নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাতসাগর

সাতসাগর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহিংস ঘটনা হিসেবে ‘ইভটিজিং’

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৭

ভূমিকা

সহিংস কোন ঘটনা বললে আমাদের সামনে যে ধরনের চিত্র (মানুষ হত্যা, ঘরবাড়ি পোড়নো, সংঘর্ষ) ভেসে ওঠে ঠিক সে ধরনের চিত্র আমরা ইভটিজিং এর ক্ষেত্রে দেখি না, বিধায় আমরা ইভটিজিং কে অন্য যে কোন একটি সাধারণ বিষয় হিসেবেই অবিহিত করি। এটা সমস্যাজনক ইভটিজিং এর বিষয় নিয়ে আমরা তখনই কথা বলি বা মিডিয়াও সোচ্চার হয় যখন কোন নারী ইভটিজিং এর কারনে অপমান বা নিগৃহ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে। কিন্তু আত্মহত্যার ঘটনাও আবার কিছুদিন পর সময়ের প্রবাহে মিলিয়ে যায়।



অন্যদিকে রাষ্ট্র তার আইনী ব্যবস্থার মধ্যে অন্যান্য অপরাধ যেমন; খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, দুর্নীতি প্রভৃতি বিষয় যে গুরুত্ব দেয় ঠিক একই গুরুত্ব পায় না ইভটিজিং এর মত অপরাধটি। বরং সামাজিকভাবে এই অপরাধের বিষয়টাকে লঘু করে দেখা হয়। যার ফলে এতগুলি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে যাত্তয়ার পরও এই বিষয়ে কোন কঠোর আইন প্রণয়ন লক্ষ্য করা যায় না রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে।



আর এধরনের মনোভাবের কারণ হল ইভটিজিং। এর কারণে উত্থিত ভয়াবহতাকে ঠিকভাবে অনুধাবন না করা বা উপলব্ধি না করা। ইভটিজিং এর কারণে একজন নারীকে আত্মহত্যা করতে হচ্ছে কিন্তু তারপর আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্র এই বিষয়টার ভয়াবহতাকে উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে কারণে এধরনের অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।



আর এধরনের প্রক্রিয়ার মধ্যে হারিয়ে যায় ইভটিজিং এর সহিংসতম উপস্থিতিটা। ইভটিজিং একজন নারীর জীবনে যে ধরনের প্রকাশ্য ও অপ্রাকাশ্য নেতিবাচক প্রভাব রাখে সেই বিষয়গুলোকে একটু সজাগ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করলে দৃষ্টিগোচর হবে ইভটিজিং এর সহিংসতম অংশটি। আর এখানে প্রকাশ্য নেতিবাচকতা বলতে বোঝানো হয়েছে নারীর সামাজিক দৃশ্যমান ও শারীরিক নিগৃহতাকে। অপরদিকে অপ্রকাশ্য নেতিবাচকতা বলতে বোঝানো হয়েছে নারীর মানসিক ও সমাজের দ্বিতীয় লিঙ্গ (ঝরসড়হব ফব ইবধাঁড়রৎ, ১৯৪৯) যে ধরনের অদৃশ্যমান অসামঞ্জ্যতায় ভোগে সেই বিষয়টি । এ সকল বিষয়ের নিরীখে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, ইভটিজিং একটি সহিংস ঘটনা।



ইভটিজিং এর ফল সুদূর প্রসারী। যারা ইভটিজিং এর শিকার হয় তারা সামাজিক ব্যবস্থার কথা চিন্তা করে এ ধরনের হয়রানির গ্লানি নীরবে বয়ে নিয়ে বেড়ায় এবং ধীরে ধীরে নিজের মধ্যে এই নেতিবাচক অভিজ্ঞতাকে লালন করে থাকে যা তাদের ব্যক্তিত্বের চরম বিপর্যয় বয়ে নিয়ে আসতে পারে। এর ফলে যে সব মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয় সেগুলোর মধ্যে বিষন্নতা, উদ্বেগ, মানসিক অস্বস্তি, নিরাপত্তাবোধহীনতা, ভীতি, লজ্জা, হীন মন্যতা, নিজের প্রতি দোষারোপ, অপরাধ বোধ প্রধান। নারীর এধরনের মানসিক চাপগুলো তৈরি হয় ইভটিজিং এর কারণে। আর এগুলো একধরনের সহিংসতা (গধষধারশধ কধৎষবশধৎ; ২০০৩)





তোমাদের সম্মান বাচাঁতে চলে যাচ্ছি

সহিংস ঘটনা বলতে আমরা যে ধরনের ঘটনাকে বুঝে থাকি সে ধরনের ঘটনা অর্থাৎ মারামারি, হানাহানির ঘটনা ঘটছে না তা কিন্তু নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইভটিজিং এর কারণে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যা একভাবে আমাদের সামনে ইভটিজিং এর ভয়াবহতা ও সহিংসতা তুলে ধরে। তাই ইভটিজিং কে সহিংস ঘটনা হিসেবে বিচার না করে এর পুরো অর্থকে বোঝা যাবে না।



ইভটিজিং এর গ্লানি নারীকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই ইভটিজিং কে কোন সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখার কোন অবকাশ নেই। ইভটিজিং এর মতো ঘটনার কারনে সিমি, তৃষা, ফাহিমা, সহ অনেক নারীর আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আর এই আত্মহত্যার মাত্রা দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই ইভটিজিং এর ভয়াবহতাকে পর্যবেক্ষন পূর্বক একে একটি সহিংস ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয়।





গত ১৯শে জানুয়ারী ইভটিজিং এর কারনে আত্মহত্যা করে শ্যামলী আইডিয়াল স্কুলের ছাত্রী পিংকি। সে নবম শ্রেনীতে পড়ত। তার বাবা ছিল না সে দাদির কাছে থাকত। পিংকির দাদি বলেন; পিংকির দাদার পেনশনের টাকা তুলি মাসে মাসে। এবার দর্জির দোকানে জামা বানাবার জন্য কাপড় দিয়ে আসার পর থেকেই সারাক্ষণ আবদার জানাতে থাকে “দাদি তাড়াতাড়ি টাকা তোল, জামা কিনব”। সে টাকা তুলতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলেন তিনি। এসে পিংকির লাশ পান। তিনি বলেন, বাড়ির নিচে পিংকি তার দুই কাজিনের সঙ্গে খেলতে খেলতে দুষ্টুমি করে হাত কাটে, পরে দোকানে যায় ব্যান্ডেজ কিনতে। দুষ্টুমি করে হাত কাটার কারণ কি জানতে চায় বখাটে মুরাদ। পিংকি জবাব না দেয়ায় মুরাদ তাকে চড় মারে। পিংকির কাজিন সহ আশে পাশের সবাই সে ঘটনা দেখে হাত তালি দিয়ে হেসে উঠে। মুরাদ তাকে বলে তোকে কেউ বাঁচাতে আসবে না। পিংকি অপমানে কাদঁতে কাঁদতে বাড়ি চলে যায়। শুন্য বাড়িতে ফ্যানে দাদির শাড়ি পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। উল্লেখ্য পাশের বাসার গাড়ির ড্রাইভার মুরাদ তার আগে থেকে পিংকিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। পিংকি তার আত্মহত্যার সময় পরিবারের উদ্দেশ্যে লিখে রেখে যায় “তোমাদের সম্মান বাচাঁতে চলে যাচ্ছি” (দৈনিক জনকন্ঠ, ১৯ই মার্চ, ২০১০)।



উপরের ঘটনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ইভটিজিং কোন লঘু বিষয় নয়। এর কারনে পিংকি আত্মহত্যার পথ অবলম্বন করে। কোন ঘটনা থেকে পরিত্রানের জন্য যদি কেউ মৃত্যুর পথ বেছে নেয় তবে সেই ঘটনাটিকে আর কোনভাবেই মামুলি বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না, পিংকির মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে মূলত মামুনের মানসিক নৃশংসতা প্রকাশ পেয়েছে। পিংকিকে অপমান অপদস্ত করার মধ্য দিয়ে মামুন তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। আর পুরুষের এধরনের আচরণগুলোকে ঔধহ ঠড়ষধাশধ সহিংসতা হিসেবে চিহ্নিত করেন।



কোন মানুষকে হত্যা করা যদি হয় সহিংসতা তবে ইভটিজিংও এর সহিংসতার আওতায় পড়ে। কারণ ইভটিজিংকারী একজন নারীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে বা তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করছে। কোন মানুষ হত্যার ক্ষেত্রে ব্যক্তির যেমন প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে তেমনি ইভটিজিং এর কারণে মৃত্যুবরনকারী পিংকির ক্ষেত্রে দেখা যায় মামুন রাস্তায় পিংকিকে অপমানের মধ্য দিয়ে সেই একই কাজটি করেছে। সেই দিক বিবেচনায় ইভটিজিংকে একটি সহিংস ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা যায়।







দুই কলেজের সামনে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ

ইভটিজিং যে একটা সহিংস ঘটনা তার প্রমান পাওয়া যায় আমাদের সমাজে ঘটে যাত্তয়া ঘটনাগুলো থেকে। ইভটিজিং এর কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। ২০০৫ সালের ১৯শে অক্টোবর গোপালগঞ্জে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে ইভটিজিং কে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ঐ ঘটনায় ১০০ জন গ্রামবাসী আহত হন। আবার ২০০৯ সালের ২১শে অক্টোবর ঢাকায় ইভটিজিং এর কারণে দুইটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ঢাকা সিটি কলেজের দুই ছাত্রীকে ঢাকা কলেজের তিনজন ছাত্র উত্ত্যক্ত করলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঐ দিন সকাল দশটার দিকে সিটি কলেজের দুই ছাত্রী তাদের দোকানে ফটোস্ট্যাট করাতে আসে। এ সময় ঢাকা কলেজের তিন জন ছাত্র তাদের উদ্দেশ্যে করে অশালীন মন্তব্য করে। ঘটনার সময় তাদের দোকানে সিটি কলেজেরও কয়েকজন ছাত্র ছিল। তারা ঘটনার প্রতিবাদ করলে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঢাকা কলেজের ছত্ররা তাৎক্ষনিকভাবে মোবাইল ফোনে বিষয়টি তাদের সহপাঠীদের জানায়। এর ১০-১৫ মিনিট পরই ঢাকা কলেজের ৩০-৩৫ জন ছাত্র ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারা ইটপাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে সিটি কলেজে হামলা চালায়। ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সিটি কলেজের গেটে ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা কলেজের ভেতর ঢুকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে মেরে শিক্ষকদের তিনটি গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে দেয়। এ সময় সিটি কলেজের মার্কেটিং বিভাগের প্রভাষক মাসুদুর রহমান এগিয়ে গেলে ইটের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। এক পর্যায়ে সিটি কলেজের ছাত্ররা ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ধাত্তয়া করলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সিটি কলেজের ছাত্ররা ঢাকা কলেজের তিন জন ছাত্রকে ধরে বেধড়ক পেটায়। খবর পেয়ে ধানমন্ডি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় ঐ তিন ছাত্রতে উদ্ধার করে। পরিস্থিতি সামলাতে দুই কলেজের সামনে মোতায়েন করা হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।



ধাওয়া খেয়ে ঢাকা কলেজের ছাত্ররা তাদের ক্যাপাসে ফিরে যায়। সেখানে গিয়ে তাদের তিন সহপাঠীকে আটকে রাখার খবর দিলে ঢাকা কলেজের প্রায় দুইশত ছাত্র সিটি কলেজের উদ্দেশ্যে রত্তনা দেয়। এসময় পুলিশ ঢাকা কলেজের সামনে তাদের ব্যারিকেড দিলে ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ ও বেধড়ক লাঠিচার্জ করে। সংঘর্ষের সময় বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা ৮-৯ টি গাড়িতে ভাংচুর চালায়। এ সময় ব্যস্ততম মিরপুর সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দেখা দেয় তীব্র যানজট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ এসময় ৭-৮ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সকাল সাড়ে দশটা থেকে শুরু হত্তয়া এ সংঘর্ষ থেমে থেমে চলে বেলা একটা পর্যন্ত। পরে শিক্ষক ও উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে বেলা দেড়টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এ ব্যাপারে ধানমন্ডি থানায় পৃথক দুইটি মামলা হয়েছে। (২১শে অক্টোবর, ২০০৯)



চিত্র:৩ ইভটিজিং সহিংসতার স্বরূপ



উপরোক্ত ঘটনায় দেখা যায় যে, সিটি কলেজের দুইজন ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার সূত্র ধরে এ ধরনের সহিংস ঘটনার সূত্রপাত। দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে ছোট ঘটনা মনে হলেও এর প্রভাব ও ফল সুদূর প্রসারী তা কিন্তু এখানে লক্ষনীয় । আর এই ঘটনায় তিনজন গুরুতর আহত হয় এবং প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা মিরপুর সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। ফলে হাজার হাজার মানুষের ভোগান্তী পোহাতে হয়। অনেক কে উদ্বিগ্নের মধ্যে সময় পার করতে হয়। যা একভাবে সমাজের মধ্যে একটা অরাজকতার সৃষ্টি করে । আবার এই ঘটনায় ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের প্রায় পাঁচশত ছাত্র লাঠিশোটা হাতে নিয়ে উক্ত এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করে। যার ফলে জনমনে আতংঙ্ক তৈরি হয়। তাই বলা যায় সহিংসতা যদি হয়ে থাকে অরাজকতা, অশান্তি ও ভোগান্তির কারণ তাহলে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের মধ্যে যা হয়েছে তা অবশ্যই একটা সহিংস ঘটনাকে নির্দেশ করে। আর এই ঘটনার সূত্রপাত যেহেতু ইভটিজিং বা উত্ত্যক্ততা। সেহেতু ইভটিজিং যে এক ধরনের সহিংসতা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।









বাসায় আসার পরও রাস্তার কথাগুলো কানে বাজে

ইভটিজিং নারীদের মধ্যে মানসিক যন্ত্রনার সৃষ্টি করে। অর্থাৎ নারীর যে ব্যক্তি সত্ত্বা তা এই সমাজের তৈরি কৃত নিয়মের বাইরে গিয়ে সব সময় ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করতে পারে না। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে আসলে প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয় না। তাই নীরবে সব সহ্য করতে হয় নারীদের। রাস্তায় বের হলে নারীদের প্রায় সময় খুব বাজে কথা শুনতে বা বিভিন্ন অশালীন অঙ্গভঙ্গির সম্মুখীন হতে হয় ইভটিজিংকারীদের দ্বারা। কোন নারী যে ধরনের কথা বার্তা শুনতে অভ্যস্থ না , সে ধরনের কথা বার্তা যদি রাস্তায়, এমনকি ফোনেও শুনে তবে তার মধ্যে মানসিক একটা চাপের উদ্রেক হয়। আর এই চাপগুলো একজন নারীকে হীনতা, বিষন্নতা, একাকিত্বে ভোগায় । যা একজন নারীর পারিবারিক, সামাজিক জীবনে ধ্বস বয়ে নিয়ে আসে বা আনতে পারে। তাই এধরের ঘটনাগুলোকে সহিংসতার মাপকাঠির বাইরে বিচার অসম্ভব।



উত্তরদাতাদের একজন (২৪) বলেন যে, “রাস্তায় কেউ বাজে কথা বললে বা বাজে ইঙ্গিত করলে খুব খারাপ লাগে। বাসায় আসার পরও রাস্তার কথাগুলো কানে বাজে। নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। ঘৃনা হয় লোক গুলোর উপর কিন্তু কিছুই করতে পারি না”। অপর উত্তরদাতা (২৩) বলেন “আমাকে দেখে কেউ বাজে মন্তব্য করলে খারাপ তো অবশ্যই লাগে। এত লোকের মধ্যে রাস্তায় যখন কোন ছেলে বাজে মন্তব্য করে তখন নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়। নিজেকে পণ্য মনে হয়।” রাস্তায় কোন পুরুষের ছুঁড়ে দেয়া অপ্রত্যাশিত, বাজে মন্তব্যগুলো নারীদের মধ্যে স্থায়ী রেখাপাত করে। যা একজন নারীকে মানসিক যন্ত্রনার মধ্যে পতিত করে।



একজন নারী উত্তরদাতা (২৪) তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলেন যে, একবার তার মোবাইলে অপরিচিত নম্বর হতে একটি ম্যাসেজ আসে। ঐ ম্যাসেজের ভাষা তিনি ঠিক বুঝতে পারছিলেন না তবে এটা বুঝতে পারেন যে ঐ ম্যাসেজের ভাষাগুলো ভাল নয়। কিন্তু তিনি এই ম্যাসেজ পেয়ে তেমন বিচলিত হন নি। তবে বিপত্তি ঘটে যখন তার এক বান্ধবী এই ম্যাসেজের ভাষাগুলো তাকে ব্যাখ্যা করে বলেন। তিনি হতবাক হয়ে যান। কারণ এধরনের ভাষায় কেউ কাউকে ম্যাসেজ করতে পারে তিনি তা ভাবতে ও পারেননি। এই ভাষাগুলো তার মতে এতই কুৎসিত যৌনতা সমৃদ্ধ যা কোন ব্যক্তির পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তারপর থেকে তিনি এই ভাষাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারছিলেন না। মোবাইলটা দেখলেই তার ঐ কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজের কথা মনে পড়ত। ফলে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন।



উপরের ঘটনায় দেখা যায় যে, ম্যাসেজের ভাষা দ্বারা কিভাবে একজন নারীর মধ্যে মানসিক দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়। আর এ ধরনের মানসিক দুরাবস্থা একজন নারীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনের ছন্দপতন ঘটাতে সক্ষম। অন্যভাবে দেখলে বলা যায় যে, যে ধরনের ভাষা বা কটুক্তি করা হয় একজন নারীকে তা বাস্তব প্রয়োগ বা ব্যবহার প্রচলিত আছে কিন্তু এই ভাষাগুলোকেই এতই যৌন কুরুচিপূর্ণ করে উপস্থাপন করা হয় যা নারীর জীবনে বিভীষিকার তৈরি করে। তার স্বাভাবিক মানসিকতার মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার তৈরি করে। ফলে নারী দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে থাকে। আর এ ধরনের মানসিক চাপ গুলোকে পর্যবেক্ষন করে গধষধারশধ কধৎষবশধৎ তাকে সহিংস বলে অভিহিত করেন। যেহেতু এধরনের আচরণগুলো / ভাষাগুলো ইভটিজিং এর অংশ তাই একথা বলা যায় যে, ইভটিজিং অবশ্যই একটা সহিংস ঘটনা।





ও ধিহঃ ঃড়---------- ুড়ঁ

ইভটিজিং নারীর মধ্যে একভাবে ভীতিকর পরিস্থিতির তৈরি করে। রাস্তায় বেরুলেই নারীকে ভয়ে থাকতে হয় যে, কখন কে বাজে কথা বলে, ভীড়ের মধ্যে কখন কে গায়ে হাত দেয়, ফলে নারীর স্বাভাবিক যে জীবনযাত্রা তা ব্যাহত হয়। যারা একবার এই টিজিং এর শিকার হয় তারা সব সময়ই এই ভীতিকর পরিস্থিতির কারণে শঙ্কিত থাকে। ফলে সমাজের অন্যান্য পুরুষের প্রতি তার একধরনের বীতশ্রদ্ধা তৈরি হয়। যা একজন নারীর স্বাভাবিক জীবনকে জটিল করে তোলে। ইভটিজিং ও ইভটিজিং কারীদের ভয়ে অনেক মেয়ের দ্রুত বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, অনেকের স্কুলে যাত্তয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অনেকে আবার তার কর্মস্থলও ত্যাগ করছেন।



অপরদিকে অনেকে উত্ত্যক্তকারীর ভয়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার করাই ছেড়ে দেন। মোবাইল বিষয় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটা বিষয়, সবার সাথে যোগাযোগ রাখা, খবরাখবর রাখার কাজে মোবাইলের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমান সময়ে নারীদের কাছে মোবাইল বিষয়টা আতংঙ্কের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।



একজন উত্তরদাতা বলেন, তার কাছে একটা অপরিচিত নম্বর হতে প্রায়ই বার্তা ম্যাসেজ আসত। প্রথমে বার্তার ভাষাগুলো ছিল রোমান্টিক। কিন্তু কিছুদিন পর বার্তার ভাষা হয়ে যায় যৌনতা নির্ভর (ও ধিহঃ ঃড়---------- ুড়ঁ) যা কাউকে দেখানো যায় না। আবার কারও সাথে শেয়ার করাও যায় না। পরে তিনি ঐ নম্বর থেকে কোন বার্তা এলেই তা না পড়ে মুছে ফেলতেন। কিন্তু এই বিষয়টা নিয়ে তিনি এখনও আতঙ্কে ভোগেন।



একজন ছেলে উত্তরদাতা (২৫) বলেন যে, প্রথমে নারীদের রোমান্টিক বার্তা পাঠানো হয় তাদের পটানোর জন্য। কিন্তু মেয়েরা যখন কোন উত্তর করে না বা কথা বলতে চায় না বা ভাব দেখায় তখন এধরনের বাজে বার্তা পাঠানো হয়। তবে এটা পাঠিয়ে ছেলেরা মজা পায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ছেলেরা এগুলো পাঠিয়ে থাকে মেয়েদের উপর মনের ক্ষোভ মেটানোর জন্য।



এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, ছেলেরা মজা করা বা মনের ক্ষোভ মেটানো যে কারনেই হোক না কেন এধরনের বাজে বার্তা পাঠায়। যা নারীদের কে একভাবে আতঙ্কগ্রস্থ করে তোলে।



একজন অভিভাবক বলেন যে, আমার মেয়েটি কলেজে পড়ে। বিধায় তাকে ব্যাচে পড়া ও কোচিং এ পড়তে হয়। তাই তার খোঁজ রাখার জন্য ওর তাতে ফোনটি দিয়েছিলাম। কিন্তু কিভাবে ছেলেরা নম্বর পেয়ে যায়। বাধ্য হয়ে মেয়েটা এখন আর নিজের কাছে ফোন রাখে না। তাই দুশ্চিন্তায় থাকি যতক্ষণ না মেয়েটি বাড়িতে আসে। এখানে দেখা যাচ্ছে যে, ইভটিজিং এর ভয়ে মেয়ের কাছে ফোন না থাকার কারণে সন্তানের খোঁজ রাখতে পারছেন না। ফলে তারাও (অভিভাবক) আতঙ্কে দিন কাটান।



ইভটিজিং এর মাত্রা দিন দিন এতই বেড়ে গেছে যে ইভটিজিংকারীরা মেয়ের পরিবারকে হুমকি দেয় বা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবারও হুমকি দেয়। ২০১০ সালের ২৪ শে এপ্রিল দৈনিক যুগান্তরে খবরে আসে যে, রংপুরের কাউনিয়ায় মিঠু মিয়া নামে একজন বখাটে তার প্রেম প্রত্যাখ্যান করার কারণে রোজিনা নামের একজন মেয়েকে অপহরণ করার হুমকি দেয়। বখাটেরা তাকে (রোজিনা) জোর করে তুলে নিয়ে যাত্তয়ার হুমকি দেয়ায় সে এখন বাড়িতে একরকম বন্দি জীবন যাপন করছে। আবার গাইবান্ধার মেয়ে চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী তৃষা বখাটেদের হাত থেকে বাচার জন্য ভয়ে পুকুরে লাফ দেয়। সে সাতার না জানার কারণে পানিতে ডুবে মারাও যায়।



এখানে দেখা যায় যে, রোজিনা ইভটিজিংকারীদের ভয়ে নিজেকে বন্দি রেখেছে। কারণ এধরনের পরিস্থিতি তার মধ্যে একটা ভীতিকর অবস্থার তৈরি করেছে। আবার তৃষা বখাটেদের ভয়ে সাঁতার না জানা সত্ত্বেও পুকুরের পানিতে লাফ দেয়। সে এতই ভয় পায় যে, তার হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে তার মৃত্যুও ঘটে। আর এধরনের ঘটনা আমাদের সামনে নারীদের একধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি কথা তুলে ধরে আমাদের সামনে। যা অন্যভাবে অবশ্যই সহিংসতারই নামান্তর।





কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐ সময়টায় কেউ এগিয়ে আসেনি

ইভটিজিং এর কারণে নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিঘœ ঘটে। সমাজের সদস্য হিসেবে একজন নারীর যে ধরনের সুযোগ ও অধিকার লাভ করার দাবি রাখে তার মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা অন্যতম। সামাজিক নিরাপত্তা হল সমাজের সদস্য হিসেবে নির্বিঘেœ সমাজে চলাচল ও বসবাসের অধিকার। কিন্তু দেখা যায় ইভটিজিং এর কারণে নারীরা তার সামাজিক অধিকার ভোগে যেমন অবহেলিত হয় তেমনি সামাজিক নিরাপত্তা নিয়েও তটস্থ থাকে। রাস্তাঘাট, পাবলিক যানবাহন, অফিস-আদালত, গার্মেন্টস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সকল পাবলিক পরিসর এমনকি নিজের ঘরের মধ্যে নারীরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। ইভটিজিং এর বিস্তৃতি পাবলিক পরিসর থেকে একান্ত ব্যক্তিক জীবন পর্যন্ত বিস্তৃত। আর এই নিরাপত্তাহীনতার জন্য দায়ী পুরুষ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৭০ এর পরবর্তী সময় হতে নারীরা বাইরে কাজের জন্য পুরুষের পাশাপাশি অবস্থান নিতে শুরু করে। ফলে পুরুষদের কাজের ক্ষেত্রগুলোতে নারীদের বিচরণ দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে নারীরা একভাবে কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের প্রতিযোগী হয়ে উঠতে শুরু করে। যদিও তারা সহকর্মী হিসেবে কাজ করতে থাকে তবুও পুরুষরা যেহেতু তাদের একক আধিপত্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করে তাই নারীদেরকে পুরুষরা সহকর্মী নয় বরং প্রতিযোগী হিসেবে মূল্যায়ন করতে থাকে। তাই দেখা যায় এসময় পুরুষরা নারীদের প্রতি অনেক বেশি আক্রমনাত্মক ও হিংসাত্মক হয়ে উঠে। যার ফলশ্রুতিতে নারীরা সমাজে পুরুষদের দ্বারা নির্যাতিত, নিগৃহ হতে থাকে এবং তাদের (নারী) সামাজিক যে নিরাপত্তা তা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। (মুখার্জি, ২০০৬)



একজন নারী উত্তরদাতা বলেন, পাবলিক বাসগুলোতে উঠলে আজকাল বিভিন্ন রকম অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন, একদিন বাসে করে কর্মস্থলে যাত্তয়ার সময় হঠাৎ তার পিঠে কে যেন হাত দেয়। বাসে ভিড় থাকায় তিনি বিষয়টিকে অনিচ্ছাকৃত ভেবে এড়িয়ে যান। পরবর্তীতে যখন আবার তার পিঠে হাত লাগে তখন তিনি ভয় পেয়ে যান। কিন্তু এত ভিড়ের মধ্যে কে তার গায়ে হাত দিচ্ছে তিনি তা বুঝতে পারেন নি। ফলে তিনি ভয় পেয়ে যান এবং রাস্তার মধ্যেই বাস থেকে নেমে পড়েন।



এধরনের ঘটনা পাবলিক বাস গুলোতে প্রায়ই ঘটে থাকে। ভীড়ের মধ্যে সুযোগ পেলেই পুরুষরা নারীদের গায়ে হাত দেয়। ঐড়ঁংঃড়হ (১৯৮৮) বলেন, নারীর নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো যেন তার মাথায় থাকে সেজন্য নারীকে হয়রানি (ঐধৎধংসবহঃ) করা হয়।



সামাজিক যে নিরাপত্তা তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব হল সমাজের। কিন্তু দেখা যায়, সমাজ নারীদের এধরনের ঘটনা থেকে পরিত্রাণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারছে না। বিধায় এধরনের ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে নারীর সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি কে আবার জ. ঞড়হম পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে মিলিয়ে দেখেন। ঞড়হম (১৯৯২) বলেন, নারীর সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার জন্য দায়ী হল পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামো।



আমরা যদি সিমি বানু, ফাহিমা, পিংকি বা খুলনার রুমীর আত্মহত্যার বিষয়টি একটু ভালভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখব যে, তাদের আত্মহত্যার পেছনে একটা বড় কারণ ছিল সামাজিক নিরাপত্তা। কারণ সমাজ ঐ সকল নারীকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এই ব্যর্থতাই মূলত এই সকল নারীকে সমাজের উপর আস্থা হারিয়ে আত্মহত্যার পথ অবলম্বন করতে বাধ্য করেছে। খুলনায় ইভটিজিং এর কারনে আত্মহত্যাকারী রুমীর বড় ভাই প্রকৌশলী কামরুল হাসান মুন্না বলেন, আমাদের পরিবার খুব ছোট একটা পরিবার। পরিবারের আশা ছিল আমরা দুই ভাই বোন বড় হয়ে একটা কিছু করব। আমরা যেখানে বাড়ি করেছিলাম। সেই দৌলতপুরে আমরা আসলে স্থানীয় না। বাড়ি করার সময়ই এই এলাকার লোকজন নবাগত হিসেবে আমাদের তেমন স্বাগত জানায়নি। সেই এলাকার লোকজন ভালো ছিল না। যারা আমার বোনকে উত্ত্যক্ত করত তাদের মামারা সন্ত্রাসী ছিল। আমরা এসব বিষয় এলাকার লোকজনকে বলেছি। সেটা কাজে আসেনি। তারপর আমরা বাসা পাল্টাই। আমার ছোট বোন ঢাকায় পড়তে আসে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেত্তয়ার সময়ই ও খুলনায় ফেরে। ঐ দিনই ঘটনাটা ঘটে। আমাদের চার পাশে অনেক বাড়িঘর আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঐ সময়টায় কেউ এগিয়ে আসেনি। তাহলে হয়তো এ ব্যাপারটা ঘটত না।



মানুষ হিসেবে রুমী ও তার পরিবার সমাজ থেকে যে ধরনের সহানুভূতি ও সাহায্য পাত্তয়ার কথা ছিল তারা সমাজ থেকে তা পায়নি। বরং উত্ত্যক্ততা করার বিষয়টি সমাজের অপর লোকদের জানালেও তারা এর প্রতিবাদে বা প্রতিরোধের এগিয়ে আসেনি। আবার সমাজের যে আইনী প্রতিষ্ঠান সেটাও রুমীকে বা তার পরিবারকে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তাই বলা যায় সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা একজন নারীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এই নিরাপত্তাহীনতার সূত্রপাত কিন্তু ইভটিজিং এর মাধ্যমে। ইভটিজিং এর ভয়াবহতা যে কতখানি তা সহজে অনুমেয়। এজন্য ইভটিজিং যে একটা সহিংস ঘটনা তা বলার অবকাশ রাখে না।





তুমি সাবধান হতে পার না

ইভটিজিং বিষয়টা একটা নারীর জন্য সংবেদনশীল একটা বিষয়। এর নেতিবাচক প্রভাব নারীকে অসহায় অবস্থার মধ্যে পতিত করে। নারীর মনের উপর চাপ তৈরি করে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা যায়, ইভটিজিং এর শিকার নারীটি তার পরিবার থেকে সহযোগিতার বদলে বঞ্চনার শিকার হন বেশি। পরিবারের আচরণ গুলো এমন হয় যেন সমস্ত দোষ নারীটির। পরিবার থেকে শৈশবকাল থেকে নারীকে তার অধস্তন অবস্থার কথা শিক্ষা দেয়া হয়। ঘরের বাইরে তার আচরণ কেমন হবে তা ঠিক করে দেয়া হয়। একটা পুরুষ শিশুকে যতখানি স্বাধীনতা দেয়া হয় ঠিক ততখানিই পরাধীনতার শিকল পরানো হয় নারীর পায়ে। তাই দেখা যায় কোন নারী ইভটিজিং এর শিকার হলেও পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা উল্টো তাকেই দোষারোপ করে। আর পরিবারে এই বিষয়গুলো জানাতে গেলে হয় নারীর বাইরে যাত্তয়া বন্ধ করে দেয়া হয় বা তাকে সংযত ভাবে চলার পরামর্শ দেয়া হয়। যা একভাবে নারীর উপর চাপ তৈরি করে। যে কারণে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (যতক্ষন বিরক্তির বিষয় মাত্রা না ছাড়াই) নারীরা এ ধরনের ঘটনাগুলো বাড়িতে বলে না । কারণ তারা জানে এই ঘটনা বাড়িতে বললে বাইরের চাপের সাথে তার উপর পারিবারিক চাপ আরোপিত হবে।



একজন নারী উত্তরদাতা (২৪) বলেন, তার ফোনে অপরিচিত নম্বর হতে অনাকাঙ্খিত কল ও বার্তা আসতে থাকে। কিন্তু বিষয়টা খারাপ লাগলেও প্রথমে তিনি এই বিষয়টা কাউকে জানাননি। কিন্তু এমন হল যে, ঐ অপরিচিত নম্বরটি থেকে বার বার ফোন আসার কারনে বাড়ির সবাই তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা শুরু করল। তাই বাধ্য হয়ে তিনি ঘটনাটি বাবা মা কে জানান। কিন্তু তার উল্টো ফল হয়। তার বাবা বলেন, তোমার নম্বর বাইরে লোক কিভাবে পায় ? আর কারো কি ফোন নাই ? তুমি সাবধান হতে পার না। তার মাও তার বাবার কথায় সায় দেন। তারপর তার কাছে থেকে ফোনটা কিছুদিনের জন্য নিয়ে নেয়া হয়।



উপরোক্ত ঘটনায় দেখা যায় যে, ইভটিজিং এর কারণে নারীটি এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তার উপর পরিবার থেকে তার বাবা ও মা যে ধরনের আচরণ করেন তা তার উপর বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়ায়। বাবা ও মায়ের আচরণ এমন যে এঘটনার জন্য তাদের মেয়ের দায়ী। আবার মেয়েটির মোবাইল নিয়ে নেয়ার ফলে হয়ত তার যে সামাজিক যোগাযোগ তাতে বাধার সৃষ্টি হয়। একটা অনাকাঙ্খিত ফোনের জন্য মেয়েটির সামাজিক যোগাযোগ ও পারিবারিক অবস্থান সবদিকেই সংকট তৈরি হয়। কিন্তু বিষয়টি উল্টো হত্তয়া উচিত ছিল। পরিবার থেকে এসময় মেয়েটিকে সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল। তার সাথে খারাপ আচরণ না করে বরং তার ফোন সংক্রান্ত যে সমস্যা তা সমাধান করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পরিবার থেকে এধরনের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে মেয়েটিকে তার স্বাধীন জীবন যাপনে শর্ত আরোপ ও বাধার সৃষ্টি করেছে। যা মেয়েটির মানসিক অবস্থাকে আরও বেশি শঙ্কার মধ্যে পতিত করেছে।



অপর একজন নারী উত্তরদাতা (২৩) জানান যে, তিনি কলেজে যাত্তয়া আসার সময় তাদের গ্রামের একজন তাকে রাস্তায় বিরক্ত করত। তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যাত্তয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ছেলেটির বিরক্ত করার মাত্রাটা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পেতে থাকল। এমন অবস্থা হল যে, তার কলেজে যাত্তয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। ফলে তিনি বাধ্য হয়ে তার মা বাবা বড়ভাইকে ঘটনাটা জানান। তখন তার বড় ভাই তাকে উল্টো শাসন করে। তাকে তার চলাফেরা ঠিক করতে বলা হয়। তার বড় ভাই বাবাকে বলে তার জন্য বোরকার ব্যবস্থা করান। তাকে বোরকা পরে কলেজে যাতায়াত করতে বাধ্য করা হয়। তার বাবা মাও বিষয়টিকে সমর্থন করেন। যদিও তিনি ছোট বেলা থেকে কখনও বোরকা পরে অভ্যস্থ নন। কিন্তু বাধ্য হয়ে পরিবারের চাপে তাকে বোরকা পরতে হয়।



উপরের ঘটনায় দেখা যায় যে, নারীরা সাধারণত প্রথমে উত্ত্যক্ত করার বিষয়টি পরিবারে জানায় না। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে বিষয়টা পরিবারকে জানায়। এর কারণ হতে পারে যে, পরিবার থেকে এধরনের চাপ আসতে পারে বলে তারা আগেই ধারণা করে থাকেন। আর এই উত্ত্যক্ততার ঘটনা পরিবারে জানানোর অর্থই হল পরিবার থেকে প্রথমেই তার উপর নিয়ন্ত্রন আরোপ করা। আর এই বিষয়টিই ঘটে এই উত্তরদাতার ক্ষেত্রে। তার শৈশবে থেকে কখনই বোরকার ধারণা ছিল না এমনকি তাকে একটা সময় এসে বোরকা পরতে হবে এ ধারণাও তার মধ্যে ছিল না। কিন্তু ইভটিজিং এর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পরিবার থেকে তাকে বোরকা পরানোর ব্যবস্থা করা হয় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই। অর্থাৎ এধরনের ঘটনাগুলোতে দেখা যায়, পরিবার থেকেই নারীর উপর প্রথম চাপটা আসে। যা তার মানসিক অবস্থাকে আরও ভঙ্গুর করে তোলে। ফলে এধরনের মানসিক ভঙ্গুরতা নারীর ক্ষেত্রে সহিংসতার বিষয়কেই তুলে ধরে।





ছেলেটির বাবা একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাধর ব্যাক্তি.....

ইভটিজিং এর শিকার নারীরা পারিবারিকভাবে যেমন চাপে থাকে তেমনি সামাজিকভাবে চাপে থাকে। তবে এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও একভাবে সামাজিক চাপের বাইরে থাকে না। সামাজিক চাপের সাথে আবার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও লক্ষ্য করা যায়। সমাজস্থ এই চাপ বৃহৎ সামাজিক অবস্থার সাথেও জড়িত। যেখানে ক্ষমতার সম্পর্ক ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তাই সামাজিক চাপকে বোঝার ক্ষেত্রে ব্যক্তি, পরিবার, ক্ষমতা, সকল বিষয়কেই মাথায় থাকা জরুরি।



“লিপা দশম শ্রেনীর ছাত্রী। তারা দুই বোন। তার বাবা-মায়ের সাথে থাকে। তার বাবা সরকারি চাকুরি করে এবং মা একজন গৃহিনী। লিপা দেখতে বেশ সুন্দরী। সে যখন নবম শ্রেনীতে পড়ত তখন থেকে তাদের এলাকার একটি ছেলে তার পেছনে লাগে। তাকে স্কুলে যাত্তয়ার পথে বিরক্ত করত। তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিত। কখনও ছেলেটি তার বন্ধুদের নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করত তাকে দেখে। কখনও আবার পথ আগলে দাঁড়াত লিপার। ছেলেটি পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশোনা করে পড়াশুনা বাদ দেয়। তার বাবা ঐ এলাকার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তিনি আবার একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সরাসরিভাবে যুক্ত। ফলে তার ছেলে হিসেবে সে এলাকায় বেশ প্রভাব বিস্তার করে চলত। ফলে লিপা প্রথমদিকে এসব ঘটনা তার পরিবারকে জানায়নি। কিন্তু নবম শ্রেনীর বার্ষিক পরীক্ষার সময় একদিন রাস্তায় ছেলেটি তাকে তুলে নিয়ে যাত্তয়ার হুমকি দেয়। লিপা তার কথায় ভয় পেয়ে যায়। তখন সে বাড়িতে তার বাবা মাকে ঘটনাটি জানায়। তার বাবা সমস্ত ঘটনা শুনে চিন্তায় পড়েন। পরে তিনি ছেলেটির বাবার কাছে গিয়ে ঘটনাগুলো বলেন। ছেলেটির বাবা বিষয়টা দেখবেন বলে লিপার বাবাকে আশ্বাস দেন। কিন্তু দেখা যায় এর পরবর্তীতে লিপাকে উত্ত্যক্ত করার মাত্রা দ্বিগুন আকারে বেড়ে যায়। পরে লিপার বাবা এলকার অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে ঘটনাটা বলেন। কিন্তু তারাও এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখায় না। কারণ ছেলেটির বাবার বিপক্ষে কথা বলতে চাচ্ছিলেন না। কারণ ছেলেটির বাবা একটি রাজনৈতিক দলের ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়ায় পুলিশের সাথে তার ভাল সম্পর্ক ছিল। অগত্যা লিপার বাবা ঐ এলাকা ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। যেহেতু তিনি সরকারী চাকুরিজীবী ছিলেন তাই তদবির করে অন্য জেলায় বদলি হয়ে যান।”



উপরের ঘটনায় দেখা যায় যে, লিপার বাবা তার মেয়ের উত্ত্যক্ততার জন্য সমাজের গন্যমান্যদের কাছ থেকে সাহায্য পাননি। এলাকার লোকজন ছেলেটির বাবাকে ভয় পায়। কারণ তিনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হত্তয়ার কারনে তিনি এলাকায় একটা আলাদা ক্ষমতা ধারণ করেন। আর সেই ক্ষমতার দ্বারা তিনি তার ছেলেকে ইভটিজিং এর ঘটনা থেকে একভাবে রক্ষা করেন। এখানে তার রাজনৈতিক ক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে সমাজের কাছে থেকে কোন বিচার বা প্রতিরোধ না পাত্তয়ার কারনে লিপা নিজেও তার পরিবার এক ধরনের নিগৃহতা মধ্যে পতিত হয়। যা একটা চাপের সৃষ্টি করে। তাই বলা যায় সামাজিক চাপটা ব্যক্তির উপর যেমন ক্রিয়াশীল তেমনি ব্যক্তির পরিবারের উপরও সমান ক্রিয়াশীল । কারন লিপার ঘটনা নিয়ে লিপার বাবা মাকে উদ্বিগ্ন থাকতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত তার বাবা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন।



একজন পুরুষ উত্তরদাতা (২৬) এ প্রসঙ্গে বলেন যে, এলাকায় যারা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে তারা হয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে জড়িত নতুবা ধনীর দুলাল। তার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বলেন, তার এলাকায় মেয়েদের স্কুলের সামনে নির্দিষ্ট সময়ে যারা দাঁড়িয়ে থাকে তাদের অধিকাংশই গ্যারেজে কাজ করে। গ্যারেজের থেকে তারা ছুটি নিয়ে ঐ সময় স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। এই ছেলেগুলোর আবার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে একটা সম্পর্ক থাকে। তারা বিভিন্ন মিছিল, মিটিং এ নেতার সাথে থাকে। ফলে এলাকার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে তেমন কথা বলার সাহস দেখায় না বা তাদের ঘাটাতে চায় না।



আবার সিমি বানুর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তার মৃত্যুর পরও যাদের জন্য তার মৃত্যু হয়েছিল তারা তার পরিবারকে এখনও হুমকি দিচ্ছে। অন্যদিকে রুমীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ১৮ বছরের জেল হলেও তাদের আত্মীয় স্বজনরা রুমীর পরিবারকে এখনও হুমকি দিচেছ। রুমীর ভাই বলেন তারা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা মরিয়া হয়ে আছে। ফলে তারা সামাজিকভাবে নিারপত্তাহীনতা ও চাপে আছেন। তাই দেখা যাচ্ছে যে, ইভটিজিং এর বিষয়টা বৃহৎ রাজনৈতিক সামাজিক পরিসরের সাথে যুক্ত যা ইভটিজিং এর শিকার নারী ও তার পরিবারের উপর চাপ তৈরী করে। ফলে এই ঘটনাগুলো কে সহিংসতার নিরিখে বিচার অপরিহার্য।



সহিংসতার সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে কধষবশধৎ (২০০৩) শারীরিক নিগৃহ, অত্যাচারের পাশাপাশি মানসিক দূরাবস্থাকেও সম্মিলন ঘটান। তার মতে, সহিংসতাকে বুঝতে হলে শুধুমাত্র দৃশ্যমান নিষ্পেশন মূলক ঘটনাকে দেখলেই চলবে না বরং যে সকল ঘটনা ব্যক্তির মানসিক, সামাজিক, পারিবারিক অশান্তির সৃষ্টি করে তাকেও মূল্যায়িত করতে হবে। আর ইভটিজিং এমন একটি বিষয় যা নারীর শারীরিক, মানসিক, ব্যক্তিক, পারিবারিক, সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। তাই একে একটি সহিংসতা মূলক ঘটনা হিসেবে না বিচার করে কোন উপায় নাই। ইভটিজিং এর কারনে অনেক নারী আত্মহত্যা যেমন করছে তেমনি নারী আবার মানসিকভাবে বিকারগ্রস্থ হয়ে পড়ছে এর কারনে। যা তার স্বাভাবিক জীবন যাত্রাকে বিভীষিকার মুখে পতিত করে। অন্যদিকে ইভটিজিং এর কারণে নারীর পারিবারিক সামাজিক জীবনে চাপের সৃষ্টি যেমন হচ্ছে তেমনি নারী আবার ব্যক্তি হিসেবে এর দ্বারা নিজেও চাপের মধ্যে থাকছে।



উপসংহার

ইভটিজিং এর কারণে বিশেষ করে অল্প বয়সী নারীর মনে নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয় বেশি। দেখা যায় কিশোরী বয়সী নারী থেকে মধ্যবয়স্ক নারী সকলেই ইভটিজিং এর শিকার হয়। তবুও অল্প বয়স্ক নারীর জীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। বয়স অল্প হত্তয়ার কারণে সমাজের সাথে নারীর মিথস্ক্রিয়াগুলো অনেক জটিল প্রক্রিয়ায় ঘটে থাকে। তাই দেখা যায় আত্মহত্যাকারী নারীর সবাই অল্প বয়স্ক। যারা সহজে সমাজে পুরুষের এই কৃত কর্মগুলোকে মেনে নিতে পারে না। ফলে তারা ইভটিজিং এর প্রতিবাদ করছে আত্মহত্যার মাধ্যমে। অন্যদিকে ইভটিজিং এর কারনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যার কারণে অনেক লোক আহত হয়েছে। আবার এর কারনে বৃহৎ সমাজের মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাত্রার স্বাভাবিকতাকে হারাচ্ছে। তাই দেখা যায় ইভটিজিং বিষয়টা বৃহৎ সামাজিক প্রেক্ষাপটে যেমন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে তেমনি নারীর মানসিক অবস্থারও বিশৃঙ্খলিত করে তুলেছে। তাই ইভটিজিং অবশ্যই একটি সহিংসতা ধরনকেই প্রতিফলিত করেছে।















মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.