নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

সাইফ নাদির

এক টুকরো কাগজে পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম হাতে বসে আছি

সাইফ নাদির › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি শিমুল গাছ

০৫ ই মার্চ, ২০২০ রাত ২:৪৯


এক
পুরো গাছ ফুটন্ত লাল শিমুলে ভরে যাবে। পথিকের ক্লান্ত মনে উচ্ছ্বাসের ঢেউ খেলে যাবে। শীর্ণকায় রাখালের মুখে মধুর সুর জেগে উঠবে। রোদে পোড়া কৃষাণির মলিন বদন সজিবতা পাবে। স্কুল পালিয়ে দুষ্ট ছেলেরা আনমনে তাকিয়ে থাকবে। লাল শিমুলের গন্ধে যে কেউ-ই মাতাল হয়ে যাবে। এ ফুলের শোভায় হৃদয়গৃহে নতুন ডেকোরেশনের চিন্তা জাগবে। এটা সত্যের অনেক দিনের স্বপ্ন। দীর্ঘদিনের বাসনা।

সত্য বিকেলে হাটে যাবে। নয়াগঞ্জের হাট শনি ও বুধবারে বসে। আজ শনিবার। হাটে নানা ধরনের জিনিস উঠবে। পুরো গঞ্জ ক্রেতা বিক্রেতায় ভরে যাবে। দুপুরে খেতে খেতে সত্য মাকে বলে, ‘মা, দাদু যে শিমুল গাছটি কিনেছিলো, ওটার দাম কত ছিলো? মা বললেন, কোনটা, যেটা বাঁশ বাগানের ওই পাশটায় ছিলো? সত্য মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়, হ্যাঁ মা। মা বললেন, সে তো অনেক আগের কথারে বাবা। সবে তখন এই বাড়িতে আসি আমি। তোর বাবাই বাঁশ বাগানে গর্ত খুঁড়ে দিয়েছিলো। তোর দাদু বড় শখ করে গাছটা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু মানুষটাও চলে গেলো সাথে গাছটাও। পাশ থেকে সত্যের মেঝো ভাই সুপ্ত একটু কড়া স্বরে বলে উঠলো, ‘‘মা চুপ করো তো! শিমুল গাছে ভূত থাকে ভুত। আর ওই! তুই এত শিমুল গাছ শিমুল গাছ করিস কেন্ হ্যাঁ?’’ ‘ভাইজান, তুমি যাই বলো, এবার বাড়িতে একটা শিমুল গাছ লাগিয়েই ছাড়বো’ সত্য একটু ভিন্ন স্বরে বললো। ‘‘হুম লাগা লাগা, বাড়িটা ভূতের আখড়া বানা।’’ সুপ্ত এই বলে চলে গেলো। মা ছেলের পাতে মাছের মাথা তুলে দিতে দিতে হাঁসি মুখে বলল,
- সত্য, তুই শিমুল গাছকে খুব ভালোবাসিস তাই না রে?
- হুম মা। খুব ভালোবাসি।
- আচ্ছা ঠিকাছে। আমি সুপ্তকে বলে দিবো ও যাতে তোকে কিছু না বলে।
একথা শুনে সত্যের মুখখানা আনন্দে ভরে গেলো। মুখে হাসি নিয়ে মার প্রতি নিরবে কৃতজ্ঞ হলো। যেন হৃদয় আকাশে সুখের মেঘ জমেছে, যা বৃষ্টি হয়ে মুখাবয়ব দিয়ে বিচ্ছুরিত হচ্ছে।
- মা, আজ আমি হাটে যাবো। শিমুল গাছ কিনে আনবো। এই বলে, তড়িঘড়ি করে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লো সত্য।

দুই
বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হতে চলেছে। সত্য অনেক ঘুরেঘুরে একটা ছোট্ট শিমুলের চারা কিনলো। কেনা শেষ হলে বিলম্ব না করে বাড়ির দিকে চলতে লাগলো। আজ আর বশির মামার দোকানে গুড়ের জিলাপি খাওয়ার একটুও ইচ্ছে হলো না। মনের মধ্যে শুধু ওই একটাই প্রণয়; বাড়িতে গিয়ে গাছটি লাগাতে হবে। কারণ যত আগে গাছ রোপিত হবে তত আগে লাল ফুলে চক্ষু জুড়াবে। দেরি করলেই সবকিছু দেরিতে হবে। সত্যের কচি মনের এটাই বিশ্বাস।

সূর্য্য তখনো ডুবেনি। মা খুন্তি দিয়ে মাটি খুঁড়ে দিচ্ছে। সত্য মুষ্ঠি ভরে মাটি চেপে চেপে ঝুরঝুরা করছে। খুব যত্নে শিমুলের চারাটি বাড়ির দক্ষিণের খোলা জায়গায় রোপন করলো মা ছেলে। মা আঁচল দিয়ে পাগল ছেলের ঘাম মুছে দিয়ে সন্ধা প্রদীপ জ্বালায়।

এ পরিবারের নব্বই উর্ধ্ব বয়োজ্যেষ্ঠ দাদিমার বিশ্বাস; শিমুল গাছে ভূত বাস করে। তিনি এও জোড় দাবি করেন, সত্যের দাদুর মরণব্যাধি ছিলো এই ভূতেরই অভিশাপ। দাদাবাবুর মৃত্যুর পর শখের শিমুল গাছটি কেটে ফেলা হয়। কিন্তু কই কোনো ভূত-প্রেত তো কেউ দেখেনি। ভূত থাকলে তো দেখা দিতো, কারো স্বপ্নে আসতো নয়ত সাঁঝের বেলা উঁকি মারতো। কিন্তু এরকম কিছুই হয়নি। তবুও দাদিমার বিশ্বাস শিমুল গাছে ভূত আছে। তাই কেউ-ই শিমুল গাছ লাগাবার কল্পনাও করতে পারে না এই বাড়িতে। মাস দু’য়েক আগে দাদি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তিনি না থাকলেও তাঁর বিশ্বাসের ভূত রয়ে গেছে। বিশেষত সুপ্তের বিশ্বাসের ভূত শিমুল গাছেই থাকে। এটা শুধু ওর বিশ্বাসই নয় এটা ওর দাবী।

তিন
কেটে গেছে বিশটি বছর। সত্য এখন আগের মত যখন তখন মায়ের কাছে বায়না ধরে না। অনেক বড় হয়ে গেছে। নয়াগঞ্জে একটা পাসারির দোকান করে। কিছু জমিজমাও চাষ করে। বিয়েও করেছে। চাঁদের মত ফুটফুটে তার মেয়ে, নাম ছায়া বতী। দক্ষিণের শিমুল গাছে লাল ফুলে ভরে গেছে। সত্যের স্ত্রী মায়া বতী ছায়াকে কোলে করে গাছের নিচে মাদুর পেতে বসে। ছায়ার কচি মুখে হাঁসি ফুটে, কোমল মনে আনন্দরা খেলা করে। মা মেয়ে শিমুল ফুলে বসন্তের উচ্ছ্বাস পায়। দূর থেকে সত্য গাছের দিকে তাকিয়ে আনমনে মৃদু হাঁসে। মায়ের কথা মনে করে চোখের জল মুছে।

একটি শিমুল গাছ / সাইফ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
০৫/০৩/২০২০ ইং

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:২৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন ভাই, আগের মানুষজনরা ভুত প্রেতে খুবই বিশ্বাসী ছিল।

২| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:২৮

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: শিমুলের আগুন রঙা ফুলে কাঠ শালিকদের উড়াউড়ি সত্যিই অনেক ভালোলাগে, এসব দেখলে প্রকৃতির বসন্ত মনে আসে।

০৫ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪৮

সাইফ নাদির বলেছেন: জ্বি ভাই, কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:০০

একজন নিষ্ঠাবান বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখা।

০৫ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪৭

সাইফ নাদির বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন। তবে বেশ কিছু বানান ভুল আছে।

০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫০

সাইফ নাদির বলেছেন: ধন্যবাদ রাজিব ভাই, আর বানানগুলো কোথায় কোথায় ভুল হয়েছে,একটু দেখিয়ে দিলে ভালো হতো। শুধরে নিতাম।

৫| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুশোভন, সুশ্রী লেখা ।

০৫ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৯

সাইফ নাদির বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ

৬| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:১৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: বসন্তে শিমুলের লাল রঙ চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। শিমুলের ডালে বসা পাখির কুহুতান প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। লেখাটা পড়ে, ছবিটা দেখে এসব কথাই মনে হলো। আর শিমুল গাছে ভুত থাকার কুসংস্কারটা যে সত্য নয়, এ সত্যটাকে সত্য প্রতিষ্ঠিত করে গেল বলে ভাল লাগলো।
পোস্টে প্লাস + +।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.