নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আগারগাঁও থেকে জরুরি একটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরছি। বাস থেকে নেমে, গলির পথ ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটছি। হাঁটতে হাঁটতে মোবাইল বের করে দেখি, ‘কলিগ’ বেশ কয়েকবার কল করেছেন। রিং ভলিউম কমানো থাকায় টের পাইনি। হাঁটা অবস্থায় তাঁকে কল করলাম। তিনি কল রিসিভ করে বললেন, “কোথায় আপনি, বাড়িতে নাকি?”। আমি, “না, একটু কাজে বের হয়েছিলাম; এখন বাড়ি ফিরছি”। তিনি বললেন, “আজ জোবায়েরের বাসায় রাতে খেতে বলেছে। আমি চলে এসেছি। আপনি চলে এসেন”। আমি, “ঠিক আছে ভাইয়া। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হচ্ছি ইন শা আল্লাহ”।
সিঁড়ি ভেঙে উঠতে উঠতে ভাবছি, আজ বাড়িতে আমার রাতের খাবার বন্ধ রাখতে বলব। কিন্তু বাড়িতে এসে দেখি, রুমমেট রাতের খাবার ইতিমধ্যে রান্না করে ফেলছে এবং সেটা আমার অত্যন্ত পছন্দের খবার। ভাবলাম থাক, এটা আমি সকালে খেয়ে নেব। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে, মাগরিবের নামাজ আদায় করে বেরিয়ে পড়লাম জোবায়েরের বাড়ির উদ্দেশ্যে। ওর বাড়িতে সবাই মিলে রান্না-বান্না করে পেট পুরে খেলাম। খাওয়া-দাওয়া শেষে, ছাদে বেশ খানিকটা সময় আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম।
রাত প্রায় ১২ টা। ভ্যাঁপসা গরমের কারণে ছাদে এসে পায়চারি করছি। খানিক বাদে বাদে ঠান্ডা বাতাস গা ছুঁয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে জলধোয়া বাতাস। নদীর পাড়ে বসে থাকলে যেমনটা অনুভূত হয়, ঠিক তেমন। পূবের আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘ খোঁজার চেষ্টা করছি; হঠাৎ আমাদের বাড়ির পাশের গলি থেকে কানে একটি শব্দ কড়া নাড়ল, “মাগো, আমারে কয়ডা ভাত দিবেন? আমার খুব ক্ষিধ্যা লাগছে”। উনি গলি দিয়ে হাঁটছেন আর বারবার একই কথা বলে যাচ্ছেন, “মাগো, আমারে কয়ডা ভাত দিবেন? আমার খুব ক্ষিধ্যা লাগছে”। ওই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল, পৃথিবীর সবচেয়ে করুণ সুর হচ্ছে এই শব্দ।
ভেতরে খুব আকুলিবিকুলি হচ্ছে তাঁর জন্য। মনে হচ্ছে এক দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে তাঁকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি। আবার ভাবছি, আমাকে তো অনেকটা জায়গা ঘুরে পরের গলিতে যেতে হবে। গিয়ে যদি তাঁকে না পাই! সাথে এটাও ভাবছিলাম, নিশ্চিয় কেউ না কেউ খাবার দেবে তাঁকে। কয়েক মুহূর্ত পরে শুনতে পেলাম, এবার শব্দটি আমাদের বাড়ির সামনের গলি থেকে আসছে। দ্রুত রেলিং এর কাছে গিয়ে নিচে তাকালাম; দেখি এক অন্ধ বৃদ্ধ লোকের হাত ধরে অন্য একজন মধ্যবয়স্ক লোক গলি দিয়ে হাঁটছেন—সেই একইভাবে খবার চাইছেন।
আশেপাশের বারান্দা থেকে নিচে টাকা ফেলছিল, কিন্তু তাঁরা শুধু ভাতই চাইছিলেন। রাত অনেক, সবার খাওয়া শেষ হয়ে যাওয়ায় কেউ খাবার দিতে পারছিলেন না। আমি দৌড়ে নিচে নেমে গেলাম। গেইট খুলে দেখি, পাশের বাসার এক ভদ্রলোক বেঁচে যাওয়া কিছুটা খাবার দিচ্ছেন তাদের। আমি পেছন থেকে ডেকে বললাম, “আঙ্কেল, আমার কাছে কিছুটা খবার আছে, আমি কি নিয়ে আসব? উনি মাথা নাড়লেন। এক দৌড়ে ওপরে এসে খবার নিয়ে নিচে এলাম।
বৃদ্ধের হাতে সেটা তুলে দিয়ে, আবার ছাদে এসে দাঁড়াল। এখন আর তাদের শব্দ শোনা যাচ্ছে না। বাচ্চারা যেমন ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাঁদতে থাকে, খাবার খেয়ে শান্ত হয়ে যায়; তাদের অবস্থাও তেমন মনে হলো। নিশ্চয় কোথাও বসে খাবার খেয়ে— সৃষ্টিকর্তার প্রতি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে।
রাত তখন অনেক, রুমে চলে এলাম। বিছানা গুছিয়ে শোয়ার বন্দোবস্ত করছি, এমন সময় শুরু হলো অঝোর ধারায় বৃষ্টি। এ যেনো আমার আনন্দ অশ্রু। অসম্ভব রকমের শান্তি নিয়ে, ঘুমের রাজ্যে যাত্রা করলাম…।
ছবিঃ গুগল
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০
মিরোরডডল বলেছেন:
খাবার নেই বলে একজন ক্ষুধার্ত মানুষ না খেয়ে আছে, এটা ভাবতেই কষ্ট লাগে।
এরকম কাউকে খাওয়াতে পারলে ভালো লাগে।
শাওন, ইউ ডিড ওয়েল।
জীবনের সকল দৈন্যতার মাঝে, অর্থের অভাবে ক্ষুধার্ত থাকা সবচেয়ে বেদনাদায়ক।
১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমার খুব ইচ্ছে হয় এদের নিয়ে কাজ করার কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় কিছুই করতে পারি না। এদের সেবায় জীবন পার করে দিতে পারলে এর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে?
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩১
শাহ আজিজ বলেছেন: একটা উত্তম কর্ম করেছেন ।