নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একাল-সেকাল

উচ্চাভিলাষী নই, সততাকে শ্রদ্ধা করতে পছন্দ করি।

একাল-সেকাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুরাইনবাসীর কাছে স্যাটেলাইট মানে ক্ষুধার্ত পেটে সিনেমা দেখা !!!

২২ শে মে, ২০১৮ দুপুর ১২:০৭

তথ্যসূত্রঃজুরাইন : বারো মাস নরক বাস!
ছবি : সংগৃহীত
জুরাইনের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। বর্ষা মৌসুম আসার আগে শীতকাল জুড়ে তার ফেসবুক ওয়াল জুড়ে দেখা যেতো জুরাইনের নানা দুর্ভোগের ছবি। ধুলায় একটি এলাকার জনজীবন কিভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরে সে চিত্র ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করতেন মিজানুর রহমান। শীতকাল শেষ হলো। কিন্তু থেমে যায়নি মিজানুর রহমানের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরার গল্প। এবার জলাবদ্ধতা। এসিড, রাসায়নিক মেশানো বিষাক্ত নোংরা পানি কাদায় মাখামাখি জুরাইনবাসীর দৈনন্দিন জীবনের অমানবিক চিত্রই তুলে ধরছেন মিজানুর রহমান। এই বিষয়ে একবাক্যে মিজানুর রহমান বললেন- ‘আমরা কিভাবে বেঁচে আছি তা দেখুক মানুষ।’
এই দুর্ভোগ যন্ত্রণার চিত্র নতুন কিছু না। এক যুগেরও অধিক জুরাইন বাসীর জীবন যাপনের চিত্র এটি। স্থানীয়দের জীবন যাপনে দুর্ভোগের ক্যালেন্ডার দুইটি ভাগে ভাগ করা। সেখানে ৯ মাস জলাবদ্ধতার চিত্র আর ৩ মাস ধুলা আবর্জনার চিত্র, কোনো কোনো এলাকায় থাকে ১২ মাসই জলাবদ্ধতার ভোগান্তি। এ নিয়েই জুরাইনবাসীর বসবাস। এর মাঝেই বেড়ে উঠছে জুরাইনের শিশুরা।
আর দুর্ভোগের এক অমানবিক এলাকার নামই জুরাইন। জুরাইন শব্দটি মূলত আরবি শব্দ থেকে এসেছে। যার বাংলা শাব্দিক অর্থ হলো সবুজ। কিন্তু আদতে এখানে দেখা মিলবে তার বিপরীত চিত্র। যতদূর চোখ যাবে গিঞ্জি পরিবেশ, নোংরা কালো আবর্জনা ভরা পানি আর শীত মৌসুমে ধুলোয় ধূসর এক এলাকা। ১ ইঞ্চিও জনগণের দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ১৯৮৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় সারা দেশ ডুবে গেলেও ডিএনডি এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ না করার কারণে বন্যার পর অতি দ্রুত এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যথাযোগ্য নিয়ম নীতি না মেনে অনেক ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমতি ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল ভবন। সেই সাথে আছে ছোট বড় নানা কারখানা।

জুরাইন এখন ঢাকার একটি অবহেলিত ও জনদুর্ভোগের এলাকা হিসেবে পরিচিত। শুধু অবহেলিত বললে এর আসল চিত্র প্রকাশ হবে না। এখানকার মানুষের জীবন যাপন অমানবিক নাগরিক জীবনের সব সংজ্ঞাকে হার মানিয়েছে। এখানে স্বাভাবিক জীবন শব্দটিই অস্বাভাবিক। বিপর্যস্ত পরিবেশে বসবাস করাটাই যেন জুরাইনবাসীর ললাট লিখনে পরিনত হয়েছে।
দুর্ভোগ এখানে সারা বছরের সঙ্গী। বর্ষায় জলাবদ্ধতা তো শীতে ধুলোর প্রকোপ। জুরাইনে কিছু কিছু এলাকাতে সারা বছরই জলাবদ্ধতা থাকে। যাও দু এক মাস জলাবদ্ধতা কমে যায় তখন ধুলোয় নাকাল হতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে একাকার। চলাচল করা দায় হয়ে ওঠে।
কে আলী সরদার রোড, মেডিকেল রোড, ঋষি পাড়া, ওয়াসা রোড, করোলা গার্মেন্ট, মিষ্টির দোকান, খাল পাড়, নুরানি মসজিদ রোড, মাজার গলি, বিড়ি ফ্যাক্টরি, কমিশনার বাড়ি মোড়, কালামিয়া রোড, চেয়ারম্যান বাড়ি, তালতলা গলি, কলেজ রোড এলাকায় জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। স্থানীয়রা এই জলাবদ্ধ সড়কগুলোকে বিদ্রুপ করে ডাকে ‘আমাদের ছোট নদী’ নামে।
[দীর্ঘদিনের এই সমস্যার কোন স্থায়ী সমাধান পায়নি এলাকাবাসী। বছরের পর বছর ধরে একই চিত্র। ড্রেন আর স্যুয়ারেজের সাথে কারখানার এসিড কেমিকেল পানি উঠে রাস্তায় জলাবদ্ধতায় স্থানীয়দের জীবন যাপন এক অমানবিক অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা, জলাবদ্ধতার কারণে কয়েকজন মানুষের মৃত্যুও হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নানা ধরনের রোগশোক বিশেষ করে চর্ম রোগে আক্রান্ত হতে হচ্ছে এখানকার বহু অধিবাসীদের।
স্থানীয় যুবক রিজভী চৌধুরী বাংলাকে বলেন, ‘ভাই এলাকা থেকে বের হওয়ার উপায় নাই। আমরা এই এলাকায় অনেকটা বন্দীদশায় আছি। জুরাইন রেল গেট এলাকায় এখন হাঁটুর উপরে কাদা। কিছু দেখা যায় না। কে কোথায় পা ফেলছে। অন্য দিকে নিচে (পূর্ব জুরাইনে) কমর সমান পানি। নিয়মিতই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতি এক দেড় ঘণ্টায় একটা না একটা দুর্ঘটনা ঘটবেই। হয় রিকশা, না হয় অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটছে।’

জুরাইনের এই নোংড়া কাদায় মাখামাখি হয়েই কাটছে তাদের দৈনন্দিন জীবন। অনেকে এলাকা ছেড়েও চলে গেছেন দুর্ভোগের সাথে আপোষ করে থাকতে না পেরে। পূর্ব জুরাইন মিষ্টির দোকান এলাকায় দেখা গেলো রাস্তায় জমে আছে নর্দমা আর সুয়ারেজের দূর্গন্ধময় পানি পাশেই বিক্রি হচ্ছে ইফতার সামগ্রি। মানুষজন এই নোংরা পানি পার হয়ে এসেই ইফতার কিনছে।
রাস্তায় জমে থাকা নর্দমা আর সুয়ারেজের দূর্গন্ধময় পানির ভেতর দিয়েই নিয়মিত শিশুদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। কখনো বা এই পানিতেই ভিজে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পোশাক।
স্থানীয় বাসিন্দা জনি আরাফ খান বাংলাকে বলেন, ‘জুরাইনে জলাবদ্ধতা সব সময় ছিল, কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে ভয়াবহ রকম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। শীত বা বর্ষাকাল সব সময় রাস্তায় পানি জমে থাকে। এবং এই পানি কারখানার এসিড যুক্ত। ডিএনডির ভেতরে ড্রেন এর কাজ কিছু দিন বন্ধ থেকে আবার শুরু হয়েছে যা এত ধীর গতিতে যে এই কাজ কবে শেষ হবে কেউ বলতে পারেনা।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিক ইচ্ছা কখনো দেখা যায়নি, বরং এই জলাবদ্ধতা নিয়ে তারা নোংরা রাজনীতিতে মেতে আছেন।

স্থানীয়দের অসহায় জীবন যাপন নিয়ে আলাপকালে মিজানুর রহমান বলেন, ‘ক্ষমতাশীনরা ইচ্ছা করে জুরাইনসহ আশপাশের লাখ লাখ মানুষদের অমর্যাদাকর জীবনযাপনে বাধ্য করছে। মানুষ যে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা দেখছে তার সহজ সমাধান আছে কিন্তু নোংরা রাজনীতি এবং জনগণকে ভয় না পাওয়ার কারণে সমাধান থাকার পরও সমাধান হচ্ছে না।’

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১:৫২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। তবে দুরবস্থার পিছনে প্রশাসনিক দুর্বলতা, জনগনের চেতনার অভাব অনেকাংশে দায়ী । তবুও আমরা জুরাইন শব্দের আরবি অর্থের নিরন্তর স্বপ্ন দেখবো। আশাহত হওয়াটা বোধহয় ঠিক নয়।

শুভকামনা রইল।

২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ২:১৭

একাল-সেকাল বলেছেন: আশা !!
কবির সুমনের কথায়..
“আশা নিয়ে ঘরকরি, আশায় পকেট ভরি
পড়ে গেছে কোন ফাঁকে চেনা আধুলী”

ধন্যবাদ, আমাকে দৃষ্টিতে আনার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.