নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

উন্নয়ন-এর বিজ্ঞাপন নেই কোনো প্রয়োজন

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯



এক
রাজধানী ঢাকার সড়ক-মহাসড়ক, ফ্লাইওভার, ফুটওভার ব্রীজ, সড়কের পাশের দেয়াল জুড়ে যখন বর্তমান সরকারের সফলতা "উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করণের বিলবোর্ড ব্যানার বা বিভিন্ন লেখা দেখি তখন একটা ঘটনা মনে পড়ে যায়। ঘটনাটি হলো আমার বিদ্যালয় জীবনের। আমি মাদরাসায় পড়ালেখা করেছি। আমাদের মাদরাসায় প্রথম শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করো হয়। সুতরাং শিক্ষকও সেই পর্যায়ের পর্যন্ত-ই ছিল।
স্নাতক পর্যায়ের বাংলা শিক্ষক ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম আজাদ। আমরা যাকে কাসেম স্যার বলতাম। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন কাসেম স্যার। সেই সুবাদে প্রখ্যাত সাহিত্যিক শিক্ষাবিদ এবং জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসানের স্বয়ং ছাত্র ছিলেন তিনি। তাঁর ক্লাসও করেছেন। জ্ঞানের আধার কাসেম স্যার এমন সেনসিটিভ মানুষ, যে আমাদের বিদায়ী মানপত্রে "হর্ষ-বিষাদ" শব্দদ্বয়ের মাঝে হাইফেন (শব্দ সংযোগ চিহ্ন) না দেওয়ার কারণে ব্যাকরণগত ভুল ধরে মানপত্র নতুন করে মুদ্রণ করিয়েছিলেন।
যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আজ থেকে দশ বছর আগে আমি যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি তখনকার ঘটনা। সকালে ক্লাস শুরুর আগে এসেম্বলিতে মাঠ ভর্তি ছাত্র-ছাত্রী দাঁড়িয়ে আছে। প্রিন্সিপাল হুজুর এসেছেন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে। পতাকা উত্তোলন মঞ্চের পাশে বিদ্যালয় শাখার শিক্ষকদের পাশাপাশি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষকমন্ডলীরাও জাতীয় পতাকাকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য এসে দাঁড়ায়। এসে দাঁড়িয়েছেন প্রবীন শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম আজাদ। জাতীয় সংগীত গাওয়া এবং শপথ বাক্য পাঠের জন্য যে তিনজনের ডাক পড়ে তারমধ্যে আমি একজন। মাঝে মাঝেই ক্রিয়া স্যার শামসুল আলম মঞ্জু এই কাজের জন্য আমাকে ডাকতেন। আমিও পারফরমেন্স করতাম ভালো। জাতীয় সংগীত গাওয়া শেষ। সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করাচ্ছি আমি। শপথ বাক্য পাঠের একেবারে শেষ অংশটি বলছি, " হে আল্লাহ্ আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন দেশের সেবা করতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়িয়া তুলিতে পারি।" যেই বলেছি, "উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে গাড়িয়া......। আর অমনি-ই পেছন থেকে কাসেম স্যার তাঁর বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর দিয়ে আমাকে কষে এক ধমক দিয়ে বলেন, দেশ তো এখন-ই উন্নয়নশীল। আর কি উন্নয়নশীল করবে? বলো শক্তিশালী অথবা উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে.........পারি।
সেই সময়ে স্যারের বিবেচনায় আমি সাংঘাতিক ভুল করেছিলাম বলেই হয়তো ধমকটা ছিল কড়া। আসল কথা সেই সময়ে স্বল্পোন্নত, মধ্যম আয়, উন্নয়নশীল কিংবা উন্নত এসব বিষয়ে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। তাই ভরা এসেম্বলিতে সবার সামনে দাঁড়িয়ে কাসেম স্যারের ধমক খেয়েছিলাম। সেই ঘটনার দশ বছর পর যখন সংবাদ মাধ্যম আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ রাস্তা ঘাটে উন্নয়শীল দেশে বাংলাদেশ উন্নীত হওয়ার প্রচার প্রচারণা দেখছি তখন মনে দুইটা প্রশ্ন জাগে...
এক. তখন কাসেম স্যার কি আমাকে ধমক দিয়ে ভুল শিক্ষা দিয়েছিলেন? দুই. দেশের অগ্রগাতি সামনের দিকে নাকি পশ্চাতদিকে?


দুই
ক্ষমতাশীন দলের মন্ত্রী এমপি বা নেতাকর্মীদের প্রায়-ই বলতে শুনি, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে। সেই মহাসড়কগুলি যে কেমন সেটা যারা নিয়মিত টিভি সংবাদ দেখেন বা সংবাদপত্র পড়েন তারা নিশ্চয় ভালো করেই জানেন। যেদিন দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার স্বীকৃতির বর্ণাঢ্য উদযাপন করা হয় তার আগের দিন অর্থাৎ ২১ মার্চ ২০১৮, বাংলাদেশ প্রতিদিনের শেষ পাতার সংবাদ "লক্কড়-ঝক্কড় যশোর বেনাপোল মহাসড়ক"। বিস্তারিত সংবাদে জানানো হয়, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিঃমিঃ। এর মধ্যে ৩০ কিঃমিঃ চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। লক্কড়-ঝক্কড় বা চলাচলের অনুপযোগী সড়ক বা মহাসড়কের এমন শ খানেক উদাহরণ হয়তো আমি দিতে পারবো। কারন, যশোর-বেনাপোলের মত দেশের বেশির ভাগ সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা-ই লক্কড়-ঝক্কড়।
এবার উদযাপনের পরের দিনে আসি। অর্থাৎ ২৩ মার্চ ২০১৮, "বাংলাদেশ প্রতিদিন" সংবাদপত্রের প্রধান শিরোনাম, "এইখানে এক নদী ছিল"। বিস্তারিত সংবাদে জানা যায়, কুড়িগ্রামের ১৬ নদী পানিশূন্য, নীলফামারীর ২২ নদী আবাদি জমি, দিনাজপুরের পুনর্ভবায় খেলার মাঠ, অস্তিত্ব সংকটে ময়মনসিংহের অর্ধশত নদ-নদী। শেষের পাতায় এসেছে, "আলু চাষির মুখে হাসি নেই, লাভের আশায় আলু আবাদ করে মোটা অঙ্কের লোকসানের মুখে রংপুরের কৃষকেরা"।
ঠিক একই তারিখে "দৈনিক আমাদের সময়" সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় সংবাদ এসেছে, বসবাসের সেরা শহর ভিয়েনা ঢাকা ২১৬ নম্বরে"। নিউইয়র্কভিত্তিক পরামর্শ সেবাদানকারী সংস্থা মার্সার "এইটিনথ কোয়ালিটি অব লাইফ রাঙ্কিং" নামক এই তালিকা প্রকাশ করে। ২৩১ শহরের এ তালিকায় আমাদের রাজধানী ঢাকা ২১৬ নম্বর হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে এবার। গত বছর ঢাকার অবস্থান ছিল ২০৪ নম্বরে। এবার কিছুটা পশ্চাৎ উন্নতি হয়েছে। পত্রিকাটির শেষ পাতায় দেখা যায়, "মোংলা বন্দরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই, সমুদ্রগামী জাহাজের বর্জ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন"।
সম্পতি দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্কারে দেখলাম, "ডুববে ঢাকা দেখবে দেশ" শিরোনামে সংবাদ। বর্ষা মৌমুসকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকাকে জলযট মুক্ত রাখার কার্যক্রম এখনও যুক্ত না হওয়ায় এমন উপযুক্ত শিরোনামের সংবাদ প্রকাশিত হয়।
আমি তো মাত্র দু তিনদিনের সংবাদ কিছু অংশ উপস্থাপন করলাম। এমন সংবাদ প্রতিদিন প্রতিনিয়ত ইলেক্ট্রনিক্স বা প্রিন্ট মিডিয়া খুললেই চোখে পড়ে।
আমার কথাবার্তায় অনেকেই ভাবতে পারেন, আমি হয়তো সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের কেউ এজন্য আমার সব কথা-ই নেতিবাচক। আসলে আমি কোনো রাজনৈতিক দলের-ই কিছু না। আমি একজন এদেশের সচেতন সাধারণ নাগরিক। হয়তো বলতে পারেন দেশে কি উন্নয়ন হচ্ছে না? পদ্মা সেতু হচ্ছে, রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ হচ্ছে, ঢাকায় মেট্টোরেল ও এলিভেডেড এক্সপেক্স ওয়ে হচ্ছে। এখন আগের চেয়ে মাথা পিচু আয় বেশি।
হুম, উন্নয়ন হচ্ছে। যে সরকার-ই ক্ষমতায় আসুক না কেন, উন্নয়ন যে একেবারে কিছুই কারে না তা কিন্তু নয়। কিছুটা হলেও উন্নয়ন করে। তবে কথা হলো নির্মিত সেতুতে যাওয়ার রাস্তাটা তো চলাচলের উপযোগী থাকতে হবে, ঢাকা আগে বসবাসের উপযোগী করতে হবে। জলজট, মশা দূর করতে হবে। তারপরে তো মেট্টোরেল বা এক্সপ্রেক্স ওয়ে। নাকি?

তিন
আমার রুমমেট মিল্লাত ভাই CA (Chartered Accountants) করছে। অডিটর হিসেবে কিছুদিন আগে উত্তর বঙ্গের ৭/৮ টি জেলা ভ্রমণ করেছে। মিল্লাত ভাইয়ের অডিটের বিষয় ছিল, এনজিও। সে বিভিন্ন এনজিওর মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে মাথা অর্থাৎ হেড অফিস পর্যায়ে অডিট করেছে। আবার ইউনিয়ন পরিষদ অডিট করতে হয়তো সিলেট অঞ্চলে যাবে।
মিল্লাত ভাইয়ের অভিজ্ঞা থেকে জানালেন যে, দেশের দারিদ্র বিমোচনের জন্য বৈদেশিক অার্থিক সহযোগিতা আমাদের এখনও প্রয়োজন। বৈদেশিক অর্থ ছাড়া আমাদের উন্নয়ন সম্ভব না বললেই চলে। আমাদের দেশে যতগুলি এনজিও আছে তার প্রায় সবগুলি এনজিও-ই বৈদেশিক অর্থ সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য সরকার যতই প্রচার করুক না কেন, মূলত দেশের উন্নয়ন তো এখনও অনেক বাকি। এখনও রেললাইনের পাশে বস্তিতে মানুষ বাস করে। দারিদ্র বিমোচন এখনও ঐভাবে হয় নি। সুতরাং উন্নয়নের এমন সরকারি প্রচার প্রচারনার কারণে যদি বৈদেশিক অর্থ সহযোগিতা কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় তাহলে?
উন্নয়নের প্রচার প্রচারণার জন্য বা উন্নয়নের সংবাদ মানুষের দোরগোড়ায় পৌছানোর জন্য "উন্নয়ন মেলা" কিংবা "উন্নয়ন উৎসব" অথবা "সংবর্ধনা বা বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা" পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
সঠিক সময়ে সঠিক কাজ বা প্রয়োজনীয় উন্নয়ন করলে প্রচারের প্রয়োজন পড়ে না। রাস্তা পাকা হবে জনগণ সেই রাস্তা দিয়ে চলাচল করবে, বিদ্যুৎ উৎপন্ন হলে জনগণ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিদ্যুৎ পাবে এসবের আবার ঘটা করে প্রচারের দরকার আছে? উন্নয়ন তো জনগণের জন্য-ই করা হয় আর সেই উন্নয়নের সুফল জনগণ ভোগ করতে পারলে প্রচারের কোন প্রয়োজন নাই।

উন্নয়ন করতে হলে দেশের সামগ্রীক বিষয়ের উন্নয়ন করতে হবে। ব্রীজ নির্মাণের ছবি তুলে উন্নয়নের প্রচার করলেন কিন্তু সেই ব্রীজে চলাচলের রাস্তা লক্কড়-ঝক্কড় তাহলে কি হলো?, হলো না। হাসপাতাল নির্মাণ করে ছবি তুলে বিলবোর্ড বানিয়ে পাবলিককে দেখালেন হাসপাতাল করেছি; কিন্তু কোটা প্রথা অনুসরণ করে নিয়োগ দেওয়ায় উপযুক্ত প্রার্থী না পাওয়ার কারণে পদ শূন্য। তাহলে কি সেই উন্নয়নেরর কোনো মূল্য আছে? নিশ্চয় না। প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধ না করে পরীক্ষায় পাশের হার বৃদ্ধি করে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের নজির স্থাপন করলেন অথচ যদি A+ প্রাপ্তরাও জানলো না "অপারেশন সার্চ লাইট" কি, তাহলে সেই উন্নয়নের সার্থকতা কোথায়? সুন্দরবন হুমকির মুখে রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থাপনের উন্নয়ন কি দরকার?
জনগণ এখন সচেতন। সব-ই জানে এবং বোঝে। উন্নয়ন কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশ দেওয়ার খবরও রাখে। বাঁশ উন্নয়ন বাদ দিয়ে দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করুন। নতুন নতুন কর্মস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকারদের ভাগ্যের উন্নয়ন করুন। কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে দেশের শিক্ষিত বেকারদের মেধার সঠিক মূল্যায়ন করুন। কৃষকদের কষ্টে অর্জিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরুন। উন্নয়নের সুফল যদি জনগণ ভোগ করে তাহলে আর ঘটা করে উন্নয়নের প্রচার করতে হবে না। জনগণ আপনা আপনি-ই জেনে যাবে। এজন্য উন্নয়ন-এর বিজ্ঞাপন নেই কোনো প্রয়োজন।


-সোহাগ তানভীর সাকিব
ইমেইল: [email protected]

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:১৬

মাকামে মাহমুদ বলেছেন: সহমত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.