নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানিনা কি লিখতে চাই,কি বা বলতে চাই,কত শত অব্যক্ত কথনগুমরে মরে হৃদয়ের কারাগারে .....

শেহজাদী১৯

আমি যে আঁধারের বন্দিনী আমারে আলোতে নিয়ে যাও

শেহজাদী১৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শতবর্ষী বৃক্ষ ও আমার পিতামহী

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:৪৭



আমার দাদীকে দেখলেই আমার শতবর্ষী বৃক্ষের কথা মনে পড়ে। তার কুঞ্চিত ঝুলে পড়া চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে কালশিটে দাগ আর হাতের গাঁট ও পায়ের পাতার রুক্ষ কঠিন কড়াগুলো দেখে তাকে আমার বহু বছর অযত্নে অবহেলায় ঝড়ঝাপ্টা সামলে অবিচল দাঁড়িয়ে থাকা কোনো মহীরূহের মতনই মনে হয়। মহীরূহ যেমন অনঢ় অটল স্থির দাঁড়িয়ে রয় তার বহু বছরের ঘাত প্রতিঘাত সয়ে চলা দৃঢ় কঠিন কুঞ্চিত কান্ডের বাকলে শরীর জড়িয়ে। তেমনি আমার দাদীমার শরীরে ছড়িয়ে থাকা বাকল দেখি আমি। সাদা ধপধপে চুলের কয়েকটি ধারা ঝুলে থাকে তার পানপাতা মুখী তোবড়ানো গালের আশপাশ জুড়ে। দাদীমার পরণে থাকে সরু নীল পাড় সাদা বকের মত শাড়ী।

দাদীমা সারা দিনমান উদয় অস্ত বসে থাকেন তার শোবার ঘরের জানালার ধারে। কোনো কথা বলেন না তিনি। তাকে কেউ দেখলে ভাববে খুব মন দিয়ে তিনি কিছু ভাবছেন। হয়তো বা অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে। কে জানে? কেউ খুব কাছে গেলে বা খাবারের সময় ডাক দিলে ঘোলা চোখে ফিরে তাকান তার দিকে। তার ক্ষীন হয়ে আসা দৃষ্টির ভাঁজেও খেলে যায় এক অজানা সন্মোহন। অনেকেই ভয় পেয়ে যায়। বিশেষ করে বাড়ীর নতুন কোনো কাজের মানুষ এলে তার ধারে কাছেই কেনো যেন ঘেষতে চায় না কেউ। অথচ দাদীমা কাউকে কিছুই বলেন না। যেন মৌনব্রত নিয়েছেন উনি। কখনও অস্ফুটে কোনো শব্দও করেন না। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় উনি মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছেন।

অথচ দিনের পর দিন একই ভাবে বসে থাকেন তিনি। জানালার ধারে, আকাশ আর মাটির মিলনস্থনে যেন কোনো অদেখা সীমান্তে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। গভীর রাতে ঢুলে পড়েন ঘুমে। খুব ভোরে উঠে মা তার দাঁত মাঁজিয়ে দেন, গোসল করিয়ে কাঁপড় পালটে বসিয়ে দেন জানালার ধারে। সময় মত খাবার আসে। কয়েক গ্রাস মুখে তুলে খাইয়ে দেন মা । একা একা নানা কথা বলেন তার সাথে। কিন্তু দাদীমার মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। মৌনব্রত নিয়েছেন তিনি অথবা খুব গভীর মনযোগে মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছেন।



Picture

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:২৭

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: বার্ধক্য প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছু দুঃখ নিয়ে আসে।
লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো, আমার দাদীও জীবিত আছেন।
হ্যাপী ব্লগিং

২১ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:৩৩

শেহজাদী১৯ বলেছেন: বার্ধক্য মানুষের জীবনে আনে এক অদ্ভূত স্থবিরতা। যে স্থবিরতায় হয়তো সেই ব্যক্তিটি নিয়েও আশ্চর্য্য হয়। নিজের ভেতরের অদ্ভূত সেই পরিবর্তনগুলো কেউ মানে কেউ মেনে নিতে না পেরে জ্বলে যায় যেন হুতাশনের মত।

অসংখ্য ধন্যবাদ প্রান্ত।

২| ২১ শে মে, ২০১৯ রাত ১০:১১

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: সময় নামক ঝড় জীবনের উপর দিয়ে বয়ে চলে.......

যার ছাপ রেখে যায় বার্ধক্যে.....

Life is a game, play it !

লেখায় ভালোলাগা.....

ব্লগে স্বাগতম :)

২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১২:০৭

শেহজাদী১৯ বলেছেন: ধন্যবাদ আর্কিও পটেরিক্স

৩| ২২ শে মে, ২০১৯ ভোর ৬:৪৭

বলেছেন: এ যে নিজের চোখে জীবনের পড়ন্ত বিকেল দেখা।।।


পোস্ট লাইক।।।। বেশি করে লিখতে থাকুন।। পড়তে থাকুন,।।।। পোস্ট পড়ে মন্তব্য করুন।।।


হ্যাপি ব্লগিং

২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:১২

শেহজাদী১৯ বলেছেন: ধন্যবাদ ল। শুভকামনা।

৪| ২২ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:০৩

আহমেদ জী এস বলেছেন: শেহজাদী১৯,





জীবনের শেষ ঘাটে এসে একসময় মানুষ ঘাটের শতবর্ষী বটগাছটির মতোই অবাক-মৌনী হয়ে থাকে। সে শুধু দেখে যায়, বটের পাতা নড়ার মতো তার চোখের পাতাও নড়ে।

লেখার হাত চমৎকার। পরিপক্ক বলাই বোধহয় ভালো। লিখতে না চাইলেও সুন্দর লিখেছেন।

২২ শে মে, ২০১৯ রাত ১১:২০

শেহজাদী১৯ বলেছেন: দাদীমার চোখের পাতার ভাঁজে লেখা রয়েছে এক অবাক মানচিত্র। সেই মানচিত্র ঘিরে থাকে সাদাটে রোয়ার মত অক্ষিপল্লব। তার মাঝে ঘোলা চোখের মনি আর চারপাশ জুড়ে খয়েরী বর্ন বলয়।

দাদীমার চোখ এক অবাক বিস্ময়। সকল বৃদ্ধ মানুষের চোখই এক এক অজানা ইতিহাসের বই। যেই বই অপঠিত থেকে যায় প্রায় সকলের কাছেই। অথচ এই বই এ লেখা আছে কত দীঘল রাত্রী আর বৈচিত্রময় দিনের অজানা কাহিনী।

আমি তার পায়ের পাতায় হাত বুলাই। খড়খড়ে খড়ি ওঠা চামড়ায় হাত বুলিয়ে চমকে উঠি আমি। দাদীমা তখন শতবর্ষী বৃক্ষ থেকে হয়ে যায় খসখসে ধুসর চামড়ার এক বিশাল কুমীর। কুমীরের তুলনাটা খুব খারাপ লাগে আমার কাছে কিন্তু নিজের মনের সাথে দ্বন্দ চলে না। যা মনে আসে তাই ভাবতেই দিতে হয় নইলে মনের সাথে হবে প্রতারণা।

দাদীমার খসখসে পায়ের পাতায় কিছু অদ্ভুত আঁচিল । হাত দিলে বড় ভয় লাগে আমার। কিসের ভয় সেও জানি আমি।
দাদীমার মাঝে আমি আমার নিজের একদিন বৃক্ষ বা কুমীর হয়ে যাবার দূরদর্শী চিত্র দেখি।

৫| ২৪ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:৩৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: শেহজাদী১৯,




প্রতি মন্তব্যে দারুন এক অনুভবের কথা লিখেছেন যে অনুভবে আছে নিজেকে দেখা । যেখানে নবীন কিশলয় থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে শতবর্ষী বৃক্ষ হয়ে ওঠার গল্প লুকিয়ে আছে।

লেখার বুনুনিও বৃক্ষের মতো দৃঢ়।

প্রতিমন্তব্যে লাইক +++++

২৪ শে মে, ২০১৯ রাত ৯:০৮

শেহজাদী১৯ বলেছেন: শতবর্ষী বৃক্ষ বয়ে চলে শত কথকথা। মৌনীবৃতী সে বৃক্ষ নিশ্চল, নির্বাক জীবনের অবগাহনে নির্লিপ্ত দাঁড়িয়ে রয়। শত বর্ষের দিন, ক্ষন, প্রহর সময়ের হিসেবে তার শিকড় বহু দূর গেড়ে গেছে। তবুও, এক আলপটকা টানে উপড়ে পড়ার আশঙ্কা জেগে থাকে। তার দুগ্ধ ধবল তেল চিক্কন শরীরে জন্মেছে আজ কুৎসিৎ আঁচিল, কালশিটে বা অনাহূত বার্ধ্যকের ছাঁপ। শত বর্ষের ব্যবধান কিংবা অযত্ন অবহেলায় সেখানে আজ আগাছার অবাধ বিচরণ!

এই যে কুঁচকানো চামড়ার, তোবড়ানো মুখখানিতেই একদিন ছিলো বসরাই গোলাপের আভা। ঘোলা, ক্ষীন দৃষ্টির নির্লিপ্ত চাহনীতে ছিলো চকিত হরিণ শোভা। এক গাল মুক্তো ঝরা হাসি হারিয়েছে বহুদিন আগেই দন্তহীন মুখগহ্বরের মাঝে। তার ছিলো এক ব্যস্ত সময়, ফুরসুৎহীন দিন, ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দিনের শেষে এক টুকরো সোনালী বিকেল......

কিন্তু আজ তার সমানে অপার সায়াহ্ন। সূর্য্যি ডোবার অপেক্ষা.....

৬| ২৫ শে মে, ২০১৯ দুপুর ১:১৮

মেঘ প্রিয় বালক বলেছেন: সত্যি বলতে হারিয়ে গিয়েছিলাম,আপনার লিখার মাঝে। অসম্ভব ভাল লাগা কাজ করছে। ধন্যবাদ জানিবেন।

২৫ শে মে, ২০১৯ রাত ৮:০৫

শেহজাদী১৯ বলেছেন: ধন্যবাদ জানিলাম।
কত কিছুই মনে হয়, মনে মনে লিখি। কথা কথা বলা হয় মনে মনে বলি। মাঝে মাঝে লেখার পাতায় সেসব আসে।

৭| ০১ লা জুন, ২০১৯ রাত ১১:৪০

রাকু হাসান বলেছেন:


প্রথমে স্বাগতম আপনাকে। কদম ফুলের শুভেচ্ছা আপনার । ব্লগীয় পথচলা আপনার সুখকর হোক।

নতুন হিসাবে নিচের লিংকগুলো পড়ে দেখলে উপকার হতে পারে।
সামু ব্লগের সহজ পাঠ!! (অনভিজ্ঞদের জন্য)
সহায়তামূলক পোষ্ট; সামুতে স্ট্র্যাগলিং নতুন ব্লগারদের কমন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর। নতুন ব্লগারদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।

উপরের মতো করেই নতুনদের েএকটা সময় বরণ করে নিতে চেষ্টা করতাম । এখন আর করতে হয় না ,কেননা ব্লগ কতৃপক্ষ নতুনদের সরাসরি প্রথম পাতায় লেখার সুযোগ দিয়েছিল । এখন বোধহয় আবার সীমিত করেছে। অনেক দিন পর এভাবে করাও পোস্টে মন্তব্য করতে পারায় ভালো লাগছে ,আপনার লেখা ও মন্তব্য দেখে মনে হচ্ছে আপনি অনেক পরিণত। অযথা বকবক করলাম প্রথম দিনেই ।

আসলেই দাদী/দাদারা এমনই হয় । বটবৃক্ষ কিংবা শতবর্ষী বৃক্ষ। একটি গাছের উপর দিয়ে কম ধকল যায় না ,যেমন ব্যক্তি জীবনেও । প্রথম হলেও আপনি ভালো ভাবে তুলে ধরেছেন । আপনার দাদীর কথা পড়ে ,আমার দাদীর কথা মনে পড়ে গেলে । লেখার সাথে অনেকটাই মিল পেলাম । সে গল্প আরেক দিন । লিখুন । অনেক ভালো থাকুন । একজন পাঠক হিসাবে আমাকে পাশে পাবেন েইনশাঅল্লাহ্ । শুভকামনা করি আপনার জন্য ।

০১ লা জুন, ২০১৯ রাত ১১:৫৬

শেহজাদী১৯ বলেছেন: কদম ফুটতে কত বাকী?

বাদলদিনের কদম ফুটবার আগেই কদম ফুলের শুভেচ্ছা জানাবার জন্য রইলো অসংখ্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ শুভকামনার জন্য। লিংকগুলো পড়ে দেখবো। নতুন হিসেবে লিখলেও আমার লেখার শুরুটা এখানেই নতুন নয়।

বটবৃক্ষের মত আমাদের সংসারে থাকা বয়োজৈষ্ঠ ব্যক্তিরা অথর্ব হয়ে যান। নদীর মত বহমান জীবনে পড়ে ভাঁটা......
বড়ই অবাক বিস্ময় এই প্রকৃতি.....

৮| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৬

বিজন রয় বলেছেন: ও ব্লগে তো আপনি বেশি দিন নন।
অবশ্য পুরানো কেহ হলে সবই আপনার জানা।

যাহোক দেরিতে হলেও স্বাগতম জানিয়ে গেলাম।
শুভব্লগিং।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৬

শেহজাদী১৯ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও।

৯| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: হ্যাপি ব্লগিং !!
লেখা চলতে থাক। শুভকামনা রইলো।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৯

শেহজাদী১৯ বলেছেন: ধন্যবাদ

১০| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২২

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার শিরোনামে একটি চমৎকার পোস্ট! এবং এটি এ ব্লগে আপনার প্রথম পোস্ট!
চমৎকার শুরু হয়েছে আপনার ব্লগযাত্রা। শুভকামনা রইলো, আপনার ব্লগীয় সময় কাটুক সৃষ্টির আনন্দে, সফল হোক আপনার লেখালেখির এ প্রয়াস।
আপনার এ পোস্ট পড়ে আমার দাদী ও নানীর কথা মনে পড়ে গেল। তাদেরকে দেখেও আমার মহীরুহ মনে হতো।
পোস্টের বাইররেও প্রতিমন্তব্যগুলোতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, কিছু জীবন ঘনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করেছেন। সেগুলোও ভাল লেগেছে।
আপনার লেখার হাত ভাল। চালিয়ে যান, নিয়মিত পোস্ট লিখুন। আর সময় পেলে মন্তব্যকারীদেরও দুই একটা পোস্ট পড়ুন।
পোস্টে প্লাস + +


২৩ শে মে, ২০২০ বিকাল ৫:৫০

শেহজাদী১৯ বলেছেন: অজস্র ধন্যবাদ। আরও কিছু লেখা পাবলিশ করেছিলাম। ড্রাফ্টে নিয়েছি। ওল্ড হোম আমার লেখা নিজের সবচাইতে প্রিয় এক লেখা। যেখানে এমনই এক নারীর কথা লিখেছি জীবন সায়াহ্নে এসে তার বর্নাঢ্য জীবনের ফ্যাকাসে দিনগুলো বয়ে চলেছে।তার আশেপাশের মানুষগুলো কাছে যেন কোনো মূল্যই নেই তার কারো কাছে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.