নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লকডাউনের সময়ের দিনলিপি

১৫ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:৫৬




১.
সকালে রাস্তায় তাকায়। ফাঁকা রাস্তা । কয়েকটা কুকুর পায়চারী করে। রাস্তার রাজত্ব পেয়ে গেছে তবু ভীষণ অস্বস্তি নিয়ে তাকায় এদিক ওদিক । অস্বাভাবিকতা কুকুরগুলোও পছন্দ করছে না। খুব রাতে নীরবতা ভেদ করে এই কুকুর গুলো কেঁদে উঠে। কি ভয়ংকর!

২.
বুয়াকে কাজে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। চলতি মাসের বেতন হাতে দিয়ে বলা হয়েছে আপাতত আসার দরকার নাই। আরো দুটো বাসা থেকে নাকি নিষেধ করেছে। চলবে কি ভাবে ?
আমার অফিস বন্ধ। কবে খুলবে ঠিক নেই। বেতন কবে হবে ? কিভাবে হবে ? আদৌ কি হবে ?কিছুই জানিনা। বাসা ভাড়া দেব কি ভাবে ? বাসা কি ছেড়ে দিতে হবে ? কারো কাছে শেয়ার করতে পারছি না। সমস্ত দুঃচিন্তা হাসি মুখে প্রকাশ করছি ।

বাচ্চার কাঁথা - কাপড় ধুয়ে বারান্দায় শুকাতে দিয়েছি। মৃদ বাতাসে কাপড়গুলো দুলছে । আমি তাকিয়ে থাকি...

৩.
গত পরশু বাসা থেকে বের হয়েছিলাম। জরুরী ওষুধ আর বাচ্চার দুধ কেনার জন্য । রিক্সায় উঠতে যাবো দেখি অনেক বাজার - চাল , ডাল, তেল,আলু,পেঁয়াজ । ভাবলাম কারো বাসায় পৌঁছে দিতে যাচ্ছে । রিক্সা চালক বললো, মামা উঠেন।
আমি বললাম, কিন্তু বাজার?
'ঐটা আমার । ভাইয়ারা দিছে।'--
রিক্সা চালকের মুখে মাস্ক। তাই মুখ না দেখা গেলেও চোখ দুটো ঠিকই জ্বলজ্বল করে উঠলো। চোখ অনেক কথা বলে।
চরম দুঃসময় অপেক্ষা করছে আমাদের। আমি আকাশের দিকে তাকালাম। আমার চোখের অজস্র প্রার্থনা দূর আকাশে মিলিয়ে গেল।

৪.
৭১ টিভিতে দেখলাম, হাজারবার বলার পরেও ঠুনকো অজুহাত নিয়েও মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে । কারো ঘরে থাকতে ভালো লাগছে না। কেউ বাতাস খেতে বের হয়েছে। সেনাবাহিনী বল প্রয়োগ করছে না। একজন বলছে, "ডাব খেতে এসেছি । ডাব খেয়ে চলে যাব।"
এই ডাব খাওয়া লোকদের জন্য "বিশেষ পরিস্থিতিতে ডাব খেতে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না" টাইপের একটা দীর্ঘমেয়াদী সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম হাতে নিতে পারে ইউনিসেফ/ইউনেস্কো । আশাকরা যায় আগামী ৫৫ বছর পর খুব ভালো ফল পেতে শুরু করবে বাংলাদেশ । আশায় থাকুন।

৫.
এয়ারপোর্টে বসানো থার্মাল স্ক্যানারে টেম্পারেচার ধরা পড়েনি। যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন তারা প্লেনে উঠার আগে দুই তিনটা প্যারাসিটামল খেয়েছে। তাই টেম্পারেচার ধরার কোন উপায় নেই ।
যমুনা টিভিতে প্রায় এমন কথাই বললেন একজন বিশেষজ্ঞ ।
কোয়ারেন্টাইন বোঝে না কিন্তু জ্বর যেনো না ধরা পরে তার জন্য কি করতে হবে সেটা বুঝে গেছে তারা।

৬.
আগামী দশদিন কিযে ভয়াবহ হতে পারে। ভাবতেও চাই না। দুপুর থেকে মাথাটা দপদপ করছে। ব্যথা কমেনা। উপায় না দেখে টাফলিন খেলাম। এখন ঘুমাবো। মাথা ব্যথা নিয়ে চিন্তা করা যায় না । প্রচন্ড গরম । জানালা খোলা। ঘড়িতে রাত ১টা বেজে ৫৫ মিনিট । রাস্তায় পায়চারীরত কুকুরের পাল কেঁদে উঠলো ।

৭.
আমার ছেলেটার খুব ভাঙে সকাল ৮ টায়। এর পর একঘন্টা নিজে নিজেই খেলে। ঘুম ভেঙ্গে যখন আমি তাকাই দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কি অদ্ভুত মায়া !কি অদ্ভুত মায়াময় চোখ!! বাঁচতে ইচ্ছা হয় খুব। এই পৃথিবী যথেষ্ট সুন্দর । জীবনটাও খারাপ না।



লকডাউনের সময়ের দিনলিপিঃ
খুব ভয়ঙ্কর সময় গেছে। প্রকাশ করা মুশকিল। বোঝানো আরো কঠিন। তবুও লেখছি। আমার সময়টা লিপিবদ্ধ হোক ! চলবে....

মন্তব্য ২১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৩৩

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


করোনাও বাঙালীর ডিএনএ পরিবর্তিত করতে পারেনি।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৪৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
হুম। ঠিক বলেছেন।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫০

সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত মহান আল্লাহ্‌ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন ।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

এখনো বেঁচে আছি।

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: ভয়াবহ দিন গেছে।
অবশ্য সেসব দিন আমরা ভুলতে শুরু করেছি।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
কি যে ভয়াবহ ছিল সেটা মাঝে মাঝে নিজেও বিশ্বাস হয়না।

৪| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৩২

জুল ভার্ন বলেছেন: করোনা, লক ডাউন আমাদের জীবনে ভয়ংকর এক দু:সময়ের নাম। যার প্রভাব পরেছে আমাদের সাহিত্যেও।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫২

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ভয়ংকর এক দু:সময়ের নাম। যথার্থ বলেছেন।

৫| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৪

সোনাগাজী বলেছেন:


বাংলাদেশের মানুষ ঘরের জানালা খোলা রাখতো, ইহা অনেকভাবে সংক্রমণ কমায়েছে।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
বাড়িতে গিয়ে অনেকদিন জানালা খুলিনি। কারণ জানালার পাশে মানুষ চলাচল করতো।

৬| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩০

শায়মা বলেছেন: আমাদের টিচারদের খুবই ঝামেলাময় দিন গেছে। নতুন কিছু ভাবো নতুন কিছু শেখো প্যারেন্টদের মন ভরায় রাখো, যেমনে হোক তেমনে বাচ্চাদেরকে শেখাও পড়াও।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এসব নিয়ে লিখেছেন। ভিন্ন অভিজ্ঞতা। না লিখলে লিখতে পারেন। পড়তে চাই।

৭| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৮:৪০

রানার ব্লগ বলেছেন: আমার কেটেছে শংকা নিয়ে কারন লক ডাউনের পরের মাসেই আম্মা করনায় আক্রান্ত হলেন। কেমনে হলেন জানি না কারন আমরা কেউই বাড়ির বাহিরে যাই নাই। এক মাস প্রতিটা ক্ষন ভয়াবহ চিন্তা আর ভয়ে সময় পার করেছি। যেদিন ডাক্তার আম্মা কে করোনা নেগেটিভ বললো হাফ ছেড়ে বাচলাম।

এবং এর পরের মাসে আমি কুপকাত। পা আসমানে তুলে শুয়ে থাকা ছাড়া আমার কোন কাজ ছিলো না।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আমরা যখন ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে চাচ্ছি তখন জায়গায় জায়গায় রেডজোন ঘোষণা করছে। বাড়ি থেকে খবর পেলাম এলাকার পরিস্থিতি ভালো না। ভীষণ এক দোটানায় পড়ে গেলাম।

আপনার বাড়ি কোথায় ? বাড়িতেই আক্ৰান্ত হয়েছিলেন ?

৮| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:২০

শেরজা তপন বলেছেন: লকডাউনে সবারই ব্যাতিক্রমৈ কিছু স্মৃতি আছে।
আপনার স্মৃতিকথা শুনে নিজেরটার সাথে মেলাচ্ছি।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
অনেকের সাথেই মিলবে। আরো লেখা আসবে দেখুন মেলে কিনা। নিজেকে নিয়ে ভয় ছিল না। আমার ছেলেটার বয়স তখন ৩/৪ মাস।

৯| ১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:০৬

সোহানী বলেছেন: আমিও বেশ কিছু লিখেছিলাম সে সময় নিয়ে। চেস্টা করেছিলাম কিছু করার সে সময়ে। যাহোক, পৃথিবীর বিপদ কেটেছে ঠিকই কিন্তু নতুন বিপদ এসে হাজির হয়েছে..........

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:০০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
পৃথিবীর বিপদ কেটেছে ঠিকই কিন্তু নতুন বিপদ এসে হাজির হয়েছে..........
পৃথিবীর মানুষ হয়তো এভাবেই টিকে থাকবে।

১০| ১৬ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: করোনায় আমার বাবার মৃত্যু হলো। নইলে হয়তো আব্বা আরো দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতেন।

১৬ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:০৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
একজন ছেলের জন্য তার বাবার দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকা জরুরী। বাবাদের অনেক অনেক বছর বেঁচে থাকা উচিত।
আপনার বাবার জন্য দোয়া করি।
আপনার জন্য করি।
আসছে রোজায় সবাই জন্য দোয়া করবো।

১১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:০৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: অস্বাভাবিকতা কুকুরগুলোও পছন্দ করছে না - প্রকৃতি ও তার প্রাণীকূল কেহই অস্বাভাবিকতা পছন্দ করে না।
৩ ও ৫ নম্বরের শেষ লাইনটা খুব সুন্দর!
লকডাউনের দু;সহ (সবার জন্য হয়তো না) দিনগুলোর স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধ হোক, সবাই লিখুক। আমার কিছু কবিতায় সে সময়ের কথা আছে। তবে নিয়মিত দিনলিপি লিখতে পারলে ভালো হতো। সে সুযোগ হেলায় নষ্ট করেছি। এখন লিখলে স্মৃতি থেকে লিখতে হবে। সেটা ততটা ভালো হবে না, নিয়মিত লিখলে যতটা হতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.