![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
প্রথম পর্ব
বন্ধের এক বিকাল বেলা আমি আর ঝন্টু মিলে ভ্রমণে বের হয়ে ঘণ্টা খানেক ভিক্টোরিয়া পার্কে চক্কর কেটে হোটেল পানতোয়ায় চিড়া, দই কলা সহযোগে নাস্তা করলাম। নাস্তা শেষে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ঝন্টু বলল, "চলো চেরাগ আলীর বাসায় একবার ঢু মেরে দেখি উনি বাসায় আছেন কিনা। বন্ধের দিনে চেরাগ আলীর গাঁজাখুরি গল্প শুনতে মন্দ লাগবে না ।
একে তো বন্ধের দিন । তারপর স্ত্রী গেছেন দিন সাতেকের জন্য বাবার বাড়ি। হাতে তাই অঢেল সময়। বাসায় গিয়ে তাস নিয়ে বসার বাসনাটা যখন মনের কোনে উঁকি দিতে দিতে পাকাপোক্ত হয়ে বসায় জোগাড় যন্ত্র করছিল ঠিক সে সময় ঝন্টুর এ প্রস্তাব খানা মন্দ মনে হলো না। তাসের চেয়ে গল্প শোনার নেশাটা বেশি হওয়ায় আমি সানন্দে বললাম, বেশ , তাহলে চলো যাওয়া যাক । তবে সাবধান বন্ধু , চেরাগ আলীর গল্পকে তার সামনে যেনো আবার গাঁজাখুরি বলতে যেও না । আমার কথায় ঝন্টু উচ্চ কণ্ঠে হেসে উঠে বলল, এতো বোকা আমায় ভেবো না হে । পরাণের মায়া সকলের ই আছে ।
বিস্তর ভিড়ভাট্ট ঠেলে পদব্রজে যখন চেরাগ আলীর বাসার পৌছলাম তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে মাগরিবের আযান হয়ে গেছে। সূর্য ডুবে গিয়ে চারপাশে বেশে অন্ধকার নেমে এসেছে ৷ হৃষিকেশ দাশ রোডের দু'ধারের দোকান পাটে বাতি জ্বলে উঠেছে। আশে পাশের হিন্দু বাসা বাড়ি থেকে উলুধ্বনি ভেসে আসছে । টুপি ফতুয়া পড়ে মুসুল্লিরা মসজিদে ছুটে যাচ্ছে ।
মোড়ের দোকান থেকে ৪০ টাকায় চেরাগ আলীর প্রিয় সিগারেট বেনসন এন্ড হেজেজ এর একটা প্যাকেট কিনে নিলাম। আমায় সিগারেট কিনতে দেখে ঝন্টু বলল, "গরম গরম ডালপুরি নিয়ে নেই । চায়ের সঙ্গে ধোঁয়া উঠা গরম গরম পুরি খেতে কিন্তু মন্দ হবে না । কি বলো হে ?"
আমি বললাম, আগে গিয়ে তো দেখি চেরাগ আলী বাসায় আছেন কিনা ৷ থাকলে এসে কিনে নেওয়া যাবে। পেটের ভেতর এখনো যে দই,চিড়া গড়াগড়ি খাচ্ছে।
চেরাগ আলী বাড়িতেই ছিলেন। বাড়ির ভেতর ঢুকে উঠন পেরিয়ে চেরাগ আলীর বসবার ঘরের ভেজানো দরজায় টোকা দিতেই চেরাগ আলী দরজা খুলে দিলেন । আমাদের দেখে খুশি হয়ে বললেন," তোমরা এসেছো পড়েছো দেখছি । তোমাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম। কথাটা এমন ভাবে বললেন, যেনো তিনি আগ থেকেই জানতেন আমরা আজ তার বাসায় আসবো ।
ঝন্টু বলল, "আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, আমরা যে আসছি সেটা আপনি আগে থেকেই জানতেন ?"
চেরাগ আলী ঝন্টুর কথার কোন জবাব না দিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে হাসতে বললেন, "বসো, বসো সুবলও আসলো বলে।"
চেরাগ আলীর মুখে বন্ধু সুভলের আসার কথা শুনে বেশ অবাক হলাম । আমাদের জানা মতে এ সময় অফিসের কাজে ওর ঢাকার বাহিরে থাকার কথা । মেঝের উপর পাতা তোশকের বিছানায় বসতে বসতে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,"সুবলের সাথে আপনার কথা হয়েছে বুঝি ?"
আমার কথা শুনে চেরাগ আলী হেসে বললেন,"না, না কারো সাথে আমার কথা হয়নি । তোমরা মানিকজোড় যখন এসে উপস্থিত হয়েছো তখন সুবল ও এসে হাজির হবে নিশ্চয় । এ কথা বোঝার জন্য জ্যোতিষী হতে হয় না ।"
কিন্তু সুবল তো অফিসের কাছে ঢাকার বাহিরে গেছে ?
আমার কথা শুনে চেরাগ আলী মুখের হাসি আরও প্রশস্ত করে দৃঢ় কন্ঠে বললেন, দেখোই না কি হয় । একবার যখন বলেছি ও আসবে । তখন ওকে আসতেই হবে । কোন এক কারণে চেরাগ আলীকে বেশ প্রফুল্ল মনে হচ্ছে । ফর্সা চেহারায় অদ্ভুত সুন্দর এক জ্যোতি খেলে যাচ্ছে । ঠোঁটের কোণে জেগে উঠা হালকা হাসির রেখা, যেন অজানা এক সুখের গল্প বলছে, চোখে দুটোতে খেলে যাচ্ছে এক গভীরতার ঝিলিক, যা অগণিত প্রশ্ন ও সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়। সেই আলো যেন কেবল বাহ্যিক নয়, তার অন্তরাত্মার এক প্রতিফলন যে আলো তাকে আরও অসাধারণ, আরও মুগ্ধকর করে তোলে। এমনটা সচরাচর দেখা যায় না ।
চেরাগ আলী কথা শেষ হতে ঝন্টু সঙ্গে সঙ্গে বলল, "ভবিষ্যৎ বাণী করছেন নাকি চেরাগ দা ? মনে রাখবের আজ সুবল না এলে কিন্তু আপনার জারি জুরি শেষ হয়ে যাবে ৷ ঝন্টুর কথা শুনে আমি আঁতকে উঠলাম। এই রে; আজ বুঝি শুরুতেই ঝন্টু চেরাগ আলীর মেজাজটা বিগড়ে দিলো। এখুনি হয়তো চেরাগ আলী গর্জে উঠবেন।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে চেরাগ আলী মোটেও গর্জে উঠলেন না। উলটো হাসতে হাসতে পানের কৌটো থেকে এক টুকরো সুপরি তুলে নিয়ে মুখে পুরে থু থু করে বার দু'য়েক বা কাঁধের পেছনে থু তু ছেটাবার ভঙ্গি করে বললেন, "তোমার মতো উজবুকের কথা আজ আর রাগ হচ্ছি না।
আজ মনটা বেশ ভালো। একটু আগে একজন দেখা করতে এসেছিলো। তোমরা যদি খেয়াল করে থাকো তবে ঢুকার সময়ই তার সাথে তোমাদের দেখে হবার কথা । এই তো কিছুক্ষণ আগেই ছেলেটা বের হয়ে গেলো।
ঝন্টু বললো, "কই ? আসার সময় কারো সঙ্গে তো দেখা হলো না ?
ঝন্টু র কথা শেষ হতে আমি বললাম, "সিগারেট কেনার সময় চেরাগ আলীর বাসার গেইট দিয়ে নীল গেঞ্জি,জিন্স পরিহিত চব্বিশ,পঁচিশ বছরের দাড়ি গোঁফওয়ালা এক যুবক'কে বের হয়ে যেতে দেখেছি । চেরাগ আলী নিঘাৎ তার কথা বলছে । আমি তাই বললাম, ছেলেটার পড়নে ছিলো নীল গেঞ্জি আর জিন্সের প্যান্ট তাই না ?
আমার কথা শুনে চেরাগ আলী হেসে বললেন, " এ জন্যই তোমাকে আমার এতো পছন্দ। তুমি এসব উজবুকদের মতো চোখ,কান বন্ধ রেখে চলো না। সদা জাগ্রত থাকো । বেশ বেশ ।
চেরাগ আলীর কথা ঝন্টু গায়ে না মেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, "যাই গরম, গরম পুরি নিয়ে আসি। চায়ের সঙ্গে পুরি খেয়ে যদি এই উজবুক'কে আপনার মনে ধরে।"
চেরাগ আলী ঝন্টুকে বাঁধা দিয়ে বললেন, "বসো বসো পুরি আনতে যেতে হবে না ৷ তোমরা আসছো বুঝতে পেরে আমি চা, পুরির কথা বলে রেখেছি। সুবল এলেই সব চলে আসবে ।
ঝন্টু বসতে বসতে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো ঠিক সে সময় দরজায় টোকা পড়লো এবং সঙ্গে সঙ্গে ভেজানো দরজা খুলে গেলো । দেখতে পেলাম হাসি মুখে দরজায় দাড়িয়ে রয়েছে সুবল । ওর ডান হাতে একটা ব্রাউন রং এর ঠোঙ্গা ।
সুবলকে দেখে চেরাগ আলী বলে উঠলেন , এসো এসো তোমায় নিয়েই কথা হচ্ছিল। সুবল জুতা খুলে ঘরে ঢুকে চেরাগ আলীকে নমস্কার দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,"বাহ! তোমরা কখন এলো ? তা গল্প কি শুরু হয়ে গেছে ? "
চেরাগ আলী বললেন, ওরা ও সবে মাত্র এলো। সুবল হাতের ঠোঙ্গাটা চেরাগ আলীর সামনে রেখে ঝন্টুর পাশে গিয়ে বসলো।
ঝন্টু ঠোঙ্গার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কি আছে ওর ভেতর, কি আনলে?
সুবল উত্তর দেবার আগেই চেরাগ আলী ঝন্টুর দিকে তাকিয়ে বললেন, " এক চলি রাজশাহী পান, এক পোয়া সুপারী আর এক কৌট রেডলিফ জর্দা। " তারপর তিনি সুবল এর দিকে তাকিয়ে ফের বললেন, "এনে ভালোই করেছো । তা না হলে এসবের জন্য আমাকে বের হতে হতো।"
আমি বুঝলাম চেরাগ আলী মুখে যতোই বলুক ঝন্টুর কথায় তিনি রাগ করেনি কিন্তু তার হাবভাবে এ কথা পরিষ্কার যে তিনি মনে মনে বেশ তেতে আছেন । সে জন্য ই এসব বলে নিজের ক্ষমতা দেখাতে শুরু করেছেন ।
চেরাগ আলীর কথা শুনে সুবল অবাক হয়ে বলল,"একদম ঠিক ; কি আশ্চর্য ! একেবারে হুবুহু বলে দিয়েছেন ।
চেরাগ আলী কিছু বলার আগেই ঝন্টু বলে উঠলো, "ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে।"
চেরাগ আলী এবার কিন্তু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন,"তোমার জ্ঞান-বুদ্ধি কখনোই হবে না ৷ না দেখে এ সব সামান্য বিষয়ে বলা , চেরাগ আলীর জন্য কোন বড় কিছু না হে ছোকরা । এতোই যখন অবিশ্বাস তখন আসো কেন হে, না, এলেই তো পারো। "
ঝন্টু বলল,"আসি কি আর আপনার এসব তন্ত্র মন্ত্র ,ভোজ-ভেল্কি দেখতে ? আসি তো বন্ধুত্বের টানে আর গল্প শোনার লোভে ।
চেগার আলী কঠিন কিছু বলতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত হো হো করে হেসে বলে উঠলেন , বাহ! উজবুকের মাথাটা তাহলে কাজ করতে শুরু করেছে ।
ঘটনা অন্য দিকে ঘটতে শুরু করেছে বুঝতে পেরে আমি বললাম, রাখুন তো চেরাগ দা ওর কথা । তার চেয়ে একটা গল্প বলুন আয়েশ করে শুনি । তা; কি যেন বলছিলেন ছেলেটাকে নিয়ে ?
এবার বাঁধ সাধলো সুবল । সে বলল," তা আগে একবার বলুন তো দাদা; না দেখেও আপনি কি করে বুঝলেন ঠোঙ্গার ভেতর কি আছে?"
চেরাগ আলী এবার আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে বলল, "কি হে, গল্প বলবো না ওর প্রশ্নের উত্তর দেবো ? আমি বললাম , ওর প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তারপর না হয় গল্প বলুন ।
চেরাগ আলী এবার থু থু করে দু বার বা কাঁধের পেছনে থুতু ছিটিয়ে তারপর বললেন, এসব হচ্ছে, নিম্ন মার্গীয় শক্তি। তারপরেও এসব অর্জন করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। কেউ কেউ এসবের পেছনে যুগের পর যুগ কাটিয়ে দেয়ে । তবে যারা আসল সাধক তাদের মনই এমনিতেই ঘটমান ঘটনা সম্পর্কে আগাম ইঙ্গিত দেয় ৷
এই যে যেমন, তোমদের আসতে দেখে যেমন বললাম, সুবলও আসছে ৷ তোমরা শুনে অবাক হলেও কিছুক্ষণ পর কিন্তু সুবল ঠিক এসে হাজির হলো ৷ ঠিক কিনা বলো?
আমরা এক যোগে মাথা নেড়ে বললাম, হ্যা ঠিক।
চেরাগ আলী এবার হেসে বললেন," এটা কি করে ঠিক হলো? সেটা বলো তো দেখি?
আমরা পরস্পরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলাম । কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না ।
তবে ঝন্টু বলল, মনে মনে তন্ত্র মন্ত্র প্রয়োগ করে হয়তো জেনেছেন?
চেরাগ আলী বললেন, আমি তো তোমাদের সাথেই বসে আছি । তন্ত্রমন্ত্র করলে তো তোমরা দেখতে পেতে ।
আমরা এবার ও একযোগে মাথা নাড়লাম, হ্যা তাইতো ।
চেরাগ আলী বললেন, "যাদের এসবের জন্য তন্ত্রমন্ত্র করতে হয়, তাদেরকে অতি নিম্ন পর্যায়ের তান্ত্রিক বলে জানবে। যারা প্রকৃত সাধক, তারা এমনিতেই এসব জানতে পারে। এ জন্য তাদের তন্ত্রমন্ত্রের আশ্রয় নিতে হয় না।
সকাল দেখে যেমন দিন সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি মানুষের মুখ দেখেই তারা তার ভূত, ভবিষ্যৎ সব বলে দিতে পারে। এসবের জন্য তাদের কোনো তন্ত্রমন্ত্র করতে হয় না। মানুষের মন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যাদুকর। মনের মাঝে ডুব দিলে পাবে মানিক ও রতন। ভবে ডুবে ক’জন..."
সুবল এবার প্রশ্ন করল, আচ্ছা চেরাগ দা, বলুন তো, "যাদু, টোনা, বান মারা কিংবা বশীকরণ এসব কি তন্ত্রমন্ত্রের অংশ?"
সুবলের প্রশ্ন শুনে চেরাগ আলী বললেন, "জগতে যা কিছু আছে, তার সবকিছুর ভালো এবং মন্দ দু'টি দিক আছে। যে যে পথে যায়, তার পথ সঠিক কিংবা ভুল হতে পারে। তন্ত্রমন্ত্র নিষেধ নয়। তবে তন্ত্রমন্ত্রের নামে যাদু, টোনা, বান মারা, কালো যাদু করা, বশীকরণ এসব নিষেধ। কোনো ধর্মীয় শাস্ত্রেই এসবের বৈধতা দেওয়া নেই। এসব ধর্মীয় শাস্ত্রের অংশও নয়। এজন্য লেবাস দেখে সবাইকে বিশ্বাস করতে নেই। গুরু ধরতে হয় অনেক বাছ-বিচার করে।"
চলবে .....
২| ০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৬
যামিনী সুধা বলেছেন:
সামু কি বাচ্চাদের জন্য কচিকাঁচার আসর?
৩| ০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৯
শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ বলেছেন: গল্প ভালো লাগছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:১৫
আজাদী হাসান রাজু বলেছেন: ফ্রি হয়ে পড়ে নিব,, এখন সময় পাচ্ছি না,, কিছু মনে নিবেন না