![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন জুড়ে থাকা পরাজয়, হয়েছে ম্লান চিরকাল!
অখন্ড অবসর। তাগাদার লিস্টে থাকা সবগুলো কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে এসেছে। আপাতত হাতে কাজ নেই। দু'একদিনের মধ্যে ফিরবো বাড়ি।
কর্মহীন এই অখন্ড সময়ে কিছুই করার পাচ্ছিনা। এক এক করে দেখা করছি মায়ার সম্পর্কে জড়ানো মানুষগুলোর সাথে।
নাহ! জেমসের গান শুনছি না- 'হতেও পারে এদেখাই শেষ দেখা, হতেওপারে এইগানই শেষ গান' ।
আবার এও ভাবছি না যে কেউ আমাকে মনে করে শুনছে -
'আরো কিছুক্ষণ কি রবে বন্ধু ? আরো কিছু কথা কি হবে ? বলবে কি শুধু ভালবাসি তোমায়। বলবে কি শুধুই তুমি যে আমার। মুছে ফেলে সব জড়তা'।
আসলে কিছুই ভাবছি না। ভাবনাদের নিয়ে ভাববার জন্যে এই সময় নয় । এই সময় বড় অখন্ড... একদমই নির্ভেজাল অবসর।
সিগারেট আমি খাইনা। তবে বন্ধুদের পাল্লায় পরে কখনো যে খাইনি বিষয়টা এমন নয়। সবমিলিয়ে সারাজীবনে ১ পেকেট হবে হয়ত। দু'একটা কমও হতে পারে।
কিন্তু আজ একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে। আলেক্সে বসে চা খাচ্ছিলাম, হটাৎ কি মনেকরে যেন আমিনুলকে বললাম - শান্ত, একটা সিগারেট দে।
শান্ত বিস্ময় ভরা চোখে কি মনে করে যেন - একটা Marlboro দিয়ে গেলো।
মাসের এই শেষ সপ্তাহে পকেটে আছে একশ সাতান্ন টাকা আর সোহাগ বাসের একটা টিকিট। বাকি দিনগুলো কি করে যে কাটাবো এ নিয়ে অবশ্য দুশ্চিন্তা আছে তবে এই অখন্ড সময়ে এইসব নিয়ে ভাববার সময় নেই। সিগারেটের সাথে দুশ্চিন্তা পুড়ছে। দুশ্চিন্তা একবার ধোয়া হচ্ছে,পরের বার ছাই। পোড়াতে পোড়াতে লক্ষ করলাম নীলের মাঝে ফুটফুটে সাদা রঙের জামা পরে মেয়েটা সামনের দিক আসছে। ভাবলাম আমাকে ক্রস করে হয়ত চলেও যাবে। দু'এক সেকেন্ডের জন্যে- 'হতেও পারে এদেখাই শেষ দেখা' লাইন দুটোকে সত্য বলে মনে হলো।
কিন্তু ঘটনা ভিন্ন। মেয়েটি দ্রুত পা ফেলে যেন আমার দিকেই আসছে । ভার্সিটি লাইফে এই একটি মেয়েরই 'প্রেমে' পড়েছিলাম। ভার্সিটি লাইফ শেষ হয়ে এলো কিন্তু এখনও উঠে দাড়াবার জন্য তার হাতটুকু চাইবার সাহস কোনোদিন হয়ে উঠেনি। তাকে সম্মুখে আসতে দেখে পিছন দিক দিয়ে সিগারেটটা ফেলে দিলাম।
: সিগারেটটা ফেললেন, ক্যানো?
:-আমি কিন্তু সিগারেট খাইনা... হটাৎ ইচ্ছে হলো!
: জানি । আপনি শুধু চা খান। মাঝে মধ্যে কফি।
:- হুম্ম
: কবে যাচ্ছেন?
:-কোথায়?
: পাশ করেছেন না? নাকি রিটেক আছে? কবে যাবেন ?
:- হুম্ম। পাশ করেছি। চলে যাবো। পরশু...।।
: ঠিকাছে যান। ভালো মত যাবেন। আর এই কাগজটা রাখুন।
:- কি আছে এটাতে?
: রুমে গিয়ে দেখবেন। এখন খুলবেন না।
: - আচ্ছা।
মেয়েটি চলে গেলো। অদ্ভূত একটা চাহনী দিয়ে। আমার আর তর সইলো না। বদ্ধ জিনিস খুলে দেখতে যে মানুষের বড্ড সাঁধ! চা আর সিগারেটের বিল দিয়ে ঝটপট খুলে ফেললাম কাগজটা। দেখি কাগজটাতে একটা সরল অংক-
0-0, (x-1)*(x-1)=0, 2*2+4-1, y*y=36 .....
এমন সহজ সরল অংক দেখে বেশ কঠিন ভাবে মজা পেলাম। অংকের নিচে খুব ছোট্ট করে লেখা- 'ভালো থাকবেন' উইশটাকে যাবার বেলার আগে সবচেয়ে সেরা উইশ বলে মনে হলো।
কাগজটাকে মানিব্যাগের এক পাশে রেখে গেলাম গল্লামাড়ি। বেশ কিছু জিনিস কিনতে হবে বাজার থেকে। একটা ব্যাগ, কয়েক গজ রশি তার মধ্য অন্যতম।
তার ঠিক দুই বছর পরের ঘটনা। হটাৎ ডাক বিভাগে আমার ঠিকানায় একটি চিঠি আসলো। নীল খাম ভর্তি একখান চিঠি। চিঠিতে লেখা-
'আপনি এতো গাধা কেন? সামান্য সরল অংক সল্ভ করতে পারলেন না! নাকি হারিয়ে ফেলেছেন? যাই হোক মূল কথায় আসি। আমি আমার বাকি জীবনের সুখ-দুঃখের বোঝা একা সামলাতে পারবো না। এই বোঝা সামলাতে আমার এখন আপনার মতো একজন মানব গাধার প্রয়োজন। আপনি কি বোঝা সামলাতে রাজী আছেন?'
আমার হাসি পেলো চিঠিটা পড়ে। আবার দুঃখও হলো এই ভেবে যে সেদিন রাতে রুমে ফিরে মানিব্যাগে সেই চিরকুটটা পাইনি। কোথায় যেন পরে গিয়েছিলো বেখেয়ালে। অনেক খোঁজেছিলাম সম্ভাব্য জায়গাগুলোতে কিন্তু পাইনি। তারপর ঢাকায় ফিরে জব...জব থেকে দেশের বাইরে। দেশে ফিরলাম সপ্তাহ তিন হবে।
এই ব্যাস্ততায় আমি ভুলেই গিয়েছিলাম চিরকুট দানকারি মানবীর কথা। এদিকে মা আমার জন্যে মেয়ে ঠিক করেছে। বলেছে বিয়ে করতে হবে।
অন্যদিকে মানব গাধা হওয়ার এপয়েন্ট লেটার পেলাম আজ!
আমার এখন কি করা উচিত?
আমি ভাবছি......।। দু'এক ফালি হাসছিও ..।।
©somewhere in net ltd.