নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝাপসা চোখে দেখা এ শহর.....

০৯ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:১৪





বৃষ্টি থেমে গেছে। বৃষ্টি শেষে চারপাশে কেমন জানি সাদা হয়ে যায়। আলোময় মনে হয়। এই পরিবেশটা আমার খুব ভাল লাগে। পরিষ্কার আলোয় ছুটে চলা সাদা সাদা মেঘ। আকাশটাকে আরো নীল মনে হয়।

এখন এই ঝুম বৃষ্টির পর রাস্তার পাশ দিয়ে কলকলিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে জলধারা। অস্থির প্রাইভেট কার দু’পাশে জল-কাদা ছিটিয়ে ছুটে চলেছে বেপরোয়া ভাবে আমি নিউ মার্কেটের ওভার ব্রিজে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি । মঙ্গলবার মার্কেট বন্ধের দিন। তাই অন্যদিনের তুলনায় আজ লোকজন বেশ কম। তারপরেও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে অনেকেই ঠাঁই নিয়েছে এখানে। লোকজনের গাদাগাদি না হলেও জটলা তো বটেই।

পাশের লোকটা ফস করে সিগারেট ধারালো। সিগারেটের ধোঁয়া ইদানিং অসহ্য লাগে। যখন সিগারেট খেয়েছি তখন কিন্তু এমন মনে হত না।
এই তো সামনেই হকার্স মার্কেট। ওখানে স্ন্যাকস কর্ণারে কতদিন বন্ধুদের সাথে ফুলুরি, কলিজার সিঙ্গারা আর জিলাপি খেয়েছি। জমজমাট হৈ হুল্লোড় আর আড্ডা।
চা-সিগারেট, বৃষ্টির দিনে গরম সিঙ্গাড়া খাওয়া আর আড্ডার সময়গুলো কত দ্রুতই না ফুরিয়ে গেল! এখন অনেকের মুখে জিলাপি হয়ে গেছে জেলেবি !
আড্ডার বন্ধুরা অনেকেই মুঠোফোনে ডিলিট হয়ে গেছে। নতুন করে সেভ করতে আর মন চাই না। সময় চলে যায় সাথে আমাদের কত কিছুই যে নিয়ে যায়! কী নির্মম নিষ্ঠুরতা!

পাশে দাঁড়ানো সিগারেট টানা লোকটার ছেড়ে দেয়া নিকোটিন পোড়া ধোঁয়া চোখে লাগছে। কী সিগারেট কে জানে?
আমি যখন সিগারেট ধরি তখন বাংলা ফাইভের দাম ছিলো তিন টাকা। আমি আর তুই ভাগাভাগি করে কত খেয়েছি। অঞ্জন দত্তের ‘শুনতে কি চাও--’ শুনতে শুনতে আয়েশি টান। আমি তখন খাতা কলম হাতে শব্দ জোড়া দিয়ে দিয়ে দু’চারটি নতুন বাক্য বানাবার চেষ্টা করতাম। তুই বলতি, দেখি কী লিখেছিস? আমার আপাত অর্থহীন সে সব লেখার তুই কতই না নতুন নতুন অর্থ আবিস্কার করতি। অবাক হবার ভান করে বলতি, কি অদ্ভুত লিখেছিস রে! চল দোস্ত তোকে সিঙ্গাড়া খাওয়ায়। হয়ত বাইরে তখন বৃষ্টি। যাবো কীভাবে? তুই বলতি, ভিজতে ভিজতে যাবো। ভিজতে ভিজতে খাবো। আমরা বৃষ্টিতেই রাস্তায় নেমে আসতাম। হা হা করে হাসতাম। আকাশ থেকে নেমে আসতো অঝোর বৃষ্টিধারা। আমাদের কাছে মনে হত, যেন অবিরল কবিতার পংক্তিমালা। আমরা সেগুলো মিছেমিছি ধরার চেষ্টা করতাম। তুই বলতি, ধর ধর দোস্ত। হাত গলিয়ে যেন বেরিয়ে না যায়।

আমি বলতাম, 'আকাশ পরিশুদ্ধ করে বিষাক্ত ক্লেদ বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ছে।'
তুই বলতি, 'এই বৃষ্টি অনাবাদি ভূমির উর্বরতা বাড়াবে। মাটির বুক ফুঁড়ে মাথা তুলবে সাহসী বীজের অঙ্কুরোদম । যেমন শোষিত মানুষ মাঝে মাঝে সাহসী হয়ে মাথা তোলার চেষ্টা করে।'
এভাবেই যোগ হত নানান সব অধিবিদ্যার পংক্তিমালা।

তোর সাথে বহুকাল যোগাযোগ নেই। তোর সাথে যেদিন শেষ দেখা, সেদিন আমরা গোল্ডেন ট্রিনিটি নিয়ে কথা বলেছিলাম। তুই সেদিন ছিলি খুব আনমনা। সিগারেট টানছিলি ভাবলেশহীন। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বলেছিলি, ভাতের দাম খুব বাড়ছে রে দোস্ত। তুই ভালো থাকিস। বলে হনহন করে চলে গেলি। একবারও পিছনে না তাকিয়ে।

পাশের সিগারেট টানা লোকটার ধূমপান শেষ। চলে যাচ্ছে কিছুটা যান্ত্রিকভাবে। ঠিক তুই যেভাবে চলে গিয়েছিলি। কোথায় যেন ভীষণ তাড়া । ওভার ব্রিজের নিচে বাস-ট্যাক্সি-স্কুটার-অটো রিক্সা অবিরাম ছুটে চলেছে। যেটা যাচ্ছে সেটা আর দৃশ্যমান হচ্ছে না। তোর মত।

আমি তাকিয়ে থাকি। সাইন্সল্যাব পেরিয়ে, মিরপুর রোড ধরে, বহুদূরে। তোর কথা মনে হচ্ছে খুব। কী করছিস, কেমন আছিস, এখনও কী ভাতের দাম বাড়লে তোর দুশ্চিন্তা বাড়ে? পয়সার অভাবে কি তোর আজো রোজদিন ভরপেট খাওয়া হয়না? মনে আছে, একদিন সন্ধ্যায় তুই এসে ভাত খেতে চাইলি। আমি মেসে খাই। হিসাবের রান্না। তোকে হোটেলে নিলাম। সাধারণত তুই দুই প্লেট ভাত খেতিস। কিন্তু তুই সেদিন, এক্সট্রা প্লেট খেয়েও বললি, দোস্ত, আজ খাবার পরে একটা সিগারেট ভাগ করে খাব। তিনটাকা তো বাঁচবে। বরং আর এক প্লেট ভাত বলি। সারাদিন খাওয়া হয়নি তো।

আমি কিছু বলিনি । আমরা মাঝে মাঝে রাস্তায় হাঁটতাম আর বলতাম ,
"দেখিস বন্ধু, আমরা একদিন এই শহরের সমস্ত রাস্তা ঘাট কিনে ফেলবো। "
এই শহর খ্যাপাটে কবির অভিমান জমা করে। চাইলেই খ্যাপাটে কবিরা এই শহরকে কিনে নিতে পারে।


জানিস , ওই সিগারেট খাওয়া লোকটার মত তুই যদি এখন আমার পাশে এসে দাঁড়াতি! বিশ্বাস কর বন্ধু, সেদিন আর গোল্ডেন ট্রিনিটির মানে খুঁজতাম না। মানিক-রবি- অঞ্জন -সুমন বাদ দিয়ে বলতাম, চল তোকে পেট ভরে ভাত খাওয়াই। তুই হয়ত বলতি, বৃষ্টি তো, যাব কী করে! আমি বলতাম ভিজতে ভিজতে যাব। ভিজতে ভিজতে খাব। দু’জনে আগের মত হা হা করে হাসতে হাসতে নেমে যেতাম রাস্তায়। এই শহর বহুদিন পর কবিদের ভিজতে দেখতো।

বেশ জোরে মেঘ ডেকে ওঠায় ভাবনায় ছেদ পড়ে। চেয়ে দেখি আকাশে মেঘ জমছে। ক্রমশ ঝাপসা হচ্ছে শহর। আবার বোধহয় বৃষ্টি হবে। বৃষ্টির আগে শহর ঝাপসা হয়ে যায়। চোখ আর শহরের কি অদ্ভুত মিল !




ছবি: ইন্টারনেট


মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:১৯

রানার ব্লগ বলেছেন:


জানালার কাঁচ ঘেমে
ফোঁটা ফোঁটা জলে থামে
মনের কার্নশে

০৯ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: চমৎকার বলেছেন !!

২| ০৯ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৩৪

ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: সুন্দর লেখনী ,

০৯ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৪৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ তাসনিম।
ভালো থাকবেন।

৩| ০৯ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪৯

কৃষ্ণপক্ষের বোষ্টমী বলেছেন: এই ভাতের দাম বাড়তে নিষ্ঠুরতার শহরে অভুক্ত পেটগুলোর আপনার মতো একজন বন্ধু হোক, যার কাছে এসে সন্ধ্যায় এসে ভাত খেতে চাওয়া যাবে। কারণ অভুক্ত পেটগুলো জানবে যে আপনি কখনও না করবেন না।

সুন্দর সাবলীল প্রকাশভঙ্গি।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:৫৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমার সামর্থ্য সম্পর্কে গল্পের বন্ধুটির ধারণা ছিল হয়তো।
লেখা পড়ে ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। আমার ব্লগে আপনার প্রথম মন্তব্য , স্বাগত জানাই।
ভালো থাকবেন।

৪| ০৯ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: বৃষ্টি আমার খুবই প্রিয়, দিন দুই আগে একটানা প্রায় পৌনে দুইঘন্টা ভিজেছি বৃষ্টিতে।
আপনার উপস্থাপনা চমৎকার হয়েছে।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:৫৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমারও খুব প্রিয়। সবচেয়ে ভালো লাগতো পানিতে ডুব দিয়ে বৃষ্টির শব্দ নিতে।
ভালো থাকবেন।

৫| ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ৮:৩১

আহমেদ জী এস বলেছেন: স্বপ্নবাজ সৌরভ,




লেখাটি পড়ে বৃষ্টির মতো টুপটাপ কিছু বেদনা গড়িয়ে গেলো মনের ভেতরে। ঝাপসা করে দিয়ে গেলো মনের অলিগলি!

স্বপ্নের মতো চমৎকার লেখা।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:৫৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ঝাপসা চোখে দেখা এ শহর.... অঞ্জন দত্তের গানের লাইন।
সেই গানে বৃষ্টিও আছে। আর বৃষ্টি জিনিসটাই অন্যরকম।
কারো কাছে ভালোবাসা হয়ে ঝরে আবার কারো কাছে বেদনার জল।


ভালো থাকবেন স্যার।

৬| ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১১:১৮

গরল বলেছেন: বৃষ্টির পরে ঢাকা শহরটা অনেক সুন্দর দেখায় তারপর যদি থাকে ঈদের ছুটির সময়। এরকম ঢাকা যদি সবসময় থাকত তাহলে ঢাকা ছাড়তাম না।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:০৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: বৃষ্টির পর এই শহরটা কে কতটা চমৎকার লাগে সেটা লেখায় প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছি।
ঠিক বলেছেন , ঈদের ছুটিতে চমৎকার ঢাকা পেয়েছি।

৭| ১০ ই মে, ২০২২ রাত ১২:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার বয়স বাড়ছে।
মানুষের যখন বয়স বাড়তে থাকে তখন মানুষ অতীত সৃতি মনে করে। লিখে। ভাবে।

খুব সহজ সরল লেখা। কোনো ভাব নেই। ভনিতা নেই। অতি তুচ্ছ বিষয়ও লেখায় এসেছে। কিন্তু সেটা মানিয়ে গেছে। বিরক্তির কারন হয়নি।

আপনার পোষ্ট পড়ে এখন আমার সিগারেট খেতে ইচ্ছা করছে। সমস্যা হলো ঘরে সিগারেট খাই না। বাচ্চা আছে। ছাদে যেতে হবে।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:০৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: জানেন ,
আমার মাঝে মাঝে ছেড়ে দেয়া সিগারেট আবার ধরতে ইচ্ছে করে।

৮| ১০ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৩৩

ঢুকিচেপা বলেছেন: কত স্মৃতি কত কথা!!
লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:০৬

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: কত কথা থাকে , চাপা অভিমানে
এই শহর জানে , এই শহর জানে !


ভালো থাকবেন।

৯| ১০ ই মে, ২০২২ রাত ৩:০৪

রেজাউল৯৬ বলেছেন: ব্লগে গদ্য কবিতা দীর্ঘ দিন দেখি নি।
অসামান্য লিখেছেন।
প্রাণঢালা ভালবাসা।

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:১০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমার কবিতা গুলোও গদ্যের মত।
সব লেখায় একটা ধারায় আটকে থাকে। বের হতে পারিনি না।

লেখা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
এই শহরে সবার গল্প থাকে। অভিমান থাকে।
সব কিছু যেন বৃষ্টির সাথে ঝরে পড়ে।

১০| ১০ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:২০

জুন বলেছেন: অনেক ভালোলাগা রইলো লেখাটিতে । হয়তো কারো কারো কাছে কোন এক সময় সামান্য ভাতই মহার্ঘ্য হয়ে উঠে । প্রাঞ্জল লেখায় মুগ্ধ পাঠ সাথে ভালোলাগাও রইলো স্বপ্নবাজ ।
+

১০ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:৫৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জুন আপা।
ভাতের দাম বাড়ায় অভিমানী বন্ধু কে এই বৃষ্টিতে খুঁজে ফিরি।

১১| ১০ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: সাবলিল উপস্থাপনা
পাঠে ভালোলাগা।

১০ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: বহুদিন পর ফাহিম ভাই আপনি।
ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.