![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অর্কর এক আঙ্কেল এসেছেন কানাডা থেকে...আঙ্কেল খুব আদর করে জিজ্ঞেস করছেনঃ বাবা , কোন ক্লাসে পড় তুমি...?
অর্ক সোফায় বসে পা দোলাতে দোলাতে উদাস গলায় বলে...ক্লাস ফোরে পড়ি...!
অর্কর মা তৎক্ষণাৎ বলে উঠেন...আর বইলেন না ভাই সাহেব...!!!...যে জিজ্ঞেস করে তাকেই এই ছেলে বলে ক্লাস ফোরে পড়ি...!...অথচ সে পড়ে ক্লাস নাইনে...রোল নাম্বার ৪৫...!!!
গত পাঁচ বছর যাবত এই ছেলে আমার ঘুম হারাম করে দিচ্ছে...!!!...তাকে কোন ভাবেই বোঝাতে পারি না যে সে ক্লাস ফোরে পড়ে না...!...আপনি চাইলে স্কুলের ডকুমেন্ট দেখাতে পারি...!!!
আংকেল কিছুটা হতবুদ্ধি হয়ে গেলেন...ছেলেকে দেখে আসলেই মনে হয় না ক্লাস ফোরে পড়ে...আবার জিজ্ঞেস করলেন...কোন ক্লাসে পড় তুমি অর্ক...?
ক্লাস ফোরে পড়ি...!...এখন কন্ঠস্বর আরও উদাস হয়েছে...!
অর্ক...আমার বন্ধু...ছোট বেলা থেকে যে ছেলেটা ক্লাস ফোরে পড়ি বলে এসেছে সে কিছুদিন যাবত বলা শুরু করেছে এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিবো...!!!...তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে...আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি...!
প্রথম প্রথম ওর ব্যাপার গুলা খুব বেকায়দায় ফেলে দিতো...এখন কিছুটা সয়ে আসছে...!!!...
একদিন বলেঃ দোস্ত চল...!
কোথায় যাবি...?
কণার জন্য একটা শাড়ি কিনতে যাবো...জিন্দাবাজার...
ওর মুখে এই নাম এর আগে কোনদিন শুনি নি...!!!...অবাক হয়ে জিজ্ঞেস
করলাম...কার জন্য...?
কণা...আমার বউ...ওকে কখনো কিছু দেয়া হয় নাই...আমাকে কিছু বলে না , তবে আমি জানি...আমি যখন বাইরে থাকি তখন ও সারাক্ষণ কাঁদে...!!!...মেয়েটা এমনই...!...কিচ্ছু বুঝতে দেয় না...!...কিছু কেনার কথা বললে বলে , থাক ওটা আমার আছে...লাগবে না...তবে আমি তো জানি...ও জানে আমার কাছে টাকা থাকে না...!!!...তাই না করে...আজকে টিউশানির বেতন পেলাম...আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম এই টাকা অন্য কিছুতে যাবে নে...যাবে জিন্দাবাজারের কোন এক শাড়ির দোকানের একাউন্টে...ঠিক করেছি কিনা বল...?
আমার মাথা গুলিয়ে উঠছে...এই ছেলে বলে কি...!!!...ওকে ঝাঁকি দিয়ে বললাম...
কি আবল তাবল বলিস...!!!...তোর বউ আসবে কোত্থেকে...!!!...তোর কি শরীর খারাপ...?
অর্ক ক্ষেপে উঠে...বলে...ফাজলামি করিস...?...
ও ভালো কথা...!...আমাদের বিয়েতে তোর সাথে ওর আর আমার একটা ছবি আছে...তোকে প্রিন্ট করিয়ে দিবো...এখন চল জিন্দাবাজার...আজকে কণাকে পুরো চমকে দিবো...তবে সমস্যা একটাই...কিছুতে খুশি হলে মেয়েটা মরা কান্না জুড়ে বসে...!!!...আজব স্বভাব...দুঃখের কান্না গুলো লুকিয়ে রাখে কিন্তু আনন্দের কান্নাটা কিছুতেই লুকাতে পারে না...!...তখন ওকে খুব অসহায় মনে হয়...সেই কান্না কিছুতেই থামে না...পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে...যাদের হাসি-কান্না জড়তা বলতে একটা রোগ থাকে...হাসতে শুরু করলে থামতে পারে না...কাঁদতে শুরু করলেও না...!!!...কণা সেই প্রজাতির মেয়ে...!!!...
(শেষ পর্যন্ত আমার যেতে হয়েছিলো শাড়ীর দোকানে...এবং শাড়ী কিনতেও হয়েছিলো...!...)
গল্প থাক এই পর্যন্তই...
অর্কর যে সমস্যাটা হচ্ছে তার নাম Dissociative Identity Disorder (DID)…..!
DID হচ্ছে এমন একটা সাইকোলজিক্যাল স্টেট যখন একই মানুষের ভেতরে ভিন্ন ভিন্ন আইডেন্টিটি এক্সিস্ট করে...মানুষটা বিভিন্ন সময় নিজেকে বিভিন্ন জন হিসেবে বিশ্বাস করে...!...মানে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন আইডেন্টিটি মানুষটার বডি এবং মাইন্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়...কিছুক্ষণ থাকে তারপরে অন্য কোন আইডেন্টিটি বা তার একচুয়াল আইডেন্টিটি তার বডি এন্ড মাইন্ডের কন্ট্রোল করে...!
ব্যাপারটা খুবই ইন্টেরেস্টিং...!...DID রোগী বিভিন্ন আইডেন্টিটিতে নিজের অতীত ইতিহাসও বিভিন্ন জানে...এমনকি নিজেকে বিভিন্ন নামেও চিন্তা করতে পারে...!...মানে একেকে সময় সে একেকজন ভিন্ন মানুষ...!!!...
এমনও হতে পারে আইডেন্টিটি গুলো একেবারেই কনফ্লিক্টিং...!!!...নিজের কন্ঠস্বর , কথাবলার ধরণ , খাবার রুচি , এবং জেন্ডারও ভিন্ন বলে বিশ্বাস করতে পারে...!!!...আর শুধু যে বিশ্বাস তাই না...সে ঐগুলা এপ্লাইও করে...!!!
তবে সেখানেই শেষ না...DID বেশ খারাপ পরিনতি ডেকে আনতে পারে….এরা নিজের ভেতরে কনফ্লিক্টিং আইডেন্টিটি বয়ে বেড়ায়...ফলে নিজের উপরে ক্ষেপে উঠা অস্বাভাবিক কিছু না...নিজেকে আক্রমন করার মত ভয়ানক কিছু নাই...!...তবে আরেকটা বিরাট সমস্যা হচ্ছে নিজের অতীত তাদের কাছে শিওর না...ফলে দেখা যায় বিশাল মাত্রায় মেমরী লস...!!!
ওকে একটা প্রশ্ন...লেখকরা কি এই Dissociative Identity Disordered Person এর মধ্যে পড়েন...?...আমার তো মনে হয় পড়েন...
(একটু চিন্তা করে দেখতে পারেন...আপনার এই সমস্যা আছে কিনা...আপনার নিকটাত্মীয় কারো থাকলে আপনার থাকার একটা সমূহ সম্ভাবনা আছে...
তবে এটা কি একদিক দিয়ে ভালো না...?...অর্কর মত নিজের জগতটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিলে ক্ষতি কি...?...হোক না মিথ্যা...!...অনুভূতিটা তো সতেজ...!!!...শুধু ক্ষেপে গিয়ে নিজের মাথায় বাড়ি না দিলেই হয়...
©somewhere in net ltd.