| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনুপ্রেরণা আসলেই খুব বেশি প্রয়োজন। কিন্তু অনুপ্রেরণা ও অনেক সময় ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
উদাহরণস্বরূপ, আমি আমার মাধ্যমিক পরিক্ষার আগে নির্বাচনী পরিক্ষায় অনেক ভাল ফল করলাম। এতে বোধ হয় বেশি অনুপ্রাণিত হয়েই কিনা, মাধ্যমিকে কাংক্ষিত ফল পেলাম না।
তাই, ব্যর্থতার কারণ হিসেবে যদি অনুপ্রেরণা কেও দায়ী করি, তার দায়ভার আমার উপর না দেয়াই মনে হয় ভাল।
তবে ব্যর্থতাকে যতই পাখির চোখ করি, আমি ও বস্তুত ব্যর্থতাকে খুব একটা পছন্দ করি না ( সবার মতই)। কারণ, এই কারণেই আমি কয়েকবার ব্যর্থ! বুঝিয়ে বলছি।
আমি পেশাগতভাবে না হলেও নেশাগতভাবে শিক্ষক। প্রায় ১০ বছর ধরেই এ নেশায় আসক্ত। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী, আমাকে পছন্দ করে/করেছে। অনেক সম্মান ও পেয়েছি। কিন্তু, ২ জন ছাত্রের জীবন ধারা আমার সকল সাফল্য কে ব্যর্থতায় রূপান্তরিত করেছে।
ঘটনা ১:
আমি মিরপুর- ১০ থেকে প্রায় সময় চ্যম্পিয়ন (ছোট গাড়ী) করে বাসায় আসি। অন্যান্য দিনের মতই, ওই দিন ও আসছিলাম। গাড়িতে উঠতেই একটা ছেলে সালাম দিল। চেহারাটা পরিচিত হলেও নাম মনে করতে পারছিলাম না। ভাবলাম, এলাকার কোন ছোট ভাই হবে। আমাকে জিজ্ঞাস করল,কেমন আছেন! আমি জবাব দিয়ে একই প্রশ্ন করলাম ওকে। উত্তর দিল। বুঝতে পারছিলাম, ও এই গাড়ির কন্ডাকটর। অনেকেই খেয়াল করবেন, গাড়ি খালি থাকলে, ষ্টাফ রা বসে থাকে গাড়ি ভরাট বুঝানোর জন্য। ওই ছেলেটাও তাই করছিল। কিন্তু, খেয়াল করলাম, গাড়ি ভর্তি হয়ে, লোক দাঁড়িয়ে আছে, তবু ও সিট ছাড়ছে না। হেল্পার ওকে ডাক দিলেও ও চোখের ইশারায় চুপ করিয়ে দিল। অগত্যা, হেল্পারই ভাড়া নিতে লাগল। যখন আমার কাছে এল, ছেলেটি বলল, "ছারের ভারা নিস না।" মূহুর্তের মধ্যে আমি অতীতে চলে গেলাম।
ঘটনা ২:
এটাও গাড়িতে। ভিন্ন গাড়ি, স্থান একই। কুরবানির ঈদের ৬ দিন আগে। আমি আবারো অতীতে ফিরে যাই।
২০০৮ এ আমি একটা মাদ্রাসায় পড়াতাম। আমি আর আমার এক বন্ধু আরবি বিষয় বাদে অন্য বিষয়গুলো পড়াতাম। যেমন, বাংলা,গণিত, ইংরেজি ইত্যাদি। তখন মাদ্রাসার ছেলেগুলো অনেক পছন্দ করতো আমাদেরকে। কারণ আমরা মার দিলে ও হুজুরদের মতো অত মারতাম না। বরং, মারের পর আদর ও করতাম। ওই মাদ্রাসার বেশিরভাগ ছাত্র গরিব ছিল। আমি ওখানে প্রায় ১.৫ বছর পড়িয়েছি। ওরা আমাদের কাছে যা পেয়েছে,তা এর আগে অন্য শিক্ষকের কাছে পায়নি, তা বেশ বুঝতে পারতাম। পরে, প্রধান শিক্ষকের সাথে বনিবনা না হওয়ায়, চলে আসি। কিন্তু, এর পর ও ওই এলাকায় গেলে পথের মধ্যে প্রায়শঃই ওদের সম্মানে সিক্ত হতাম। খুব ভাল লাগতো।
কিন্তু, এই দুটি ঘটনায় বুঝলাম, আমি ব্যর্থ! সম্পূর্ণ ব্যর্থ। শিশুকে আমি পারলাম না একটি ভাল জীবনের সন্ধান দিতে, পারলাম না আলো জ্বালাতে! তাই শিক্ষকতা জীবনে অনেক সাফল্যের পরও, আমি ব্যর্থ।
আমি এখন বুঝি, আমি ততক্ষণ পর্যন্তই সফল, যতক্ষণ আমি ব্যর্থ নই। আর, একবার যখন ব্যর্থতার তকমা লেগে যায়, হাজার সফলতাও সে ব্যর্থতার দাগ মুছতে ব্যর্থ হয়।
মজার ব্যাপার কি জানেন? ব্যর্থতা নিজেই নিজের শিকার! আর ব্যর্থতা যদি শিকার করেই ফেলেন, আপনি কিন্তু সফল।
সাফল্য শুধু ব্যর্থতাকে ঝেড়ে ফেলাতেই বিদ্যমান।
(চলবে....)
©somewhere in net ltd.