নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাশিয়ান শৈশব : পেশা বাছাই (বাবা যখন ছোটো)

১৮ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:২২


রাশিয়ান শৈশব : বাবা যখন ছোটো - ১

বাবা যখন ছোটো : আদরের মেয়ের জন্যে লেখা বাবার বই।
লেখক : আলেক্সান্দর রাস্কিন
অনুবাদ : ননী ভৌমিক




পেশা বাছাই
বাবা যখন ছোট , তখন প্রায়ই একটা প্রশ্ন শুনতে হতো তাকে। লোকে জিজ্ঞেস করত : ‘ বড় হয়ে কি হবি বলতো ?’ জবাব দিতে বাবার একটুও দেরি হতো না। তবে প্রতিবারই সে জবাব হতো আলাদা আলাদা। প্রথম দিকে বাবার ইচ্ছে ছিল রাতের চৌকিদার হবে। ভারি ভালো লাগত যে সবাই ঘুমুচ্ছে , কিন্তু চৌকিদারের ঘুম নেই। তাছাড়া চৌকিদার যে কাঠের হাতুড়ি পিটিয়ে টহল দিয়ে যেত সেটাও ভারি ভালো লাগত তার। সবাই যখন ঘুমুচ্ছে , তখন যে আওয়াজ করা যাবে এতে ভারি আনন্দ লাগত বাবার।
পাকাপাকি বাবা ঠিক করে ফেললে যে বড়ো হয়ে রাতের চৌকিদার ই সে হবে। এই সময় সুন্দর একটি ঠেলা বাক্স সমেত দেখা দিল এক আইসক্রীম ফেরিওয়ালা । গাড়ির ঠেলা যাবে , আইসক্রীমও খাওয়া যাবে !
‘একটা ক’রে আইসক্রিম বিক্রি করবো , একটা ক’রে খাব,’ বাবা ভাবলে , ‘ আর ছোট খোকাখুকু দেখলে দিয়ে দেব বিনা পয়সাতেই।'
ছেলে আইসক্রীম ফেরি করবে শুনে ছোট্ট বাবার মা-বাবারা ভারি অবাক হয়ে গিয়েছিল। এই নিয়ে অনেক হাসাহাসি করেছিল তারা। বাবা কিন্তু এই মজাদার সুস্বাদু পেশাটাকে আঁকড়েই রইল মনে মনে। এই সময় হঠাৎ একদিন রেল স্টেশনে এক আশ্চর্য লোক দেখলে বাবা। লোকটা সারাক্ষন কেবল ওয়াগন এর ইঞ্জিন নিয়ে খেলছে। সে খেলা খেলনা নিয়ে নয় , সত্যিকারের ইঞ্জিন নিয়ে ! লাফিয়ে চত্বরে নামছে , ঢুকে যাচ্ছে ওয়াগনের তলায় , অপূর্ব কি এক খেলা চালাচ্ছে।
‘কে লোকটা ?’ জিজ্ঞেস করলে বাবা।
জবাব এল , ‘রেলের খালাসি , ওয়াগনের আঙটা লাগায় ও। '
সঙ্গে সঙ্গে বাবা শেষ পর্যন্ত বুঝে নিলে কি সে হবে। ভেবে দ্যাখো একবার ! ওয়াগনের আঙটা লাগাচ্ছি আর খুলছি ! দুনিয়ায় এর চেয়ে চমৎকার আর আছে কিছু ? জানা কথা , থাকতেই পারে না। বাবা যখন ঘোষণা করলে যে সে খালাসি হবে , তখন কে যেন জিজ্ঞেস করেছিলো :
‘ আর আইসক্রীম ?'
ভাবনায় পড়লো বাবা। রেলের খালাসি হবে তাতে বাবার কোনো সন্দেহই নেই , কিন্তু আইসক্রীম ভরা সবুজ বাক্সটাও ছেড়ে দিতে মন চাইছিল না। শেষ পর্যন্ত একটা উপায় বার করলে বাবা। ঘোষণা করলে :
‘খালাসি আইসক্রিমওয়ালা দুই-ই হব!’
ভারি তাজ্জব ব্যাপার , কিন্তু ছোট্ট বাবা বুঝিয়ে দিলে :
‘তাতে আর মুশকিল কি ? সকালে আইসক্রীম নিয়ে বেরুব ,ঘুরে ঘুরে তারপর ছুটে যাব স্টেশনে। সেখানে ওয়াগনে ওয়াগনে আঙটা লাগাবো।ফের ছুটে যাব আইসক্রীম নিয়ে। তারপর ফের চলে আসবো স্টেশনে ওয়াগনের আঙটা খুলব , আবার যাব আইসক্রিমে। এই চলবে। গাড়িটা রাখব স্টেশনের কাছেই। আঙটা খোলাখুলি জন্যে বেশি দূর ছোটাছুটি করতে হবে না। ’
সবাই খুব হেসে উঠলো। ছোট্ট বাবা তখন রেগে গিয়ে জানিয়ে দিলে :
‘তোমরা যদি হাসাহাসি করো তাহলে বলে দিচ্ছি , রাতের চৌকিদারিও ছাড়বো না। রাত তো আমার ফাঁকা। চৌকিদারি হাতুড়ি টুকতেও শিখে গিয়েছি। একজন চৌকিদার আমায় দেখিয়ে দিয়েছে ….’



এভাবেই সব ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু শীগগিরই পাইলট হবার সাধ হলো বাবার। পরে ইচ্ছে হলো অভিনেতা হবে , থিয়েটার করবে। পরে একবার ঠাকুর্দার সঙ্গে একটা কারখানা দেখতে গিয়ে ঠিক করলে টার্নার হবে। তাছাড়াও জাহাজের মাল্লা হবার ইচ্ছে হয়েছিলো বাবার। তা না হলে অন্তত সশব্দে চাবুক চালিয়ে এক পাল গরু নিয়ে রাখালি করবে। একবার তার জীবনের পরম কামনা হয়ে উঠেছিলো কুকুর হবে। সারাদিন সে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াল , লোক দেখে ঘেউ ঘেউ করে ডাকলে , একজন বুড়ি তার মাথায় হাত বোলাতে গেলে বাবা কামড়ে দেবার চেষ্টা করলে। কুকুরের ডাকটা বাবার বেশ হত , কিন্তু কুকুরের মতো পা দিয়ে কান চুলকানোটা বাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেও আয়ত্ত করতে পারলে না। ভালো করে আয়ত্ত করার জন্যে সে বাড়ির বাইরে গিয়ে তুজিক কুকুরের পাশেই বসল। রাস্তার দিয়ে তখন অচেনা এক সৈন্য যাচ্ছিল। থেমে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বাবাকে দেখলো সে, তারপর জিজ্ঞেস করলে :

‘কি করছিস রে খোকা?’
‘কুকুর হচ্ছি,’ বললে ছোট্ট বাবা।
অচেনা লোকটা তখন জিজ্ঞেস করলে :
'মানুষ হতে চাস না বুঝি ?'
‘মানুষ তো আমি অনেকদিন আগেই হয়েছি !’ বলে বাবা।
লোকটা বলল :
‘কুকুর ই যখন হতে পারছিস না তখন মানুষ আর কোথায় হলি ? ওকে কি আর মানুষ বলে ?’
‘তবে কাকে বলে ?’ জিজ্ঞেস করলে বাবা।
‘তুই নিজেই ভেবে দ্যাখ !’ বলে চলে গেল লোকটা। মোটেই ঠাট্টা করে নি সে , এতটুকু হাসেও নি। কিন্তু ছোট্ট বাবার কেন জানি ভারি লজ্জা হল। ভাবতে শুরু করলে বাবা। কেবলি ভেবে আর ভাবে , আর যত ভাবে ততো লজ্জা হয়। সৈন্যটা তাকে কিছুই বুঝিয়ে বলে নি। কিন্তু নিজেই সে হটাৎ একদিন বুঝলে রোজ রোজ নতুন নতুন পেশার পেছনে ছোটা কোনো কাজের কথা নয়। আর সবচেয়ে বড় কথা , এখনো সে ছোট। কি যে সে হবে সেটা নিজেই সে এখনো জানে না।প্রশ্নটা ফের কেউ তাকে জিজ্ঞেস করলে সৈনিকের কথাটা মনে পরে যেত বাবার। বলতো :
‘মানুষ হবো !’
তাতে কিন্তু কেউ হাসত না। ছোট্ট বাবা বুঝলে যে এইটাই সবচেয়ে সঠিক উত্তর। সবার আগে হতে হবে খাঁটি মানুষ। পাইলটই হোক কি টার্নারই হোক , রাখালই হোক কি অভিনেতা হোক ---- সকলের পক্ষেই সেটাই বড় কথা। আর মানুষ হলে পা দিয়ে কান চুলকানোর কোনো দরকার হয় না।


আমার দুটি কথা:
ছোটবেলায় বইটি অনেকবার পড়েছি।ইদানিং গল্প গুলো টাইপ করতে গিয়ে অথবা আবার পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে আমার বাচ্চার বাবা কিন্তু এমনি ছিল। আমার বাচ্চা যখন বানান করে পড়তে শিখাবে , একটু যখন বড় হয়ে গল্প শোনাবে -- ' বাবা তখন ছোটো। ইশকুলে যাবার সময় প্রতি সকালে বাবার অসুখ করতো। ....... '
আমার খুব ইচ্ছে হয় 'বাবা যখন ছোটো' এই বইটার মত আমিও একটা বই লিখবো আমার বাচ্চার জন্য। রাশিয়ান শৈশব আমার ঋণ বাড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:০৮

চারাগাছ বলেছেন: অমানুষ না হওয়ায় একমাত্র পেশা হোক।
আপনার বাচ্চার জন্য লেখা শুরু করেছেন ?

১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:৩৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

লেখা কি এতই সোজা !! এই সব কথার কথা।

২| ১৮ ই মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: শৈশব সবার এক রকম হয় না।
আপনার শৈশব, আমার শৈশব সম্পূর্ন আলাদা। আবার আমার বাবার শৈশব এবং আমার শৈশব এক রকম নয়।

১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:৩৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
শৈশব আলাদা হলেও চিন্তা ভাবনার কিছুটা মিল থেকে যায়।

৩| ১৮ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৮

শায়মা বলেছেন: আমার এক স্টুডেন্ট একবার বলেছিলো সে নাকি বড় হয়ে ছাগল হবে।

আমি তো অবাক! মানুষ কখনও ছাগল হতে চায় নাকি!

শেষে ইনভেস্টিগেশনে বের হলো তাদের বাড়িতে কোরবানীর জন্য একটা ছাগলের বাচ্চা আনা হয়েছিলো। সেই বাচ্চাটা তার খুব প্রিয় ছিলো। তাই সে ছাগলই হতে চেয়েছিলো।

১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:৩৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
একসময় আমি 'তারে জামিন পার' এর রাম শংকর নিকুম্ভ (আমির খান ) হতে চেয়েছিলাম। বাচ্চাদের নিয়ে থাকবো।
ছোটবেলায় আমিও অনেক পেশা বাছাই করেছি। প্রথম টার্গেট ছিল নভোচারী। ক্রিকেট ব্যাট যখন হাতে পেলাম তখন ইমরান খান।

স্বপ্নবাজ সৌরভ কখনই হতে চাইনি। ঘুরে ফিরে আপনার ছাত্রের মত ব্যা ব্যা ব্ল্যাক শীপ !

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:২৯

সোনাগাজী বলেছেন:



ব্লগার শায়মার ছাত্র ছাগল হতে চেয়েছে? আমার মনে হয়, ইহাই স্বাভাবিক

১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:২৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ব্লগার শায়মা কি আপনাকে কমেন্ট ব্লক করেছে ?

৫| ১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:০৯

সোহানী বলেছেন: লিখে ফেল, বই বের করা যাবে কোন এক সময়। তোমার লিখার হাত অসাধারন। সহজ সরল আর আকর্ষনীয়।

ছোটবেলায় আমিও অনেক কিছু হতে চেয়েছিলাম। শেষে এসে ঠেকলো পাইলট হতে।...........হাহাহাহা

যাহোক, এক জীবনে আমিও মানুষ হতে চেয়েছিলাম, খুব ভালো মানুষ। দেশের সেবা, দশের সেবা...... ব্লা ব্লা ব্লা। তারপর তাকিয়ে দেখি চারপাশে সব ধান্ধাবাজ আর আমি!!!!!!!! শায়মার ছাত্রের মতো ছাগল হয়ে গেলাম।

১৯ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ৯:২৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
শায়মার ছাত্রের মতো ছাগল হয়ে গেলাম।

আমিও ঘুরে ফিরে ছাগলই আছি।
ছেলেটা মাঝে মাঝে শোনায় -
ব্যা ব্যা ব্লাক শীপ হাভে ইউ অনি উল ?

যদিও ও ছাগল আর ভেড়ার পার্থক্য জানেনা। ওর কাছে দুটোই শীপ।
দুটোই ব্যা ব্যা করে।


ধন্যবাদ সোহানী আপু।

৬| ২১ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:০৪

ইমরান আশফাক বলেছেন: বইটি আমার ও খুবই প্রিয়। আমার সংগ্রহশালাতেও ছিল, কিন্তু এখন সেটা খুজে পাচ্ছি না। :((

২১ শে মার্চ, ২০২৩ দুপুর ২:১৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমার কাছে দুটো অরিজিনাল কপি আছে। আপনি চাইলে আমি আরেকটা খোঁজ করবো।


আমি এখন নিজের ছেলের জন্য 'আমার বাবা যখন ছোটো ছিল' শুরু করেছি। পড়তে পারেন। বাচ্চাদের ভালো লাগতে পারে।
আমার বাবা যখন ছোটো : বাবার ইশকুল কামাই

৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৬

অধীতি বলেছেন: ছোট বেলায় মস্কো থেকে অনুদিত কিছু বই পড়েছিলাম। এত্ত সুন্দর ছিল। জীবনে প্রথম কেনা বই হচ্ছে গোর্কির মা।

২০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:৪৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: গোর্কির মা আমি কলেজে উঠে পড়েছি। শৈশব শিশু সাহিত্য নিয়ে ছিলাম। তবে বড় হয়ে বুঝলাম ওগুলো আদতে শিশু সাহিত্য ছিলই না।

ধন্যবাদ অধীতি।

৮| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার! এর বেশি আর কিছু বললাম না, কারণ আপনি মন্তব্যের উত্তর দেন না; হয়তো পড়েনও না।
তবে একটা কথা না বলে যেতেই পারছি না। ছোটবেলায় একটা ইচ্ছে আমি অনেকদিন ধরে মনের মধ্যে পুষে রেখেছিলাম, সেটা হচ্ছে লোকোমাস্টার হবো। অর্থাৎ রেল ইঞ্জিনের ড্রাইভার। লম্বা ট্রেন নিয়ে ছুটে চলবো। বাঁক নেয়া জায়গাগুলোতে জানালা দিয়ে মুখ বের করে অপসৃয়্মান সরীসৃপটির লেজের দিকে তাকিয়ে থাকবো কিছুক্ষণ। যেখানে যেখানে সুন্দর দৃশ্যাবলী দেখবো, সেখানে ইচ্ছে করেই কিছুক্ষণ থামবো, আবার ছুটে চলবো। গভীর নিশীথে অমানিশার অন্ধকারে আমার ইঞ্জিনের হেডলাইট জ্বালিয়ে অন্ধকার বিদীর্ণ করে ছুটে চলবো।
কোন একজন লোকোমাস্টারের কেবিনে বসে কিছুটা দূরত্ব অতিক্রমের বাসনা এখনও মনে আসে।

০৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:১৬

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এই বইয়ের প্রায় প্রতিটা গল্পই দারুণ।
ইচ্ছা ছিলো সব গল্প গুলো পোষ্ট করার।
ছোটোবেলায় অনেককিছুই হতে ইচ্ছা হত। ইদানীং মানুষ হতে ইচ্ছা হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.