নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে \"আমার কবিতা নামে\" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন

আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপহরণ - সাখাওয়াত বাবনে\'র কল্পকাহিনী (৭ম পর্ব )

০৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:০৭



সাত


জ্ঞান ফিরে আসার পর নিজেকে ঘরের মেঝেতে পরে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম । মাথার উপর তীব্র লাল রঙের আলো জ্বলছে,নিভছে । সে আলোয় ভাল করে কিছু দেখতে পাচ্ছি না । মনে হচ্ছে, হুট করে ভৌতিক কোন পরিবেশে প্রবেশ করে ফেলেছি । চারপাশে দম বন্ধ করা পরিবেশ। মাথার ভেতর প্রচন্ড এক চাপ অনুভব করলেও ধীরে ধীরে চিন্তা চেতনা শক্তি ফিরে আসছে। একটু একটু করে মনে পড়ে যাচ্ছে সব । অপার্থিব কোন কিছুর টানে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিপটা টেলিসা'র বুকে আছড়ে পড়ার মুহূর্তটার কথা মনে হতে আঁতকে উঠলাম। শিপের ক্ষয়ক্ষতির কি হয়েছে সেটা অনুমান করতে না পারলেও পরিস্থিতি যে খুব ভয়াবহ তা অনুমান করতে বেগ পেতে হলো না ।

প্রথমেই যে জীনিষটা বুঝে আসলো সেটা হচ্ছে , গ্র্যাভেটি বা মাধ্যাকর্ষণ। নভোযানের ভেতর গ্রাভিটি বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি থাকার কথা নয় অথচ আমি দিব্যি হাত,পা ছড়িয়ে মেঝেতে পরে আছি । এর মানে হচ্ছে,শিপের গ্র্যাভেটি ফাংশন কাজ করছে না । এ কারণেই হয়তো বিপদ সংকেত হিসাবে মাথার উপর লাল আলোটা জ্বলছে আবার নিভছে ।

স্পেস স্যুট পড়ে থাকার কারণে পুরোপুরি বিপদ বুঝতে না পারলেও পরিস্থিতি যে ভাল না সেটা বেশ ভাল করেই বুঝতে পারছি । শিপে'র ফিজিক্যাল ড্যামেজ ছাড়াও যদি ভেতরের অক্সিজেন লেভেল কমে গিয়ে থাকে কিংবা অক্সিজেন "জেনারেট ইউনিট" খারাপ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে মৃত্যু অবধারিত । স্পেস স্যুট পড়ে থাকার কারণে বেচে থাকার সম্ভাবনা হয়তো আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা । ব্যাপারটা ভাবতেই অস্থির হয়ে উঠলাম । এমনিতে আমরা মৃত্যু নিয়ে বিচলিত হইনা কিন্তু আয়ু যদি হয় মাত্র কয়েক ঘন্টা তাহলে জীবনের মানেটাই হুট করে পালটে যায়।

যতোদূর মনে পরছে, শিপটা যখন নিচে নেমে যাচ্ছিলো আমি তখন ক্যাপসুলে শুয়ে পড়েছিলাম । তাহলে আমার তো মেঝেতে পরে থাকার কথা নয় । রুমের চারপাশটায় চোখ বুলিয়ে পরিস্থিতি বুঝে নিতে চেষ্টা করলাম । যে'ক ঘণ্টাই বাঁচি না কেন প্রতিটি মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ । দেয়ালের যেখানে দরজা খুলে গিয়ে ছিলো সেখানে আমার বিছানা বা ক্যাপসুলটা উল্টে পড়ে আছে । কি পরিমানে আঘাতের কারণে এমনটা হতে পারে তা অনুমান করলে ভয়ে আঁতকে উঠতে হয়।

শোয়া থেকে উঠে বসার চেষ্টা করেও পারলাম না । স্পেস স্যুটের পরে থাকার কারণে নড়তে পারছি না । স্যুটটা'কে এখন কয়েক মন ভারী মনে হচ্ছে। অথচ যখন মধ্যাকর্ষণ বলয় ছিলো না থাকে তখন স্যুটটাকে তুলোর মতো হালকা মনে হয়েছিল ।

এলিসের কথা মনে হতেই, এলিস , এলিস বলে ডাক দিলাম । কিন্তু কেউ উত্তর দিলো না । এলিসের ক্ষতির আশংকায় মনটা খচখচ করে উঠলো। এলিসও হয়তো আমার মতো কোথায়ও ছিটকে পড়ে আছে । এলিসসহ অন্য যে সব নভোচারী আছে শিপের ভেতর তাদের অবস্থা কি, কে জানে । এখন পর্যন্ত এলিস আর এমি ছাড়া অন্য কারো সাথেই আমার কথা হয়নি । সুযোগ পেলেই সবার সাথে পরিচয় পর্বটা সেরে ফেলতে হবে। এমন পরিস্থিতিতেও নিজের এলোমেলো ভাবনায় নিজেরই হাসি পেয়ে গেল । মাথা থেকে এলোমেলো ভাবনাগুলো ঝেড়ে ফেলে, এমি'কে ডাক দিলাম, এমি....এমি তুমি কি আমায় শুনতে পাচ্ছো ? এমি ...এমি ..। কিন্তু এবারও কেউ উত্তর দিলো না ।

হয়তো নভোযানের কম্পিউটার সিস্টেম খারাপ হয়ে গেছে । হঠাৎ কেন যেন মনে হলো আমি যে ওদের ডাকছি সে শব্দটা আমার হ্যালমেট থেকে বের হচ্ছে না । ঘটনা কি ! স্পেস স্যুট নষ্ট হয়ে যায়নি তো ? হেলমেটের নিচের দিকে থাকা Communication cap' এর সুইচটি বার কয়েক অফ, অন করতেই ঘ্যার ঘ্যার গলা খ্যাঁকানির মতো শব্দ করে কেউ ডেকে উঠলো এলিস ........এলিস । চমকে উঠলাম , কণ্ঠস্বরটা হুবহু আমার মতো । পরক্ষণেই আবার এমি ....এমি শব্দ ভেসে এলো ।
এবার ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম । কণ্ঠটা আসলে আমার । স্পেস স্যুট থেকে শব্দ বের হতে না পেরে রেকর্ড হয়েছিল । কমিউনিকেশন সিস্টেম ঠিক হতেই শব্দটা ডেলিভারি হয়ে গেল ।

কমিউনিকেশন সিস্টেম চালু হতে শুনতে পেলাম , লাল রঙ্গের বাতির সাথে ঘ্যাং ঘ্যাং করে তীক্ষ্ণ একটা শব্দ হচ্ছে । শব্দটা এতোটাই কর্কশ যে কানে তালা লেগে যাবার যোগার হলো । হ্যালমেটের বোতাম টিপে শব্দটা এডজাস্ট করে নিলাম ।
কথায় আছে, যতোক্ষণ শ্বাস ততোক্ষন আশ । তাই মেঝে'তে পরে থাকা চলবে না । অনেক কষ্টে আস্তে আস্তে দাঁড়ালাম । তারপর লেংচে লেংচে জানালার কাছে এসে বাহিরে তাকালাম । কিছু দেখা যাচ্ছে না । যতদূর দৃষ্টি যায় সবকিছু ঘোলাটে,বিবর্ণ,ঝাপসা । শিপটা আঁচড়ে পড়ার কারণে যে ধুলোবালি শূন্যে উঠে গিয়েছিলো সেগুলো এখনো চারপাশে ভাসছে । দেখে মনে হচ্ছে,বাহিরে ধূলোর ঝড় বয়ে গেছে। ধূলোর আস্তরনে সব ঘোলাটে হয়ে আছে । ভাগ্যিস শিপে আগুন লাগে যায়নি তাহলে এতোক্ষনে পুড়ে কয়লা হয়ে যেতাম ।

মনিটরের বোতামগুলো টিপাটিপি করতে করতে জানালা দিয়ে চোখ বাহিরে যেতেই চমকে উঠলাম । মনে হলো, দীর্ঘকায় কেউ একজন জানালার গ্লাসে মুখ রেখে আমারই দিকে তাকিয়ে আছে । চমকে পিছিয়ে আসতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলাম । বুকের ভেতরটা ধকধক করে উঠলো । নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাড়িয়ে আবার তাকালাম বাহিরের গিকে । না, ভুল দেখিনি । সত্যি সত্যি একটা লোক জানালার বাহিরে থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । দীর্ঘাকৃতির লম্বাটে শরীরে অদ্ভুত আকৃতির একটি মুখ । তাতে পাথরের টুকরোর মতো দুটো চোখ বসানো সেই চোখে কোন পলক নেই । নিষ্পলক দৃষ্টিতে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ওভার হুড জ্যাকেটের মতো একটা কাপড় দিয়ে কান সমেত মাথাটা ঢেকে রেখেছে বলো পুরো আকৃতিটা বোঝা যাচ্ছে না । আমি যতোটানা ভয় পেয়েছি তার চাইতেও বেশি কৌতূহলী হয়ে উঠছি । পৃথিবী থেকে হাজার হাজার কোটি, কোটি মাইল দূরে সত্যিসত্যি আজ আমি এলিয়েনে'র মুখোমুখি । হায় খোদা , এ খবর যদি পৃথিবীবাসিকে জানাতে পারতাম তাহলে চারিদিকে হইচই শুরু হয়ে যেতো । সার্থক হতো এলিয়েনদের নিয়ে যুগের পর যুগ ধরে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে পরিচালিত সকল গবেষণা ।

কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আরো একটি অবয়ব এসে আগেরটির পাশে দাঁড়ালো । এর আকৃতিও বিশাল । এবার দু'জন একসাথে জানালা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে রইলো । বাহিরের পরিবেশ ধীরে ধীরে পরিস্কার হয়ে আসায় এখন তাদের বেশ স্পষ্ট ভাবেই দেখা যাচ্ছে । আমি একটুও না নড়ে আলোর প্রতিফলন বন্ধ করার জন্য বোতাম টিপে হ্যালমেটের ভেতরের আলোটাও নিভিয়ে দিলাম ।

বেশ কিছুক্ষণ মুখোমুখি দাড়িয়ে থাকার পর বুঝতে পারলাম আমি ওদের দেখতে পেলেও ওরা আমাকে দেখতে পাচ্ছে না । স্পেস শিপের জানালার গ্লাস এমন ভাবে তৈরি করা হয় যে তাতে আলোর প্রতিফলন ঘটে না । ফলে ভেতর থেকে আমি ওদের দেখতে পেলেও ওরা আমাকে দেখছে পারছে না । অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর একসময় একজন সরু সরু আঙুল দিয়ে জানালার গ্লাসে টোকা দিলো । সে শব্দ ভেতরে না আসলেও ভয়ে আমার ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো । মানুষের মতো এরাও যে প্রচণ্ড কৌতূহলী সেটা সহজেই অনুমান করতে পারছি । একবার আমাদের হাতে পেলে কেটে, ছিঁড়ে, টুকরো টুকরো করে দেখবে সে আর বলার অপেক্ষা রাখে না । আরো কিছু সময় জানালার সামনে দাড়িয়ে থেকে দরজার কাছে চলে এলাম । শিপের ভেতরটা ঘুরে দেখতে হবে। দরজার সামনে এসে দাড়াতে সেটা সামান্য ফাঁক হয়ে গেলেও পুরোপুরি খুলে গেলো না । দু'হাত দিয়ে টেনে অনেকটা ই খুলে ফেললাম ।

রুম হতে বের হয়ে করিডোরে এসে দাড়াতেই দেখতে পেলাম , পুরো করিডোর জুড়ে লাল বাতি জ্বলছে নিভছে । যেদিক দিয়ে স্পেস স্যুট রাখার হ্যাঙার রুমের দিকে গিয়েছিলাম, সেদিকটা দিয়ে হেটে হেটে করিডোরেয শেষ মাথায় এসে দাঁড়ালাম । গোলক ধাধার মতো লাগছে । আগামাথা কিছুই বোঝা যাচ্ছে না । আশে পাশের অনেকগুলো রুমের দরজা হালকা হয়ে খুলে রয়েছে । উকি দিয়ে দেখলাম প্রতিটি রুম নানান রকম যন্ত্রপাতিতে ঠাসা । এগুলোর একটিকে ও শিপের ককপিট বলে মনে হলো না । মনে মনে নিজের কর্তব্য কর্ম ঠিক করে নিলাম, সবার আগে এলিস'কে খুজে বের করতে হবে । তারপর শিপটাকে মেরামত করার ব্যবস্থা নিতে হবে । যদিও কারিগরি জ্ঞান বলে আমার কিছু জানা নেই , তবুও আশা করতে দোষ কোথায় ।

আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এলিস'কে খুঁজে বের করা । কিন্তু কোথায় এলিস ? পুরো শিপ তন্নতন্ন করে খুঁজেও এলিস'কে পেলাম না ।


চলবে ....

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:৩৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ভালো হচ্ছে, তবে গতি কম গল্পের। হয়তো ব্লগে পড়ছি বলেই এমনটা মনে হচ্ছে।

১০ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:২৪

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:০৪

জুল ভার্ন বলেছেন: যথারীতি ক্রমশ গল্পের ধার বাড়ছে! খুব ভালো হয়েছে। +

১০ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১২:২৬

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ । পরের দুটো পর্ব যত্ন নিয়ে লিখবো ইনশাআল্লাহ্

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.