নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নীল শুভ্র

প্রকৃতিকে যখন খুব কাছ থেকে দেখি, মুগ্ধ হই তার শুদ্ধতায় । পেয়ে যাই স্বপ্ন দেখার প্রেরণা । একটি সুন্দর, জীবন্ত পৃথিবীর স্বপ্ন । পেয়ে যাই ঐ মানুষ গুলোকে, যারা জীবনের সুন্দরতম সত্যে মিশে গেছেন অবলীলায় । জানি না আর কতদূর । তবে জানি, এই পথের শেষে আমার স্বর্গ ।

স্বপ্নীল শুভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আমিত্ব"-একটি জীবাণু

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২৩

ডায়েরী বা পিসিতে সেইভ করা বেশ পুরনো কিছু লিখা আবিষ্কার করলাম! দেখলাম আমার প্রায় সব লিখাই শুরু হয়েছে “আমি”, “আমার” এই জাতীয় শব্দ দ্বারা! খুব আতঙ্কিত অনুভব করলাম! হয়তো নিজের গাম্ভীর্য ধরে রাখতে গিয়ে অথবা মানুষের সহজাত কোন কারণে আমার মধ্যে বাসা বাঁধছে এক ধরণের “আমিত্ব”! এক ধরণের নিষ্ঠুর আত্মকেন্দ্রিকতা! একটা চাঁপা অহংকার বোধ।

আমার ভেতরে একটা আত্মার বাস, সে মাঝে মধ্যে নিজে নিজেই জেগে উঠে। তার অনেক ক্ষমতা। আমার হাতটা ধরে সে হেচকা টানে আমাকে স্মৃতির অনেক গভীরে নিয়ে যায়। আমি যেন অনেক ঘটনা একসাথে দেখতে পাচ্ছি!

দেখলাম, আমার পাশের বাসার ছেলেটাকে। ছেলেটা পড়ালেখায় মোটেও ভালো না। আমি মনে মনে সব সময় তাকে গালি দিয়ে যেতাম! শালা গর্ধব একটা! কিচ্ছু পারে না!

দেখলাম, আমার একটা ক্লাসমেইটকে। আমি সব সময় ওকে ছোট করে জানতাম। ছেলেটা ভীষণ মোটা আর দেখতে আমার চেয়েও অনেক কালো ছিলো। ওকে দেখলে আমার মধ্যে মনের অজান্তেই একটা ঘেন্না কাজ করতো!

আমি কারো প্রশংসা করতে শিখি নাই। খুব রসবোধের কোন বিষয়ও আমাকে কেউ দেখালে আমি তাতে সর্বোচ্চ মুচকি হাসতাম। অনেক অসাধারণ কারো সংস্পর্শে এলেও আমি এমন আচরণ করতাম, যেন তার সমস্ত যোগ্যতা, সমস্ত অসাধারণত্ব আমার কাছে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না। এর কারণটা বের করতে পেরেছি কিছুদিন হল। আমার ভেতরের আমিত্ব আমাকে যেন বলছে, “সাবধান ওকে বুঝতে দিয়ো না যে ও খুব ভালো মাণের একটা কাজ করেছে...এতে ও তোমার কাছে বড় হয়ে যেতে পারে...!!!...আর ও বড় হয়ে গেলেই তুমি হয়ে গেলে ছোট!”

আমি কখনো হার মানতে শিখিনি! কাউকে বড় বলতে শিখিনি! কোন বিষয়ে আমার অযোগ্যতা প্রমাণ হয়ে গেলেও না। ফ্রেইন্ড সার্কেলের মধ্যে পচানি বিষয়টা অনেক জনপ্রিয়। আমি কেমন যেন এই ব্যাপারটায় সবাইকে ডমিনেট করতাম! তবে আমার দিকে ব্যাপারটা আসলে আমি কখনোই ব্যাপারটা নিয়ে মজা করার ছলে বলি নাই, “থাক দোস্ত...!...আর লজ্জা দিস না...!!!” যেন আমাকে জিততেই হবে!

আমি সহজে কোন কিছু নিয়ে প্রতিবাদ করতাম না। তবে যখন করতাম খুব বাজে ভাবে করতাম। খুব বাজে ভাষায় করতাম! আমার কাছে নরম ভাষায় প্রতিবাদ আর খুব নীতিবোধের বাণী সম্বৃদ্ধ প্রতিবাদ যেন ক্ষীণ দুর্বলতার মত মনে হত!

আমি কখনো বলতে শিখিনি “আজ আমার মন খারাপ”! বলতে শিখিনি "ও আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে"! এই ব্যাপার গুলো নিজেকে অসহায় করে দেয়। আমি কখনোই নিজের অসহায়ত্ব স্বীকার করতে চাইতাম না। সব সময় নিজেকে উপরে ধরে রাখতে চাইতাম। তবে এই অসহায়ত্ব মানতে না চাওয়াটাই মনে হয় মানুষকে সবচেয়ে বেশি অসহায় করে দেয়!

আমার সবচেয়ে বড় সমস্যাটা বোধহয় ধরতে পেরেছি। আমি নিজেকে সবসময়ই অন্যদের চেয়ে আলাদা আর স্পেশাল কিছু ভাবতাম! স্পেশাল ভাবাটা খারাপ কিছু না, নিজেকে স্পেশাল কেউ না ভাবলে আপনি নিজের জন্য কিছু করার বা নিজেকে বেশি দূরে নিয়ে যাবার অনুপ্রেরণা পাবেন না। আপনার স্বপ্ন গুলো ছোট ছোট হয়ে পরবে। সাথে সাথে আপনিও ছোট হয়ে পরবেন। কারণ “মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়”।

তবে স্পেশাল ভাবা আর আপনি সত্যিই স্পেশাল কিনা তার সত্যতা যাচাই করে যে জিনিসটা তা হচ্ছে নিজেকে স্পেশাল দাবী করার মত আপনার আসলে আছে কি? নাহ, কি আছে এটা না বলে আসলে বলা উচিত, এমন কোন কাজটা আপনি নিয়মিত করেন যা আপনাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে তুলতে পারে?

আমি অনেক খুঁজেও তেমন স্পেশাল কোন কাজ আমার অভ্যাসের মধ্যে খুঁজে পাই নি! তাহলে আমি যে এতকাল এত মানুষকে আমার চেয়ে ছোট ভেবে এলাম এটা কেন ছিলো?

আমি অবাক হলাম! আতঙ্কিত হলাম! বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে মেসে থাকা হয়, আমার রুমমেইট ছেলেটার চেয়ে আমি নিজেকে সবসময় বড় কিছু ভেবেছি! সম্ভবত আমি পড়ালেখায় ওর চেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছিলাম এই কারণে। তবে একটা বারও আমার মনে আসে নাই, এই সামান্য রেজাল্ট আসলে আমাকে বেশি দূর নিতে পারবে না! আমার স্বপ্নের এই পথ পাড়ি দিতে হলে আমাকে হতে হবে আসলেই স্পেশাল কিছু, আর তার জন্য করতে হবে স্পেশাল কিছু যা সে করে না। আমি অনেক খুঁজেও ওর চেয়ে এমন স্পেশাল কিছু যা আমি করি তা খুঁজে পাইনি!

ক্যান্সারে আক্রান্ত কিছু মানুষের চেহারা ভেসে উঠছে চোখে। এদেরকে বলে দেয়া হয়েছে এরা বেশিদিন বাঁচবে না! মানুষ গুলোর অনেক কষ্ট! এদের নিয়ে তৈরি করা হয় কিছু হিউমেন সাপোর্ট সেল, যেখানে এরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে! আর নিজের কষ্টের কথা গুলো শেয়ার করে। এই কান্নার মধ্যে এরা এক ধরণের সুখ পায়। আত্মার শান্তি পায়! আমার মত মিথ্যে অহংকারের মায়ায় যারা এতদিন মানুষকে কষ্ট দিয়ে এসেছে, তাদের জন্য কি এমন কোন সেল নেই? একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। হায় কি ভুল করেছি...! যদি সম্ভব হতো এই সেলের নিয়ম কানুনটা একটু চেঞ্জ করে নিতাম। ঐসব মানুষকে জড়িয়ে ধরে প্রতিবেলা কাঁদতে চাই। যাদেরকে একসময় ছোট ভাবতাম! ধ্বংস হোক আমার অহংকার বোধ। ধ্বংস হোক আমার মিথ্যে আমিত্ব!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

বিদ্রোহী সিপাহী বলেছেন: আমিত্ব আর অহংবোধ একটার সাথে আরেকটা সম্পর্কযুক্ত।
আমিত্ব ত্যাগ করতে পারলেই মান+হুশ = মানুষ
নইলে.......

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬

স্বপ্নীল শুভ্র বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: অহংবোধটাকে ত্যাগ করুন, আমিত্ব নয়। প্রতিটি ভিন্ন, তার আমিত্ব তাকে দান করেছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৩:১৭

স্বপ্নীল শুভ্র বলেছেন: অহংবোধের শুরুটা হয় আমিত্ব থেকেই। আপনি যা বোঝাতে চাচ্ছেন তা সম্ভবত ব্যক্তিত্ব। ব্যক্তিত্ব আর আমিত্ব এক বিষয় না।

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

মহান অতন্দ্র বলেছেন: "আমিত্ব"-একটি জীবাণু চমৎকার বলেছেন। এখন এই জীবাণুর প্রকপ এত বেশী চারদিকে। নার্সিসিজমে ভরে গেছে সব।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩১

স্বপ্নীল শুভ্র বলেছেন: ভালো বলেছেন..."নার্সিসিজমে ভরে গেছে সব"

৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪০

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: বাহ্! অসাধারণ একটা লেখা। অনেক ধন্যবাদ।

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

স্বপ্নীল শুভ্র বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক কৃতজ্ঞতা...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.