![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক টুকরো কাগজে পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম হাতে বসে আছি
বকুল সাধু - ০১
শীতের আলসে দুপুর, কোনমত খেয়েদেয়ে বকুল সাধু শক্ত খাটে পিঠ এলিয়ে দিয়েছে। ওমনি কোত্থেকে যেন উড়ে আসলো মুকুল বাবু। কেমন যেন একটা দুশ্চিন্তা ছেয়ে আছে পুরো মুখ জুড়ে। অস্থিরতা দেখে বুঝতে একটুও কষ্ট হলো না যে, মুকুল বাবু তড়িৎ গতিতে সাহায্যের আশায় বকুল সাধুর কাছে এসেছে। গাঁয়ের লোকেরা কোন বিপদে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে বকুল সাধুর বাড়িতে। বকুল মানুষ হিসেবে খুবই ভালো। পরোপকারী, সাহায্যকারী। এই ২১ বছরে একটি মানুষকেও খালি হাতে বিদায় হতে দেখিনি। যারাই এই বাড়ির চৌকাঠে পা রেখেছে সাহায্যের আশায় তারা সবাই সাহায্য পেয়েছে। সেই সব ফিরিস্তি না হয় আরেক দিন দিবো। আজকের কথায় আসি।
তবে তার আগে নিজের ব্যাপারেও দু’কলম লিখতে চাই। বলা তো যায় না পরিচয় না জেনে নিজের মত করে আমার একটা ছবি এঁকে ফেলবেন। পাছে অস্তিত্ব হারিয়ে আপনাদের কল্পনার ছায়ামূর্তি হতে হয় তাই পরিচয়টা দিয়েই দেই। আমি রিদম, রিদম হাওলাদার। নিষ্ঠুর এক বংশীয় দাঙ্গায় বাপ-ভাই হারিয়ে আমি একমাত্র প্রাণে বেঁচে গেছি। সেই থেকে এই বাড়িতে পড়ে আছি। বলতে পারেন, বকুল সাধুই এখন আমার আশ্রয়স্থল। ঘর-বাড়ি দেখাশোনা করি আর মাঝে মাঝে মাথার উপর ছাতা মেলে ধরি। বকুল সাধুর আবার রোদ একদমই সহ্য হয় না। আগামী মাসে ২৯ বছর পূর্ণ হবে। এই হিসেব আমি না রাখলেও বকুল সাধু ঠিকই রেখেছেন। তাও আবার নিজস্ব আইডিয়াতে। এ বাড়িতে আসার ২১ বছর হলো আর যখন আসি তখন বয়স ছিলো ৮ বছর। এই হলো ২৯ বছর। তবে আমি কি ৮ বছর বয়সে এখানে এসেছিলাম নাকি একটু এদিক সেদিক হবে তা জানা নেই। বকুল সাধু বলেছে, সেটাই মেনে নিয়েছি।
বয়স গড়িয়ে যাচ্ছে বলে, মাঝে মধ্যেই বকুল সাধু আমায় বিয়ের কথা বলে খেপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু আমি মোটেও খেপা লোকের দলে নই। যতই খেপাক বিয়ে আমি করছি না। এসব ঝায়-ঝামেলায় আমি বাপের জনমেও পড়তে চাই না। একা আছি বেশ আছি। বিয়ে করে পায়ে বেড়ি পরার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।
এই যে দেখুন মশাই! নিজের কথা বলেই যাচ্ছি, থামার কোন জো নাই। এই এক বড় সমস্যা, যা বলতে চাই সেটাই বলতে পারি না। আগোড় বাগোড় বকবক করি। যতই সংক্ষেপিত করার চেষ্টা করি ততই লম্বা হয়ে যায়।
বকুল সাধু ‘গড়মড়’ করে বিছানা ছাড়লেন। জিজ্ঞেস করলেন -
- ‘কি ব্যাপার মুকুল বাবু! এই ভর দুপুরে হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে কোথা থেকে আসলে?’
- ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে হুজুর! সব শেষ হয়ে গেছে।’ বলেই মাটিতে বসে পড়লো বৃদ্ধ মুকুল বাবু। মুহূর্তের মধ্যে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেলো বকুল সাধুর। দরাজ গলায় বলে উঠলেন, ‘‘রিদম হালু, সবাইকে তৈরি হতে বলো, এক্ষুনি বেরোবো আমি।’’
মুকুল বাবুর একমাত্র ছেলে অরুণ কুমার। জমি-জমা নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলো নরেণ চাকির ছেলেদের সাথে। সেটা নিয়েই হয়ত তুমুল কাণ্ডকারখানা ঘটে গেছে। ওতকিছু না ভেবে সবাইকে তৈরি হতে বলে নিজেও তৈরি হয়ে নিলাম।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২৬
সাইফ নাদির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:১১
রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর ঝরঝরে লেখা। ভাষা সুন্দর।
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২৪
সাইফ নাদির বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আর অজস্র ভালোবাসা নিবেন রাজীব ভাই
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:০৬
নেওয়াজ আলি বলেছেন: নিখুঁত প্রকাশ । দক্ষ বুনন