নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

জোঁছনা রাত্রি (১ম অংশ)

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৪৪



আজ কয়েকদিন মিসেস যুবাইদা আক্তারের পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটে এসেছে। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে নতুন ভাড়াটিয়া প্রতিবেশির সাথে মিসেস যুবাইদার এখনও পরিচয় হয়নি। তবে তার ছয় বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে জ্যোতি এ কয়দিনে নতুন প্রতিবেশী আন্টি-আঙ্কেলের সাথে পরিচয়ের পাশাপাশি বেশ ভাবও জমিয়ে ফেলেছে। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে স্কুল ড্রেস পরিবর্তন করেই সোজা পাশের বাসার আন্টির কাছে চলে যায় সে। তারপর গল্পের ঝুড়ি খুলে বসে যায়। আন্টিও সারাদিন বাসায় একা থাকে এজন্য খারাপ লাগে না। জ্যোতি গল্পপটু মেয়ে। ওর মাথায় সব সময় নানান গল্প কিলবিল করে। জ্যোতি কিন্তু বাচাল নয়, বেশি কথা বলে না। তবে জ্যোতির সাথে কেউ গল্প করলে কিংবা ওর গল্প মনযোগসহ শুনলে তবেই জ্যোতি তার সাথে গল্প করে। গল্প করার সময় টিভি দেখলে কিংবা মোবাইলে ফেসবুকিং করলে জ্যোতি তার সাথে গল্প করে না। নতুন আন্টি জ্যোতির গল্পের সময় মোবাইল টিপা বা টিভি দেখা এসব কিছুই করে না জন্যি জ্যোতির গল্প করতে ভালো লাগে।
- আন্টি জানেন, স্কুলের সবাই আমাকে টরটাস্ বলে ক্ষ্যাপায়। সবার সাত বছরে দাঁত পড়ে আমার না হয় ছয় বছরে পড়েছে, তাই বলে আমাকে টরটাস্ বলতে হবে??
- কখনোই না।
- কচ্ছপের তো একটাও দাঁত নেই। আর আমার মাত্র দুইটা দাঁত নেই তাই আমি কচ্ছপ হয়ে গেলাম?
- তোমার সববন্ধুই কি তোমাকে টরটাস্ বলে?
- না। মাইশা, মায়িদা আর প্রেয়ন্তি বলে না। তাছাড়া সবাই বলে। ছেলেরা আরো বেশি। ছেলেরা খুব-ই পাজি। ওরাই তো ক্লাসে আমার টরটাস্ নাম ছড়িয়েছে।
- ও তাই।
- আমার নাম টরটাস্, মাইশার নাম মশা, মায়িদার নাম ময়দা আর প্রেয়ন্তির নাম খুন্তি। এসব ক্ষ্যাপানো নাম। আর এসব নাম রেখেছে আমাদের ক্লাসের ছেলেরা।
- শুধু কি মেয়েদের-ই ক্ষ্যাপানো নাম আছে, ছেলেদের নেই?
- হুম, ছেলেদেরও আছে। একটার নাম তেলাপোকা অারেকটার ছোঁচা ইঁদুর আরেকটার নাম চশমা আলী।
চঞ্চল পিচ্ছি মেয়ে জ্যোতির কথায় আন্টি হাসে। বলে...
- তোমাকে টরটাস্ না বলে বুড়ি বলতে হবে। তুমি তো একটা পাকা বুড়ি।
জ্যোতির দুই চোয়াল দুই হাতের আঙুল দিয়ে চিমটি কাটার ঢঙে ধরে আদরের সুরে এ কথা বলে আণ্টি। জ্যোতিও মুখ ভেচকিয়ে অভিমানের সুরে জবাব দেয়....
- আম্মু বলে। আমি নাকি দাঁত পড়া বুড়ি। আমাদের বইতে একটা গল্প আছে। এক বুড়ি মেয়ের বাড়ি থেকে খেয়ে দেয়ে মোটা হয়ে বাড়ি ফিরছে, আর রাস্তায় অনেক বড় একটা বাঘের সাথে দেখা হয়। বাঘ বুড়িকে বলে, এখন আমি তোকে খাব।
- আর তখন বুড়ি বলে, আয় আয় কুতু রাঙ্গা বাঙ্গা ভুতু। তাই না?
- হুম। আম্মু বলে, আমি নাকি সেই বুড়ি।
- তুমি সেই বুড়ি নাও। তুমি চাঁদের বুড়ি।
জ্যোতি ফোকলা দাঁতে হাসে আর বলে...
- চাঁদের আবার বুড়ি আছে নাকি?
"- হুম, আছে। কেন, তুমি জানো না? তোমার আম্মু কখনও চাঁদের বুড়ি দেখায় নি??"
- কই না তো।
- আমি যখন তোমার মত ছোট ছিলাম তখন রাতে চাঁদ উঠলে আমার আম্মু আমাকে চাঁদের বুড়ি দেখিয়ে বলেছে, ঐ দেখা যায় চাঁদের বুড়ি, কোলের ওপর পানের ঝুড়ি। ও বুড়ি তোর দাঁত কই? আমার সোনা তোর সই। আমার সোনার বিয়েতে তুই যাবি সাথে। পান দিব থলে ভরে আরো দিবো চুন। পান খেয়ে রঙিন মুখে গাইবি সোনার গুন।
আন্টির ছন্দিক কথায় জ্যোটি বোকা বনে গেলেও মজা পায়। ফোকলা দাঁত বের করে হাসে।
পাশের বাসায় এর আগে যে আণ্টি ছিল তার সাথেও জ্যোতির খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। জ্যোতি খুবই আলাপি মেয়ে। কথার যাদুতে অল্প সময়েই যে কারো মন জয় করতে পারে।
মিসেস যুবাইদা যখন বাসার বাহিরে থাকে তখন জ্যোতি পাশের ফ্লাটে গিয়ে নতুন ভাড়াটিয়া আণ্টির সাথে এভাবে স্কুলের গল্প, গ্রামের নানা বাড়ি দাদা বাড়ির গল্প, টিভি কার্টুন মোটু-পাতলু আর নাট-বল্টুর গল্পসহ বিভিন্ন গল্প করে সময় কাটায়। আবার কখনও ছড়া শোনায় কিংবা নাচ দেখায়।
মিসেস যুবাইদা আক্তার রাজধানী ঢাকার একটি নাম করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধান। এছাড়া "জ্যোতি এডমিশন কেয়ার" নামে একটি ভার্সিটি ভর্তি কোচিং সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক।
রাজধানীর উত্তরা এলাকায় "মালতি মঞ্জিল" নামক একটি বাড়ির পঞ্চম তলায় ভাড়া থাকে মিসেস যুবাইদা। মালতি মঞ্জিল পঞ্চম তলা পর্যন্তই সমাপ্ত। বিমানবন্দর খুব কাছে হওয়ার কারণে রাউক এর বেশি অনুমোদন দিয়েছিল না। মালতি মঞ্জিলের পঞ্চম তলায় দুইটি ফ্ল্যাট। বাড়িওয়ালা এবং তার একমাত্র মেয়ে জামাতার বসবাসের জন্য পঞ্চমতলার ফ্ল্যাট দুটি বিশেষ ভাবে নির্মাণ করা হয়। উঠা-নামার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি লিফট্ থাকার কারণে তেমন অসুবিধা হয় না। বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক পরিবারসহ অস্ট্রোলিয়া চলে যাওয়ার পর পঞ্চম তলার ফ্ল্যাট দুটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
মিসেস যুবাইদা আক্তার মেয়ে জ্যোতিকে নিয়ে চার বছরের কিছু বেশি সময় ধরে মালতি মঞ্জিলের পাঁচ তলায় আছে। তার পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া অন্যত্র চলে যাওয়ার পর নতুন ভাড়াটিয়া ওঠেছে কয়েক দিন হলো। কাজের ব্যস্ততায় নতুন আগত প্রতিবেশী ভাড়াটিয়ার খোঁজখবর নেয়া দূরের কথা, নিজের একমাত্র মেয়ে বুকের ধন জ্যোতির-ই ঠিক মত দেখভাল করতে পারে না। জ্যোতিকে দেখাশোনা করার জন্য গোলাপি নামের একজনজন গৃহকর্মি আছে। মিসেস যুবাইদা জ্যোতিকে ঠিকমত দেখভাল করতে না পারলেও জ্যোতির প্রতি ভালোবাসা অণু পরিমাণ কমতি নেই তার হৃদয়ে। জ্যোতির বাবা আলী হায়দার যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বায়ো-কেমিষ্ট্রিতে পিএইচডি করার পর এখন ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার প্রফেসর ও গবেষক। সেখানে রাশিয়ান এক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছে। মিসেস যুবাইদা বা জ্যোতির কোনো খোঁজ খবর নেয় না।

(ধারাবাহিক ভাবে চলবে)






সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পলেখক
[email protected]




মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.