নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সময়ের দর্পণ

সোহাগ তানভীর সাকিব

বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস।

সোহাগ তানভীর সাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি এবং আমার মা

১৩ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৩




মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই চারিদিকে অন্ধকার দেখি। অন্ধকার-ই দেখার কথা। কারণ, তখন ছিল রাত। মায়ের কাছে শুনেছি, বিদঘুটে কোনো এক অমানিশা রজনীর শেষ প্রহরে মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছিলাম। মা'র প্রথম সন্তান অর্থাৎ আমার বড় ভাই জন্মগ্রহণ করেছিল নানা বাড়িতে তাই দ্বিতীয় সন্তান অর্থাৎ আমাকে দাদা বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করতে হয়। তাছাড়া, ততদিনে নানা বাড়ির সবচেয়ে আপন আর প্রিয় ব্যক্তি নানীমা মহান আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে ওপারে চলে যায়। এজন্য আমার জন্মগ্রহণের বেলায় নানা বাড়ীতে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল না আমার মা'র। তারপরও সন্তান সম্ভাবা আদরের ছোট মেয়েকে নিতে এসেছিল আমার নানা।
পরের দিন সকালে মাকে নিয়ে যাবে নানা। কিন্তু রাত ভোর হওয়ার আগেই আমি ধরাধামে আবির্ভাব হই। নানা আর মা'কে নিয়ে যেতে পারে না। আমার জন্মগ্রহণের সংবাদ নিয়ে বাড়ি ফেরে।

আমার দাদা এবং নানা দুই পরিবার-ই খুবই সম্ভান্ত্র সেই সুবাদে জন্মসূত্রে আমি সম্ভান্ত্র পরিবারের সন্তান।
দাদা বাড়িতে জয়েন্ট ফ্যামিলি। রাত ভোর হলেই বড় ফুপুর বড় মেয়ের বিয়ে। সবাই আগে থেকেই বিয়ে বাড়ি চলে গেলেও আমার দাদি সন্তান সম্ভাবা পুত্রবধুকে রেখে গিয়েছিল না। রাতে আমি জন্মগ্রহণ করি। সকালে একজন আয়াকে আতুর ঘরে আমার এবং আমার মা'র দেখা শোনার দায়িত্ব দিয়ে দাদি বড় ফুপুর মেয়ের বিয়েতে চলে যায়। আমাকে নিয়ে আমার মা'র কষ্টের সূচনা এভাবেই।

ছোটবেলায় খুবই জেদি আর বদমেজাজী ছিলাম। যখন যা মন চাইতো তাই করেছি। পাড়ার খেলার সাথীদের সাথে মারামারি করেছি, বকা দিয়েছি, লোকের গাছের আম, পেয়ারা, ডাব পেরে খেয়েছি। আমাদের যে এসব ফলের গাছ ছিলো না তা কিন্তু নয়।আমার এমন কৃতকর্মের জন্য সেইসব ফল গাছের মালিকেরা মা'কে অনেক কথা শুনিয়েছে। যদিও তারা আমাদের-ই বংশের লোক বা দূরসম্পর্কের আত্মীয় তারপরও। প্রায় প্রতিদিন-ই আমার কোনো না দুষ্টামির নালিশ আসতো মা'র কাছে। মা কখনও মেরেছে। আবার কখনও দৌড়ে মা'র হাতের নাগালের বাহিরে চলে গেলে আর মারতে পারে নি। দৌঁড়ে অনেক দূরে চলে গেছি। বন বাদারে ঘুরেছি। সারাদিন বাড়ি ফিরি নি। কখনও গ্রামের দূরপ্রান্তে মাঠের ভেতর গিয়ে রাখাল ছেলেদের সাথে খেলাধূলা করেছি। সারাদিন আমাকে না পেয়ে মা সবার কাছে আমার সন্ধান করেছে। দিন শেষ মাঠের কৃষকেরা বাড়ি ফিরে কেউ যদি মাকে আমার অবস্থান জানিয়েছে। মা সন্ধ্যার দিকে নিজেই মাঠের ভেতর এসে আদর করে আমাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে নিজ হাতে গোসল করিয়ে ভাত খাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন চাইলেও মা'র হাতের নাগালের কাছে সারাক্ষণ থাকতে পারি না।

মা'র তিন সন্তানের মধ্যে আমি থাকি ঢাকায়। বড় ভাই থাকে প্রবাসে। শুধু মাত্র ছোট ভাই বাড়িতে থাকে। আমাদের রেখে মা ভালো কিছু খেতে পারে না। মা'র ভাষায়, "গলা দিয়ে নামে না।"
আব্বা বাজার থেকে বড় মাছ বা মাংস যেটাই কিনে নিয়ে আসুক না কেন, বাড়িতে থাকি না বলে মা ফ্রিজে একটু হলেও রেখে দেয়। তারপর যেদিন ঢাকা থেকে বাড়ি যাই, সেইদিন ফ্রিজে জমানো মাছ/মাংস বের করে রান্না করে দিবে আর কবে কি কেনা হয়েছিল সেকথা বলবে। ঢাকা থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় মা'র জন্য অনেক জমানো কথা নিয়ে যাই। বাড়িতে মা'ও আমার জন্য অনেক কথা জমিয়ে রাখে। বাড়ি যাওয়ার পর রান্না ঘরে কিংবা ভাত খাওয়ার সময় কিংবা রাতের বেলা মা'র পাশে বসে আমি মা'কে আমার জমানো কথা বলি আর মা আমাকে তার জমিয়ে রাখা কথা বলে। এভাবেই মা'র সাথে আমার বন্ধুত্ব শাণিত হয়।

মা এবং আমি পরস্পর "তুই" সম্বোধন করে কথা বলি। এটাকে আমার অনেক মর্ডান রিলেটিভ বা বন্ধু-বান্ধবী নেতিবাচক চোখে দেখে। মাকে খুব কাছের একজন বন্ধু মনে করি এর জন্য মা'র সাথে তুই সম্বোধন করে কথা বলি। কারণ, সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির সাথে তো মানুষ তুই করেই কথা বলে।

আমার মা তেমন একটা লেখাপড়া জানে না। কিন্তু লেখাপড়ার গুরুত্ব বা মর্ম বোঝে। আমাকে সবসময় উচ্চ শিক্ষগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে মা। ছোটবেলায় যখন ঠিক মত লেখাপড়া করতে চাইতাম না বা স্কুলে যেতে চাইতাম না। পরীক্ষায় ফেল না করলেও প্রসংসনিয় রেজাল্ট করতে পারতাম না। আমার যেসব কাজিনেরা ভালো রেজাল্ট করতো তাদের মা আমাদের (আমি এবং আমার বড় ভাই) সাথে তাদের মিশতে নিষেধ করতো। এসব কারণেও কষ্ট পেয়েছে মা।

এখন আগের চেয়ে অনেক বড় হয়েছি। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমা শেষ করে বিএসসি করছি। পাশাপাশি জেনারেল থেকেও উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করছি। এখন আর পাড়ার কেউ ফল খাওয়া বা মারামারি করার নালিশ নিয়ে গিয়ে মা'কে দু'কথা শোনায় না। তারপরও মা আমাকে বা আমার অন্য দুই ভাইকে নিয়ে বড় কিছুর আশা করে না। আমরা যেন ভালো থাকি এটাই মা'র একমাত্র চাওয়া। মা জানে, তার ছেলেদের দ্বারা কোনোদিনও একদিনের জন্যও সম্ভব না তারপরও মাঝে মাঝে ইয়ার্কির ছলে বলে............
-"তোরা বিয়ে হরলি, তোদের বউ যদি আমাদের সেবা যত্ন হরতি অসুবিদে অয়। তাইলে আমাদের বৃদ্ধরে ইতিমখানায় (বৃদ্ধাশ্রম) থুয়ে আসিস।"

মা জানে না মা'কে কত ভালোবাসি। কোনোদিন মা'র কাছে তেমন ভাবে প্রকাশও করি না। কারণ, এখনও সেই সময় আসে নি। তাছাড়া এই লেখাটা মা পড়বেও না যে একটু হলে সেটা বুঝবে।

আজ বিশ্ব মা দিবস। আমি মনে করি, আমার মা'র মত বিশ্বের প্রতিটা মা-ই তাদের সন্তানের দুষ্টামির জন্য কোনো না কোনো সময় অন্যের দু'কথা শোনেছে বা অন্যের কাছে অপমানিত হয়েছে। সন্তান দুষ্ট হোক আর সুবোধ মা'র কাছে সমান। বিশ্বের প্রতিটা মা-ই শ্রেষ্ঠ মা। যেসব মা তাদের সন্তানের দুষ্টমির জন্য অপমান সহ্য করেছে আমার মা'র সাথে তাদের প্রতিও রইল আমার হাজার সালাম ও স্যালুট।


-সোহাগ তানভীর সাকিব
তেজগাঁও, ঢাকা

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:৪১

ঢাবিয়ান বলেছেন: খুব ভাল লেগেছে লেখাটা।মা দিবসের শুভেচ্ছা বিশ্বের সকল মাকে। মায়েদের তুলনা আসলে কোন কিছুর সাথেই হয় না।
অটঃ আপনি কি এখনো সেফ হননি?

১৪ ই মে, ২০১৮ সকাল ৮:১৬

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: লেখাটি পড়ে এবং অনুধাবন করে ভালো লাগার কথা ব্যক্ত করেছেন বলে খুশি হলাম।

"আপনি কি এখনো সেফ হননি?" প্রশ্নটি পরিস্কার ভাবে বুঝতে না পেরে আপনাকে প্রশ্ন করছি, "কি/কোথা থেকে সেফ হব?"

২| ১৭ ই মে, ২০১৮ রাত ৩:৩২

ওমেরা বলেছেন: আপনারা ভাগ্যবান আপনাদের মা আছে মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন । আমি ৯ বছর বয়স থেকেই মায়ের থেকে অনেক দুরে কিন্ত অনেক কথা বলতাম প্রতি দিন ১/২ ঘন্টা অনেক কথা সারাদিন ঘটে যাওয়া কোন কথাই বাদ যেত না। কিন্ত আল্লাহর ইচ্ছা আমার আম্মু এমন জায়গায় চলে গেল কোন কথা বলা যায় না । খুব ইচ্ছা করে আম্মুর সাথে কথা বলতে কত কথা জমানো আছে, মন খুব চায় যদি একটু কথা বলতে পারতাম আম্মুর সাথে ।

আল্লাহ আপনার মাকে নেক হায়াত দান করুন । আমীন।

১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৭:৪৬

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: মা অথবা বাবা মহান আল্লাহ্ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। যার মা অথবা বাবা নেই, ত্রিভূবনে আপন বলতে তার কেউ নেই।

আপনার মা বেঁচে নেই, শুনে খারাপ লাগছে।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা আপনার মাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমীন।

৩| ১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:০৬

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: মা-র তুলনা মা-ই। মা অনন্য, মা অসীম....

১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:২৮

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
"পিতা মাতার প্রতি ভালোবাসা নাই যার মনে
কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জনে।"

পৃথিবীতে মাতা পিতার আগেও কেউ নেই, পরেও কেউ নেই।

সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৩

বৃষ্টি বিন্দু বলেছেন: চোখ ভিজে এলো, বিশেষ করে বৃদ্ধাশ্রম এর কথায়। কোন বৃদ্ধ পিতা মাতাকে যেন তাদের পুনঃ শৈশবে এমন অসহায়ত্ব বরণ করতে না হয়।

১৮ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:০৬

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: বৃদ্ধাশনের কথা কল্পনা করে প্রাবীণদের কথা চিন্তা করলে, বা আমিও এক সময় হয়তো বৃদ্ধ হবো, এসব ভাবলে চোখ দিয়ে পানি-ই আসার কথা।

আমার সামান্য লেখাটি পড়ে সুন্দর মতামত প্রকাশের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। প্রত্যাশা রইল।

৫| ১৯ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:২১

কাইকর বলেছেন: মাকে নিয়ে সকল লেখায় পড়তে মন চায়। ভালো লাগলো। তাছাড়া আপনার শব্দচয়ন ও বেশ ভাল লাগলো। আমিও গল্প লিখি। দাওয়াত রইলো।

২০ শে মে, ২০১৮ রাত ১১:২৫

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: লেখাটি পড়ে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। আর আপনার দাওয়াত সাদরে গ্রহণ করলাম। আপনার জন্য রইল শুভ কামনা।

৬| ২৪ শে মে, ২০১৮ সকাল ৭:২৪

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: মাকে নিয়ে লেখা কথাগুলোর আবেগ মনকে ছুঁয়ে গেল। আসলে মা তুলনাহীন এক অস্তিত্বের নাম! এর চেয়ে বড় কিছু আর হয়না।
সুন্দর গোছানো আবেগী লেখায় একরাশ ভালোলাগা।

ধন্যবাদ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৯

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
লেখাটি পড়ে সুন্দর মতামত প্রদানের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৭| ২৫ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:১৭

মীর সাজ্জাদ বলেছেন: মায়ের কথা মনে পড়ে গেল ভাই আপনার পোষ্টটি পড়ে, মায়ের থেকে দূরে থাকলেই আসলে মায়ের মর্মটা বোঝা যায়।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৬

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন:
মা হলো বিধাতার দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। তবুও অনেকে মায়ের মনে কষ্ট দেয়। যদি দেখি বা শুনি কোনো সন্তান কোনো মাকে কষ্ট দিয়েছে তখন খুব খারাপ লাগে।

সুন্দর মতামতের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৮| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩০

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: জীবন থেকে নেয়া কথা মালায় অনেক ভাল লাগা রইল , ভাল থাকুন সব সময় ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.