নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

সাইফ নাদির

এক টুকরো কাগজে পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম হাতে বসে আছি

সাইফ নাদির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিষ্টি মেয়েটি

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫৪

মেয়েটির সাথে প্রথম দেখা হয় এয়ারপোর্টে। ইয়া বড় একটা লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল চেক পোস্টের সামনে। আমি বোর্ডিং পাস এবং লাগেজের কার্ডটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। মেয়েটি এসে আমার পাশে দাঁড়ালো। আঁড় চোখে তাকা-তাকি হলো তবে কোন কথা হলো না। এবার গেলাম ডিপার্চার লাউঞ্জে সিকিউরিটি চেক করাতে। দু’জন প্রায় একই সাথে চেক করাচ্ছিলাম। সিকিউরিটি অফিসার আমাদের হ্যান্ডব্যাগ এবং বোর্ডিং পাসে স্ট্যাম্প দিলেন। আমি গিয়ে ফ্লাইটে উঠলাম। বোর্ডিং পাসে দেয়া সীট নাম্বার অনুযায়ী আমি আমার সীটে বসে পড়লাম। তখনো মেয়েটি সীট খুঁজছিল। হঠাৎ দেখি আমার পাশেই এসে বসলো মেয়েটি। মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিলো সে একটু ‘আনইজি’ ফিল করছে। মনে হয় এটাই তার লাইফের প্রথম প্লেন জার্নি। ফর্স্ট প্লেন জার্নিতে এরকম একটু হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে-ই বুঝতে পারছি ও সীটবেল্ট বাধতে পারছে না। তাই ওকে আমি হেল্প করলাম। এদিকে প্লেন টেক-অফ করবে বলে সতর্কতা মূলক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিলো। মেয়েটি এবার মুখ খুললো-
- হায়, আমি শান্নি।
- হায়, আমি সাইফ।
- কোথায় যাবা? (প্রথম দেখাতেই তুমি শোনাটা সত্যিই ভেরী ইন্টারেস্টিং)
- নীলফামারী।
- ওমা তাই! আমিও তো নীলে’ যাবো। কোথায় বাসা তোমার?
- নীলে’ই। তোমার?
- আমারও। কই পড়ো তুমি?
- ইবিতে। থার্ড সেমিস্টারের ফাইনাল এক্সাম দিয়ে ঢাকায় এসেছিলাম। এখন বাসায় যাচ্ছি। তুমি কই পড়ো?
- আমি ঢাবিতে। এই তো ফার্স্ট সেমিস্টার শেষ হলো। তোমার সাবজেক্ট কি?
- আইন। তোমার?
- ওমা তাই নাকি! আমার সাবজেক্টও তো আইন।
এভাবে অনেক কথা-ই হলো শান্নির সাথে। সাবজেক্ট এক হওয়ায় বেশ ভালোই লাগছিল কথা বলে। ওদিকে প্লেন টেক-অফ করে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। বিমান এখন আমাদেরকে নিয়ে শূন্যে ভেসে চলেছে।

সিমি আপুর বিয়ে এটেণ্ড করার জন্য ঢাকায় এসেছিলাম। বাসা থেকে আমি ছাড়া আর কেউ আসতে পারেনি। এদেকি আঙ্কেল আন্টির ভাব দেখে মনে হচ্ছিলো যেন, তারা আমায় চিনেই না। আব্বু আম্মু না আসাতে অভিমাণটা যেন আমার উপরে-ই ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করছে। অনেক কষ্টে আন্টিকে ইম্প্রেস করতে পেরেছিলাম তবে আঙ্কেলের থেকে কয়েক‘শ গজ দূরত্ব বজায় রেখেই চলতে হয়েছিল প্রথম দু'টি দিন। তৃতীয় দিন আমায় আর সামিনকে কাছে ডাকলেন আঙ্কেল। বললেন, শোন! শুধু ঘোরাফেরাই করবি নাকি বোনের বিয়েতে কিছু কাজকর্ম করবি? ও হ্যাঁ সামিনের কথা বলতে ভুলেই গেছিলাম। সামিন আমার কাজিন। সিমি আপুর ছোট ভাই। আমরা সেইম ব্যাচ। ও জবিতে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে পড়ছে। আমরা বললাম, শুধু ঘোরাফেরা করবো কেন আবার? সবকাজ তো আমাদের-ই দেখতে হবে।
- ওরে হতচ্ছাড়া, শুধু দেখেই যাবি তোরা?
- নাহ্ নাহ্! সবকাজ আমরাই করবো। (বলেই দৌড় উল্টো দিকে)
বিয়ে শক্রবার, আজ বুধবার। মাঝখানে আছে শুধু দু’টো দিন। এখনো অনেক কাজ বাকি। কখনো বাড়ি সাজাচ্ছি কখনো বা দূর থেকে আসা গেস্টদেরকে রিসিফ করার জন্য এয়ারপোর্ট ও বাস-স্টান্ডে যাচ্ছি। বাড়িতে বেশ ধুমধামের সাথে বিয়ের আমেজ চলছে। আন্টি শুধু বারবার আম্মুর কথা বলছেঃ ‘‘লিলি আপা থাকলে আমার কোন টেনশন করা লাগতো না। কেন যে আসলো না!’’ আর রাগটা আমার উপরেই ঝেড়ে যাচ্ছে।
আজ সিমি আপুর গায়ে হলুদ। বাড়িতে বেশ রমরমা ভাব। অনেকেই আসছে। সিমি আপু ওর ফ্রেণ্ডদের সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল। আপু এবং ভাইয়াদের সাথে কথা বলে বেশ ভালোই লাগলো। আপুর ফ্রেন্ড সার্কেলটা বেশ বড়। অনেক ছেলে-মেয়ে। বেশ মজা করলাম সবাই মিলে। আপুরা আমাদের দু’জনকে নিয়ে ফাজলামো করছিল। আমাদের উপরে নাকি ওরা ক্রাশ খেয়েছে, দেখেই নাকি আমাদের প্রেমে পড়ে গেছে; এসব হাবিজাবি কথা বলতে লাগলো।আর ভাইয়ারা বলতে লাগলো, দেখো বিয়ে বাড়ির কোন মেয়েকে পছন্দ হয়, আমরা সেটেল করে দিচ্ছি।

দিনটি সত্যিই অনেক আনন্দে কেটেছিল। এখন আর আমরা দু’জন একা নই। এখন আমাদের সাথে রয়েছে একঝাক সিনিয়র আপু ও ভাইয়ার দল। সবাই মিলে সব কিছু মেনেজ করতে তেমন আর বেগ পোহাতে হচ্ছে না। পর-দিন বিয়ে।

ফুলে ফুলে সাজানো বরের গাড়ি আসলো। ধুমধাম করে বিয়ের সব পর্ব সমাপ্ত হলো। আঙ্কেল আন্টি অশ্রুসিক্ত নয়নে আপুকে বিদায় দিলো। ধীরে ধীরে বাড়ি ফাকা হয়ে গেলো। সবাই একে একে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। দূরের কিছু গেস্ট থেকে গেলো। তারাও পরের দিন চলে গেলো। আমি বিয়ের পরও কিছুদিন থেকে গেলাম। যেহেতু তেমন ঝামেলা নেই এখন আমার। পরীক্ষা শেষ করেই এসেছি। কিছুদিন তো রিলাক্সে থাকা-ই যায়। এই ক'দিনে বেশ ঘোরাঘুরি করলাম সামিনসহ। অনেক জায়গায় আড্ডাও দিলাম। ওর কিছু ফ্রেন্ডের সাথে বেশ সখ্যতাও গড়ে উঠলো। ভালোই কাটলো দিনগুলো। তবে যত-ই আনন্দে থাকি না কেন, আম্মু আব্বুকে ছাড়া এই আনন্দ যেন কিছুই না। তাই বাড়ি ফেরার কথা ভাবলাম। সেই দু'মাস আগে বাড়ি থেকে এসেছিলাম। পরীক্ষার জন্য বেশি দিন থাকতে পারিনি। মন শক্ত করে বেড়িয়েছিলাম ক্যাম্পাসের পথে।
এদেকি এক্সাম শেষ হতে না হতে সিমি আপুর বিয়ে। চলে আসতে হলো ঢাকা। বাড়ি যাওয়ার কোন সুযোগ-ই পেলাম না। রাতে খাবার টেবিলে আঙ্কেল-আন্টি বাড়ি যাওয়ার কথা শুনতেই যেন বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাতে লাগলো। তবে আন্টি বুঝতে পেরেছিলো আম্মুর জন্য আমার মন খারাপ ছিল। তাই সকাল সকাল আঙ্কেলকে একটা টিকেট বুকিং দিতে বললেন। বিকেল বেলা সামিন আমায় এয়ারপোর্টে ড্রোপ করে দিয়ে গেলো। ওর মনটা বেশ খারাপ ছিলো, অনেক দিন পর এক সাথে হয়েছিলাম। আবার কবে দেখা হবে কে জানে! ওকে বিদায় দেবার পরেই এই মেয়েটির সাথে দেখা। যার সাথে বসে এখন মনের সুখে গল্প-রাজ্যে হারিয়ে গেছি।

বিমান এখন প্রবল গতিবেগে শূন্যে ভাসিয়ে সম্মুখপানে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি শান্নির মুখের দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে বলে যাওয়া কথাগুলো শুনছি। অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি যেন পলকপাতে সময় নষ্ট করতে বিন্দুমাত্র রাজী নই আমি। ওর হাসিতে যেন মুক্ত ঝড়ে পড়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে চারপাশ। যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে অপরূপা সুন্দরি মায়াবী মোহকারী পরী।

এভাবে মধুর আলাপনে কেটে গেল পুরোটা সময়। ওদিকে প্লেন ল্যাণ্ড করছে বলে মনে হচ্ছে। ধীরে ধীরে আমরা নিচের দিকে নামছি। এই তো প্লেনের চাকা রানওয়ে স্পর্শ করার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এখন গতি একদম-ই কমে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই নামিয়ে দেবে আমাদেরকে। প্লেন থামলো সীটবেল্ট খোলার নির্দেশনা দেয়া হলো। আমরা নামলাম। বিদেশ ভ্রমণ নয় বলে আমাদেরকে ইমিগ্রেশন অফিসে যেতে হলো না। সোজা এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। দু’জনে হাঁটছি, কেউ কিছু বলছি না। পিনপতন নিরবতা চলছে। কারো মুখে কথা নাই। অবশেষে আমি বলে উঠলাম-
- বাসায় কিভাবে যাবা? গাড়িতে না অটো রিকশাতে?
- তুমি বলো। কিসে যাবো!
- হুম, চলো গাড়ি দিয়েই যাই।
গাড়িতে দু’জন পাশাপাশি সীটে বসলাম। এভাবে গাড়ি আমাদেরকে সৈয়দপুর থেকে নীলফামারী এনে পৌঁছে দিলো। শেষে, আমায় একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলে গেলো, ‘‘আসি, ভালো থেকো। খোদা হাফেজ।’’ আমি বাসায় চলে আসলাম। ব্যস্ততার মাঝে মেয়েটির কথা ভুলেই গেছিলাম। কখনো মনেই পড়েনি যে, কেউ একজন কোন এক আনন্দঘন মুহূর্তে আমার পাশে বসে মুক্ত-ছড়ানো কথায় আমায় মুগ্ধ করেছিলো।

কে জানতো, সেই মেয়েটার সাথে আবারো দেখা হবে! কখনো ভাবিওনি যে, ওর সাথে এভাবে দেখা হবে।
দেখা হলো, তবে এবার কোন উড়ন্ত ফ্লাইটে নয়, ওর বাসায়। কোন এক শুভ লগ্নের পূর্ব মুহূর্তে................

পুনশ্চঃ- কল্পনা থেকে লেখা গল্প।
মিষ্টি মেয়ের গল্প / সাইফ নাদির
০৭ জুন, ২০১৮ ইং

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাটা পোষ্ট করার আগে যদি আপনি একবার পড়ে নিতেন তাহলে কিছু ভুল বানান আপনার চোখে পড়তো। আপনি এডিট করে নিতে পারতেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.