নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

সাইফ নাদির

এক টুকরো কাগজে পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম হাতে বসে আছি

সাইফ নাদির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহীয়সী নারী ০২

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৬

রৌদ্র রশ্মির তপ্ত ছটায় ঘুম ভাঙলো। আড়মোড়া দিয়ে বিছানা ছেড়ে ঘড়িটার দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো। ‘‘হায় আল্লাহ!’’ এগারোটা বাজে। তড়িঘড়ি করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াতেই বিকট শব্দে চমকে গেলো। দরজা খুলে বাইরে তাকাতেই পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো। ঋণ শোধ করতে না পারায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাড়িটি জব্দ করতে এসেছে। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোকে দেখে মনের অজান্তেই অশ্রু ফোটা চোখের কোণে এসে ভির করতে লাগলো। এ যেন লোক চক্ষুর আড়ালে বুক ফাটা আর্তনাত। এ যেন পৃথিবীর সব থেকে হৃদয় ক্ষত করা বিষাদ দৃশ্য। এ যেন গলা কাটা জীবন্ত প্রাণির বেঁচে থাকার করুণ আকুতি।

মাথা গোজার শেষ ঠাঁইটাও আজ হারাতে হলো। শেষ সহায় বলতে কিছুই থাকলো না। চোখের সামনে যখন কারো শেষ সম্বলটা কেড়ে নেয়া হয়, তখন তার মনের ভিতরে দুঃখের যে ঢেউ আঁচড়ে পড়ে তা পৃথিবীর কোন কলমের কালি দ্বারা বোঝানো সম্ভব নয়। কোন কবির কবিতায় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। কোন শিল্পীর তুলি দিয়ে অঙ্কন করা সম্ভব নয়। এ এক অবর্ণনীয় কষ্ট, এ এক পর্বতসম দুঃখ। দাঁতে দাঁত চেপে বহু কষ্টে চোখের পানি আঁটকে বাইরে বেরিয়ে এলো। ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে হাতে প্রিয় ফুলগাছের টপটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো অচেনা পথে। কোথায় যাবে কোথায় থাকবে, কিছুই জানা নেই। কিছু কিনে খেয়ে ক্ষিদে মিটানোর সামর্থ্যও নেই। বুকে চাপা কষ্ট লুকিয়ে, মুখে মিথ্যে মৃদু হাসি ফুটিয়ে হাঁটতে লাগলো। এ যেন জমে যাওয়া অনূভুতি শূন্য কোন এক মূর্তি। এ যেন মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু হারিয়ে শক্ট হয়ে যাওয়া এক দুঃখী বেচারী।

বেলা দু’টায় একটা ইন্টারভিউ আছে। বাস স্টোপে ব্যাগ আর ফুলগাছের টপটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেনি। আশপাশে আরো অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। বাস এসে থামতেই ঠেলাঠেলি করে সবাই উঠতে লাগলো। জেনি উঠতে যাবে ওমনি পা থেকে একটি হিল খুলে বাসের নিচে পড়ে গেলো। নেমে যেই হিলটা নিতে যাবে ওমনি বাস ছেড়ে দিলো। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে হিলটি রোডের মাঝখানে ছিটকে পড়লো। গাড়ি পারাপারের ভীড়ে হিলটি মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যে হারিয়ে গেলো তার কোন আতাপাতা থাকলো না। হিল ছাড়া কী আর ইন্টারভিউ দেয়া যায়! তাই ইন্টারভিউ না দিয়ে সারাটা দিন এদিক সেদিক ঘুরেঘুরে কাটিয়ে দিলো।

এদিকে সূর্য্য প্রায় পশ্চিম দিগন্তে মিলে গেছে। আকাশে মেঘের মেলা বসেছে। বর্ষার কোল ভরে যেকোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। কোথায় যাবে এখনো জানে না। আপন বলতে কেউই নেই এই স্বার্থপর পৃথিবীতে। এক বাবা ছিলেন, তিনিও গত হয়েছেন বছর দেড়েক আগে। তাহলে কী ফুটপাতের নিয়ন বাতির নিচেই রাত কাটাতে হবে নাকি পথে প্রান্তরে নিশাচরী হয়ে হেঁটে বেড়াতে হবে? এসব ভাবছে আর সবথেকে ‘‘কাছের মানুষটির’’ কথা মনে করছে। যে তাকে সবথেকে ভালো বুঝতো। যে তাকে সবথেকে বেশি জানতো। যে তাকে সবথেকে বেশি চিনতো। সেই পিচ্চি ছেলেটির কথা খুব করে আজ মনে পড়ছে। যে ছিলো জেনির মাথার উপরে ছাদের মত এক নিঃস্বার্থ বন্ধু কিংবা ‘‘সবকিছু’’। যে ছিলো বয়সে ছোট তবে প্রাণের চেয়ে প্রিয় কিছু। জেনির আজ এই অবস্থা দেখলে সে হয়ত সহ্য করতে পারতো না। হাউমাউ করে কেঁদে দিতো।

পর্ব নং ০২
......................................................
মহীয়সী নারী / সাইফ
২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ইং

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৪৬

Tanzim Hasan বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৮

সাইফ নাদির বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.