নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন জাদুকরের কয়েকটি মন্ত্র (পর্ব ৩)

১২ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:০৯




১.
মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মৃত্যুবরণ করার জন্যে একটি চৌদ্দ বছরের বালককে বীর প্রতীক উপাধি দেওয়া হয়। মেথিকান্দা অপারেশনে এই বালকটি শক্রর গুলিতে নিহত হয়। তার নাম সাজ্জাদ। একবার এই ছেলেটি ভয়াল-ছয় নামের একটি ছেলেমানুষী দল গঠন করেছিল। এবং ঠিক করেছিল ভয়াল-ছয়ের সদস্যরা পায়ে হেঁটে আফ্রিকার গহীন অরণ্য দেখতে যাবে।ছেলেমানুষদের কতরকম স্বপ্ন থাকে।
-সূর্যের দিন

২.
জামশেদ মৃদুস্বরে বলল, যদি সম্ভব হয় অ্যানির পাশে একটু জায়গা রাখবে। মেয়েটি বড্ড ভীতু। আমি পাহারায় থাকলে হয়তো শান্তিতে ঘুমুবে।

ক্যানটারেলা তাকিয়ে রইল, কিছু বলল না।


ইস্টার্ন সিমেট্রিতে অ্যানি নামের মেয়ের কবরের পাশে একজন বিদেশীর কবর আছে। তার গায়ে চার লাইনের একটি ইতালিয়ান কবিতা যার অর্থ অনেকটা এরকম

এখানে একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে। তাকে শান্তিতে ঘুমুতে দাও।

কবরটির পাশেই দুটি প্রকাণ্ড চেরিফুলের গাছ। বসন্তকালে কবরটি সাদা রঙের চেরিফুলে ঢাকা পড়ে থাকে। বড় চমৎকার লাগে দেখতে।
- অমানুষ

৩.
সকাল হচ্ছে। পুবের আকাশ অল্প অল্প ফর্সা হতে শুরু করেছে। অনেক দিন সূর্যোদয় দেখা হয় নি। আমি ছাদের আলিশায় হেলান দিয়ে সূর্যের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ছাদ থেকে দেখতে পাচ্ছি লোকজন ব্যস্ত হয়ে ছোটাছুটি করছে। শুধু বাবুভাই রমিজ সাহেবের হাত শক্ত করে চেপে ধরে বসে আছে। আরো অনেক দূরে টিউবওয়েলের পাশে, পাথরের মূর্তির মতো নীলু বসে আছে একা একা। আমার খুব ইচ্ছা হল চেঁচিয়ে বলি, নীলু, ভয়ের কিছু নেই। সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু কিছুই তো ঠিক হয় না। সকালের পবিত্র আলোয় কাউকে মিথ্যা আশ্বাস দিতে নেই।

তবু আমাদের সবার মিথ্যা আশ্বাস দিতে ইচ্ছে করে। ঠিক এই মুহুর্তে আমার ইচ্ছা করছে নীলুরু-পাশে গিয়ে দাঁড়াতে। ভোরের আলো এসে পড়ছে নীলুর চোখেমুখে। কী সুন্দর লাগছে নীলুকে।
-- একা একা

৪.
মেয়েটি গভীর মমতায় আতাহারের মাথায় হাত রাখল। মেয়েটির হাত খুব ঠাণ্ডা। বেশ ঠাণ্ডা। কপালটা কেমন যেন করছে। তাকে একটা কথা বলা দরকার। আতাহার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নিচু গলায় বলল, যদি মরে যাই তাহলে আপনি কি একটা কাজ করতে পারবেন?

বলুন কি কাজ?

নীতুকে একটা কথা বলবেন। ওকে বলবেন আমি যে দিনের পর দিন সাজ্জাদের পেছনে ঘুরতাম, ওদের বাড়িতে যেতাম, সকালে ঘুম থেকে উঠেই নাশতা খাবার জন্যে চলে যেতাম, সেটা শুধুমাত্র ওকে দেখার জন্যে। অন্য কিছু না।

মেয়েটি হাসল। বাহ, মেয়েটার হাসিটাতো সুন্দর। আতাহার বলল, আমি যদি বেঁচে যাই তাহলে ওকে কিছু বলার দরকার নেই। আপনার কি মনে থাকবে?

থাকবে। আপনি নীতুর টেলিফোন নাম্বারটা মনে করার চেষ্টা করুন।

আতাহার টেলিফোন নাম্বার মনে করার চেষ্টা করছে। মনে পড়ছে না। কবিতার একটা লাইন উঠে আসছে–আহ কি অপূর্ব পংক্তিমালা।
- কবি

৫.
অতি দ্রুত সে পেন্সিল টানছে। কোনোদিকেই তাকাচ্ছে না। অন্যদিকে তাকানোর সময় তার নেই। অনেক অনেক দিন পর তার মাথায় পুরনো ঝড় উঠেছে। কী ভয়ঙ্কর অথচ কী মধুর সেই ঝড়! ইমন এক গাদা পেন্সিল হাতে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার হাতের পেন্সিল ভেঙে যেতেই সে পেন্সিল এগিয়ে দিচ্ছে। তার খুব ইচ্ছা করছে পোট্রেটটা কেমন হচ্ছে উঁকি দিয়ে দেখতে। সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে না দেখেও ইমন বুঝতে পারছে বাবা অসাধারণ একটা পোট্রেট আঁকছেন।

নিমন্ত্রিত অতিথিরা সবাই শওকতকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের চোখে কৌতুহল এবং বিস্ময়। একটু দূরে আনিকা দাঁড়িয়ে। সে ক্রমাগত কাদছে। আনিকার পাশে জামাল বিব্রত মুখে দাঁড়িয়ে। আনিকা তার দিকে তাকিয়ে বলল, এইভাবে বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমি কাঁদছি দেখছ না? আমার হাত ধর। না-কি হাত ধরতে লজ্জা লাগছে?

জামাল হাত ধরল। নিচু গলায় বলল, এত কাঁদছ কেন?

আনিকা ধরা গলায় বলল, শওকত ভাইয়ের একটা অসুখ হয়েছিল। অসুখটা আমি সারিয়ে দিয়েছি। এই আনন্দে কাঁদছি।
-- যদিও সন্ধ্যা

৬.

পৃথিবী কিন্তু ধ্বংস হয়ে যায় নি।

ঠিক সন্ধ্যাবেল পুবের আকাশে যে ছোট্ট তারাটি অল্প কিছুক্ষণের জন্যে নীল আলো জ্বেলে আপনিতেই নিভে যায়, পৃথিবীর মানুষ সেটি তৈরি করেছেন ফিহার স্মরণে। সেই কৃত্রিম উপগ্রহটির সিলঝিন নির্মিত কক্ষে পরম যত্নে রাখা হয়েছে ফিহার প্রাণহীন দেহ। সে সব কতকাল আগের কথা।

আজও সে উপগ্রহটি ঘুরে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর চারিদিকে। হিসেব মতো জ্বলে উঠছে মায়াবী নীল আলো। পৃথিবীর মানুষ যেন বলছে, ফিহা, তোমাকে আমরা তুলি নি, আমাদের সমস্ত ভালোবাসা তোমাদের জন্যে। ভালোবাসার নীল আলো সেই জন্যেই তো জ্বলে রেখেছি।
- তোমাদের জন্য ভালোবাসা


একজন জাদুকরের কয়েকটি মন্ত্র (পর্ব -১)
একজন জাদুকরের কয়েকটি মন্ত্র (পর্ব -২)
আপনার রুচিবোধকে আহত করিয়া থাকিলে নিজগুণে ক্ষমা করিবেন

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৫

রানার ব্লগ বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ মানুষের ভেতরের মানুষ কে জাগাতে সিদ্ধহস্ত্য ছিলেন।

১২ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
সঠিক বলেছেন।
সামান্য কয়েকটা লাইনে শিহরন জাগাতেন।

২| ১২ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:১৯

জুল ভার্ন বলেছেন: সত্যিকারের কথা শিল্পী।

১২ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:২৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
হ্যাঁ , আর আমরা মুগ্ধ পাঠক!

৩| ১২ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৩৭

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


হুমায়ন প্রভাব ছিলো না,তবে লেখা পড়ে মনে হচ্ছে ভালোমত প্রভাব কাজ করতো যদি পড়া হতো।

১২ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনি হুমায়ুন তেমন পড়েননি ?

৪| ১২ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৭

শায়মা বলেছেন: মন খারাপ করা! :(

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:১৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: বিষাদ?

৫| ১২ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৪

সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: আমার এখন ও মন খারাপ হলে হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে বসি, এটা আমার জন্য টনিকের মত কাজ করে। মাঝে মাঝে ভাবি হুমায়ূন আহমেদের বই না থাকলে কি করতাম!!

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:১৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
হুমায়ুন আহমেদের বই আমার মন কখনোই ভালো করেনি।
আমি হয়ত বিষাদ টুকুই নিয়েছি হয়তো।

ধন্যবাদ ঝিঁঝিঁপোকা। অনেকদিন ঢাক শুনিনা।

৬| ১২ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:১৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- কবি ছাড়া বাকি গুলি পড়া।

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:১৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ইচ্ছে করেই পড়েননি?

৭| ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: হ্যালো ফ্রেন্ড।
কমেন্ট ব্যান থেকে ছাড়া পেয়েছি। তবে ফ্রন্টপেজ ব্যানে আছি এখনও।

গতকাল আপনি আমাকে নিয়ে একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন। সেই পোষ্ট দেখে চোখে পানি চলে এসেছিলো।

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ২:২০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনিও সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবেন
ছোট ঘাসফুলের জন্যে.....

৮| ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:৪০

দারাশিকো বলেছেন: চমৎকার কাজ করেছেন। কষ্টও করেছেন নিশ্চয়ই। এ কারণে আমরা আবারও কিছু চমৎকার লেখা পড়ে ফেললাম। অমানুষ আমার পছন্দের বই। তবে এই গল্পে সেরা হলো মাসুদ রানার অগ্নিপুরুষ বইদুটো। দুর্দান্ত!

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:৫৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আগে হুমায়ুন মালা ডায়েরিতে লিখে রাখতাম। একটু কষ্ট হলেও খুঁজে খুঁজে সম্প্রাদনা করতে ভালো লাগে। অনেক ভালো ভালো মন্ত্র বাকি আছে। ধীরে ধীরে দিবো।

অমানুষ আমার প্রিয় একটা বই আর মাসুদ রানার আমি এই একটা বই পড়েছিলাম।

ভালো থাকবেন হ্যাডক।

৯| ১৩ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদের তুলনা হয় না।
তিনি একজন গ্রেট মানুষ।

১৩ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:৫৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
হ্যাঁ , তুলনা নেই।
খুব সহজে আবেগে ভাসিয়ে দিতেন। মাত্র কয়েকটা বাক্যে।

১০| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৫৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্ত্রপাঠে মুগ্ধ হলাম। + +
৫ নং প্রতিমন্তব্যটা চমৎকার হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.