![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
ঝন্টু এবার বলল, আসল গুরু পাবো কোথায় বলুন ? সবাইকেই তো এক মনে হয় । এরপর একটু থেকে বলল, আপনি অবশ্য ব্যতিক্রম । আর চিনিনা বলেই তো সাধু, সন্যাসীরা যা বলে, যা করে আমরা সাধারণ মানুষেরা তাই বিশ্বাস করি। না করেই বা ই উপায় কি বলুন?
উপায় তো অবশ্যই আছে? শোন, যারা তন্ত্র মন্ত্র খারাপ বা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করে তারা নিশ্চিত ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানবে।
একজন প্রকৃত খোদা ভক্ত সাধক কখনো তার স্রষ্টার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করার দুঃসাহস দেখাবে না ৷ তারা বড় জোড় কারো জন্য দোয়া করতে পারে ৷ প্রকৃত সাধকদের দোয়া ঈশ্বরের দরবারে সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয় ৷ পরম করুণাময় সেই সব বান্দার দোয়া দ্রুত কবুল করেন যারা তার উপর বিশ্বাস অটল রাখে ।
সাধনা চর্চায় যারা সামান্য প্রাপ্তির প্রলোভনে প্রলুব্ধ হয়, শয়তান তাদেরকে সহজেই পথভ্রষ্ট করে। অল্প বিস্তর কিছু দিয়ে বিনিময়ে তাদের আত্মার অধিকার নিয়ে নেয়। পরকালে তাদের জন্য আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। আজ তোমাদের বলে দিচ্ছি, শুনে রাখো, তন্ত্রমন্ত্র কাকে বলে। মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদি ধর্মের অনুসারীদের জন্য যেমন তাদের ধর্মীয় কিতাব অনুসরণ করে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের কথা বলা হয়েছে, ঠিক তেমনি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের জন্যও তন্ত্রমন্ত্র হলো একটি আধ্যাত্মিক ও গূঢ় সাধনার পদ্ধতি। এটি মন্ত্র, যন্ত্র, এবং বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের একটি মাধ্যম।
"তন্ত্র সাধনা মূলত দেহ, মন ও আত্মার মধ্যে ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। এর মূল উদ্দেশ্য হল মোক্ষ বা আত্মজ্ঞান অর্জন করা। এই আত্মজ্ঞান অর্জন করতে গিয়ে কেউ কেউ ঈশ্বরের আরাধনা ভুলে শয়তানের পূজায় লিপ্ত হয়, এবং তখন নেমে আসে ভয়াবহ পরিণতি।"
তাহলে কি সাধু সন্যাসীরদের কাছে আমরা যাবো না? ঝন্টু প্রশ্ন করলো।
"কোনো কিছু প্রাপ্তির আশায় অবশ্যই যাবে না। মনে রাখবে, যা তোমার নয়, তা কখনো তোমার হবে না। জোর করে কিছু অর্জন করা যায় না, আর যদি যায়ও, তা ধরে রাখা যায় না। যার নসিবে যা রয়েছে, তার সবকিছুই আসমানে পূর্বনির্ধারিত। এটা বিশ্বাস করতে হবে। এই বিশ্বাসটাই সব। এটাই ভাগ্য বা নিয়তি।"
"তাহলে যে শুনি, কেউ কেউ জাদু,তন্ত্র-মন্ত্র করে ধন দৌলত,চাকরী বাকরীসহ কতো কিছু অর্জন করছে। প্রেমিক, প্রেমিকাকে মিলিয়ে দিচ্ছে । অবাধ্যকে বাধ্য করছে । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ বাঁধিয়ে দিচ্ছে এমন কি বান মেরে একে অন্যকে হত্যা পর্যন্ত করছে। তবে কি এসব ভুল; মিথ্যা বা বানোয়াট?" সুবল প্রশ্ন করলো।
চেরাগ আলী বললেন, না, এসব ভুল নয়। তবে এসব হচ্ছে, জ্ঞানের অপব্যবহার। আগুন দিয়ে তুমি যেমন আলো পেতে পারো, আবার সেই আগুন দিয়ে বাড়ি-ঘরে পুড়িয়েও দিতে পারো। নির্ভর করছে, কী উদ্দেশ্যে তুমি আগুনকে ব্যবহার করছো । শয়তান মানুকে সবসময় কুমন্ত্রনা দেয় । শটকাট রাস্তা দেখায় । যা এ পথে পা বাড়ায় আখেরে তাদের আর কিছুই থাকে না ।
এ জ্ঞান শয়তান পেলো কোথায়? সুবল ফের প্রশ্ন করলো ।
সুভলের প্রশ্নের উত্তরে চেরাগ আলী কিছু বলতে যাচ্ছিলেন এমন সময় তার চাকর ট্রে ভর্তি করে চা ও ডালপুরি নিয়ে এলেন। আমি তাতে হাফ ছেড়ে বাচলাম , গল্প শুনতে এসে এতো এতো তত্ত কথা শুনতে ভালো লাগে না । আলোচনা যাতে আরো বেশি গুরুগম্ভীর না হয় তাই চা পুরি শেষ হলে আমি বললাম, 'চেরাগ দা, এভাবে আলোচনা না করে, এ সংক্রান্ত যদি কোনো গল্প, মানে সত্য ঘটনা থাকে, সেটা বললে আমাদের বুঝতে আরও সুবিধা হতো।'
চায়ের পালা শেষ করে চেরাগ আলী বললেন, "ঠিক আছে, শোনো তবে।" এই বলে চেরাগ আলী এক দুর্দান্ত গল্প বলতে শুরু করলেন।
আমার বয়স তখন চব্বিশ কিংবা পঁচিশ।
বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় বাড়ি পালিয়ে পূর্ন মাত্রায় দেশের এ মাথা থেকে ওমাথা পর্যন্ত ছুটে বেড়াচ্ছি ৷ কেন ছুটছি, কিসের টানে ছুটছি তার কিছুই জানি না। গৃহে মন বসে না তাই ছুটে চলা ৷ গৃহ ত্যাগিরা বোধ হয় এমনই হয়৷ কয়েক বাড়িতে থাকলেই হাপিয়ে উঠে । সবকিছু থেকে মন উঠে যায় ৷
বাড়ি থেকে বের হয়েছি মাস কয়েক হয়েছে । রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারাদিন হাটি । সকালে দুটো খেয়ে হাটা শুরু করি যেখানে গিয়ে সন্ধ্যা হয় সেখানে রাত কাটিয়ে আবার পরেন দিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে বের হয়ে পড়ি ৷ দিনের বেলা একান্ত প্রয়োজন না হলে, লোকালয় এড়িয়ে চলি। রাতে মসজিদ কিংবা মন্দির পেলে তার চাতালে শুয়ে রাত কাটিয়ে দেই ।
এইভাবে কেটে গেছে বেশ কয়েকটি মাস । তবে সঠিক দিনক্ষণ বলতে পারবো না । সাধু সন্যাসীদের দিনক্ষনের হিসেব রাখতে নেই । তাতে সাধনায় বিঘ্ন ঘটে । সংসারের প্রতি এক ধরণের মায়ার সৃষ্টি হয়ে ।
সেবার হাটতে হাটতে দক্ষিন বঙ্গের হাজির হয়েছি । জনমানব শূণ্য নির্জন পথ ধরে হেটে হেটে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছি । আশ্রয় নেওয়ার মতো একটা স্থান খুঁজছি । কোমর সমান উঁচু মেঠো পথের দু'পাশে বিস্তৃন ধান ক্ষেত আর মাঝে মাঝে নলখাগড়ার বন ছাড়া আশে পাশে কিছু নেই ।
এসব জায়গায় চোর ডাকাতের ভয় না থাকলেও বুনো জীব জন্তুকে একদম বিশ্বাস নেই । অভূক্ত শেয়াল,কুকুরের দল, প্রায়ই দল বেঁধে আক্রমন করে পথচারীদের হত্যা করে আয়েশ করে ভুরি-ভোজন সারে । দিনের বেলা তাদের হাড় গোর ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না । তাই খুব প্রয়োজন না হলে লোকজন এসব জায়গায় খুব একটা আসে না ।
একাগ্র মনে হাটতে হাটতে রাস্তা থেকে হাত দশেক দূরে ধান ক্ষেতের ভেতর থেকে মাঝারি সাইজের একটা শিয়ালকে উকি মারতে দেখলাম । শেয়াল সাধারণত দিনের বেলায় গর্তে লুকিয়ে থাকে । ভীতু টাইপের প্রাণী বলে পারত পক্ষে মানুষের ধারে কাছে ঘেঁষে না । আমাকে দেখে শেয়ালটার পালিয়ে যাবার কথা । কিন্তু অবাক হয়ে খেয়াল করলাম আমাকে দেখে শেয়ালটা মোটেও ভয় পেল না । উল্টো মাথা উঁচু করে অদ্ভুত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি দাঁড়িয়ে পড়ে কিছুক্ষণ শেয়ালটার দিকে তাকিয়ে থেকে ফের হাঁটতে শুরু করতে ই শেয়ালটা দৌড়ে রাস্তা পাড় হয়ে অন্যপাশের ধান ক্ষেতের ভেতর মিলিয়ে গেলো ।
মনটা কেন যেন খচখচ করতে লাগলো। কিছুক্ষণ হাঁটার পর বুঝতে পারলাম, ব্যাপারটা কী। একটু খেয়াল করতেই দেখতে পেলাম, একটি, দুটি নয়, পুরো একটা দল পিছু নিয়েছে আমার। নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব রেখে ধানক্ষেতের ভেতর দিয়ে মাথা নিচু করে আমার পিছু পিছু হাঁটছে। তাদের উদ্দেশ্য এখন পরিস্কার। অন্ধকার নেমে এলেই একযোগে হামলে পড়বে । অজানা এক শঙ্কার কেপে উঠলো পুরো শরীর । শেয়ালের দল অপেক্ষা করছে অন্ধকার নামার। আমি দ্রুত পা চালালাম । অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে । সন্ধ্যা হতে আর বেশি বাকি নেই । বড় জোড় আধ ঘন্টা খানেক সময় হাতে আছে । এর মধ্যে নিরাপদ একটা আশ্রয় না পেলে শেয়ালের খাদ্য হতে হবে ।
যথা সম্ভব দ্রুত পা চালিয়ে আশের পাশের কোন একটা লোকালয়ের ঢুকে যেতে হবে । তা না হলে অন্তত একটা উচু গাছ দেখে তাতে উঠে বসে রাত্রিটা গাছে কাটিয়ে দিয়ে প্রাণ বাচাতে হবে ।
কিন্তু আশে পাশে আশ্রয় নেবার মতো কোন উচু গাছ দেখছি না । বহু দূরে বেশ আবচ্ছা কিছু উচু গাছ পালা দেখা যাচ্ছে বটে তবে সেখান পর্যন্ত পৌছতে পৌছতে দিনের আলো থাকবে বলে মনে হয় না ।
ভেবে দেখো ব্যাপারটা ; নির্জন রাস্তা ধরে তুমি হাটছো তোমাকে অনুসরণ করে পিছু পিছু হাটছে ভয়ংকর একদল হিংস্র শেয়াল । অন্ধকার নেমে এলেই যারা ঝাপিয়ে পড়বে তোমার উপর। পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অজানা অতংকে শরীর ছমছম করে উঠলো ।
সত্যি বলতে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম সেদিন । দ্রুত পা চালাতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালাম । পেছনে যতোটা পথ পেরিয়ে এসেছি এখন ফিরে গেলেও সেখানে কিছুতেই অন্ধকার নেমে আসার আগে পৌছতে পারবো না । সামনে, পেছন যে পথেই যাই না কে বিপত ওৎ পেতে অপেক্ষআ করছে । অগ্যতা সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । যা থাকে কপালে সামনের দিকেই এগিয়ে যাবো ।
আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্র বলতে ঝুলিতে তলায় পড়ে আমি ইঞ্চি খানেক লম্বা একটা ফল কাটার ছুরি । ঘনিয়ে আসা বিপদে সেটা কোন কাজে আসবে বলে মনে হচ্ছে না ।
আমি ভীতু প্রকৃতির লোক নই । সেই ছোট বেলাতেই ভয় ডর যা ছিল সব কেটে গেছে । কিন্তু আজ হঠাৎ করে উপস্থিত হওয়া অনাগত এ বিপদের শঙ্কায় বুকের ভেতরটা যেনো কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগলো ।
প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুণ
চলবে .......
০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৩
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ব্লগে আসি , অফ লাইনে কিছুক্ষণ ব্লগ পড়ি । তারপর চলে যাই । গত পরশু মনে হঠাৎ করে মনে গল্পটা পোস্ট করি ।
২| ০৮ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:০৪
কু-ক-রা বলেছেন: উহা (সাখাওয়াত হোসেন বাবন) একজন উঁচু মানের সাহিত্যিক।
০৮ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৪৪
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্যের জন্য । আশা করি শেষ পর্যন্ত গল্পের সাথে থাকবেন । ভালো থাকুন সব সময় ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫১
রাজীব নুর বলেছেন: চলুক।
অনেকদিন পর ব্লগে এলেন।