নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
দশ
কয়েক 'কদম হাটতেই অনাগত বিপদের আশংকায় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ হয়ে উঠলো । মানুষের মন এক বিচিত্র জিনিস। বিপদ, আপদ, সুখ-দু:খ অনেক কিছুই আগেভাগে জানিয়ে দেয়। কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা যায় না৷
হাটতে হাটতে খেয়াল করলাম, পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের নীচের মাটি ডেবে যাচ্ছে । বালু মাটির উপর দিয়ে হাঁটলে যেমনটা হয় ঠিক তেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে। পেট্রোল শিপ থেকে বেশ কিছুটা দূরে এসে হাঁটু ঘেরে বসে কিছু মাটি হাতে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম । মাটির গঠন অনেকটা চুনা মাটির মতো । হাত দিয়ে সামান্য চাপ দিতেই ঝুর ঝুরে হয়ে খসে পরেছে । ভূমি ধ্বসের জন্য এ ধরনের মাটি খুবই বিপদজনক । বলা যায় না গ্রহটির তলদেশে কি আছে । যদি একবার ধসে পরে । তাহলে সাত জন্মে কেই আসবে না উদ্ধার করতে । তাই সাবধানে হাটতে হবে । মাটি ও পানি সংরক্ষণের জন্য সাথে করে আনা বিশেষ ফ্লাক্সে কিছু মাটি ভরে সেটাকে পিঠে ঝুলিয়ে রেখে উঠে দাঁড়ালাম ।
চারপাশটা বড্ড বেশি নির্জন মনে হলো । যতদূর দৃষ্টি যায় এভরোথেভরো রুক্ষ মরুভূমি । এখানে ওখানে মাটিতে গেঁথে থাকা শিখা খণ্ডগুলো মুতির মতো দাড়িয়ে আছে । ভাল করে পর্যবেক্ষণ করেও অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লো না । সর্বত্র ঘোলাটে, গুমট এক পরিবেশ বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে, মুভিতে দেখানো কোন দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি । অকারণেই মনের ভেতরটা ক্যামন, ক্যামন করতে লাগলো। গ্রহটিতে নামার পর থেকে ভেতরে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা কাজ করছে । কিন্তু কারণটা ধরতে পারছি না । হতে পারে সেটা অজানা অচেনা একটি গ্রহে নামার ফলে এ ধরনের অনুভূতি তৈরি হচ্ছে ।
তবুও পিছিয়ে যাওয়া যাবে না । ধুরুধুরু বুকে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলাম । তবে কথায় আছে না, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত্রি হয় । ঠিক তেমনি হঠাৎ করে মনে পড়ে গেলো গ্রহটিতে বসবাস করা প্রাণীগুলোর কথা । কি আশ্চর্য ! এতক্ষণ তাদের কথা দিব্যি ভুলে ছিলাম কি করে ? গতকাল তাদের যে ভয়ংকর রূপ দেখেছি, তারপরেও এতোটা ঝুঁকি নিয়ে কেন যে নিচে নেমে এলাম সেটা ভেবে পেলাম না । কোথাও একটা গণ্ডগোলের আভাস পাচ্ছি । মস্তিষ্ক থেকে হুট হাট কিছু কিছু স্মৃতি ডিলিট হয়ে যাচ্ছে । এতো বীভৎস,তাজা একটি ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি তো ভুলে যাবার কথা না । তবে, প্রতিনিয়ত যেভাবে একের পর এক নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে তাতে কোনটা যে মনে রাখছি আর কোনটা যে ভুলে যাচ্ছি সেটা মনে রাখা বড্ড সত্যিই দুষ্টর। এখন বেঁচে থাকার একটাই উদ্দেশ্য যতোক্ষণ বেঁচে আছি মানব কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। নিজের অজান্তেই যে মস্ত দায়িত্বের বোঝা আমার কাধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
প্রাণীগুলোর কথা মনে হতেই, ভয়টা যেন একটু একটু করে ফিরে এলো । তবুও দমে গেলাম না। সর্তক দৃষ্টি রেখে এগিয়ে যেতে লাগলাম। হতে পারে এ গ্রহটি খনিজ সম্পদে ভরপুর। সেই সব খনিজ সম্পদ পৃথিবী বাসীর কল্যাণে অনেক কাজে লাগবে।
চারপাশে হালকা রোদের মতো আলো খেলা করছে । হাটতে হাটতে কখন যে, পেট্রোল যানটা থেকে অনেকটা দূরে সরে এসেছি বুঝতে পারিনি । পেছন ফিরে দেখি রোদের আলোয় সেটি এখন রুপোর মতো চিক চিক করছে । দূরের পাহাড়গুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হলো, হালকা ধোয়ার রেখা বের হয়ে এঁকে বেঁকে উঠে যাচ্ছে মেঘহীন আকাশে । তবে সেগুলো সত্যিই ধোয়া কিনা সেটা ভাল করে দেখার জন্য স্পেস স্যুটের হেলমেটে লাগানো ক্যামেরার লেন্সটা জুম করলাম। কিন্তু পরিষ্কার ভাবে কিছু বোঝা গেলো না । আর একটু কাছাকাছি যেতে পারলে ভাল হতো ।
ঠিক করলাম, ফিরে যাবার সময় ওদিকটায় একবার ঘুরে আসবো । ব্যাপারটা ভালো করে দেখা দরকার । আগুন মানে ই তো জীবন। রান্না বান্ন খাওয়া, দাওয়া । হতে পারে এ গ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীর মানুষের মতোই রান্নাবান্না করে খায় ।
খাবারের কথা বলে হতেই যেন পেটের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো। হঠাৎ করে মনে হলো, আমি কতদিন ধরে আহার করি না। পৃথিবীর লোভনীয় সব খাবারের কথা ভাবতে ভাবতে হাটতে লাগলাম।
হঠাৎ হাটার কষ্টটা যেন বেড়ে গেলো । এদিকটার মাটি একটু বেশি রকমের নরম বলে মনে হচ্ছে। আমার ওজন সহ্য করতে পারছে না । পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ডেবে যাচ্ছে । কাদা মাটিতে হাটার মতো পা আটকে যাচ্ছে । পা ফেলতে বেশ কষ্ট হচ্ছে । অনেক ভেবে দেখলাম বেশি ঝুকি নেওয়া ঠিক হবে না ।
যত দ্রুত সম্ভব জলাশয়টি দেখে ফিরে যেতে হবে । চারপাশে সর্তক দৃষ্টি রেখে জলাশয়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম । কোন বিপত্তি ঘটলো না অনেকটা নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেলাম জলাশয়ের কাছে।
ভাব যায়! পৃথিবী থেকে হাজার হাজার কোটি কোটি মাইল দূরের গ্রহে এক মানব সন্তান দাড়িয়ে আছে এক জলাশয়ের সামনে । কিন্তু কাছাকাছি পৌঁছাতেই জলাশয়টিকে প্রকাণ্ড বড় মরা দীঘি বলে মনে হলো । শুকিয়ে মরতে মরতে যেন কোন রকম বেচে আছে। সমতল ভূমি থেকে অনেকটা নিচুতে গর্তের মতো একটি জায়গার অনেকটা অংশ জুড়ে কিছু লাল বর্ণের জল জমে রয়েছে । জলাশয়ের ঢালে বড় বড় ফোসকার মতো গোল গোল গর্ত । তা থেকে খুব হালকা নীলাভ এক ধরনের ধোয়া উড়ছে । সেটা এতোটাই হালকা যে, খুব কাছ থেকে না দেখলে বোঝা যায় না ।
ঢাল বেয়ে আর একটু নেমে যেতেই দেখতে পেলাম, জলাশয়ে জমে থাকা পানি থেকে বুদ বুদ উঠছে । পানি'তে সালফারের পরিমাণ বেশি হলে এমনটা হয় । ভাল করে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আর একটু নামতেই ঝাঁঝালো একটা গন্ধের উপস্থিত টের পেলাম। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এ পানি খাবার যোগ্য নয় । অন্তত মানুষের জন্য তো নয়ই ।
খুব সাবধানে পা ফেলে ছোট, বড় ফোসকা আকৃতির গর্তগুলোকে ডিঙিয়ে ডিঙিয়ে পানির কিনারে পৌঁছে ফ্লাক্সে কিছুটা পানি নিয়ে উঠে দাঁড়াতেই চমকে উঠলাম ।
জলাশয়ের ঠিক অপর প্রান্ত আমার সোজাসুজি একটা প্রাণী জলাশয়ের কিনারে দাড়িয়ে আমারই দিকে তাকিয়ে আছে । প্রাণীটাকে দেখেই আমার শরীর শিরশির করে কেপে উঠলো । এ যেন নির্ঘাত মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছি । এখুনি হয়তো ছুটে এসে আমাকে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে । প্রাণীটা তার বিদঘুটে চোখ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । হায় , হায় এতো দেখি হুট করে মস্ত বিপদ এসে উপস্থিত হয়েছে ঘারের উপর । এতো বড় ভুলটা কি করে করলাম ? নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করলো । এ যেন স্বাক্ষাত যমদূত দেখতে পাচ্ছি ।
কি কুৎসিত দেখতে রে বাবা । কম করে ১৫ ফুট উঁচু শরীরের উপর বাদামের খোলোশের মতো লম্বাটে আকৃতি একটা মুখ । কোঠরে'র ভেতরে বসানো কাঁঠালের কোষের মতো গোল গোল চোখের ঠিক মাঝখানে বড় মার্বেলের মতো কালো কুচকুচে মনি বসানো । কাঠির মতো সরু সরু হাতগুলোর আগায় শেকড়ের
মতো অনেকগুলো আঙুল । সেগুলো কেচোর মতো কিলবিল করছে । এতোটা দূর থেকে ও আঙুলগুলোর দিকে চোখ যেতে ভয় পেয়ে গেলাম । এ আঙুল যদি একবার খামচে ধরতে পারে তাহলে শরীরের হাড়, মাংস যে, মুহূর্তের মধ্যে আলাদা করে ফেলবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ।
বুঝতে পারছি না এমন পরিস্থিতিতে কি কি করবো । মাথা ঠাণ্ডা রেখে ,যে কাজটা প্রথম করলাম , সেটা হচ্ছে, স্পেস স্যুটের নিরাপত্তা বাটন টি অন করে দিলাম । এর ফলে স্পেস স্যুটের বহি:আবরণে এক ধরনের ইলেকট্রনের সৃষ্টি হবে । ফলে আমাকে বাহির থেকে কেউ স্পর্শ করা মাত্রই ভস্ম হয়ে যাবে ।
তারপরের কাজটি হচ্ছে, যতো দ্রুত সম্ভব গ্রহটি ত্যাগ করতে হবে । আর দেরী করাটা ঠিক হবে না ভেবেই ঘুরে দাড়িয়ে পড়ি মরি করে ছুটলাম পেট্রল শিপটার দিকে । ছুটতে ছুটতে পেছন ফিরে দেখি প্রাণীটাও মুহূর্তে বুঝে গেছে আমার উদ্দেশ্যে । সেও তাই তার লম্বা লম্বা পা ফেলে ছুটে আসতে লাগলো আমার দিকে ।
ছুটতে ছুটতে ভাবছি এ যাত্রায় বেচে গেলে আর কখনো এমন আহাম্মকের মতো কাজ করবো না । পা ফেলতে অনেক কষ্ট হচ্ছে । হাপিয়ে উঠছে । মনে হচ্ছে , আঠালো আঠার মধ্যে দিয়ে দৌড়ে চলেছি । জলাশয়ের ঢাল বেয়ে উপড়ে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখি প্রাণীটা জলাশয়ের অর্ধেক চলে এসেছে । হায় ঈশ্বর ! ওটা যেভাবে এগিয়ে আসছে তাতে পেট্রল শিপের কাছে পৌছাবার আগেই ধরা পরে যাবো । তবুও থেমে থাকার মানে যেহেতু মৃত্যু তাই প্রাণপণ আবার ছুটতে লাগলাম আর মনে মনে বলতে লাগলাম, ধরা পরা যাবে না । ধরা পরা যাবে না ।
ভাগ্যিস প্রাণীটা নিরস্ত্র তা না হলে এমন পরিস্থিতিতে সামনে ছুটতে থাকা শিকারকে যেকোন অস্ত্র দিয়ে খুব সহজেই ঘায়েল করে ধরে ফেলা যায় । পেট্রোল শিপের দশ গজের মধ্যে এসে পেছন ফিরে দেখি, একটি নয় কয়েকটি প্রাণী আমার দিকে ছুটে আসছে তার মধ্যে একটি আমার কাছ থেকে প্রায় হাত দশেক দূরে রয়েছে । অনেকটা চোখ বন্ধ করেই দৌড় দিলাম । কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, পেট্রোল শিপের কাছে পৌঁছে সেটার দরজার হাতল ধরতেই কাঁধের কাছে প্রচণ্ড
প্রচন্ত এক হেঁচকা টানে ছিটকে পড়লাম মাটিতে ।
চলবে ...........
এখানে থেকে সবগুলো পর্ব পড়তে পারেন ।
৯ম পর্ব
৮ম পর্ব
৭ম পর্ব
৬ষ্ঠ পর্ব
৫ম পর্ব
৪ থ পর্ব
৩য় পর্ব
২য় পর্ব
১ম পর্ব
২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:০৪
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ভাল বলেছেন৷ তবে, ফিকশন কিন্তু মানুষ ছাড়া হয় না ভাই, কেননা ফিকশনে মেইন রোলটা মানুষই প্লে করে। ভাল থাকবেন।
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৬
জুল ভার্ন বলেছেন: দীর্ঘ ধারাবাহিক গল্প উপন্যাসে প্রায়শই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়না, আপনি অত্যন্ত সাবলীলভাবে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে লিখেছেন। ভালো লাগা।
২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:০৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য। মাঝে মাঝে আমিও খেই হারিয়ে ফেলি। ব্যস্ততার কারণে একাধারে লেখা সম্ভব নয়। তবে এটা শেষ করবো ইনশাআল্লাহ। সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ প্রিয়।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৪:৫৪
সোনাগাজী বলেছেন:
এলিয়েন, ফেলিয়েনদের নিয়ে লেখা পড়তে গেলে, আমার খালি মনে হয়, লেখক কি মানুষ দেখে না চোখে?