নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোঝা

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:১৩



মধ্যাহ্নে আকাশে সূর্য ক্ষেপে আছে। আগুনে রোদ চারিদিক। ফসলের মাঠ খা খা করছে চৈত্রের খড়তাপে। মাঠে মাটির নরম ঢিল পোড়া ইটের মত শক্ত। আগুনে রোদে ক্ষেতে কিছু সময় কাজ করলে মাথার মগজ গরম হয়ে যায়। মাথার ভেতর ঝিনঝিন করে। নাক দিয়ে কখনও কখনও বের হয় গরম নিঃশ্বাস। মাথায় গামছা বেঁকে কাজ করলেও রোদের প্রকপে গামছায় কুলায় না। কোনো কৃষক বা কামলা আগুনে রোদের দ্বিপ্রহরে ক্ষেতে কাজ করে না। গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয় বা অন্যকাজ করে। কাজ বাদ রেখে অন্যান্যরা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিলেও শাহাদত মিয়ার কোনো বিশ্রাম নাই। এক বিঘা জমির রসুন একদিনে তুলে শেষ করতে হবে। দুদিন পরেই আতাইকুলা হাট। রসুন উত্তোলন শেষ না হলে প্রয়োজনীয় টাকা হাতে আসবে না। এছাড়া মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে রসুনের বাজার দর ক্রমে ক্রমে কমছে। এচিন্তাও চৈত্রের রোদে গরম হওয়া শাহাদত মিয়ার মস্তিষ্কে বিরাজমান। নিজের সামান্য জমির সাথে কিছু বর্গা জমি চাষ করে সে। জমি থেকে উৎপাদিত ফসল এবং বর্গা জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের বর্গার অংশ বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকে সেই ফসল বিক্রি করে তার সংসার চলে। শাহাদত মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা খাতুনও সংসারের আয় বৃদ্ধিতে কাজ করে বাড়িতে। দু'টি দোয়াল গরু আর কয়েকটি ছাগল দেখা শোনা করে সে।

ফযরের নামাজের পর থেকে এক টানা কাজ করেই যাচ্ছে শাহাদত মিয়া। মাঝে শুধু সকালের খাবার খেয়েছে। তাছাড়া কোন বিরতি দেয় নি। মলিন গাছসহ পাঁকা রসুন তুলে বাস্তা ভরছে। বীজ কাদা মাটিতে রোপণ করা হয়েছিল বলে মাটির ভেতরে শক্ত হয়ে লেগে আছে রসুন। গাছ ধরে টেনে তুলতে বল প্রয়োগ করতে হয়। খেয়াল রাখতে হয় রসুন বাদে শুধু গাছ ছিঁড়ে যেন না আসে। ক্ষেত থেকে রসুন উত্তোলণ এবং বস্তায় ভরা এ দুটি কাজ শাহাদত মিয়া একলাই করছে। কাজে সহযোগিতার জন্য কোনো কামলা নেয় নি। রোপণ থেকে উত্তোলণ পর্যন্ত বীজ, কামলা এবং কিটনাশক বাবদ এমনিতেই অনেক টাকা খরচ হয়েছে। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে সেই টাকা ঘরে তোলাই মুশকিল। এজন্য কামলা নিয়ে বাড়তি টাকা খরচ না করে নিজেই ডাবল পরিশ্রম করছে। পাঁকা ফসলে বস্তা ভরলে, মাথায় করে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাড়িতে স্ত্রী ফাতেমা এবং কন্যা শারমিন বঁটি দিয়ে কেটে কেটে গাছ থেকে রসুন আলাদা করে। বাড়ি থেকে ক্ষেত বেশি দূরে নয়। শাহাদত মিয়া রসুনের বোঝা মাথায় করে নিয়ে আসতে বেশি সময় লাগে না। একবার একবোঝা ফসল মাথায় করে নিয়ে এসে মেয়েকে উদ্দেশ্য করে বলে.......
- কি রে, দুই জনে মিলেও এক বস্তা কাটি শেষ হরবির পরিস নেই?
"- হয়, আমরা তো মেশিং লিয়ে বইছি তাই লয়।" স্বামীকে বলে ফাতেমা।
"- আব্বা, তোমার পাও দিয়ে রক্ত বাড়াইতিছে যে। কাটলি ক্যাবাহরি?" স্ববিস্ময়ে বাপকে মেয়ের জিজ্ঞাসা।
"- আর কইস নি মা, ঢেলে উঁচৎ খায়া কাটি গেছে অয়তো।" মেয়েকে শাহাদত মিয়ার জবাব।
স্বামীকে উদ্দেশ্য করে ফাতেমা খাতুন বলে....
"একটা কামলা লিলে কি অয়? তাও জানে একটু আসান পায়। এতো কাম এই রোদির ভিতর কি একাএকা হরা যায়।"
"হয় টাহা তো লাগে না। একটা কামলার মুজুরি আর আর এক মণ রসুনের দাম সুমান।" একটু রাগান্বিত সুরে স্ত্রীর কথার জবাব দেয় শাহাদত মিয়া।

শারমিন দুবলা ঘাস চিবিয়ে আর পুরাতন গামছার ত্যানা নিয়ে আসে।
" দাও বাঁইধা দেই। ইস কত রক্ত পরছে!" বাবার ব্যাথায়- ব্যাথিয় হয়ে বলে শারমিন।
শাহাদত মিয়া ডান পা বাড়িয়ে দেয়। ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলীতে উঁচৎ লেগেছিল। কাজের নেশায় মত্ত ছিল বলে বুঝতে পারে নি। এখন সেখানে জমাট বদ্ধ রক্ত দেখতে পাচ্ছে সেই সাথে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে। শারমিন পরিস্কার ত্যানা দিয়ে বাবার পায়ে ক্ষতস্থানের রক্ত মুছে দেয়। শাহাদত মিয়া ব্যাথায় কাতরিয়ে ওঠে।
" উঃ আস্তে মুছেক রে মা। ব্যাতা লাগে।"
" তোমার নখ উপড়ে গেছে দেখতেছি আব্বা।"
" কইস কি!! উসঃ আস্তে। আস্তে।"
" চামড়ার সাথে অল্প ইটু বাঁধি লয়ছে। বেলেট দিয়ে কাটি বাঁধি দেই।"
শাহাদত মিয়া এবার পায়ে ক্ষত স্থানের দিকে নজর দেয়। সত্যি তো বৃদ্ধা আঙ্গুলের নখ যথা স্থানে নাই। নখের অগ্রভাগ আকাশের দিকে চেয়ে আছে। বোঝা মাথায় তোলার সময় উঁচৎ লেগেছিল। তখন খেয়াল করতে পারে নি। ব্যাথাও অনুভূত হয় নি। কিন্তু এখন বিষ ব্যাথায় জ্বলে যাচ্ছে। কতটুকু রক্ত ঝরেছে কে জানে। সারা পথ-ই হয়তো ঝরেছে।
" দে।" মেয়েকে বলে শাহাদত মিয়া।

ফাতেমা খাতুন ছোট কলসি ভরে টিউবয়েল থেকে ঠান্ডা পানি এনে গ্লাসে ভরে স্বামীকে দেয়। হাত পাখা দিয়ে বাতাস করে। সাদিয়া ব্লেড দিয়ে চামড়ার সাথে ঝুলে থাকা নখটুকু কেটে দুলবা ঘাস চিবিয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে ত্যানা দিয়ে বেঁধে দেয়। পায়ে ক্ষত নিয়ে সেদিন স্ত্রী কন্যা শাহাদত মিয়াকে আর ক্ষেতে যেতে দেয় না।
সাদিয়া ছাড়াও শাহাদত মিয়ার একটা ছেলে আছে। নাম শামীম।
শামীম ঢাকায় থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অর্নাস এবং মাস্টার্স শেষ করেছে। এখনও চাকুরি পায়নি সে। আর সাদিয়া বিজয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল সাদিয়া। অষ্টম শ্রেণি থেকে আর কেউ বৃত্তি না পেলেও সাদিয়া পাবে এমনটা আশা স্কুলের সকল শিক্ষকের। সাদিয়ার একমাত্র ভাই শামীম বিজয়নগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল এবং অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তি পেয়েছিল। শামীমের আগে গত ঊনত্রিশ বছরে বিজয়নগর উচ্চ বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী-ই অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেনি।

(সংক্ষেপ্তি)


সোহাগ তানভীর সাকিব
মার্চ-২০১৮
তেজগাঁও, ঢাকা।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৯

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: সাকিব ভাই লেখা দারুন হয়েছে।:)

এখন রসুন ৬০-৮০ টাকা কেজি। আর কামলা ২০০-৪০০টাকা।


আপনাকে বলেছিলাম, লেখার মাঝে ২-৩ টা প্যারা করতে??

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: আপনার মন্তব্যে উৎসাহিত হলাম। ইতোমধ্যে এডিট করে প্যারা করে দিয়েছি।
আর বর্তমান বাজার দর হিসেব করে গল্পটি রচনা করা হয় নি। আসলে একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন আমাদের দেশে ভরা মৌসুমে অর্থাৎ কৃষক যখন ফসল বিক্রি করে তখন বাজার দর একটু কম থাকে। কিন্তু সেই ফসল যখন মহাজন বা মজুতদারের হতে চলে যায় যখন কৃষকের হাতে থাকে না তখন দাম একটু বেশি হয়।
আমার গল্পের মূল বিষয় বাজার দর নয়। মূল বিষয় হলো, ভার্সিটিতে পড়াশোনা করেও একটা মেধাবী শিক্ষিত বেকার চাকুরি না পেয়ে বাবার বোঝা হয়ে থাকে সেটাই তুলে ধরা।

ধন্যবাদ, ভাই। সব সময় ভালো থাকবেন রইল সেই প্রত্যাশা।

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:২৭

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: :)

বাজার দর আমি মজা করে দিয়েছি।

খেটে খাওয়া/প্রান্তিক মানুষগুলো ভালো থাকুক।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৩৩

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: ও তাই তাই বলুন!!!

৩| ০১ লা মে, ২০১৮ সকাল ৮:২০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: Excellent

০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:১৪

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৪| ০৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬

শাহারিয়ার ইমন বলেছেন: ভাল লাগছে

৫| ০৮ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৫২

প্রামানিক বলেছেন: তাওই মাওই গ্যাছে কনে
আতাই কুলার হাটে
খুব ছোটকালে ছড়াটি শুনেছিলাম, আতাই কুলা নামটি ভুলেই গিয়েছিলাম, আপনার গল্পে আবার মনে পড়ল।
আঞ্চলিক ভাষায় চমৎকার গল্প লিখেছেন। খুব ভালো লাগল।

১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৩৭

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
আর হ্যাঁ, আপনার তাওই-মাওইকে আতাইকুলা হাটে গেলেই পাবেন আশা করি। আতাইকুলা হাটের মণ্ডা মিঠাই খাওয়ার নিমন্ত্রণ রইল।

৬| ১২ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৪৪

উজ্জয়নী বলেছেন: বেশ জীবনমূখী গল্প

১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৪০

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: হুম। আমি সব সময় বাস্তবতা অবলম্বনে লেখার চেষ্টা করি। চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি আমার লেখার প্রধান উপজীব্য।

লেখাটির পড়ে অনুধাবন করে মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.