ পেইনে একবার আমার দাদুও এ্যাটার্ক হইছিলেন! :P সুতরাং এইভাবে চাইপ্প্যা রাইখা আপনি নিজেকে কষ্ট দিয়েন না, আর সেই সাথে সাথে পুরো ব্লগ বাসিকেও কষ্টে ফেলাইয়েন না; আপনার দোহায় লাগে! ;)

জায়গার অভাব হইলে প্রয়োজনে আপনার জন্য পুরো আমাজান মহাবন খরিদ কইরা আনুম! নো টেনশন! তয় এখন আপনি খালি কন, বর্তমানে আপনার পেইনের অবস্থা কি...... ;)

১৫| ২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:৩৫

জুন বলেছেন: সাহসী লেখাটি প্রকাশের সাথে সাথেই পড়েছি। আমি যে কিছু বলিনি সেই ভয়াল রাতে তোমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখাটিতে তা মাথায়ই ছিলোনা।
বরিশালের বিশাল বলেশ্বর নদ দিয়ে সুন্দরবন সহ উপকূল এলাকায় আঘাত হানা সেই সিডরের দাগ আজও মানুষের মন আর প্রকৃতি থেকে সম্পুর্ন মুছে যায়নি তার প্রমান এই লেখাটি সাহসী।
চোখের সামনে ভেসে উঠলো সেই মিষ্টি বাবুর ছবি যার জন্ম হয়েছিল সেই দুর্যোগের রাতে । যার আপনজনরা নাম রেখেছিল সিডর ।
অনেক ভালোলাগা রইলো লেখায় ।
+

২০ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০১

সাহসী সন্তান বলেছেন: সমস্যা নেই তো আপু! দেরিতে হলেও বলেছেন সেটাতেই আমি খুশি! তাছাড়া অনেক সময় দেখার ভুলেও অনেক পোস্ট মিস হয়ে যায়, এটা কোন ব্যাপার না! আপনি মন্তব্য না করলেও আমি কিছু মনে করতাম না! কারণ কেউ আমার পোস্টটা পড়ছে সেটাতেই আমি খুশি, জানিয়ে যাওয়া না যাওয়াটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার!

আর পরের কথা গুলোর ব্যাপারে কিছু বলার নাই! আমরা সবাই কম/বেশি জানি সিডর বাংলাদেশের উপরে কতটা ধ্বংস যজ্ঞ চালিয়েছিল, সুতরাং বাড়তি করে আর কিই বা বলরো!

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! শুভ কামনা আপু!

১৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


১৯৬৩ সালে এ ধরণের ২টি ঝড় হয়েছিল চট্গ্রাম ও নোয়াখালীতে; প্রথমটা হওয়ার ২১ দিন পর ২য়টি; এরপর ১৯৭০ সালেট ঝড়; ৩টি'তে আমি ছিলাম; পরিবার ও পড়শীদের সাহায্য করতে হয়েছিল।

২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:২৫

সাহসী সন্তান বলেছেন: আমার কাছে ঝড়-বৃষ্টির থেকে বজ্রপাতটাকেই সব থেকে বেশি ভয় লাগে! কোন কারণ ছাড়াই হুড়মুড় করে গায়ের উপর পড়ে একদম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে যায়! তবে ভয়াবহ ঝড় জীবনে ঐটাই প্রথম! :(

আপনার স্মৃতিচারণটাও ভাল লাগলো! শুভ কামনা জানবেন!

১৭| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে আঘাতহানা প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের সপ্তম বর্ষপূতিতে গুরুত্বপুর্ণ একটি বিষয়কে মর্মস্পর্শী গল্পের আকারে অআমাদের সন্মুখে তুলে ধরার জন্য রইল অনেক ধন্যবাদ অ কি করে ভুলি এই দিনে বাগেরহাটসহ উপকূলের জনপদে আঘাত হানে সুপার সাইক্লোন সিডর। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপকূলীয় এলাকা। ঘন্টায় ২৪০ কিলোমিটার গতিবেগে ছুঁটে আসা বাতাস (ঝড়) আর বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা জলোচ্ছ্বাসে মুহূর্তে মৃত্যু পুরিতে পরিণত হয় উপকূলের জনপদ। প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার সে জলোচ্ছ্বাস সেদিন ভাসিয়ে নেয় এ জনপদের সর্বস্য।এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমন অনেক ক্ষত তৈরি করে আমাদের জীবনে, যা কখনো মুছে যায় না। যে পরিবারগুলো তাদের স্বজন হারিয়েছে বা যাঁরা আহত হয়ে বেঁচে গেছেন, তাঁদের সারা জীবনই বয়ে বেড়াতে হবে এ যন্ত্রণা। কিন্তু যে ক্ষতগুলো সারানো সম্ভব, সেগুলো যদি এখনো দৃশ্যমান থাকে, তবে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হেনেছিল আজ থেকে সাত বছর আগে, সেই সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোর অনেকাংশ এখনো মেরামত করা হয়নি। এর দুর্ভোগ এখনো বয়ে বেড়াতে হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর লোকজনকে।
কামনা করি আপনার এ লিখার গুণে সংস্লিস্টদের স্মৃতিতে জেগে উঠোক প্রয়োজনীয় কর্মদ্যোমের স্পৃহা ।
শুভেচ্ছা রইল ।

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭

সাহসী সন্তান বলেছেন: ডঃ আলী, আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ! আসলেই তাই, সেদিনের সেই দূর্বিষহ জীবন নিয়ে আজও বয়ে বেড়াচ্ছে উপকূলিয় অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই! অথচ কর্তৃপক্ষের সেদিকে যেন কোন ভ্রুক্ষেপই নেই! :(

জাস্ট একটা উদাহরণ দিই! আমাদের পাশের এলাকায় বেড়িবাঁধের সাথে একটা সুইচ গেট লাগানো আছে! ২০০৭ সালে সিডরের আঘাতে সেটাও দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং বেড়িবাঁধও নষ্ট হয়ে যায়! অথচ পরবর্তিতে সেটাকে এমনভাবে মেরামত করা হইছে যে, বর্তমান সময়ে একটু ঝড় তুফান উঠলেই সেই বেড়িবাঁধ ভেঙে নিমেষেই স্থানীয় এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়!

তাহলে বোঝেন অবস্থা! এমন হাজারও উদাহরণ দেওয়া যাবে অথচ যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন সেগুলো দেখেও দেখে না! যাহোক কি আর করা! ইশ্বর যে থাকেন ঐ ভদ্র পল্লিতে! তার কি আর কাঁদা-পানির মানুষের দিকে খেয়াল করার সময় আছে? :(

আর একটা কথা, ২০১৬ সালটা ছিল সিডরের নবম বর্ষপূর্তি, সপ্তম নয়!
শুভ কামনা জানবেন!

১৮| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ , বয়স হইছেত হিসাবে ভুল হয়ে যায়, মনে হয় সিডরের প্রভাব রয়ে গেছে !!! অাপনার এলাকার ভেরী বাধের স্লুইচ গেটগুলি ভালমতে মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন হোক এ কামনাই করি ।
শুভেচ্ছা রইল

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২২

সাহসী সন্তান বলেছেন: হা হা হা, ব্যাপার না! আমরা আমরাই তো..... ;)

পূনঃ মন্তব্যে আপনার জন্যেও শুভেচ্ছা রইল!

১৯| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ , প্রিত হলাম কথা শুনে :)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৫

সাহসী সন্তান বলেছেন: আপনাকে প্রিত করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে..... :)

২০| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৪৮

প্রামানিক বলেছেন: লেখাটি প্রিয়তে ছিল আজ পুরোটা খুঁটে খুঁটে পড়লাম। বিপদগ্রস্থ জীবনের ভয়াবহ রাতের কাহিনী পড়ে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছিল। ভয়াল রাতের কাহিনী সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। ঘটনাটি লেখার জন্য ধন্যবাদ।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯

সাহসী সন্তান বলেছেন: আপনি যে আমার এই অতি ক্ষুদ্র লেখাটি মনযোগ সহকারে পড়েছেন, সেটা জেনে সত্যিই খুব ভাল লাগছে প্রামানিক ভাই! বরাবরই আপনার মন্তব্য আমাকে খুবই উৎসাহ যোগায়! আপনার কাছে খুবই কৃতজ্ঞ! কাহিনীটা আপনার মনে যে ফিলিংস তৈরি করতে পেরেছে সেটা জেনে আমি আনন্দিত!

অনেক অনেক শুভ কামনা প্রামানিক ভাই! ভাল থাকবেন!

২১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৫

জাহিদ অনিক বলেছেন: ২০০৭ এর সিডর ! সেই ভয়াবহ স্মৃতি । আমিও তখন বাড়িতে ছিলাম । অনেক দিন বাদে আবার সেই ভয়াল স্মৃতি মনে পড়ে গেল ।
২০০৭ এর পরে বিপদ সংকেত ৬ এর উপরে উঠলেই বাড়িতে খোজ নেয়া শুরু হয়ে যায়। এলাকার আবহাওয়া কেমন ? নদীর পানি বেড়েছে কি না !
সিডর এর হাত থেকে বেচে যাওয়া সকল মানুষ একেকজন সাহসী সন্তান ।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৮

সাহসী সন্তান বলেছেন: আপনিও সিডর কবলিত এলাকার মানুষ জেনে ভাললাগার থেকে খারাপ লাগাটাই এখন কাজ করছে সব থেকে বেশি। আসলে আমি নিজ চোখে সিডরের যে ধ্বংসলীলা দেখেছি, সেটা থেকেই বুঝতে পেরেছি এর স্মৃতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে। :(

মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ! শুভ কামনা রইলো!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.