নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।) ( গল্পের ধারা বজায় রাখায় জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু সংলাপ ও মুহূর্ত উঠে এসেছে । সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )
পাঁচ
সন্ধ্যায় ঘুম ভাঙল চায়ের কাপে চামচের টুং টাং শব্দে । পুরোঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে । শুয়ে থেকেই বুঝতে পারলাম অনু ফিরে এসেছে । রান্না ঘরে কিছু একটা করছে । খুব সম্ভব চা তৈরি করছে। এ কদিনে অনু জেনে গেছে চা আমার খুব প্রিয় পানীয় । রান্না ঘর থেকে অনু ঘরে এলে ওকে জড়িয়ে ধরবো সেই উদ্দেশ্য নিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলাম ।
মাথার কাছে একটা মশা অনেকক্ষণ যাবত ভন ভন করছে । বিরক্ত হয়ে চাটি মেরে সেটাকে মারার চেষ্টা করে পারলাম না । মশাটা পায়ের দিকে উড়ে গেলো ।
চাটির শব্দে রান্না ঘরে থেকে আসা টুংটাং
শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো । অনুরাধা হয়তো বুঝতে পেরেছে আমার ঘুম ভেঙ্গেছে । ও নিশ্চয় এখন এ ঘরে আসবে । সঙ্গে সঙ্গে খসখসে পায়ের শব্দ শোনা গেলো। শব্দটা এদিকেই আসছে ।
আমি একটুও নড়লাম না । গভীর ঘুমের ভান করে কান পেতে মরার মতো পরে রইলাম । কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ কেটে যাবার পরেও অনুরাধা এলো না । পায়ের শব্দটা দরজার কাছে এসে থেমে গেছে। অধৈর্য হয়ে আমি এক সময় বিছানা থেকে নামতে গিয়ে টের পেলাম বিছানায় মশারি টানানো । যতদূর মনে পরে আমি তো মশারী ছাড়াই শুয়েছিলাম । মশারী টানানো মানে হচ্ছে, অনুরাধা ফিরে এসেছে। এবং আমাকে মশা কামড়াবে ভেবে মশারী টানিয়ে দিয়ে রান্না ঘরে গেছে৷ তাই অনুরাধা যে ফিরে এসেছে সে নিয়ে আর কোন সন্দেহ রইলো না ।কিন্তু ও এখনো এ ঘরে আসছে না কেন? কি করছে দরজায় দাড়িয়ে? আমি অনু বলে ডাক দিলাম। কিন্তু কেউ উত্তর দিলো না। আরো কিচ্ছুক্ষণ অপেক্ষা করে
বিছানা থেকে নেমে ড্রায়নিং স্পেসে এসে দাঁড়ালাম ।
পুরো ফ্লাট অন্ধকার হয়ে আছে । কোথায় অনুরাধা ? কোথাও কেউ নেই । অথচ রান্না ঘরে থেকে ভেসে আসা টুং টাং শব্দ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি । একটুও ভুল হবার কথা নয় । কোথায় অনুরাধা ? আমি আবারো ডাক দিলাম অনু... অনুরাধা?
কোন জবাব এলো না। তাহলে কি ও এখনো ফেরেনি কেন ?
আমি ডাক দিলাম , অনু, অনুরাধা ?
কোন জবাব নেই।
অজানা কারণে ভেতরটা কেন যেন কেপে কেপে উঠলো৷
এবার মনে হলো, অনুরাধা হয়তো আমার সঙ্গে মজা করার জন্য কোথাও লুকিয়ে পরেছে।
তাই, অনু, অনুরাধা বলে ডাকতে ডাকতে একে একে সবগুলো ঘরের বাতি জ্বালিয়ে অনুকে খুঁজতে লাগলাম । প্রথমেই গেলাম রান্না ঘরে না,অনু সেখানে নেই। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে দেখলাম । সেখানেও অনু নেই । শূন্য ঘরগুলো যেন খাঁখাঁ করছে । এবার আমি নিশ্চিত হলাম না, অনু এখনো আসেনি ।
ঘড়ি দেখলাম, সাড়ে সাতটা বাজে ।
সন্ধ্যা হয়ে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে । বুঝতে পারছি না অনু এখনো ফেরেনি কেন ? যাবার সময় তো বলে গেলো সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবে৷ তাহলে কি করছে ও এতোক্ষণ বাহিরে ? পথ ভুলে যায়নি তো ? বুকের ভেতরটা ক্যামন জানি করছে । হঠাৎ মনে হলো, অনুরাধা যদি আর না ফেরে ? যদি কোন দুর্ঘটনা বা অঘটন ঘটে থাকে ওর সাথে ? যদি আর কোনদিন দেখা না হয় আমাদের ?
এমন নানা ভাবনায় অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই আমি বিচলিত হয়ে উঠলাম । হায় আল্লাহ্ ! কেন যে ওকে একা বাহিরে যেতে দিলাম ? কি এমন হতো না ঘুমালে? অজানা আতংকে ভেতরটা কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো ।
অনুরাধা ফিরলো রাত সাড়ে ন'টায় ।
অপেক্ষায় থেকে থেকে আমার তখন দশ দিগন্ত আধার করা অবস্থা । অস্থিরতায় একবার বারান্দায় গিয়ে গেটের দিকে তাকিয়ে থাকছি তো আবার ফিরে এসে ঘরের ভেতর অস্থির ভাবে পায়চারি করছি । বারবার ঘড়ি দেখছি । পানি খাচ্ছি । শেষমেশ টিকতে না পেরে বাসা থেকে বের হয়ে গলির মাথায় গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। জীবনে কোনদিন,কারো জন্য এতোটা অস্থিরতা অনুভব করিনি ।
মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম বেঁচে থাকতে আর কোনদিন অনুকে একা বাহিরে যেতে দেবো না ।
অপেক্ষায় পারদ বাড়তে বাড়তে এক সময় সেটা রাগে পরিণত হলো । এ সময় ছাই পাশ কতো কি যে ভাবতে লাহলাম তা বলে শেষ করা যাবে না । অবশেষে অনুরাধা ফিরলো সাড়ে ন'টায় মতিন মিয়ার রিকশায় করে।
মতিন মিয়ার রিকশায় মাথায় ঘোমটা টেনে বউয়ের মতো বসেছিল অনু, মানে আমার অনুরাধা, আমার জীবন সঙ্গীনি।
অন্ধকারাচ্ছন্ন গলিতে রিকশাটা আমার পাশ দিয়ে যাবার সময়ও রিকশায় বসে থাকা অনুরাধা'কে দেখেও চিনতে পারিনি । রিকশাটা আমাকে পেছনে ফেলে যাবার পরেই হঠাৎ আমার নাম ধরে ডাক শুনতে পেয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি রিকশা থেকে মাথা বের করে অনু আমাকে ডাকছে।
চমকিত হয়ে রিকশায় অনুকে দেখতে পেয়ে রাগে,অভিমানে আমার চোখে পানি চলে এলো । এগিয়ে গিয়ে রিকশার হুট ধরে বললাম, "এই তোমার আসার সময় হলো ?
এ টুকু বলতেই যেন , বুকের ভেতরটা ছিঁড়ে যেতে চাইলো। অতিরিক্ত ভালবাসা মানুষকে যে দূর্বল করে দেয় সেটা হাতে নাতে টের পাচ্ছি ।
অনুরাধা রিকশা থেকে নেমে আমার হাত জড়িয়ে ধরে বলল, "সরি সোনা, আসতে অনেক দেরি হয়ে গেলো । সরি সরি সরি ... আর কোনদিন এমনটা হবে না। "
আমি আর কিছু বললাম না । চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম । যার একটা অনুরাধা আছে তার রাগ করা মানায় না । আমিও রাগ করে থাকতে পারলাম না । মতিন মিয়াকে বললাম, "আপনি ভেতরে যান আমরা আসছি ।"
গলির বাকি পথটুকু আমরা প্রায় জড়াজড়ি করে হাটতে হাটতে পারিয়ে এলাম । অনু আমার বা বাহু প্রায় খামচে ধরে রইলো । ব্যথা পাচ্ছিলাম তবু কিছু বললাম না। ব্যথা সহ্য করে অনুরাধাকে অনুভব করতে চাইলাম।
সিড়ি দিয়ে উঠার সময় একটু অন্ধকার দেখে অনু টুক টুক করে ঠোঁট দুটো চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বলল, সরি, সরি জান। আর দেরি হবে না। এরপর কি আর রাগ করে থাকা যায়? যায় না। যাদের অনুরাধা আছে তারাই শুধু এ বিষয়টা বুঝবেন।
ফ্লাটে ঢুকে হাত, মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে অনু রান্না করতে বসলো । আমি ছোট বাচ্চাদের মতো ওর চারপাশে ঘুরঘুর করতে লাগলাম । কত কথা যে বলতে লাগলাম দু'জনে তা বলে কয়ে শেষ করা যাবে না৷ কখনো বা মনের সুখে গুন গুন করে গান গাইতে লাগলাম ।
কুটা বাছা করতে করতে অনু তার দেরি হবার কারণ জানালো, আজ ও ওর পুরাতন বাসায় গিয়েছিলো । ওর রুম মেট রুমানা বাসায় ছিলো না । সে ফিরলে তারপর সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে রওনা দিয়েছে । তার উপর ছিলো রাস্তার জ্যাম । সব মিলিয়ে এতো দেরি হয়ে গেছে। এতো ব্যাখ্যার দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিলো না। অনু যে নিরাপদে ফিরে এসেছে তাতেই আমি খুশি ।
ও কথা শেষ হতে আমি শুধু একটাই প্রশ্ন করলাম , "তুমি মতিন মিয়াকে কোথায় পেলে ?"
অনু হেসে বলল, বাসা থেকে বের হবার সময়ই পেয়েছি । গলির মুখে গিয়ে দেখি সে রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে দেখতে পেয়ে হাসি মুখে এগিয়ে এসে বললো, আম্মা কোথায় যাবেন উঠেন । আমি কথা না বাড়িয়ে উঠে বসলাম । এর পর পুরোটা সময় উনি আমার সাথে। কতবার যে বলেছি, চাচা আপনি চলে যান । কিন্তু উনি যাবেন না । আমাকে নিয়ে এসে তবেই গেলেন ।
অনুরাধা খুন্তি দিয়ে কড়াইতে পেয়াজ নাড়া দিতে দিতে আবার বলল,মানুষটা বড্ড ভালবাসার কাঙ্গাল । আমরা একটু ভালো ব্যবহার করেছি তাতেই গলে গেছেন । এখন ভাড়াও নিতে চায় না । আমি জোর জবরদস্তি করে তবেই ভাড়া দিয়েছি ।
আপনা মানুষেরা যখন পর হয়ে গেছে তখন একজন রিকশা চালক পর হয়েও আপনের মতো সাহায্য করছেন । মতিন মিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতায় আমার মনটা ছুয়ে গেলো । আমি অনুকে পেছন থেমে জড়িয়ে ধরে বললাম, "শোন আমরা একদিন ওনাকে দাওয়াত করে খাওয়াবো । খুব খুশি হবেন উনি তাতে ।"
অনু হেসে বলল, ঠিক আছে , সাথে বাড়ির দারোয়ানকেও বলো । এই লোকটাও তো আমাদের কত রকমের হেল্প করেছে। দু'জন মিলে আমাদের জন্য কি কষ্টটাই না করলো । ওরা না থাকলে আমরা দু'জন কিছুতেই এতো তাড়াতারি সবকিছু গোছগাছ পারতাম না ।
আমি ততোক্ষণ শিকারী বেড়ালের মতো পেছন থেকে অনুরাধার কোমড় জড়িয়ে ধরে কাধে চুমু খেতে খেতে বললাম, জানো আজ দুপুরে বাড়িওয়ালী এসেছিলেন। সে নাকি তোমাকে দেখিনি, অথচ গতকালই তো ভদ্র মহিলার সাথে দেখা হলো আমাদের ।
অনুরাধা আমার কথার উত্তরে না গিয়ে চুলার জ্বাল কমিয়ে দিয়ে, কাঁধ ঘুরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখে মুখে ঈষৎ রাগ ফুটিয়ে তুলে বলল, "এ্যই তুমি কি করছো ?"
আমি হেসে বললাম , "কই কিছু করছি না তো ?"
অনু আঙুল উচিয়ে বলল, "যাও, লক্ষ্মী ছেলের মতো ঘরে গিয়ে বসো। আমি রান্না শেষ করে আসছি।"
আমি নেকা সেজে বললাম, "না যাবো না । এখন তোমার কাছেই থাকবো ।"
এবার অনুরাধা একহাত দিয়ে আমার বাহু খামচে ধরে অন্য হাতে চুলার আগুন বন্ধ করে দিয়ে আমাকে বুকে টেনে নিয়ে বলল,খুব দুষ্ট হয়েছো তাই না? আমি মুখে কিছু বললাম না। অদ্ভুত এক গন্ধে ডুবে গেলাম । মুহুমুহু উত্তেজনায় কেপে কেপে উঠতে লাগলো দু'টো শরীর । অনুরাধাও যেন আজ অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশিই পাগল হয়ে উঠলো । আমার চুলে,কাধে ঠোট ঘষতে ঘষতে বিরবির করে বলতে লাগলো , এ্যই সোনা কি করছো , কি করছো? শেষে আমাকে প্রায় টেনে নিলে এলো বিছানায়। তারপর বাধ ভাঙ্গা নদীর মতো, ঝর্ণার জলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো আমার উপর । মুহূর্তের মধ্যে দু'জন ভেসে গেলাম অজানায় । আহ! এতো সুখ, এতো আনন্দ, এতো উত্তেজনা জীবনে আর কখনো আসেনি এমন করে।
চলবে .............
৩০ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৭
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ১০ পর্বের পর সব চরিত্র সামনে চলে আসবে।
২| ৩১ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৪
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: কিছু বানান ভুল আছে এই পর্বে। ঠিক করে নিবেন।
মনস্তাত্ত্বিক বানানটা এমন হবে।
পরের পর্ব পড়ছি এখন।
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৫
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: হায়রে অনু
তুই কী ভুত্নি বোনো
©somewhere in net ltd.
১| ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬
রাজীব নুর বলেছেন: মূলত আপনি অনুরাধাকে প্রধান্য দিচ্ছেন। হ্যা অনুরাধাই প্রধান চরিত্র।