নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

শাওন আহমাদ

এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।

শাওন আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শীত নাকি বিষাদের হাওয়া

১২ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৪



প্রকৃতিতে শীত শীত গন্ধ অনুভূত হচ্ছে, বাতাসে টের পাচ্ছি মৃদুমন্দ হিমেল পরশ। ভোরবেলা বারন্দায় দাঁড়ালে; সাদা চাদর টেনে দৃষ্টিতে বাধ সাধছে কুয়াশা, ছাদের গাছগুলোর গা ধুয়ে দিচ্ছে শিশির। প্রকৃতিতে মিষ্টি সোনারাঙা রোদ আঁকিবুঁকি করছে; গ্রীষ্মের কাঠফাটা দাবদাহ নেই, নেই বর্ষার অঝোর ধারায় ভিজে যাওয়াও। এ যেনো শীতের আগমনী বার্তা। শীত এসব আভাসের মাধ্যমে প্রকৃতির কানে ফিসফিস করে বলে যাচ্ছে, আমি এসছি গো তোমার উঠনে; লও হে মোরে বরণ করে।
শীতের আগমনে ধরায় বিষণ্ন সুন্দরের একটি রূপ দৃশ্যমান হয়; মনে হয় প্রকৃতির ডানায় বিষণ্নতা ভর করেছে। বেলা বাড়তে না বাড়তেই কেমন ছায়াপড়ে রাত নেমে আসে ধরণীতে, নেমে আসে সুনসান নীরবতা— শুরু হয় ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর জোনাকীর উড়াউড়ি। কেনো জানিনা এই বিষণ্ন প্রকৃতির সাথে, আমিও এই সময় বিষণ্নতার সমুদ্রে তলিয়ে যাই। ন্যাফথালিন দিয়ে আলমারিতে তুলে রাখা নতুন কাপড়ের মতো, যত্ন করে ঢেকে রাখা স্মৃতিরা— দিকভ্রান্ত প্রজাপতির মতো এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকে। হাঁসফাঁশ করতে থাকে পাঁজরের ভেতর থাকা হৃতপিন্ড। রাতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বিষণ্নতার ব্যথা— আমি আগলাতেও পারিনা, ফেলতেও পারিনা। স্মৃতির সাম্পান এসে বিষাদের ঘাটে নোঙর ফেলে, শুরু হয় পাওয়া না পাওয়ার হিসেব-নিকেশ। মনে হয়, জগতে যেনো কিছুই নেই; কোনোদিন আমার জন্য কিছুই ছিল না— বিরান ভূমিতে দাঁড়িয়ে থাকা নিঃসঙ্গ এক হিজল গাছ আমি।

সেদিন সন্ধ্যার মুখে, আকাশ দেখার উদ্দেশ্যে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়েছি— এ সময়ের আকাশ সাজে নানা রূপে; কখনো নীলাভ সাদা, কখনোবা গায়ে মাখে গোধূলীর নানা রঙ। আকাশে এলোমেলো ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। আমি ছাদের রেলিং এ দু-হাতে ভর করে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে আছি— নীলের বুকে কিছু উদাসী মেঘ পশ্চিম থেকে পূবে ভেসে যাচ্ছে। আমি অপলক তাকিয়ে থেকে নীল-সাদার খেলা দেখছি। যখন আমার বিষণ্নতার বিষে দমবন্ধ লাগে, তখন আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। এ আমার অনেক পুরানো অভ্যাস।
পলকহীন আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়েই আছি; পশ্চিমের রক্তিম আভা চোখে-মুখে এসে পড়ছে, মৃদু ঠান্ডা বাতাসে ছাদের গাছগুলোর পাতা নড়ার শব্দ টের পাচ্ছি— হঠাৎ কোনো এক পাখির ডাকে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, ছাদের কার্নিশে গুটিসুটি হয়ে বসে দোয়েল ডাকছে; কিন্তু এ কেমন স্বর! এমন ভাঙ্গা গলায় তো দোয়াল শীষ দেয় না! ভাবলাম দোয়েলকেও বুঝি প্রকৃতির বিষণ্নতা ছুঁয়ে দিয়েছে, তাই সে একা ছাদের কার্নিশে বসে— বিষাদী সুরে ডাকছে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তার বিষাদী সুরের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছিলাম; কিন্তু কি মনে করে সে আমার দিকে তাকিয়ে বার কয়েক ডেকে, ফুড়ুৎ করে উড়াল দিয়ে অট্টালিকার ভীড়ে মিলিয়ে গেল।

চারদিকে অন্ধকার নেমেছে, অট্টালিকার কোটরে কোটরে জ্বলে উঠছে সাঁঝবাতি। অনুভব করলাম অন্ধকার হবার সাথে সাথে বাতাসে শীতলতাও কিছুটা বেড়েছে। ছাদ থেকে নেমে কড়া লিকারে চা নিয়ে বারান্দায় বসেছি; বাসার পাশে অযত্নে বেড়ে উঠা ছাতিম ফুলের গন্ধে মাতাল মাতাল লাগছে। ডুবে যাচ্ছি গন্ধের মাদকতায়। ছাতিম গাছের তলায় নয়-দশ বছরের এক ছেলে, গোটা কয়েক উনুন জালিয়ে— ভাপা, চিতই আর তেলের পিঠার পসরা সাজিয়ে বসেছে। শীত এলেই এই মানুষগুলো বাড়তি আয়ের একটা রাস্তা খুঁজে পায়। কয়েকদিন আগে সমকর্মীর সাথে পিঠা খেতে গিয়েছিলাম ছাতিম তলায়, পিঠা খাচ্ছিলাম আর বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম— ওর বয়সি আমার বাসার বাচ্চাদের এখনো মুখে তুলে না খাইয়ে দিলে তারা হাতে তুলে খেতে পারেনা; আর এই বাচ্চা এক হাতে চার চারটি উনুন সামলে নিচ্ছে! এদের কোনো বিষণ্নতা নেই, নেই জীবন নিয়ে কোনো অভিযোগও, পাওয়া না পাওয়ার হিসেবও এরা কষতে জানেনা— দিনশেষে আধপেটা খেয়ে পড়েই, বেঁচে থাকার আনন্দে তারা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:২৭

নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: আমি যতটুক জানি দুপুরে এই সময় আকাশ নীল থাকে ।

আপনার মত আমিও বিষণ্নতায় আকাশ দেখি । তবে ছাদে গিয়ে নয় । রাস্তায় হেঁটে হেঁটে ! চৈত্রের রোদে এভাবে কত হেঁটে হেঁটে আমি বিষণ্ন সময় কাটিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই !

আপনাকে ধন্যবাদ শাওন অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলেন আপনি আমাকে !

১২ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১১

শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টে মন্তব্য জুড়ে দেওয়ার জন্য।

২| ১২ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৩৯

জনারণ্যে একজন বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন, শাওন। কয়েকটা লাইন খুব টাচি - মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো। জীবনবোধ বেশ গভীর আপনার।

প্রতিটা প্যারাগ্রাফের মাঝে এক্সট্রা স্পেস দিলে ভালো হতো। তখন পড়ে চোখের আরাম পাওয়া যায়।

বুঝলাম না এই পোস্টে কেন তেমন কোনো মন্তব্য নেই! খুব সম্ভবতঃ ভাই-বোন সম্পর্কজনিত ডিপ্লোমেসির অভাব।

আশাকরি এই মন্তব্য পড়ে কেউ নিজেকে চেনানোর জন্য দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে আসবে না আবার।

১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৫৭

শাওন আহমাদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ! আমার পোস্টে মন্তব্য জুড়ে দেওয়ার জন্য। লেখাকে পাঁচটি প্যারায় লিখেছিলাম কিন্তু প্যারাগুলো বড় বড় হয়ে যাওয়ায় পড়তে কষ্ট হয়েছে, এরপরেও কষ্ট করে পড়েছেন তার জন্য ভালোবাসা নিবেন। বুঝলাম না এই পোস্টে কেন তেমন কোনো মন্তব্য নেই! এই কথা আরও মানুষ বলেছেন আমার অন্যকোনো পোস্টে। খুব সম্ভবতঃ ভাই-বোন সম্পর্কজনিত ডিপ্লোমেসির অভাব। উত্তর আপনিই দিয়েছেন। বাদ থাক এসব, এই যে আপনারা কেউ কেউ আমাকে এভাবে মূল্যায়ন করছেন এটাই আমার কাছে সেরা প্রাপ্তি।

৩| ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আবেগময় একটি লেখা।

১৩ ই নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫১

শাওন আহমাদ বলেছেন: ভালোবাসা জানবেন।

৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩

মিরোরডডল বলেছেন:




শীত আসবে আসবে যে সময়টা, আই মিন শীতের শুরুতে সে সময়টা সত্যিই খুব ভালো লাগার।
বিশেষ করে বাংলাদেশে সেই সময়টা বছরের সবচেয়ে প্রিয় সময়।

অল্প স্বল্প ঠাণ্ডা, দুপুরের রোদে কেমন যেনো আদর আদর উষ্ণ আরামদায়ক।
সন্ধ্যায় রাস্তার পাশে শুকনো পাতা পোড়ার ঘ্রান এসব কিছু মিলিয়ে খুব ভালো লাগে।

আর পিঠাপুলিতো আছেই।
গ্রামে গেলে থাকবে খেজুরের রস, আমার সবচেয়ে প্রিয় ড্রিঙ্ক।
যদিও এখন গ্রামে আগের মতো পাওয়া যায়না।
সরষে ফুলের মাথা নষ্ট করা সৌন্দর্য, কি যে ভালো লাগে!

শাওনের পোষ্টের বর্ণনা পড়ে আমি যেনো কোথায় চলে গিয়েছি।


১৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৫৫

শাওন আহমাদ বলেছেন: সত্যিই শীতের শুরুটা কেমন যেনো ঘোর লাগানো। অসংখ্য ধন্যবাদ! আমার পোস্টে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।

৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৭

বিজন রয় বলেছেন: শীত আসছে। আমার খুব ভাল লাগছে। শীত আমার খুব পছন্দের।

আপনার লেখাটি ভাল হয়েছে।

১৫ ই নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৫৭

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে, ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.