নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে \"আমার কবিতা নামে\" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন

আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিণতি -(৪থ পর্ব) একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস - প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য

২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ১১:৫৪



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।) ( গল্পের ধারা বজায় রাখায় জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু সংলাপ ও মুহূর্ত উঠে এসেছে । সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )

চার

রাতের খাবার শেষ করে কফির মগ, সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। এ অভ্যাসটা নতুন হয়েছে। দু বেলা খাবারের পর সিগারেটে টান না দিলে মনে হয় কি যেনো খাইনি। মুখের ভেতরটা ক্যামন ক্যামন লাগে। বিস্বাদ হয়ে থাকে ।

হালকা কুয়াশার চাঁদর মুড়ি দিয়ে প্রকৃতি যেন থম মেরে রয়েছে। শীতের আগমনী বেশ বোঝা যাচ্ছে । সন্ধ্যা থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে । একটু পরপর কোথাও একটা কাক কা কা করে ডাকছে। রাতের বেলা কাকের ডাক অশুভ হয় বলে শুনেছি। কালচে মেঘের ফাকে আধখানা চাঁদ স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে। সিগারেট টেনে ঠিক আরাম পাচ্ছি না । যতবার টান দিয়ে ধোয়া ছাড়ছি ততবারই মনে হচ্ছে, নাকের ভেতরটা পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে ।

তার পরেও সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে  বারান্দার রেলিং থেকে সামান্য ঝুঁকে চারপাশের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে কাকটাকে দেখার চেষ্টা করলাম । না, দেখা যাচ্ছে না । কোথাও ঘাপটি মেরে আছে নিশ্চয় ।

দোতালা থেকে বাড়ির ভেতরের পুরো অংশটা নজরে আসে । সীমানা প্রাচীর ঘেঁষা বড় বড় নারকেল গাছগুলো এ বাড়িটিকে আশে পাশের বাড়িগুলো থেকে আলাদা করে রেখেছে । বাড়ির সামনের লনে ঘাসের উপর জমে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশির কণাগুলো রাতের আলোয় চিকচিক করছে । শিশির সিক্ত ঘাসের উপর নগ্ন পা ডুবিয়ে হাটলে দারুণ অনুভুতি হয় । একদিন অনুকে নিয়ে হাটতে হবে ।

সামনের পাঁচ তলা বিল্ডিংটার পেছনের অংশের তিন ও চার তলায় দুটো ফ্লাটের ভেতরে জ্বলতে থাকা মৃয়মান আলোক কণা মুক্তির নেশায় বন্ধ জানালার ভারি পর্দা ভেদ করে মুক্তির আশায় ছটফট করছে । চার তলার বা পাশের একটা জানালায় এক নারী অবয়বের নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে । একটু পর পর সে জানালার সামনে আসছে আবার ভেতরে চলে যাচ্ছে ।

বাড়ির সামনের রাস্তায় কোন স্টিট ল্যাম্প না থাকায় গেটের বাহিরের অংশটা ঘন, কালো অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে।

মানুষের জীবন সত্যিই বড় বিচিত্র । কখন যে কার সাথে কি ঘটে যায় তার কিছুই বলা যায় না। যে আমি কোনদিন বাড়ির বাহিরে একটি দিনও কাটাইনি, সেই আমি কিনা আজ সবাইকে ছেড়ে দু'দুটি দিন ধরে বাড়ির বাহিরে অবস্থান করছি। অথচ কেউ একটি বারের জন্য ও খোজ নিলো না । দুনিয়াতে আসলে কেউ কারো নয় । আমি না হয়, সন্তান হয়ে ভুল করেছি কিন্তু বাবা,মা  কি করে পারলো এভাবে আমাকে পর করে দিতে ? তাদের কি একটি বারেও জন্য ও বুকের ভেতর পুত্র স্নেহ জেগে উঠেনি ? একটি বার ও কি তারা ভাবলো না ছেলেটা কোথায় যাবে,কোথায় থাকবে , কি খাবে ? বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো । বুকের ভেতরটা ধুমড়ে মুচড়ে যেতে লাগলো। সত্যিই, জগতে আসলে কেউ কারো নয় ।

দোষটা তো আমারই , তা না হলে হুট করে কেউ এভাবে, এতো অল্প জানা শোনায় কাউকে বিয়ে করে ফেলে ?

ভাবনা হচ্ছে, জালের মতো একবার  কাউকে জড়াতে শুরু করেলে আষ্ঠেপৃষ্ঠে বেঁধে না ফেলা পর্যন্ত থামে না ।   তাই সব সময়, সব ভাবনাগুলোকে প্রশ্রয় দিতে হয় না । নিজেকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম। আমি কোন ভুল করিনি । যা করেছি, সেটা হবার ছিলো তাই হয়েছে । জন্ম,মৃত্যু,বিয়ে এ তিনটি'তে কারো হাত নেই ।

অনু তো আর রাস্তার মেয়ে না । অন্য ধর্মের হয়েছে তো কি হয়েছে ? মানুষ তো । আমি কোনদিন ওকে কষ্ট দেবো না। কোনদিন না । ফিসফিস করে বলে উঠলাম, অনু,অনু আমার অনু । অনুর কথা ভাবতেই মনটা আবার খুশিতে ভরে উঠলো ।

আজ একটা কাণ্ড হয়েছে । দুপুরে অনু একটু বের হয়েছিলো টুকটাক কেনা কাটা করতে । আমার শরীরটা ম্যাজম্যাজ করায় খেয়ে দেয়ে শুয়েছিলাম । বের হতে ইচ্ছে করছিলো না । ঘুমে চোখ লেগে এসেছিলো । এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো ।

উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখি , নীল শাড়ির সাথে স্লিভলেস ব্লাউজ পরে হাসিহাসি মুখ করে বাড়িওয়ালী ভদ্র মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন । আমি সালাম দিতে তিনি হেসে ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, "কই, তোমার বউ কোথায় ? গতকাল এলে অথচ একটি বারের জন্যও বউকে দেখলাম না ।  এ ক্যামন কথা বাপু ?"

মহিলার কথায় আমি বেশ অবাক হলাম । গতকাল আমরা দু'জন ওনার সাথে দেখা করে ফ্লাটে এসে উঠেছি । আজ কিনা উনি বলছেন, অনুকে দেখেনি । ভদ্র মহিলার ভুলে যাওয়া রোগ আছে কিনা বুঝতে পারলাম না ।

নীল শাড়িতে ওনার বয়সটা যেনো আরো কমে গেছে । কলেজের পড়ুয়া মেয়েদের মতো টান টান করে পেছনে চুল বেঁধে সিনেমার নায়িকাদের মতো এক গোছা চুল ফেলে রেখেছেন গালের ডান পাশে । ঠোটে যত্ন করে হালকা রং এর লিপিষ্টিক দিয়েছেন । চোখের নিচে তীরের ফলার মতো চিকন করে কাজল টানা। দেখে মধুবালার মতো লাগছে ।  স্লিভলেস ব্লাউজের ভাজের ফাঁকে মধ্যবয়স্ক শরীর যেন অন্যকিছু জানান দিচ্ছে ।

আপা না আংন্টি কি বলে সম্বোধন করবো দ্বিধা ধন্ধে পরে গেলাম। গতকাল কি বলে ডেকেছিলাম সেটা মনে করতে পারলাম না। আধুনিক যুগের মহিলারা বয়স হয়ে যাবার পরেও খুকি হয়ে থাকতে ভালবাসেন । তাই তাদের বুঝে শুনে সম্বোধন করতে হয় ।

আমি বললাম, ":আপা, কাল ই তো অনু সাথে আপনার সাথে দেখা হলো । আমরা এক সাথেই তো চাবি নিয়ে এলাম ।"

আমার কথা শুনে ভদ্র মহিলা কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন । তারপর বললেন,তাই নাকি ? কই, আমার তো মনে পড়ছে না ! দেখা হয়েছে নাকি ? 

কথা বলতে বলতে উনি এ ঘর ও ঘর করে সব ঘরের দরজার সামনে গিয়ে ভেতরে উকি দিয়ে দেখে আমাদের বেডরুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন, "বাহ! বেশ তো গুছিয়ে নিয়েছো দেখছি।" এরপর ভদ্র মহিলা আমার দিকে  এগিয়ে এসে আমার কাধে একটা হাত রেখে হেসে বললেন, "টুকটাক কিছু লাগলে আমাকে জানাবে । একদম লজ্জা পাবে না ।" মহিলার আচড়নে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পিছিয়ে গেলাম।

আমার পিছিয়ে যাওয়াটা আমলে না নিয়ে তিনি বললেন, "শোন ছেলে, অন্য ধর্মের মেয়ে বিয়ে করছো । সে হয়তো লজ্জায় কিছু চাইবে না । তুমি কিন্তু মেয়েটিকে একদম কষ্ট দেবে না । সব সময় মাথায় আগলে রাখবে । বুঝতে পেরেছ ?"

আমি মৃদু হেসে মাথা নাড়লাম । যার অর্থ দাঁড়ায় , হ্যা বুঝেছি ।

এরপর ভদ্র মহিলা ওনার ছেলের মালামাল রাখা ঘরের বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে বললেন, "জানো তো এটা আমার ছেলের ফ্লাট। ও সবকিছু মনের মতো করে সাজিয়ে ছিলো । কিন্তু থাকতে পারলো কোথায় ? কথাটা বলে তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সাধারণত কেউ কষ্টের কথা শোনালে তার সাথে সমবেদনা প্রকাশের জন্য উ,আহ্ জাতীয় শব্দ করে দু:খ প্রকাশ করতে হয় । আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম ।

আমাকে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন, ঠিক আছে তাহলে; সময় করে তোমার বউকে নিয়ে এসো একদিন । আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বললাম, ঠিক আছে, আসবো ।  ।

কথাটা বলে উনি আর দাঁড়ালেন না হেলে দুলে হেটে গিয়ে ওনার ফ্লাটের দরজায় দাড়িয়ে হাসি দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন । আমি দরজা বন্ধ করতে করতে ভাবতে লাগলাম , অনু কে উনি গতকাল খেয়াল করেনি এটা ক্যামন কথা । আমার স্পস্ট মনে আছে অনু,আমি এক সাথে গিয়ে ওনার কাছ থেকে চাবি নিয়ে এসেছি । নির্ঘাত ওনার ভুলে যাওয়া রোগ আছে । কত রকম মানুষে আছে দুনিয়ায় সেকি আর গুনে শেষ করা যাবে ? এরপর বিছানায় শুয়ে শুয়ে কত কি ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে গেলাম ।


চলবে .................

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:২৫

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ....

২| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:০৪

রানার ব্লগ বলেছেন: প্রাপ্ত বয়স্কতা আমাদের সাধারন জীবনের অংশ একে আপনি লুকিয়ে রাখতে পারেন না । তাই এর জন্য ক্ষমা চাওয়ার কোন দরকার নাই । যারা অস্বস্তি অনুভব করে তাদের হরমনাল সমস্যা আছে ।

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:২৬

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: যথার্থই বলেচগেন....

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮

রানার ব্লগ বলেছেন: কয়েকবার পড়েও প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু পাইলাম না । আমার চোখের কি সমস্যা হচ্ছে ?

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:২৮

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: অপেক্ষা করুন, কঠিন সব কেমিষ্টি রয়েছে সামনে তাই আগে ভাগেই ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি.... ধন্যাদ ভাল থাকবেন।

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪২

শায়মা বলেছেন: অনু মনে হয় নিজেই একটা ভূত!

নাকি ভাড়াটিয়ার ছেলের গার্লফ্রেন্ড বা বউ একটা ভূ্ত!!!

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৩২

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সামনে সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন আপা, অপেক্ষা করুন। ৬১ পর্বের উপন্যাস অনেক অনেক চরিত্র ও ঘটনা আসবে সামনে৷এভাবে নিজের অনুভূতি জানানোর জন্য ধন্যবাদ....

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: অনুর সমস্যা আছে।
সে রাত বিরাতে রান্না করে।

২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৩৫

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: যে রাত বিরাতে রান্না করে সে তো অনু নাও হতে পারে, হতে পারে অনু রুপধারী অন্য কেউ!

সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০০

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য।

৭| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫০

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: যাই পরের পর্বে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.