নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধচোখে তাকাই, চোখাচোখি হয়.... দেখা হয়না কখনো, কোনদিন......

স্বপ্ন সতীর্থ

কাউকে না কাউকে হেরে যেতে হয়, নয়তো বিজয়ী বলে কিছু থাকত না......

স্বপ্ন সতীর্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ও আমার নিথুয়া

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ২:৫৭

চোখ বন্ধ করে বসে আছি আমি। বসে থাকলেও স্থির নেই। রাস্তায় চলছি। কিছুক্ষণ আগেই রিকশায় উঠেছি। চকচকে নীল শার্ট গায়ে চাপানো রিকশাওয়ালার। রিকশা পাচ্ছিলাম না অনেকক্ষণ। ভিসি চত্বরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। একটু দূরেই লম্বা চুলের বেণী দুলাতে দুলাতে আইসক্রিম খাচ্ছিল এক তরুণী। খুব আয়েশ করে চোখ বন্ধ করে আইস্ক্রিম খাচ্ছিল। দেখে আমারও লোভ হলো। আইস্ক্রিম খাওয়ার না। ও জিনিস খেতে পারি না আমি। গলা বসে যায়। ইচ্ছে করছে মেয়েটার মতো চোখ বন্ধ করে থাকি। দুচোখ বন্ধ করে ফেললাম। দাঁড়িয়ে আছি। রিকশার টুংটাং, গাড়ির হর্ন, মানুষের কথা ভেসে আসতে লাগলো। বেশ আনন্দ পাওয়া যাচ্ছে।

- "মামা কই যাবেন?" রিকশাওয়ালার ডাকে চোখ মেলে তাকালাম। গন্তব্য বলতেই জানালেন সেখানেই যাবেন তিনি। রিকশা জমা দিয়ে দিবেন। ভাড়া বললেন নিজেই। স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে অনেক কম। আমিও উঠে বসলাম। কী মনে করে যেন হলুদ পাঞ্জাবি পরে বের হয়েছি আজ। ঝকঝকে নীল আকাশের নিচে হলুদ পাঞ্জাবি পরে নীল রিকশায় চড়ে যাচ্ছি। রিকশাওয়ালার নীল শার্ট ঘামে ভিজে জবজব করছে। রঙ পাল্টে কেমন ধূসর হয়ে গেছে ঘামে ভেজা অংশটুকু। পাশ ঘেঁষে আরেকটি রিকশা যাচ্ছে। একটি বাচ্চা ছেলে তার মায়ের কোলে বসে খেলনা গাড়ি রঙ করছে মার্কার দিয়ে। আমি তাকাতেই ফোকলা দাঁতে ফিক করে হেসে দিল। কোন কারণ ছাড়াই পুলক লাগলো। যদিও কিছুক্ষণ আগেই মন খারাপের মতো একটা ঘটনা ঘটিয়ে এসেছি।

গিয়েছিলাম গুলিস্তান। পাতাল মার্কেট থেকে মোবাইলের লেন্স কিনে এনেছি কয়েকটা। যাদের জন্য এনেছি তাদের কাউকে পাইনি। অনেকক্ষণ বসে ছিলাম টিএসসিতে। হুট করে মনে হলো কলাভবনের দিকে গেলে একজনকে পাওয়া যাবে। উঠে হাঁটা শুরু করলাম। অপরাজেয় বাংলা পার হতেই তার সাথে দেখা। অদ্ভুত! এমন ঘটনা আগেও বেশ কবার ঘটেছে। ইনটুইশন খুব কাজে লেগে যায় মাঝমধ্যে। এবারও তাই হয়েছে।

তার হাতে লেন্সটা দিতে গিয়ে বাঁধল বিপত্তি। কোন মতেই সে নেবে না। চোখে মুখে কেমন বিব্রত ভাব। যেন সামনে থেকে পালাতে পারলে বাঁচে। আমারও অস্বস্তি হচ্ছিল খানিকটা। তবুও জোর করেই দিয়ে এলাম লেন্সটা। মানুষটা অসাধারণ ছবি তোলেন মোবাইলে। একটা লেন্স উপহার দেব ভেবে রেখেছিলাম বেশ কয়েকদিন আগে। লেন্স কোন মতে হাতে ধরিয়ে দিয়ে আমিই পালিয়ে চলে এলাম বলা যায়। এরপর থেকে মনের মধ্যে কেমন একটা খচখচ করতে। মন বলছে উপহার দিয়ে খুশি করতে গিয়ে তার মনটাই না খারাপ করে দিলাম।

চোখ মেলে তাকালাম। রিকশা আটকে আছে সিগনালে। হাতিরপুল বাজারের এই সিগনালে সবসময় জ্যাম লেগে থাকে। আমার পাশে একটা রিকশা এসে দাঁড়ালো। মন ভালো করার মতো ব্যাপার। দুজন তরুণ-তরুণী বসে আছে। মেয়েটির হাতে একটি বই। আবুল হাসানের কবিতার বই 'পায়ের নিচে বুকের কাছে'। মেয়েটি বইটি মেলে আছে। পড়ে পড়ে শোনাচ্ছে। ছেলেটেইও যথেষ্ট মন দিয়ে শুনছে কবিতা। বাহ! ভালো লাগার মতো দৃশ্য।

আমি আবার চোখ বন্ধ করলাম। মেয়েটি কবিতা পড়ছে শুনছি। কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে পড়ছি কবিতা শুনতে শুনতে। মেয়েটি পড়ে দারুণ।

"এ ভ্রমণ আর কিছু নয়, কেবল তোমার কাছে যাওয়া
এখন তোমার কাছে যাব
তোমার ভিতরে এক সাবলীল শুশ্রূষা আছেন
তিনি যদি আমাকে বলেন, তুই ক্ষত মোছ আকাশে তাকা,
আমি ক্ষত মুছে ফেলব আকাশে তাকাব
আমি আঁধার রাখব না "

আমি আকাশে তাকালাম। ঝকঝকে নীল আকাশ। শরতের আকাশ যেমন হওয়া উচিৎ। ভাদ্র মাসের দুপুরের কড়া রোদে নিজেকে নিজের মুখোমুখি নিয়ে বসতে ইচ্ছে করছে। কতদিন নিজেকে নিয়ে বসি না। মুরাক্বাবা আমার পছন্দ। নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা বেশ আনন্দের। অভ্যাসটা চলে গেছে কোন কারণ ছাড়াই। আগে হলের ছাদে শুয়ে শুয়ে নিজেকে ঝালিয়ে নিতাম প্রতিদিনই। এখন যে কেন পারি না! আর পারবো কীনা জানি না।

আমাকে একজন প্রশ্ন করেছিল কয়েকদিন আগে, আমার লেখায় এত বিষাদ কেন থাকে? এটার উত্তর আমিও জানি না। বাস্তজীবনে আমি প্রচণ্ড হাসিখুশি থাকতে চেষ্টা করি। আশেপাশে যারা থাকে তাদেরও হাসানোর স্বেচ্ছা একটা ইচ্ছে কাজ করে সবসময়। বেশ পারিও। তবে দিনশেষে কেমন একটা বিষাদ ছুঁয়ে যায় আমায়। কোন কারণ ছাড়াই। কিংবা তুচ্ছ কোন কারণে। অতিতুচ্ছ কোন কারণেও..

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: মোবাইলের লেন্সের দাম কেমন?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.