![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইফেল টাওয়ার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের শ্যাম্প দি মারস এ অবস্থিত একটি লৌহ গঠিত জালিকাকার টাওয়ার।মূলত ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ স্মরণার্থে টাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়।বর্তমান বিশ্বে টাওয়ারটি ফরাসিদের সাংস্কৃতিক প্রতীক হয়ে দাড়িয়ে আছে।টাওয়ারটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকৃত স্মৃতিস্তম্ভ।১৯৬৪ সালে আন্দ্রে মেলরক্স,মিনিস্টার অব কালচারাল অ্যাফেয়ার্স কর্তৃক আইফেল টাওয়ারকে অফিসিয়ালি ঐতিহাসিক সৃতিস্তম্ভ ঘোষণা করা হয়।
টাওয়ারটি বিখ্যাত ইঞ্জিনিয়ার আলেকজান্দ্রে গুস্তাভ আইফেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে।গুস্তাভ আইফেলের নামে টাওয়ারটির নামকরণ করা হলেও মূল কীর্তি ছিল মরিস কেচলিন এবং এমিলি নুগেয়ার নামক দুই স্থপতির।এরাই টাওয়ারটি নির্মাণের মূল স্থপতি এবং ডিজাইনার ছিল।টাওয়ারটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৮৮৭ সালের ২৮ জানুয়ারি যা ২ বছর সময় নিয়ে ১৮৮৯ সালের ১৫ মার্চ শেষ হয়।অতপর সেটি ১৮৮৯ সালের ৩১ মার্চ সর্বসাধারণ এর জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।টাওয়ারটি লম্বায় ৩২৪ মিটার এবং এর ভিত্তি বর্গাকার যা প্রতিদিকে ১২৫ মিটার চওড়া।এতে ৩টি ফ্লোর এবং ৮টি লিফট আছে।টাওয়ারটি নির্মাণকালে ৭৩০০ টন লোহা এবং ৬০ টন রং ব্যবহার করা হয়েছে।এ পর্যন্ত টাওয়ারটি ১৯ বার রং করা হয়েছে।টাওয়ারটির ওজন ১০,০০০ টন এবং এতে ২০,০০০ বাতির আলোকসজ্জা করা আছে।১৮৮৯ সাল পর্যন্ত টাওয়ারটির নিমার্ণকাজে ব্যয় হয়েছিল ৭৭,৯৯,৪০১ গোল্ড ফ্রাংক।১৯৩০ সালের আগ পর্যন্ত নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত ক্রাইস্লার ভবনের নির্মানের আগ পর্যন্ত এটিই ছিল মানবসৃষ্ট সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা।ফরাসিরা একে লা ডেম দে ফার বা আয়রন লেডি নামে ডাকে।
টাওয়ারটির নির্মাণের অবদানের জন্য এতে ৭২ জন ফরাসি বিজ্ঞানী,ইঞ্জিনিয়ার,গণিতবিদের নাম খোদাই করা আছে।১৮৮৯ সালে নির্মাণের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ২৫০ মিলিয়ন মানুষ টাওয়ারটি ভ্রমণ করেছে।প্রতিদিন গড়ে ২৫,০০০ মানুষ টাওয়ারটিতে আহরণ করে।নির্মাণের প্রথম দিকে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদ গড়ে ওঠে এবং তার ধারাবাহিকতায় কমিটি অফ থ্রি হান্ড্রেড নামে একটি সংগঠন গঠন করা হয়(আইফেল টাওয়ার এর প্রতি উচ্চতার জন্য একজন সদস্য)।এই সংগঠন এর নেতৃত্ব দেন চার্লস গার্নিয়ার নামক একজন স্থপতি।তাদের বিশ্বাস ছিল আইফেল টাওয়ার এর সাথে স্থাপত্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন সম্পর্ক নেই।তারা শ্রম মন্ত্রণালয় এ এর বিরুদ্ধে একটি পিটিশন প্রেরণ করে।জবাবে গুস্তাভ আইফেল আইফেল টাওয়ার এর সাথে মিশর এর পিরামিডের সাথে তুলনা করেন।আর অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ পিটিশন এর ব্যাপারে ছিল উদাসীন।একসময় টাওয়ার নির্মাণ শেষে প্রতিরোধ স্তিমিত হয়ে পড়ে।
১৯১০ সালে ফাদার থিওডোর উল্ফ আইফেল টাওয়ার এর উপরে এবং পাদদেশে রেডিয়েন্ট এনার্জি নির্ণয় করেন।তিনি নিচের তুলনায় শীর্ষে রেডিয়েন্ট এনার্জি বেশি খুজে পান যা বর্তমান বিশ্বে কসমিক রে নামে পরিচিত।এর প্রায় দুই বছর পর অস্ট্রিয়ান দর্জি ফ্রানজ রিশেল্ট তার প্যারাসুটের কার্যক্ষমতা প্রমাণের জন্য আইফেল টাওয়ারের ৫৭ মিটার উচ্চতা থেকে লাফ দেন।ফলাফলে তিনি ব্যর্থ হন এবং এর জন্য তার জীবন হারাতে হয়।এ পর্যন্ত আইফেল টাওয়ার হতে আত্মহত্যার সংখ্যা আনুমানিক ৩৫০ টি।এদের মধ্যে কেউ ছিল জাম্পার আবার কেউ ছিল বীম থেকে গলায় ফাস দেয়া আত্মহত্যাকারী।প্রথম বিশ্বযুদ্বের সময় ফ্রান্সে জার্মানদের আক্রমণ রোধের জন্য টাওয়ারের চূড়ায় রেডিও ট্রান্সমিটার যুক্ত করা হয় যা জার্মানদের যোগাযোগব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করত।এই টাওয়ারের জন্যই মিত্র শক্তি মারন এর প্রথম যুদ্বে জয়লাভ করে।১৯৪০ সালে জার্মান কর্তৃক ফ্রান্স দখলের পর ফরাসিরা আইফেল টাওয়ারের লিফটের তারগুলো কেটে দেয়।ফলে আইফেল টাওয়ারের প্রদর্শন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং ১৯৪৬ সালের আগ পর্যন্ত টাওয়ারের লিফটের তার গুলো ঠিক করা হয় নি।সেজন্য সোয়াস্তিকা(Swastika) পতাকা টাঙানোর জন্য জার্মান সৈনিকদের টাওয়ারটি বাইতে হত।একই কারণে হিটলারের প্যারিস ভ্রমণের সময় আইফেল টাওয়ারে উঠার সৌভাগ্য তার হয় নি।বরং তাকে ভূমি থেকেই টাওয়ারটি দেখতে হয়।এজন্য ফরাসিরা মজা করে বলে হিটলার ফ্রান্স দখল করলেও আইফেল টাওয়ার দখল করতে পারে নি।১৯৪৪ সালের অগাস্টের দিকে যখন মিত্রশক্তি প্যারিসের কাছাকাছি চলে আসে তখন হিটলার জেনারেল দিয়েত্রিচ ভন শলতিজকে আইফেল টাওয়ারসহ পুরো প্যারিসকে ধ্বংস করে দেয়ার আদেশ দেন যা পালিত হয় নি।
পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে প্রায় ৩০টির মত আইফেল টাওয়ারের রেপ্লিকা আছে।রেস্টুরেন্ট চালানোসহ বিভিন্ন রক্ষণাবেক্ষণ এর জন্য এই টাওয়ারে প্রায় ৫০০ লোক নিয়োজিত আছে।যুগ যুগ ধরে ফরাসিদের এই শিল্পকর্মটি সমগ্র বিশ্বের মোহিত করে আছে।মানবসৃষ্ট পৃথিবীর এক বিস্ময়কর সুন্দর এই আইফেল টাওয়ার ফরাসিদের সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করে অতি গর্বে দাড়িয়ে আছে এবং থাকবে।
©somewhere in net ltd.