নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে \"আমার কবিতা নামে\" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন

আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।

সাখাওয়াত হোসেন বাবন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেরাগ আলী ও কালো যাদু - পিশাচ কাহিনী, ৮ম পর্ব (চেরাগ আলী সিক্যুয়েল)

১৬ ই মে, ২০২৫ রাত ৯:৫২


৮ম পর্ব 

মায়ের স্নেহ মমতা ভালোবাসার সাথে জগত সংসারের কোন কিছুর তুলনা চলে না । মন্দির থেকে লোকজন বের হয়ে যেতেই ছেলেটির মা , বাবারে.... আয় .... নেমে আয় বলে আকাশ পাতাল এক করে কাঁদতে শুরু করলেন ।মহিলা ধরেই নিয়েছেন তার সন্তানের আজ আর রক্ষে নেই। সেই ভয়ে উপায়ন্তর না দেখে সমানে কেঁদে চলেছেন।

ছেলেটির বাবা পরিমল বাবু এগিয়ে গিয়ে ক্রন্দনরত স্ত্রীর কাছ ঘেঁষে দাড়াতেই তার উপরও কাকগুলো হামলে পড়লো । হাত নেড়ে কাক তাড়াবার বিফল চেষ্টা করতে করতে যখন বুঝলেন এভাবে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব নয় তখন স্ত্রী বহু ধরে টান দিয়ে বললেন, চলো, চলো মন্দির ছেড়ে বাহিরে গিয়ে দাড়াই। এখানে থেকে আর কোন লাভ হবে না।

সে কথা শুনে মহিলা কেঁদে উঠে বললেন, আমার বাজানের কি হবে ? এ প্রশ্নের কোন জবাব এই মুহূর্তে পরিমল বাবুর কাছে নেই । তিনি শূন্য দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন, কাকগুলো চলে গেলো আমরা আবার এসে নামাবো ওকে । এখন এসো আমার সাথে । যা কপালে আছে তাই হবে। এমন সময় একটা কাক পরিমল বাবুর মুখের উপর ঠোকর দিলে তিনি ও মা গো বলে হাত ঝারা দিয়ে চিৎকার করে উঠলেন ।

মন্দির চত্বর থেকে সকলে বের হয়ে গেলেও অনেকে মন্দির গেটের বাহিরে থেকে ভিড় করে তাকিয়ে দেখছিল ভেতরে কি হচ্ছে । মানুষের কুতূহলের কোন শেষ নাই ।

কাকের সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। শয়ে শয়ে কাক এখন মাথার উপর উড়ছে এবং কর্কশ স্বরে ডেকে চলেছে। সূর্যের আলো ক্রমে কমে গিয়ে একেবারে অন্ধকার নেমে এসেছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে ঝোড়ো হাওয়া। যে কোন সময় ঝড় শুরু হতে পারে। ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চারপাশ থেকে ধুলো বালি খড় কুটো টেনে এনে ঘুনি আকারে উড়ে যাচ্ছে আকাশে । বাতাসের তীব্রতায় মন্দিরের চারপাশে থাকা গাছগুলোর ডাল,পালা ভেঙ্গে পড়তে চাইছে । মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোন শক্তি তীব্র আক্রোশে উড়িয়ে নিয়ে যাবে সব । কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, অজানা শক্তির প্রভাবে নিম গাছের একটি পাতাও কিন্তু নড়ছে না । একেবারে স্থির আছে। এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রকৃতি যে রহস্যময় বার্তা দিতে চাইছে তা সহজেই অনুমেয় । চারদিকের অন্ধকার আরও ঘনীভূত হতে শুরু করেছে সেই সাথে ঝড়ের আভাস যেন প্রতিটি মুহূর্তে আরও প্রবল হয়ে উঠছে।

যত সময় গড়াচ্ছে কাকগুলো আরো বেশি অস্থির, আরো বেশি আক্রমনাত্নক হয়ে উঠছে । এরমধ্যেও একটি আশ্চর্যজনক ঘটনা লক্ষ্য করলাম, এখন পর্যন্ত একটি কাকও কিন্তু আমাকে আক্রমণ করতে আসেনি । এমন নয় যে, আমি সুরা পড়ে আমি গাত্র বন্ধন করে রেখেছি ।  বিচিত্র কারণে কাকগুলো আমায় আক্রমণ করছে না । হতে পারে তা আমার পড়নের কালো লুঙ্গি আর ফতুয়ার কারণে তারা আমাকে আক্রমন করছে না । 

ব্যাপারটা পরিমল বাবু খেয়াল না করলেও মহিলাটি কিন্তু ঠিক ই খেয়াল করেছে । তার সাথে দৃষ্টি বিনিময় হতেই তিনি, ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলে উঠলেন, "বাবু কাকগুলি তো আপনাকে কিছু বলছে না । আপনি কিছু একটা করুন না ?  ছাওয়ালটাকে আমার রক্ষা করুণ বাবু। আমার যা আছে সব আপনাকে দিয়ে দেবো ।"

সমুদ্র ডুবে যাওয়া মানুষ যেমন ডুবে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করে । মহিলাটির ঠিক তেমনি নিজের ছেলেকে বাঁচাবার শেষ ভরসা টুকু খুঁজে বেড়াচ্ছে । নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও সে ছেলেকে নিরাপদে ফেরত পেতে চাইছে । এ জন্যই মায়ের জাতের ঋণ কখনো শোধ হবার নয় । 

সকলে চলে যাবার পর এখন আমাকে সামনে পেয়ে কড় খুটোর মতো আঁকড়ে ধরে আকুল হয়ে মিনতি জানাচ্ছে ছেলেকে বাঁচাবার জন্য । তবে পরিমল বাবুর চোখে মুখে কিন্তু কোন আকুতি মিনতির লেশ মাত্র দেখতে পেলাম না। উল্টো স্ত্রীর হেন আকুতি মিনতির জন্য সে যেন একটু বিরক্ত । সে কোন ভাবে স্ত্রীকে মন্দির থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারলেই বাঁচে ।

মহিলাটির জন্য মায়া হল । নিজের মায়ের মুখটি মনে পড়ে গেলো । কতদিন হল মাকে দেখি না । না , এবার বোধ হয় বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এলো । একটা দীর্ঘ শ্বাস বের হয়ে এলো বুক চিড়ে ।

আমি তাকালাম ছেলেটির দিকে । এদিকে তার কোন ভ্রূক্ষেপ নাই । সে এখনো চোখ,মুখ উল্টো আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কিছু বলে যাচ্ছে ।

পরিমল বাবু স্ত্রীকে বাহিরে নিয়ে যাবার জন্য হাত ধরে টান দিতেই মহিলা ঝাড়া মেরে সে হাত সরিয়ে দিয়ে ছুটে এসে আমার পা জড়িয়ে ধরে বললেন, "বাবা আমি জানি না তুমি কে ; তবে আমার মন বলছে , আমার এমন নিদানের কালে ভগবানই তোমায় পাঠিয়েছে । তুমি কিছু একটা করো বাবা । কিছু একটা করো ।"

ভদ্রমহিলার হঠাৎ এমন আচরণের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না । দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, "আহা! মা, করছেন কি ? ছাড়ুন , ছাড়ুন, পা ছাড়ুন বলছি ।"

মহিলার দু বাহু ধরে উঠাতে যাবার সময় তার মুখ থেকে ঘোমটা খুলে যেতে দেখতে পেলাম মুখের বা পাশটা দেখে ভেতরটা চমকে উঠলো আমার । মহিলার মুখের পাশের  "পুরো অংশ আগুনে  ঝলসানো । এ জন্য ই উনি সর্বক্ষণ মুখে কাপড় দিয়ে রেখেছিলেন ।  অস্পূট একটা শব্দ বের হয়ে এলো আমার মুখ দিয়ে, হায় ঈশ্বর এ দশা হলে কি করে ? 

পরিমল বাবু দ্রুত ছুটে এসে স্ত্রী হাত ধরে বললেন, চলো চলো । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, চুলোর উপর পড়ে গিয়ে ছিলো । তাই এমন হয়েছে । 

মহিলা এবার বলে উঠলেন,"না, না , ছাড়বো না । কিছুতেই তোমার পা ছাড়বো না । মনে করো তোমার  মা তার সন্তানের পা ধরে অন্য সন্তানের জীবন ভিক্ষা চাইছে । কিছু একটা করো বাবা ।"

আমি অসহায় ভাবে বললাম, "আমি কি করবো মা ?"

মহিলা বলে উঠলেন , "তুমিই পারবে বাবা, আমি দেখেছি  তোমাকে শূন্যে হাত দিয়ে ফল আনতে ।  কিছু একটা করো বাবা । ছোঁয়ালটাকে আমার বাঁচাও । "

বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর ।

মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, সাহায্য করবো পরিবারটিকে । তাই মহিলার বাহু ধরে দাড় করিয়ে দিতে দিতে বললাম , ঠিক আছে মা, আমি চেষ্টা করে দেখছি কি করা যায় ।

এরপর পাশে দাড়িয়ে থাকা তার স্বামীর উদ্দেশ্যে বললাম , "পরিমল বাবু ওনাকে বাহিরে নিয়ে গিয়ে গেটের বাহিরে অপেক্ষা করুণ । আমি আসছি আপনার ছেলেকে নিয়ে । কথাটা বলার সাথে সাথে আকাশ থেকে টপাটপ করে মরা কাক চারপাশে পড়তে লাগলো ।

সেদিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিয়ে তাড়া দিয়ে বললাম, "দ্রুত বেরিয়ে যান এখান থেকে । আমি দেখছি কি করা যায় । তারা আর  আর দাঁড়ালো না । দ্রুত মন্দির থেকে বের হয়ে গেটের বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ।

তাদের তো বের করে দিলাম , কিন্তু কি করবো তা ভেবে পাচ্ছিলাম না ।  অন্ধকার আর ঝড়ো হাওয়ার দরুন চারপাশের কোন কিছুই আর ভালো মতো দেখা যাচ্ছে না । এখানে যা কিছু ঘটছে তা যে কোন অশুভ শক্তির প্রভাবে নয় তা বুঝতে বাকি নেই ।

কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে তাই ঈশ্বর'কে স্মরণ করলাম । মনে মনে বললাম , "হে প্রভু, হে বিশ্ব সংসারের মালিক রক্ষা করো ছেলেটিকে । তুমি না রক্ষা না করলে আর কে রক্ষা করবে আমাদের ।"

ঠিক তখন মাথায় একটা বুদ্ধি  বুদ্ধি খেলে গেলো মাথায় । দ্রুত তিন কুল পড়ে শরীর বন্ধ করে নিলাম । তারপর এক মুঠো ধুলো নিয়ে সুরা পড়ে তাতে ফু দিয়ে,নিম গাছটির কাছে এগিয়ে গিয়ে বললাম, "এ গাছে বসবাসরত সকল ভাল,মন্দ সকল জীন, ভূত প্রেত্মা, মানব,দানব,পরী যারাই থাকো না কেন , "এখুনি এখান থেকে বের হয়ে যাও । তা নাহলে এই পড়া মাটি পড়ে গাছের চারপাশে ছিটিয়ে দিয়ে চিরদিনের জন্য তোমরা এখানে বন্দি হয়ে পড়বে । আদেশ করছি কাল বিলম্ব না করে পালিয়ে যাও এখান থেকে । আর ছেলেটিকে নিচে নামিয়ে দাও ।" কথাগুলো পর পর তিনবার উচ্চারণ করার পরেই  পুরো গাছটি থরথর করে কেঁপে উঠলো। ক্ষণিকের জন্য মনে হলো যেন, কেয়ামত হয়ে যাবে। 

দু'দম পিছিয়ে এসে আমি গাছের চারপাশে ঘুরে ঘুরে একটু একটু করে হাতের মুঠি থেকে পড়া মাটি ছিটিয়ে দিতে লাগলাম । যখন আর একবার ছেটালেই গাছটি বন্ধ হয়ে যাবে , ঠিক তখন আমার পেছন থেকে অতি মিহি কণ্ঠে কেউ বলে উঠলো , থামো , থামো বলছি । কি চাও তুমি ?

আমি বুঝে গেলাম কাজ হয়েছে । পেছনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে পেলাম না । তারপরেও ভয়ে শরীরের পশমগুলো একটা একটা করে দাঁড়িয়ে গেলো । ভয় চেপে রেখে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাই বললাম, "আমি কি চাই তা কি তুমি বা তোমরা এখনো বুঝতে পারো নাই ?"

কিছুক্ষণ কেউ উত্তর দিলো না । তারপর ফোঁস ফোঁস শব্দ করে সেই মিহি কণ্ঠে বলল , "বুঝতে পেরেছি । তবুও তোমার কাছ থেকে শুনতে চাইছি ।" 

আমি বললাম, "বেশ ; গাছে থাকা ছেলেটিকে কোন রূপ ক্ষতি না করে নামিয়ে দাও । আমি ওকে ওর মার কাছে ফিরিয়ে দিতে চাই ।"

আবারো নীরবতা নেমে এলো । কেউ কোন উত্তর দিলো না ।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে বললাম, "কি হল ?  শুনতে পাচ্ছো না আমার কথা ? নাকি আমার কাজটি আমি করে চলে যাবো এ মন্দির ছেড়ে ?"

সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এলো , "না, থামো । থামো , ও কাজটি করো না ।"

আমি থেমে গিয়ে বললাম, "বেশ থামলাম । তাহলে আমি যা বললাম তা করো ।  নামিয়ে আনো ছেলেটিকে ।"

এবার পেছন থেকে এক গরগর শব্দ শোনা গেলো । তারপর সেই কণ্ঠটি আবার বলল, "ওকে নামিয়ে দিতে পারি কিন্তু তুমি কি তুমি ওকে বাঁচাতে পারবে ? জানো কি হয়েছে ওর ?"

আমি বললাম, "অনুমান করতে পারছি । কোন দুষ্ট আত্মা ভর করেছে ওর উপর ।"

পেছন থেকে আবারো দীর্ঘশ্বাসের পর গরগর শব্দ গেলো ।

কি ভুল বলেছি ?

না, ভুল বলনি । তবে ওর উপর খুব ভয়াবহ কালো যাদু করে চালান করা হয়েছে ।

"কে কালো যাদু করেছে ?" আমি প্রশ্ন করলাম । 

সেটা, পারতো তুমি নিজেই বের করো ।

এর ঠিক পরেই হঠাৎ করে আমার সামনে দপ করে শব্দ করে উপর থেকে ভারি কিছু পড়লে ।  শব্দ লক্ষ্য করে তাকিয়ে দেখি ছেলেটি বসে আছে মাটির উপর। 

আমি আর কাল বিলম্ব না করে ছুটে গিয়ে  হাতের মুঠোতে থাকা বাকি ধুলোটুকু ছেলেটির মাথার উপর ছিটিয়ে দিতেই সে, জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লো মাটিতে ।

ধীরে ধীরে আধার কেটে গিয়ে অন্ধকার থেকে সূর্য বের হয়ে এলো । আমি মন্দিরের বাহিরে তাকিয়ে দরজার সামনে ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা পরিমল বাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম, "আসুন, আপনার ছেলেকে নিয়ে যান।"


চলবে ..........। 


মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০২৫ সকাল ৯:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: বানানের দিকে নজর দিবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.